somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসমাইল টিপু সত্যিই তুমি নোবেল জয়ী (অবশেষে নোবেল পুরস্কার পাইলো)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত ১২:০৫। শুয়ে আছি চোখে ঘুম নেই। ইদানিং এ সমস্যাটা হচ্ছে। মাঝে মাঝে স্লিপিং পিল খেতে হয়। লোকে বলে- বুড়ো হলে নাকি ঘুম কমে যায়। তবে কি আমি বুড়ো হয়ে গেলাম?

না প্রসঙ্গটা ঘুম নিয়ে নয়। প্রসঙ্গ ক্যান্সার নিয়ে। আমার আজকের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ক্যান্সার নামক মরন ঘাতক মারাত্মক ব্যাধিটি। আমি দেখেছি এ মরনব্যাধি যার শরীরে বাসা বাঁধে কিভাবে তার ঘুম কেড়ে নেয়। দেখেছি ক্যান্সারাক্রান্ত রোগীর হাহাকার। দেখেছি বেঁচে থাকার কতইনা প্রানান্তকর চেষ্টা। মহাসাগরে জাহাজডুবি কোন যাত্রী যখন বাঁচার আর কোন উপায় খুঁজে পায়না তখন সামান্য এক খড় কুটাকেও মনে করে অনেক কিছু।

সেই ছোটবেলায় বিটিভিতে দেখেছি ‘দ্যা সোর্ড অব টিপু সুলতান’ নামক ডাবিংকৃত এক বাংলা সিরিয়াল। যেখানে ছিল রাজত্বের লড়াই। আজকে এক ইসমাইল টিপুকে সবাই দেখল জানল চিনল যার রাজত্ব ছিল ক্যান্সার। নিজেকে এ রাজ্যের রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছে। ব্যার্থ হয়েও অন্যদের জানিয়ে গেছে সহজে পরাজয় বরণ না করতে। একবার না পারলে দ্বিতীয়বার, দ্বিতীয়বার না পারলে তৃতীয়বার, তৃতীয়বার না পারলে…।


নোবেল মেডেলের আদলে আমার দ্বারা তৈরি টিপুর নোবেল মেডেল

২৫/১১/২০১১ইং থেকে ইসমাইল টিপু ব্লগারদের পাশাপাশি অনেকের কাছে এখন একটি পরিচিত মুখ। যে নামের আড়ালে লুকিয়ে ছিল কালো চাদরে ঢাকা ইতিহাস। সে ইতিহাস গোপন রাখতে চেয়েছে একান্ত নিজের করে। বিদায়ের আগ পর্যন্ত তা গোপন করেই রেখে গেছে।


এভাবেই নিজের বিদায়ের খবর সবাইকে জানিয়ে গেছে। তবে বুঝতে পারেনি কেউ-ই।


টিপুকে করা আমার প্রথম কমেন্টস

টিপু আমার কোন পূর্ব পরিচিত বন্ধু কিংবা আত্মীয় নয়। নেটে তার বিভিন্ন লেখা পড়তাম, বাদরামি দেখতাম, আনন্দ উপভোগ করতাম ব্যস এটুকুই। আর কিছু নয়। মূলত তাকে আমি চিনতাম সুতার কারিগর হিসেবে। টেক্সটাইলের ছাত্র হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার নয় বরং সুতার কারিগর হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতেন। কি সুন্দর রসবোধ।

আজকে বিভিন্ন ব্লগ সাইট ঘেটে টিপু সর্ম্পকে যে ধারনা পেলাম সেটা হচ্ছে সে অসম্ভব ফানি ছিল। কোন কিছুকেই সিরিয়াস চোখে দেখেনি। যার শরীরে মরনব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রযুক্তি প্রেমিদের দেখিয়ে গেছে প্রযুক্তির সাতকাহন। বুঝিয়ে দিত কিভাবে কি করতে হবে। কখনোবা এ বুঝানোয় ছিল অভিমানের সূর। তাইতো বলেছে- ‘এই সময়টুকু গার্ল ফ্রেন্ডের জল্লাদ বাপেরে দিলেও মাইয়াটা আমার হাতে তুইল্লা দিতো।’ কেউ বুঝুক আর না বুঝুক টিপু নিজের হিসাব বুঝে নিয়েছে কানা কড়িসহ।

আপনারা যারা ক্যান্সারাক্রান্ত রোগীর সান্নিধ্যে গেছেন তারা বুঝবেন এ যন্ত্রনা কেমন। আমার কাছে ভাবতে অবাক লাগে এ মৃত্যু যন্ত্রনা বুকে নিয়ে ব্লগিং করা রীতিমত এক ভয়াবহ ব্যাপার। কত সুন্দরভাবে সবাইকে বুঝিয়ে গেছে ক্যান্সার কি, লক্ষণ, কারণ, আমাদের করণীয় ইত্যাদি। কখনো বুঝতে দেয়নি আমিই ভুক্তভোগী। কারো কাছ থেকে সহযোগিতা চায়নি, সহানুভূতি চায়নি, আদর, সোহাগ, ভালবাসা চায়নি। চেয়েছে একটু বেঁচে থাকতে। পরক্ষনে আবার নিজেকে সান্তনা দিয়েছে ‘কিচ্ছূ হবে না’ বলে। বুঝে গেছে যতই বেঁচে থাকার চেষ্টা করিনা কেন আসলে ‘কিচ্ছু হবে না’। চিরবিদায় নেওয়ার আগেও সবকিছু গুছিয়ে গেছে সুচারুভাবে। বন্ধুদের জানিয়ে গেছে অনেক দূরের দেশের ভিসা হয়ে গেছে আমার। সহজে আর আমাকে খুঁজে পাবেনা। সত্যিইতো তাকে আর আমরা খুঁজে পাবোনা। আর আমাদের মাঝে হাজির হবেনা নতুন কোন টপিক নিয়ে। দেখবোনা বিল গেটসের মত অন্য কারো সাক্ষাতকার । শুনবো না পুংটা নামক কোন শব্দ।

আমি বুঝিনা কেন তার প্রতি আমার এতখানি দরদ উতলে উঠলো? নিজেকে প্রশ্ন করি সে কি আমার বন্ধু? ‍উত্তর হচ্ছে না। সে কি আমার আত্মীয়? উত্তর হচ্ছে না। সে কি আমার পরিচিত? উত্তর হচ্ছে না। তাহলে কেন আমি তার শোকে কাতর?

যারা ব্লগিং এর সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের একটি ভার্চুয়াল রিলেশন তৈরি হয় যা আপনজনের সাথে যে রিলেশন তা থেকে কোন অংশে কম না । এছাড়া টিপুর মেধা, মনন, রসবোধ আর বাস্তববাধী ‍গুণের কারণেই আমার দরদ উতলে উঠল। আমার মতে টিপু কিন্তু সত্যি সত্যিই নোবেল জয়ী। সবাই বলবে কিভাবে? তার আগে আমার ছোট্র একটি প্রশ্ন- আপনার শরীরে ক্যান্সার বা অন্যকোন রোগ বাসা বাঁধলে আপনি কি স্বাভাবিক আচার আচরণ করবেন? নিত্যকার কর্ম চালিয়ে যাবেন? ‘কিচ্ছু হবে না’ এ কথা মনকে বলতে পারবেন? উত্তর হবে আমার দ্বারা মোটেও সম্ভব নয়।

শান্তিতে অবদান রাখার জন্য যদি নোবেল পদক দেওয়া হয়, অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য যদি নোবেল পদক দেওয়া হয় তাহলে টিপু যে দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেল তার জন্য বাংলার নোবেল পুরস্কার এমনিতেই প্রাপ্য। তাইতো নামের সাথে যুক্ত করেছে নোবেলজয়ী কথাটি। নোবেলজয়ী এ পদক তার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারেনি। নিজের পদক নিজেই গলায় ঝুলিয়েছে।

পরিশেষে বলবো পুংটা ইসমাইল টিপু সত্যিই তুমি নোবেলজয়ী।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×