somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

চলো বিয়ে করে ফেলি

২৭ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( "যারা কথা বলে তাহারা বলুক/ আমি কাহারেও করি না বিমুখ/ তারা নাহি জানে- ভরা আছে প্রান।/ তব অকথিত বানীতে।/ নীরবে নিয়ত রয়েছে আমার/ নীরব হৃদয়-খনিতে ।")


আজ সারাটা দিন গুল্লুর মন খারাপ । গুল্লু ইদানিং মনে করছে- সে খুব দুর্বল । মনের দিক থেকে আরো বেশী । হিমি ছাড়া এমন কোনো নারী কি পাওয়া যাবে - যে অনেক ভালোবাসা নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে । গুল্লু এখন বুঝতে পারে স্বপ্ন দেখা ঠিক নয় । স্বপ্ন তো অবচেতন মনের কারসাজি । গতকাল রাত দুইটায় গুল্লুর হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল- তখন গুল্লুর খুব ইচ্ছা করছিল মরে যেতে । বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়ে মরতে ইচ্ছা করছিল । মৃত্যুর ভাবনা টা ভাবার পরেই মনে এক ধরনের আনন্দ হচ্চে গুল্লুর । বুকের ভেতর শান্তি শান্তি লাগছে । জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর জোছনা আতা হে, বহুত মজাকা বাত হে । গুল্লু শান্তি শান্তি ভাবটা উদযাপন করার জন্য বেলকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো । প্রতিবার সিগারেট খাওয়ার সময় গুল্লুর একবার করে চায়ের কথা মনে পড়ে । হিমি থাকলে ভালো হতো চা করে দিতো । আচ্ছা, হিমিকে কেন বারবার গুল্লুর নিজের মানূষ বলে মনে হয় ! "ক্লান্ত মন সরিয়ে এনে চোখ রেখেছি তোমার গালে/ শরীর খুলে অন্য শরীর, কেন এমন লোভ দেখালে ?/ কিছুই বলা হলো না, তুমি কথা রাখোনি, দুঃখ অভিমানে- শ্বাস কষ্ট হলো আমার।/ চোখেও জল এসেছিল ।/ চোখ সে কথা জানে/ আমি দ্বিধার মধ্যে ডুবে গেলাম ।"

হিমি জানে, গুল্লু অপদার্থ হলেও মিথ্যাবাদী নয় । সত্যি কথা বলতে কি গুল্লুর সঙ্গ হিমির ভালো লাগে । এবং যতদিন যাচ্ছে আর মনে হচ্ছে গুল্লুকে হিমির ভীষন প্রয়োজন । এই ভালো লাগাটাকে, প্রয়োজনটাকে অস্বীকার করা যায় না । প্রেম সহজ, ভালোবাসা সহজ নয় । ভালোবাসা এক অনুশীলন সাপেক্ষ ব্যাপার । গুল্লুর সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারে না । তার গলা কাপে । কষ্ট কি হিমি জানে, তাই কখনো দিতে ইচ্ছে করে না । গুল্লু স্বাধীন । তাই গুল্লুওই ঠিক করবে তার কি করা উচিত । হিমি কাল রাত্র ঘুমানোর আগে গুন গুন করে গাইছিলো- ' আমার দুঃখ জোয়ারের জলস্রোতে/ নিয়ে যাবে মোরে সব লাঞ্ছনা হতে..." । হঠাৎ হঠাৎ হিমি অন্যমনস্ক হয়ে যায় । মনের ভেতর থেকে যেন আবেগটা বেরিয়ে আসতে চায় । গুল্লুর কথা ভাবলেই হিমির অনেক সুখ হয় কিন্তু বেদনাও কম নয় । তবু এ বেদনা অন্যরকম । গুল্লুর মুখটা সমস্ত পৃথিবীকে আড়াল করে রাখে । হিমির একটাই ভয়, সে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুতেই জয়ী হতে পারে না । তার শেষ ভরসা গুল্লু । গুল্লু সবচেয়ে বড় সমস্যা খুব অগোছালো ।

হিমি ভাবে গুল্লুর সাথে তার বিয়ে হবে । একটা বাচ্চা হবে । গুল্লুর প্রধান কাজ হওয়া উচির আমি আর বাচ্চাটা যেন এক আকাশ আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি । বাচ্চাটা তার পেটে আস্তে আস্তে বড় হবে । মায়ের পেটে শরীর তৈরি হয় কিন্তু মন ? গুল্লু বলেছে বাচ্চাটার নাম রাখবে গেদু । হিমির শরীর থেকেই অক্সিজেন নিবে গেদু । গেদু একদিন পৃথিবীতে আসবে । বাচ্চারা যতদিন মায়ের পেটে থাকে ততদিন হয়তো ঈশ্বরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে । ভূমিষ্ট হওয়ার পর আর পারে না । হিমির মন ভার হয়ে যায় । সে কি করবে বুঝতে পারে না । একটা ইচ্ছা শক্তিই হিমিকে চালিয়ে নিচ্ছে । কি মনে করে হঠাৎ হিমি গুল্লুকে ফোন দেয় । গুল্লু ফোন ধরেই বলল, কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো- ব্যস্ত আছি । হিমি বলল- তুমি ছাড়া আমার জীবনে আজকে আনন্দ বলতে কিছু নেই । গুল্লু বলল- আচ্ছা, শোনো আমি তোমাকে পরে ফোন দিচ্ছি, এখন রাখি বলেই ফোন কেটে দেয় । সাথে সাথে হিমির চোখ ভিজে উঠল । গুল্লুর ব্যবহারে হিমির মন খারাপ হয়ে যায় । তারপরও বার বার গুল্লুর কাছেই যেতে ইচ্ছা করে হিমিত । হিমি ঠিক করলো আগামী এক সপ্তাহ মোবাইল বন্ধ করে রাখবে ।

গুল্লু বুঝে না, এ বিশ্ব সংসারে পুরুষের চেয়ে নারীর বৈচিত্র ও বৈশিষ্ট্য অনেক বেশী । পুরুষ যতই সুপুরুষ হোক, নারীর দেহ-লাবন্যের কাছে সে তুচ্ছ । মা ধরিত্রীর মতোই নারী পরম সহনশীলা । তাই তো সে হাসি মুখে সন্তানের জন্ম দেয় । নারী কখনো মোহময়ী, কখনও স্নেহময়ী, কখনো সে স্নিগ্ধ শান্তি আবার কখনও সে বিভীষিকা । ত্যাগে ভোগে নারীর কাছে পুরুষ নিত্য পরাজিত । বোকা গুল্লু ঠিক করেছে- দূরে কোথায় পালিয়ে যাবে । পাহাড় আর সমুদ্রের কাছে যাবে শান্তির আশায়, আনন্দের লোভে, বৈচিত্র্যের সন্ধ্যানে । কিন্তু প্রিয় মানূষের কাছে যে শান্তি, যে আনন্দ ও বৈচিত্র্য পাওয়া যায়, তা কি অন্যত্র পাওয়া যাবে ? গুল্লুর ঘুম আসে না । আবছা চাঁদের আলোয় বেলকনিতে বসে থাকে । হিমির একান্ত আন্তরিক ভালোবাসা উপেক্ষা করার প্রশ্নই আসে না ।

গুল্লুর সাথে হিমির পরিচয়ের কাহিনীটা বলি- মিরপুর থেকে ফার্মগেট আসছিল গুল্লু অনামিল বাসে করে । ছুটির দিন, শুক্রবার বিকেলবেলা । বাসে তেমন একটা ভিড় ছিল না । সেই সময় আইডি ভবন এর সামনে থেকে বাসে উঠে এলো একটি মেয়ে । সবুজ চওড়া পাড়ের একটা শাড়ি পরনে ছিল । মাথার চুল খোলা । মেয়েটার গায়ের রঙ শ্যামলা কিন্তু চোখে মুখে স্নিগ্ধতা । মেয়েটি এসে বসলো গুল্লুর পাশে । ঘটনা কিছুই না । রোজ হাজার হাজার মেয়ে বাসে উঠে। কিন্তু অবাক ব্যাপার এই মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে- গুল্লুর যেন কেমন বোধ হচ্ছিল । মেয়েটি অনেক সুন্দর করে চোখে কাজল দিয়েছে । কপালের টিপও সুন্দর । সবচেয়ে বেশী সুন্দর থুতনিটা । সবচেয়ে বড় কথা হলো, মেয়েটির চোখ ! যেন চোখ দিয়েই গুল্লুকে অজানা কোনো বার্তা পাঠালো । মেয়েটা তিনবার তাকালো গুল্লুর দিকে । কিছুটা হাসিও ছিল তার চোখে মুখে । যেন মেয়েটা কিছু না বলেই বলল, কি আমাকে চিনতে পারোনি ? গুল্লু অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল । তারা মুখে কথা বলেনি একটাও ! কিন্তু মনে মনে অনেক কথা হয়ে গিয়ে ছিলো ।

পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;
পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু;জনার মনে;
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশ ।

'চলো বিয়ে করে ফেলি' লেখাটা এখানেই শেষ । হয়তো অনেকে বলবেন, নামের সাথে লেখাটার কোনো মিল নেই ! শুধু তাদের জন্য- " গভীর রাত । অনেকদিন পর গুল্লু হিমিকে ফোন দিলো । গুল্লু বলল- কেমন আছো ? অনেকক্ষন চুপ থেকে কাঁদতে কাদতে হিমি বলল- তারপর থেকে ভাঙ্গতে থাকি, গড়তে থাকি, পড়তে থাকি, উঠতে থাকি, ডুবতে থাকি, ভিজয়ে থাকি- তবুও কিন্তু চলতে থাকি । গুল্লু বলল- চলো বিয়ে করে ফেলি !

আপাত কার্যকারণ ছাড়াই যে সমস্ত ক্ষুদ্র ব্যাপার ঘটে তাই কেমন করে পরবর্তী সময়ে মানুষের সমস্ত জীবন বদলে দেয়, ভাবতে অবাক লাগে !
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×