somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে চিঠি/কবিতা একটি প্লেটনিক ভালোবাসার জন্ম দিয়েছিল; যারা ভালোবাসতে ভালোবাসেন আর যারা কবিতা ভালোবাসেন তাদের জন্য এ পোস্ট

২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০১ সাল। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন। জীবনে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম। প্রথম প্রেমের অভিজ্ঞতা। সেই প্রেমের একটি বিশেষ মুহুর্ত নিয়ে লেখা চার লাইনের একটা কবিতা পোস্ট করেছিলাম সামু'তে আমার শততম পোস্ট হিসেবে। আমার শতাধিক পোস্টের মধ্যে যেটির পাঠক সংখ্যা এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আমার সেই প্লেটনিক ভালোবাসার শুরুটাও ছিল একটি কাব্যিক চিঠি দিয়ে। আমার সমস্ত আবেগ দিয়ে যখন সেই চিঠিটি লিখেছিলাম তখনও জানতাম আমাদের মধ্যে বন্ধুতের বাইরে কোন সম্পর্ক হতে পারে।
আমরা ২০০১ সালে ফিল্ডওয়ার্ক করতে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহ। একদিন গভীর রাতে আমরা ক্লাসমেটরা উপজেলা পরিষদের ভিতরের ছোট একটি রাস্তার উপরে বসে গান শুনছিলাম। তখনও তার সাথে আমার কোন বন্ধুত্বই হয় নি। এক বন্ধু চমৎকার গিটারের সুরে সকলকে গান শোনাচ্ছিল। এমতাবস্থায় স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে আমি গানের মধ্যে একটু কথা বলে উঠি। বেশ বিরক্ত স্বরে একটি মেয়ে আমাকে ভৎসনা করে উঠল। বিশেষ কিছু বলে নি সে। কিন্তু ঘনিষ্ঠ নয় এমন কেউ এরকম বললে ভালো লাগে না। মেজাজটা বিগড়ে গেল। ভাবলাম অপমান করি। কিন্তু না, শান্তভাবে গান শুনে বিরক্তি নিয়ে সময়টা পার করলাম। মেয়েদের মধ্যে আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুটিকে বললাম ঐ মেয়েটিকে বলো আমার সাথে সমঝে কথা বলতে। বন্ধুটি আমাকে ভালোমত চিনত। সে ঐ মেয়েটিকে কথাটি বলল। পরদিন মেয়েটি আমাকে খুব করে ধরল, কী এমন সে বলেছে যে, আমি তার উপর এক বিরক্ত। বুঝলাম সে কোন কিছু মিন না করে এমনিতেই বলেছিল। আমি তাকে বললাম যে, আমি বিষয়টিতে বেশ কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু কী কথা সে বলেছিল তা আমি তাকে বলি নি। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব বাড়তে লাগল। এরপর এলো ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। ততোদিনে আমরা খুব ভালো বন্ধু। পরীক্ষার শেষে লম্বা ছুটি হবে নিজেদের দেখা হবে না। সে খুব করে ধরল ঐ রাত্রে কেন আমি তার উপরে রাগ করেছিলাম তা জানানোর জন্য। আমি অনেকভাবে চেষ্টা করেও যখন এড়াতে পারলাম না তাকে, তখন তাকে বললাম ঠিক আছে আমি তোমাকে একটি চিঠি লিখব যার ভিতরে ঐ কথাটির ইঙ্গিত থাকবে। শেষ পরীক্ষার দিন আমি তাকে নিচের চিঠিটি দিলাম। এই একটি চিঠিই আমাদের সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছিল। আমি বুঝেছিলাম কাউকে ভালো না বাসলে এমন চিঠি লেখা যায় না। সেও বুঝেছিল কাউকে ভালো না বাসলে এমন চিঠি পাওয়া যায় না। আসুন চিঠিটি/কবিতাটি পড়ি।

সে দিনের সেই ক্ষতটা

ক্ষতটা হঠাৎ হঠাৎ ভোগায় আজও;
নিয়মিত নয়, তবুও ভোগায় তো।
৪ শব্দ, ৮ অক্ষর, একটি মাত্র বাক্য!
মিথ্যা তুমি বলো নি, ছুরিটা ছিল-
তোমার বলার ভঙ্গিমায়;
রক্ত তাই ঝরেছিল আমার।

যন্ত্রণায় ঘুমুতে পারি নি
একটা রাত; ঘুমুতে কী পারি আজও,
উঁকি যদি দেয় মনে?
ব্যাথাটা নেই কিন্তু ক্ষতটা
রয়ে যে গেছে আজও।
চিনচিন করে লবণ যখন ছিঁটাও
ওর ওপর।

আজও যদি একই কথা আবারও
বলো তুমি, হাসব বটে আমি;
জড়তা যে গিয়েছে কেটে।
সেদিন তা সত্য ছিল,
আঘাত পেয়েছিলাম তাই।
আজ তা মিথ্যা বলেই
কষ্ট পাই না শুনে!
কী করব বলো-
মানুষ যে আমি(!),
ভণ্ডামি যে রয়েছে আজও মনে।

সে দিনের সেই কালো রাতে
যখন আলো ছিল- সবার সাথে,
আলোকিত তুমিও ছিলে।
উদ্ভাসিত প্রাণ আমিও ছিলাম
তোমাদেরই ভিড়ে।
সবে যখন টান পড়েছে
গিটারের তারে,
সুরটাও ছুঁয়েছে আমাকে-
তখনই ছুরিটা হানলে তুমি।
বাকিটা সময়
আমার নুয়ে পড়া দৃষ্টিটা
আরও নুয়ে আশ্রিত ছিল
আমারই হাঁটুতে।
চোখটাও ওঠেনি পিচঢালা
সরু রাস্তাটার আরও
নিচ থেকে যতক্ষণ না
তোমারা যাও চলে।

পরদিন কারও কাছ থেকে জেনে-
না বুঝে ক্ষমা তুমি চেয়েছিলে,
জানি না অনুভব থেকে কী না;
মানি বন্ধু ভেবেই তা চেয়েছিলে।
কিন্তু হায়! কী নির্মম পরিহাস!
প্রলংয়কারী এক কথার ঝড়ে
হৃদয়ের আলোটা আমার
নিভিয়ে যে দিলে।
প্রদীপ তুমি জ্বেলেছিলে বন্ধু
কিন্তু জানতে না তো-
অন্ধ আমি,
মশাল ছাড়া আমার
কি জ্বলে কোন আলো!
প্রদীপ তোমার ছিল না জানতাম
কিন্তু মশাল তুমি পাবে কোথায়?
আলো যে জ্বলে নি
ক্ষতটাও শুকোয়নি তাই,
শুকোবে কী কখনও?
দেয়াশলাইটা যে-
ঝড়ের ঐ রাতেই গিয়েছে ভিজে।
মশাল যদি বা পাও
আলো তুমি জ্বালাবে কী দিয়ে?



আমি জানি না আপনাদের কেমন লাগল। কিন্তু আমি জীবনে এই চিঠিটি এবং এর প্রতিক্রিয়ার নস্টালজিক স্মৃতি ভুলতে পারব না। আজ প্রায় এগারো বছর পরও সেই চিঠিটি লিখতে ইচ্ছে করল পুরানো ডায়েরির পাতা উল্টাতে যেয়ে।

ধন্যবাদ সবাইকে।
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধে নিহত মনোজ দা’র বাবা

লিখেছেন প্রামানিক, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৭১ সালের এপ্রিলের ছব্বিশ তারিখ। দেশে তখন ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়েই বেশি সমস্যা। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে ধরে নিয়ে হত্যা করছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ে থেতে ভাল্লাগে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

আমার বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে। আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত দিলে আমার খুসি লাগে। বিয়ের দিন আমি সেজে গুজে বিয়ে বাড়িতে আয়োজন করা খাবার থেতে যাই। আমাদের এলাকায় বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুর সামনের পাতার ৯টি পোষ্টে শুন্য (০ ) মন্তব্য।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০



আজকে সকালে একটু দেরীতে ( নিউইয়র্ক সময়, সকাল ৮:২১ ) সামুতে লগিন করলাম; লগিন করে আজকাল প্রথমে নিজের লগিন স্ট্যাটাস পরীক্ষা করি: এখনো সেমিব্যানে আছি। মোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহর সাহায্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪০



দুই মেয়ের পরীক্ষা বিধায় আমার স্ত্রীকে লক্ষ্মীপুর রেখে আসতে গিয়েছিলাম। বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট রুটে আমার স্ত্রী যাবে না বলে বেঁকে বসলো। বাধ্য হয়ে চাঁদপুর রুটে যাত্রা ঠিক করলাম। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×