somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যু জোছনা

২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জোছনা রাত। অদ্ভুত একটা আবেদন থাকে জোছনা রাতের। কিছু জোছনা বিলাসি মানুষ এমন রাতে হাটতে বের হয়। শাদ এমনই একজন। অবশ্য জোছনা রাত বলেই নয়, মাঝে মাঝেই হাইওয়েতে একা একা হাঁটে। মাঝ রাতে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটা একটা নেশার মত শাদের কাছে। গাড়ি থাকে না তা না, তবে মাঝখানে হাটতে অসুবিধে হয় না।



আজকেও তার ব্যাতিক্রম ঘটছে না। রাস্তার দু’পাশ দিয়েই মাঝে মাঝে গাড়ি ছুঁটে যাচ্ছে।



পূর্ন চাঁদ আকাশে, কিন্তু প্রচুর মেঘ। চাঁদটা বেশীরভাগ সময়ই ঢাকা থাকছে।



রাস্তায় হাঁটছে শাদ। চাঁদটা এখনো মেঘে ঢাকা। অন্ধকার আর আলো একই সাথে মিশে অদ্ভুত একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আকাশের মেঘগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ বিভ্রান্ত। চাঁদকে ঢেকে দেয়ার ষড়যন্ত্রে মগ্ন বিভ্রান্ত মেঘদল। কিন্তু মেঘে ঢাকা চাঁদ হতে কেমন যেন একটা হালকা আভায় আকাশটা আলোকিত হয়ে আছে। আকাশটাও কি বিভ্রান্ত ??



ও নিজে যে বেশ বিভ্রান্ত সেটা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না।

মনের মধ্যে কেমন যেন একটা পাথর আটকে আছে ওর। আজ সন্ধ্যা থেকেই এই অনুভূতিটা ভর করে আছে মনে।

কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে।



হঠাৎ তমার কথা মনে পড়ল। কথা বললে ভালো লাগতে পারে এই ভেবে মোবাইল বের করে তমাকে কল দিল ও। ওপাশে একবার রিং পড়ার সাথে সাথেই কল রিসিভ করলো, যেন কলের অপেক্ষাতেই ছিল।

এত রাতেও জেগে আছে !!! অবাক লাগল খুব।

”হ্যালো !!” -তমার সব সময়ের হাসিখুশি মিষ্টি কণ্ঠ।

“হ্যালো, শর্মি আছে ?”

“শর্মি মানে ?? তার মানে কি তুমি শর্মিকে কল দিচ্ছিলে ??” -কিছুটা অভিমান আর রাগ মেশানো স্বর,

“শর্মি নেই ?”

“তুমি ভালো করেই জানো এটা শর্মির নাম্বার না। এটা___”

“টুনটুনির নাম্বার।“

“এগুলোর মানে কি বলবা ?? শর্মিকে খুজছিলে, আমি লাইন কাটছি, এতই যখন শখ তখন শর্মির সাথেই কথা বলো।”

“উহু, লাগবে না।”

“কেন ??”

“কোন মানে নাই।”

“তাহলে ?? শর্মিকে এত রাতে কেন ??”-কণ্ঠে চাপা একটা রাগ।

“হাঃহাঃহাঃ। তোমাকে রাগানোর জন্য।“

“হাসবে না !! আমি রাগলে বুঝি তোমার ভালো লাগে ??”

”উহু, মোটেই না। রাগলে তোমাকে পাকা টমেটোর মত ভয়ংকর লাগে।”

কাঁচ ভাঙ্গার মত রিনিঝিনি মিষ্টি হাসি ভেসে আসে, “পাকা টমেটো বুঝি ভয়ংকর।“

“হুম, ভয়ঙ্করই তো, বিশেষ করে স্টেজে হেড়ে গলায় গান গাওয়ার সময়।“

“অদ্ভুত, তুমি তো আমাকে দেখই নি শাদ, কিভাবে জানো যে রাগলে আমাকে ভয়ংকর লাগে ??”

“কথা বলতে বলতে তোমার একটা ছবি একেছি, সেই ছবিটা রাগলে পাকা টমেটোর মত ভয়ংকর। আর হাসলে হুতোম প্যাঁচার মত সুন্দর।“

“কি ? হুতোম প্যাঁচার মত সুন্দর ??"

"হুম।। হুতোম প্যাঁচার মত... রাতের বেলা আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর পাখি প্যাঁচা। প্যাঁচার ডাক শুনেছ কখনো ?? আমার খুব সুন্দর লাগে।"

"মানে কি ?? আমার কণ্ঠ প্যাঁচার ডাকের মত ??"

"ইনটেলিজেন্ট গার্ল , ধরে ফেলেছ ।"

"ইনটেলিজেন্ট ?? তোমাকে এখন যদি সামনে পেতাম না , মাথা ফাটিয়ে দিতাম। ইডিয়েট কোথাকার।“

"তুমি কিন্তু রেগে যাচ্ছো।"

"আমি রাগী নি।" -কণ্ঠের রাগ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

"রেগেছো। তোমার গলা শুনেই বুঝতে পারছি। রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।"

"বললাম তো রাগি নি !"

জবাব দিলো না শাদ। চুপ করে আছে।

"কি ব্যাপার, চুপ করে আছো কেনো ??"



তীব্র গতিতে একটা গাড়ি পাশ কাটিয়ে গেলো। হর্ন দিলো একবার।



আবার তমার গলা ভেসে এলো, কণ্ঠের রাগ উধাও। কিছুটা উদ্বিগ্ন,

“এই কোথায় তুমি, রাস্তায় নাকি ?”

“হুম, মাঝরাস্তায়, সাদা দাগের উপর...”

“আচ্ছা তুমি কি পাগল ??”

“জন্ম থেকেই।“

“এভাবে রাস্তায় হাঁটার কোন মানে হয় ??”

“হুম, মানে হয়। এভাবে হাটতে আমার ভালো লাগে।“

“এখন রাত কটা বাজে খেয়াল আছে ??”

“আমার কাছে সময়টা গৌণ। কয়টা বাজে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।“

“জানি বাবা জানি, চিনি তো তোমাকে, কিন্তু রাস্তার মাঝখানে কেনো ? আচ্ছা বাদ দিলাম, এখন তুমি ঘরে যাও, ঘরে গিয়ে ঘুমাও, প্লিজ শাদ।“

“হুম, যাবো, একটু পর...”



ঠিক ঐ মুহুর্তে সামনের বাঁক ঘুরে বেরিয়ে আসে একটা বিশালাকৃতির ট্রাক। স্বাভাবিকের চেয়ে গতি একটু বেশি বলেই মনে হলো শাদের কাছে। তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে একচোখা সাইক্লপস। একটা হেডলাইট ভাঙ্গা ।

হেডলাইটটা যেন সম্মোহিত করে ফেলল ওকে। সম্মোহিতের মতই তাকিয়ে আছে। বিকট শব্দে হর্ন দিলো ট্রাকটা। মাঝরাস্তায় ওকে দেখতে পেয়েছে।

“কি ব্যাপার ?? কই তুমি ?? হর্ন শুনলাম মনে হয়।“

“একটা ট্রাক, পাশ কাটিয়ে যাবে বোধহয়।“

“ট্রাক ?? তুমি এখনো রাস্তার মাঝখানে নাকি ??”

জবাব দিলো না শাদ। এখনও সম্মোহিতের মত তাকিয়ে আছে।

দুরত্ব কমে গেছে অনেক। আরও কমছে। সতর্ক করছে ওকে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়।

আরও দুই বার ট্রাকের বিকট হর্ণের শব্দ...



“শাদ, এই শাদ, কথা বলছো না যে, কই তু............??”



প্রশ্নবোধকটা বাতাসেই ভেসে থাকে।

এর বেশী আর শোনা হয় না। রাতের নির্জনতা ভেদ করে ভেসে আসে সংঘর্ষের জান্তব শব্দ। মোবাইলটা ছিটকে পড়ে দূরের একটা ঝোপে। ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে যন্ত্রটা। ও প্রান্তে বোকার মত নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে তমা।



হঠাৎ করেই মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে চাঁদ। পুর্ণ চাঁদ। চাঁদের আলোয় ভেসে যেতে থাকে একটা রক্তাক্ত ছায়া। রুপালি আলোয় লাল রক্তগুলোকে কেমন যেন কালো দেখাচ্ছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×