somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাবনার ভেলায়

২৪ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখকের জন্য নোট :
১. লাল চিহ্নিত অংশগুলোর বেশির ভাগই পুনর্বিবেচনার জন্য। আরো একটু সহজভাবে লেখা যায় কিনা। যেহেতু বইটি মূলত কিশোরপাঠ্য।
২. বিভিন্ন বই থেকে নেওয়া উদ্ধৃতিগুলো আবার একটু মূল লেখার সঙ্গে মিলিয়ে নিলে ভালো হয়। তাহলে নির্ভুলতা নিশ্চিত করা যায়।
৩. আরেকটা জিনিস হতে পারে যে, যেহেতু উদ্ধৃতিগুলোর অধিকাংশই সিরিয়াস বই থেকে নেওয়া, সেহেতু ওগুলোকে সহজ ভাষায় লিখে রেফারন্স নম্বর ঠিক রাখা। তাতে বোধহয় কাক্সিক্ষত পাঠকরা বেশি উপকৃত হবেন।


ভাবনার ভেলায়

সামিও শীশ

গ্রন্থস্বত্ব : ???
উৎসর্গ

লিয়াকত ভাইকে

সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের চিন্তার ইতিহাসের পাঠচক্রই আমাকে ভাবনার ভেলায় করে ভাসতে শিখিয়েছে


গঙ্গারামকে পাত্র পেলে

পোস্তা থেকে ফিরে দাদাবুড়োর মেজাজটা বিগড়েছে। ঘরের এ-মাথা ও-মাথা পায়চারি করছেন, বিড়বিড়ানি চলছে। মীনা দরজায় উঁকি দিল। সে একটু আঁচ করতে পারছে আসল ব্যাপারটা।

আসলে ব্যাপারটা হয়েছে কী, দাদাবুড়ো গঙ্গারামের ওপর মহাক্ষ্যাপা। একজন মানুষ উনিশটি বার মেট্রিকে ঘায়েল হয়েই থেমে যাবে আর বিয়ে পাগলা হয়ে পড়বে, দাদাবুড়ো তা মানতে পারছেন না।

অবশ্য এ কথা তিনি মানেন, বাংলার পাঁচ ও প্যাঁচার মতো বেজায় কালো রঙের গঙ্গারাম মন্দ নয়, পাত্র ভালো কিন্তু যে মানুষ আকাশ জয় করার ক্ষমতা রাখে, সমুদ্রের এমন কোনো ঝড় নাই যা তাকে রোখে, সেই মানুষের এত সহজে ঘায়েল হওয়া মেনে নেওয়া যায় না। আর তাই, গঙ্গারামের এই কাণ্ডটি তিনি কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছেন না।

তাই এত অস্থিরতা তাকে ভর করেছে।

মীনা বলল, ‘তুমি খালি খালি ভাবছো। তুমি এখানে বনবনিয়ে ঘোরো আর ওদিকে গঙ্গারামদাদু টোপর পরে হাতির পিঠে চড়ছে। শ্যাম লাহিড়ী কাকুর বাড়িতে সবাই মজা করে ধেই ধেই করে নাচছে। তোমার মিছিমিছি ভেবে কী লাভ?’

দাদাবুড়ো ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘ভেবে কী লাভ মানে? আমি ভাবছি, তাই তো আমি আছি। ও ঃযরহশ, ঃযবৎবভড়ৎব ও ধস. ’

আমি কে?

কথাগুলো মীনাকে ভাবাচ্ছে। সোজা উল্টো নানাভাবে কথাগুলোকে সাজাচ্ছে। তাহলে কি না ভাবলে, আমি নাই। এ কেমন কথা?

তাহলে প্রথমেই প্রশ্ন জাগে, আমি কে?

আগে কখনও এমন প্রশ্ন জাগেনি। সে মীনা। কিন্তু তা তো উত্তর হলো না। যদি নাম ভিন্ন হতো কী-ই বা এসে যেত। নাম যদি হতো অনামিকা, তাতে কি সে ভিন্ন কেউ হতো? মা-বাবা আদর করে ডাকে মীনা মামনি। গ্রামজুড়ে সবাই এই নামেই ডাকে। এটি তার পরিচয়। কিন্তু ঠিক ‘আমি কে?’ এর তো জবাব মেলে না।

আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজেকে দেখতে দেখতে হঠাৎ হেসে ওঠে। ক্লাস টু-তে পড়ার সময়ের একটা ঘটনা মনে পড়ে। বাংলা ক্লাসে নিজের সম্বন্ধে রচনা লিখতে দেওয়া হয়েছিল। মীনার মনে আছে, ক্লাসের বোকাসোকা এক ছেলে লিখেছিল, ‘আমি একজন মানুষ। আমার একটি মাথা, একটি নাক, একটি মুখ, দুইটি কান, দুইটি হাত, দুইটি পা...আছে।’ এটি নিয়ে ক্লাসজুড়ে খুব হাসাহাসি হয়েছিল। কী বোকা ছেলেটি, এমন হাস্যকর কথা কেউ লিখতে পারে?

মীনার কাছে কথাগুলো আজ আর হাস্যকর ঠেকছে না, বরং এর মধ্যে একটু ভাবনার খোরাক পাওয়া গেছে।

মীনা যে মানুষ হয়েছে তা সে নিজে বাছাই করেনি। মানুষ না হয়ে অন্য যে কোনো প্রাণী সে হতে পারত। যদি মানুষ না হয়ে গরু হতো তবে রচনাটি একেবারেই হাস্যকর হতো না, বরং সেটাই স্বাভাবিক হতো। জীববিজ্ঞানে সে পড়েছে, জীবকোষ দিয়েই মানুষ তৈরি, সব জীবজন্তু, পশুপাখি তৈরি। সে হিসেবে মানুষও একটি প্রাণী। ভাবতে মীনার কেমন যেন লাগে।

নববর্ষে উপহার পাওয়া বইটি হাতে নেয় মীনা। কয়েক দিন আগে সে পড়েছিল, ‘বিশ্ববিধাতা সূর্যকে অগ্নিশিখার মুকুট পরিয়ে যেমন সৌরজগতের অধিরাজ করে দিয়েছেন, তেমনি মানুষকে যে তেজের মুকুট তিনি পরিয়েছেন দুঃসহ তার দাহ। সেই পরম দুঃখের দ্বারাই তিনি মানুষকে রাজগৌরব দিয়েছেন; তিনি তাকে সহজ জীবন দেননি। সেইজন্য সাধন করে তবে মানুষকে মানুষ হতে হয়; তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপক্ষী সহজেই পশুপক্ষী কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মানুষ।’

ঘটন অঘটনের ঘণ্টন

‘...মানুষ জীবটি বেশ কাজের।
সে উড়তেও ওস্তাদ, সে মারতেও ওস্তাদ।
কিন্তু তার একটি গলদ,
সে ভাবতেও পারে।’

দাদাবুড়ো মীনাকে বলে যাচ্ছেন, ‘চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা মানুষের সবচেয়ে বড় সম্বল। ‘আমি কে?’ প্রশ্নটি তোকে ভাবাচ্ছে। তোর মতো করে ভেবে যা। ভাবনা কী? এটি নিয়ে আমি শুধু কিছু ইঙ্গিত দেব। ও পধহ ংযড়ি ুড়ঁ ঃযব ফড়ড়ৎ, নঁঃ ুড়ঁ যধাব ঃড় ধিষশ ঃযৎড়ঁময রঃ.’

দাদাবুড়ো একটু থামলেন। মীনা নামের ষোলো বছরের মেয়েটির দিকে তাকালেন। ‘আধো আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা পাকা কথাও জ্যাঠামি’ র বয়সী মীনার সাথে কথা কীভাবে শুরু করবেন তা নিয়ে একটু ভাবলেন।

দাদাবুড়ো গপ্পো শুরু করলেন :
‘চীনের একটি অলৌকিক(?) ঘণ্টার গল্প বলি।
চীনের তা চু সু (ঞধ পযঁহম ংড়) মন্দিরে ঝোলানো আছে একটি প্রকাণ্ড বড় ঘণ্টা। ঘণ্টাটির আওয়াজ যেমন চমৎকার, তেমনি প্রকাণ্ড এর আকৃতি।

ঘণ্টাটি তৈরি করা হয়েছিল প্রাচীন চীনের সম্রাট ইয়াং লুর (ণঁহম ষড়) আদেশে। কিন্তু এই ঘণ্টা তৈরির পেছনে লুকিয়ে আছে এক মর্মান্তিক গল্পকাহিনী।
সম্রাট ইয়াং লু তার নির্মিত মন্দিরের জন্য একটি প্রকাণ্ড ঘণ্টা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ডাকা হলো দেশের সেরা কর্মকারকে। তাকে সম্রাট নিজে ডেকে নিয়ে বললেন, দেখো, তুমি পুরস্কার পাবে প্রচুর। তবে তার বিনিময়ে তুমি আমাকে এমন চমৎকার একটি ঘণ্টা তৈরি করে দেবে, যার আকার হবে প্রকাণ্ড এবং আওয়াজও হবে বেশি। আওয়াজ শ্র“তিমধুরও যেন হয়।

এরপর ঘণ্টা তৈরির বায়না নিয়ে কর্মকার শুরু করে দিলেন কাজ।
একটানা কয়েক মাস কাজ করে তৈরি হলো প্রকাণ্ড ঘণ্টা।

কিন্তু রাজার পছন্দ হলো না। রাজার শর্ত ছিল ঘণ্টার আওয়াজ খুব জোরালো হতে হবে। এই আওয়াজ যেন ১০০ লি (খর) অর্থাৎ সাইত্রিশ মাইল দূর থেকেও শোনা যায়। কিন্তু এর শব্দ তো দুই মাইল দূর থেকেও শোনা যায় না।

সম্রাট সব দেখে-শুনে বললেন, না হে কর্মকার, তোমার এ ঘণ্টা তৈরি হয়নি ঠিকমতো। আমি এ ঘণ্টা নেব না।

তাহলে?

তুমি আবার নতুন করে তৈরি করো ঘণ্টা। যতœ করে তৈরি করো।

আবার তাই হলো। কর্মকার আবার তার লোকজন নিয়ে শুরু করল নতুন করে ঘণ্টা তৈরির কাজ। আবার কাজ চলল দু-তিন মাস ধরে।

কিন্তু কপাল(?) মন্দ কর্মকারের। এবারও ঘণ্টা মনের মতো হলো না। সম্রাটের পছন্দ হলো না। ঘণ্টার আওয়াজ এবারও তেমন জোরালো হলো না।

সম্রাট খুব ক্ষেপে গেলেন। তিনি শখ করে একটি চমৎকার ঘণ্টা তৈরি করতে চাইলেন অথচ অপদার্থ কর্মকার তা বানাতেই পারছে না। তাই এবার তিনি কড়া ভাষায় কর্মকারকে সাবধান করে দিয়ে বললেন, দেখো, সামান্য একটি ঘণ্টা তৈরির কাজে তুমি পরপর দুইবার ব্যর্থ হয়েছো। একবার দুইবার তিনবার। তোমাকে আমি আবার সুযোগ দিচ্ছি। যদি এই তৃতীয় বারেও ব্যর্থ হও, তাহলে নির্ঘাৎ তোমার গর্দান যাবে। তোমার মতো অপদার্থ কর্মকার আমার দরকার নেই।

সম্রাটের আদেশ শুনে তো কর্মকার ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরে এল।

কিন্তু সে বুঝতে পারছে না তার ভুলটা কোনখানে। সে তো চেষ্টা করেছে তার সাধ্যমতো। তার যত কারিগরি জ্ঞান জানা ছিল সবকিছু ঢেলে দিয়েই সে কাজ করে যাচ্ছে। তবু তো হচ্ছে না। তাহলে ত্র“টি কোনখানে? কিছুই তো সে বুঝতে পারছে না।

তাহলে কি মন্দিরের দেবতার কোনো কুদৃষ্টি পড়েছে তার ওপর? এজন্যই কি এমন হচ্ছে?

হয়তো হতেও পারে। তাই তিনি বাড়িতে ডেকে আনলেন শহরের নামজাদা এক জ্যোতিষীকে।
জ্যোতিষীকে সব কিছু খুলে বর্ণনা করে শেষে বললেন, তাহলে বলুন আমার ত্র“টিটা কোনখানে? কেন আমার ঘণ্টার আওয়াজ জোরালো হচ্ছে না? তাহলে কি আমার ওপর মন্দিরের দেবতা রুষ্ট হয়েছেন?

সব কথা শুনে জ্যোতিষী বললেন, আমারও তাই মনে হচ্ছে।
কী মনে হচ্ছে?
তোমার উপর দেবতা নাখোশ হয়েছেন।
তাহলে উপায়?
দেবতাকে খুশি করতে হবে।
কিন্তু কেমন করে? কর্মকার কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, কেমন করে দেবতাকে খুশি করব বলে দাও জ্যোতিষী।
জ্যোতিষী অনেকক্ষণ মাথা নেড়ে শেষে বললেন, কিন্তু সে যে বড় কঠিন কাজ।
হোক কঠিন। কর্মকার বলল, যত কঠিনই হোক তবু আমাকে তা করতে হবে, এ যে আমার জীবন-মরণের প্রশ্ন।
একটাই মাত্র উপায় আছে, দেবতার উদ্দেশ্যে একটি পবিত্র জীবন উৎসর্গ করতে হবে। জ্যোতিষী বললেন।
সে কেমন?

তোমাকে দেবতার উদ্দেশ্যে একটি পবিত্র জীবন উৎসর্গ করতে হবে। একটি পবিত্র বালক বা বালিকাকে তোমার ঘণ্টার ঢালাইয়ের পাত্রে জীবন বিসর্জন দিতে হবে।
সে কী কথা? জ্যোতিষীর কথা শুনে কর্মকার যেন আঁতকে উঠল, একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন নষ্ট করতে হবে আমাকে?
তাছাড়া আর যে উপায় নেই।
তা হয় না জ্যোতিষী। কর্মকার বলতে লাগল, যদি আমার একটি ঘণ্টা তৈরি করার জন্য একটি পবিত্র শিশুর জীবন নষ্ট করতে হয় তাহলে আমার ঘণ্টা তৈরির দরকার নেই। তবু একটি শিশুর জীবন নষ্ট করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এতে যদি সম্রাটের হাতে আমার নিজের জীবনও যায় তবু ভালো।
বেশ তোমার যা ইচ্ছে তাই করো। জ্যোতিষী মনোক্ষুণœ হয়ে বললেন।
কর্মকার বললে, তাই করব। আমি আমার সমস্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আবার তৈরি করব ঘণ্টা। তবু শিশুহত্যা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

এদিকে হয়েছিল অবাক কাণ্ড। কর্মকারের ছিল এক মেয়ে। নাম ছিল তার মাও আই (গড় অর)।
মাও আইয়ের বয়স তখন মাত্র বারো বছর। বাবা যে সম্রাটের ঘণ্টা তৈরির ব্যাপারে খুব বিপদে পড়েছে তা সেও বুঝতে পারছিল।

এই যে আজ তার বাবা জ্যোতিষীকে ডেকে এনেছিল, তাও সে জানে এবং সে পর্দার আড়ালে থেকে সব কথা শুনেছেও।
মাও আই তার বাবাকে খুব ভালোবাসত। বাবার এই বিপদ সেও সহ্য করতে পারছিল না।

তার মন চাইছিল সে যদি কোনোভাবে বাবাকে সাহায্য করতে পারত!

জ্যোতিষী যে কথাটা বলে গেল তা শুনেই তার মাথায় খেলে গেল এক নতুন চিন্তা।

তাহলে তো বেশ হয়। সে যদি বাবার জন্য জীবন-উৎসর্গ করে তাহলে ঘণ্টা তৈরি ঠিক হবে। আর তখন বাবার বিপদ কেটে যাবে। তাহলে খুব ভালো হবে।

এদিকে কর্মকার তৃতীয়বারের মতো আবার শুরু করল তার ঘণ্টা তৈরির কাজ। শুরু হলো বিশাল চুল্লিতে লোহা গলানোর কাজ। কর্মকারের যত রকম বিদ্যা জানা ছিল তার সবকিছু দিয়েই সে তার কাজ শুরু করল।

বিশাল কড়াইয়ে তখন ভীষণ উত্তপ্ত লোহা গলানো হচ্ছিল। লাল গনগনে গলিত লোহা। টগবগ করে ফুটছে।

ঠিক সেই মুহূর্তেই ঘটল আরেক ঘটনা। কোথা থেকে দৌড়ে এসে তার ছোট মেয়ে মাও আই সহসা ঝাঁপিয়ে পড়ল উত্তপ্ত কড়াইয়ের ওপর।

মাত্র এক মুহূর্তের ঘটনা। মাও আইয়ের ছোট শরীরটা গলিত লোহার মধ্যে পড়ে গেল, মুহূর্তে পুড়ে একাকার হয়ে গেল। চোখের পলকে তার গোটা শরীরটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল গলিত লোহার মধ্যে।

বাবা ও অন্যরা একটু চিৎকার দেবার অবকাশও পেল না।

যত মর্মান্তিক ঘটনাই হোক, লোহা যখন গলানো হয়ে গেছে তখন সেই মাও আইয়ের দেহমিশ্রিত লোহা দিয়েই তৈরি হলো ঘণ্টা।
কিন্তু সত্যিই অবাক কাণ্ড। জ্যোতিষীর কথা ফলে গেল হাড়ে হাড়ে। ঘণ্টার এমন জোরালো আওয়াজ হলো যে, তা এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার!

সম্রাট খুব খুশি হলেন। এমন কাজই তো তিনি চেয়েছিলেন। সম্রাট প্রচুর পুরস্কার দিলেন কর্মকারকে।

সেই মাও আইয়ের দেহমিশ্রিত ঘণ্টা আজও আছে চীনে।

গল্পটি শেষ হয়নি। তবু একটু থামি।

প্রথমে দেখ, গল্পটির নাম ‘একটি অলৌকিক ঘণ্টার গল্প’। ‘অলৌকিক’ শব্দটিকে খেয়াল কর। যখন কোনো কিছুকে স্বাভাবিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না, তখন তাকে অলৌকিক বলা হয়। এই ঘণ্টার ঘটনায় লক্ষ কর
প্রথম প্রশ্ন, ঘণ্টাটি কেন জোরে বাজল না?
কেন মেয়েটির আত্মত্যাগের পর ঘণ্টাটি বাজল?

একটি ব্যাখ্যা এভাবে আসতে পারে যে, কারিগরের সবচেয়ে প্রিয় তার মেয়ের জীবনের বিনিময়ে দেবতা সন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই ঘণ্টাটি বেজেছে। তাহলে একটি কথা ধরে নেওয়া হচ্ছে, আগে দেবতা রুষ্ট ছিলেন, তাই ঘণ্টা বাজেনি। অর্থাৎ, মেনে নেওয়া হচ্ছে, ঘণ্টা বাজা না বাজা দেবতার সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করে।

মেয়েটির আত্মত্যাগের পর ঘণ্টাটি বাজল। এমন একটি ঘটনা ধীরে ধীরে মিথ হয়ে ওঠে। তৃতীয়বারে সফল হয়েছে তাই হয়তো দান দান তিন দান বা লাকি নাম্বার এই জাতীয় কথা যোগ হয়। যুগ যুগ ধরে এই ঘটনা বেঁচে থাকে কবিতা, গান, গল্প হয়ে। সুরে সুরে, ছন্দে ছন্দে কথাগুলো প্রচলিত হয়। তুই তো পড়েছিস
‘মরিল বাবর না না ভুল কথা, মৃত্যু কে তারে কয়?
মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়,
পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়!’

এর সাথে সাথে ত্যাগের মহত্ত্বও গীত হয়। সাফল্যেও পেছনের মূলমন্ত্র হিসেবে দেবতার তুষ্টি এবং মানুষের উৎসর্গের কথা ধরা হয়। ঞযব ংঁভভবৎবৎ সঁংঃ পষরহম ঃড় যরং ভধরঃয রহ যরসংবষভ ধহফ রহ এড়ফ; যব সঁংঃ ধপপবঢ়ঃ ঃযব রহবীঢ়ষরপধনষব ভধপঃ ঃযধঃ যরং ড়হি ঁহফবংবৎাবফ ংঁভভবৎরহম রং ঃযব ড়িৎশরহম ড়ভ এড়ফ’ং লঁংঃরপব.

খেয়াল কর, এখানে বিশ্বাস জন্মেছে দেবতার সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় কিছু উৎসর্গ করলে সাফল্য আসবে, উদ্দেশ্য সাধন হবে। একে প্রমাণ করার জন্য এই গল্পটিও বলা হবে। ভেবে দেখ, সমাজজীবনে এটি কীভাবে প্রভাব ফেলে?

আত্মত্যাগের মাহাত্ম্য গাওয়া হচ্ছে, একই সাথে সাফল্যের মূলমন্ত্র উৎসর্গ এই বিশ্বাসও করা হচ্ছে। এর নজিরও প্রচলিত গল্পগাথা থেকে টানা হচ্ছে। এই প্রচলিত গল্পগাথা মানুষের বিশ্বাসকে প্রভাবিত করে। সমাজজীবনে একে চর্চা করতে গিয়ে একটি মহৎ ঘটনাও অনেক পীড়াদায়ক প্রথার সূত্রপাত করতে পারে। নিশ্চয়ই আত্মত্যাগ, সংযমের অনুভূতি খুব পবিত্র। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে এটি প্রতিষ্ঠা করে ফেলে সহমরণ, সতীদাহ, নরবলি, নিরীহ পশুবলির মতো বর্বর প্রথা। প্রথাগুলোর মধ্যে নৃশংসতা থাকলেও প্রচলিত গল্পগাথা থেকে উদ্ভূত বিশ্বাসের কারণে এগুলোকে চিহ্নিত করা হয় পবিত্র কাজ হিসেবে।

যে গল্পগাথাতে লিপিবদ্ধ থাকে তার ভাষার বুনিয়াদ যথেষ্ট মনোগ্রাহী হয় এবং এর প্রভাব এত বেশি হয় যে, একসময় এর কথাগুলো এক ধরনের চিরন্তন সত্যের স্থান পায়। ধীরে ধীরে এই শ্র“তি জ্ঞানের উৎস এমন কথাও মেনে নেওয়া হয়। যে যুগে যার জয় তার সাথে এই শ্র“তির সম্পর্ক আবিষ্কারের চেষ্টা করা হয়। যেমন, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে এই শ্র“তির জ্ঞান পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক এমন কথা প্রচার করা হয়।

আচ্ছা, গল্পটি শেষ করে পরে বাকি কথা বলি।

মাও আইয়ের দেহমিশ্রিত ঘণ্টার আওয়াজ চমৎকার হয়েছে। এটা কিন্তু আদৌ কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়। জ্যোতিষীর কথাও সত্যি নয়। দেবতার অভিশাপ বলেও কিছু ছিল না এখানে। এর পেছনে ছিল একটি বাস্তব বৈজ্ঞানিক কারণ।

বহু বছর পরে বিজ্ঞানীরা এই ঘণ্টার ধাতুর গুণগত মান পরীক্ষা করে দেখেছিলেন এবং অবশেষে উদ্ধার করেছিলেন এই কিংবদন্তির মূল সত্য কথা।

আসলে আগের দু বার যে ঘণ্টার আওয়াজ সঠিক হয়নি তার কারণ হলো ধাতুর মিশ্রণে ত্র“টি ছিল। কর্মকার ঢালাইয়ের সময় লোহার সাথে মিশিয়ে ছিল কাসা, সোনা, রুপা, তামা ইত্যাদি ধাতু। কিন্তু ধাতুর আওয়াজ জোরালো করতে হলে আরো একটি পদার্থের মিশ্রণ প্রয়োজন। সেটা হলো ফসফরাস। ফসফরাসের অভাবেই ধাতুর আওয়াজ জোরালো হয়নি।

তারপর যখন তৃতীয় বারে ওইসব ধাতুর সাথে মাও আইয়ের শরীর মিশে গেল তখন আওয়াজ জোরালো হলো, কারণ তার শরীরে ছিল প্রচুর ফসফরাস। সব মানুষের দেহেই ফসফরাস আছে। একটা তথ্য জেনে রাখ, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে যে পরিমাণ ফসফরাস আছে তা দিয়ে কমপক্ষে ৮০০ দিয়াশলাই তৈরি হতে পারে এবং ৬৮ কেজি ওজনের মানুষের শরীরে ফসফরাসের পরিমাণ ৬৮ গ্রাম। এই ফসফরাস মিশ্রিত হওয়ার জন্যই ঘণ্টার আওয়াজ জোরালো হয়েছিল।

এখানে অলৌকিক বলে কিছু ছিল না।

বুঝতেই পারছিস এটি আসলে পুরোপুরিই একটি লৌকিক ঘণ্টার গল্প। ঘণ্টা বাজার ঘটনাটি পুরোপুরিই লৌকিক ঘটনা, যেমন লৌকিক ঘটনা আগুন জ্বলে পাথরে পাথর ঘষে।


ভাষা বোঝার আশা

‘পাথরে পাথর ঘষে যদি আগুন না জ্বলে
আমরা আঁধারে আঁধার ঘষে
ব্যতিক্রমী আগুন জ্বালবো।’

কবিতার কথাগুলো মীনাকে ভাবাচ্ছে।

মীনার মনে পড়ে ওর ছোটবেলার কথা। গ্রামে একটি ভাঙ্গা পুরাতন বাড়ি ছিল জংলায় ভরা। সবাই বলত ভূতের বাড়ি। ভেতরের ঘরগুলোতে দিনের বেলাতেও ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। কেউ ভেতরে যেতে সাহস করত না।

দন কিহোতের গল্প পড়ে হঠাৎ দাদাবুড়োর মাথায় কেমন যেন পাগলামি চেপেছে। তিনি বাড়ির ভেতরে যাবেন। কেউ তো সাথী হতে চায় না। সেদিন ছয় বছরের মীনাই ছিল একমাত্র ভরসা।

মীনার এখনও মনে আছে, ঘরের উঠান থেকে দাদাবুড়ো দুটি সাদা পাথর তুললেন, ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে ঢুকে মীনাকে পাথরের সাথে পাথর ঘষে দেখাল। মীনা দেখে আগুনের ফুলকি, আলোর ছিটানি। মীনা চমকে গিয়েছিল, মনে হলো ম্যাজিক।

পাথরে পাথর ঘষার বিষয়টি যে কোনোরকম ম্যাজিক না, এটি সেদিন দাদাবুড়ো বুঝিয়ে ছিলেন বটে, কিন্তু মীনার মাথায় সেসবের কিছুই ঢোকেনি। একটি বিস্ময়বোধ তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।

এখন মীনা যথেষ্ট বড় হয়েছে। পরে পাথরে পাথর ঘষে আগুন আবিষ্কারের বিষয়টি তাকে নানাভাবে চিন্তার খোরাক জুুগিয়েছে। কীভাবে আগুনের আবিষ্কার হলো, মানুষের সভ্যতায় তা কত বড় অবদান রেখেছে এমন নানা বিষয় নিয়ে সে পড়েছে, ভেবেছে।

দাদাবুড়ো তাকে একদিন বলেছিলেন, ‘দেখ, আজ আমরা সবাই জানি পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বলে। বছরের পর বছর মানুষ দেখে দেখে এই পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বলার ঘটনা বুঝতে পেরেছে। তারপর দেখে দেখে ভেবে ভেবে আরও বুঝেছে, শুকনো কিছুর সাথে শুকনো কিছু ঘষলে এমন ফল পাওয়া যায়। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে সেকালের মানুষ এই জ্ঞান অর্জন করেছে। আরও পরে একে তত্ত্ব দিয়ে সাজিয়েছে আর নানা রকম নাম দিয়েছে। যেমন, ঘর্ষণের কথা তুই স্কুলের বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছিস।

পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বলে এই জ্ঞান আমরা অর্জন করেছি কিন্তু তার উল্টো পথে। বইয়ে পড়েছি পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বলে। তারপর এটিকে পরীক্ষা করছি পাথরের সাথে পাথর ঘষছি।’

মীনা এখনও কবিতার চরণগুলো নিয়ে ভাবছে। কবি আঁধারে আঁধার ঘষে আলো জ্বালাবার কথা বলেছেন। বিষয়টি অসম্ভব। কবি এমন আজগুবি কথা কেন লিখবেন?

দাদাবুড়ো মীনাকে বোঝাবার চেষ্টা করেন।

মীনার মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি শিল্পীর সৃষ্টির মাঝে ভাবনাচিন্তার কোনো খোরাক নেই?

মীনার স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। ওর ছোটভাই রাজু তখন খুব দুরন্ত ছিল। সারাক্ষণই ছুটছে আর কোনো না কেনো অপকর্ম করছে। ওকে শাসনও করা যায় না। বকা দেবার আগেই মায়াভরা এমন উদ্ভট কথা বলে ফেলে, যে শাসন করতে যাবে তার রাগ একদমই পড়ে যায়।

একদিনের ঘটনা :

মাঠে গরুর সাথে দুষ্টুমি করতে গিয়ে কিছু একটা বোধহয় হয়েছে। ও এসে মীনাকে বলে, ‘আপু। গরু আমাকে ঢিপ দিছে।’
মীনা দেখেছে রাজু সারাক্ষণই গরুর কাছে ঘোরাঘুরি করত আর সুযোগ পেলেই গরুর সাথে দুষ্টুমি করত। মীনাও দুষ্টুমি করে উত্তর দেয়, ‘তা তুই উল্টা ঢিপ দিস নাই?’

রাজু গম্ভীর হয়ে মাথায় দুই আঙুল উঁচিয়ে বলে, ‘আমি পারি নাই। আমার যে শিং নাই।’

ওদের পাখি মিঠুও বলতে থাকে, ‘শিং নাই। শিং নাই।’

ব্যস, রাজুর কথা শেষ। এতক্ষণ যে ও বসে থেকেছে এ-ই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। উঠান থেকে দৌড়ুতে দৌড়ুতে দাদাবুড়োর ঘরে যায়।

মীনা দেখে যে, অনেকক্ষণ, মানে প্রায় মিনিটখানেক রাজু ঘর থেকে বের হয় না। মীনাও দাদাবুড়োর ঘরে ঢোকে। ঘরের ভেতরে দেখে দাদাবুড়োর সাদা দেয়ালে রাজু ছবি এঁকেছে একটি গরু গুঁতা দিচ্ছে, রাজুর মতোই একজন শুকনো-পটকা মানুষ পড়ে গেছে আর পাশে মিঠুর মতো দেখতে একটি পাখি বসে আছে।

মীনার মনে আছে, দাদাবুড়ো খুব মনোযোগ দিয়ে রাজুর কাণ্ডকারখানা দেখছিলেন। রাজু তার কর্মকাণ্ড শেষে আবার বেরিয়ে যায়।
দাদাবুড়ো ছবির বই বের করে মীনাকে একটি ছবি দেখান।


চিত্র ১


দাদাবুড়ো বই থেকে পড়ে শোনান : ‘কোন এক আকস্মিক জীবন পর্বে মানুষের সমস্ত প্রবণতা ছবির কাছে আশ্রয় চেয়েছিল। যে আদিম মানুষ তার গুহার দেয়ালে প্রথম শিকারদৃশ্য প্রতিস্থাপন করেছিল, কোন নিরন্তর পীড়নে সে তা করেছিল সেই ইতিহাস সে লিখে রেখে যায়নি। কোন তাড়না তাকে বিস্ময়কর কথাচিত্র স্থাপনার দিকে ধাবিত করেছিল, চারিদিক মন্দ্রিত কোন ধ্বনিঝংকার তাকে টেনেছিল এই নিরুদ্দিষ্ট পথ চলার পথে, আর এভাবে তার শিল্প বুদ্ধিতে অনুপ্রবণ হয়ে উঠার ইতিহাস আমাদের পক্ষে আজকে আর জানা সম্ভব নয়। যখন একমাত্র সংগ্রামই হয়ে উঠেছিল আদিম মানুষের মৌলিক প্রবৃত্তি তখন সে কী করে ছবি আঁকার দিকে ধাবিত হলো? প্রাগৈতিহাসিক মানুষও তার প্রাত্যহিকতার যুদ্ধকে অতিক্রম করে, নিজের প্রবৃত্তিপ্রাণীত সহজাত ক্রিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়েছিল গুহার দেয়ালে। শত্র“পক্ষের শক্তিকে বশ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এই প্রতীকী আচরণ সে করেছিল কেন? অন্য সকল আচরণ থেকে কেন পৃথক এটি? শত্র“পক্ষকে বশ করার প্রয়োজন কি তাকে শিল্পী করেছিল যখন সে অঙ্কনরীতির কৌশলকলা, রূপগড়নের প্রকরণ জানতো না? সেই প্রাচীন পৃথিবীর শিল্প ইতিহাসের পথ ধরেই আমরা পরবর্তী সময়ে পেয়েছি আশ্চর্য সব স্থাপত্য, ভাস্কর্য আর চিত্রকলা।’

‘কথাগুলো একটি শক্ত হয়ে গেল।’ দাদাবুড়ো সহজ করে বললেন, এই ছবিটা আদিম সমাজকে বুঝতে সাহায্য করবে। গরুর মতো দেখতে এই জন্তুটার নাম বাইসন। লক্ষ কর, বাইসনের সামনের দিকটা। শরীরের সামনের দিকটা বিশাল কিন্তু পেছনের অংশ ছোট আর পাগুলো দেখ কেমন সরু। শিংজোড়ার মধ্যে খুব ক্ষিপ্র ভাবটি ফুটেছে। একটা বিষয় বোঝ, ছবিটি খ্রিস্টপূর্ব ১৫ হাজার বছর থেকে ১০ হাজার বছর সময়ের মধ্যে আঁকা। তখন যিনি এঁকেছেন তিনি একই সাথে একজন শিল্পী এবং শিকারি। খাদ্যের তখন প্রধান বা একমাত্রও অবলম্বন বলা যায় পশু শিকার। সেই পশুর ছবিই গুহার গায়ে আঁকা হয়েছে। এটা খুবই সম্ভব যে বাইসনের শক্তি, গতি এসব ইমেজ শিল্পী-শিকারিকে নাড়া দিয়েছিল। সেই সাথে ছবি আঁকার পেছনে এই বিশ্বাসও হয়তো কাজ করেছিল যে ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে তারা শিকারের আত্মাকে নিয়ন্ত্রণ এবং তার শক্তিকে প্রশমন করতে পারবে। এমন ছবি আরও আছে। শিকার আহত অথবা তীরবিদ্ধ এমন দৃশ্য সেখানে ফুটে উঠেছে।

এখানে মানুষকে আঁকা হয়েছে খুব শুটকা, দেখলেই বোঝা যায় সে খুব অসহায়। আবার পাখির ছবি আছে সেই সাথে। এই পাখির ছবি কেন আঁকা হয়েছে তা কিন্তু আজও রহস্য। এটির পেছনে নিশ্চয়ই শিল্পীর কোনো না কোনো ভাবনা কাজ করেছে, কিন্তু কী সেই ভাবনা, এটি কি কোনো টোটেম কোনো দিনও হয়তো আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারব না।

তোকে যে কথা বলতে চাইছি তা হচ্ছে, এই যে একটি ছবি বা শিল্পকর্ম, এর পেছনেও কিন্তু অনেক চিন্তাভাবনা কাজ করে। মনের রঙে রাঙানো ভাবনা আর কল্পনার প্রকাশ ঘটে তার ছবিতে। তবে এর অনেক রহস্যই থাকবে নীরব। যিনি দেখবেন তিনি আবার তার মতো করে ব্যাখ্যা দেবেন, তার মতো করে ভাববেন। এভাবে চিন্তা করে করে, ভেবে ভেবে কাটে রাতের পর রাত।

পাখি সব করে রব

ভোর হলো। পাখির কিচির-মিচির আরম্ভ হয়েছে। আকাশজুড়ে ছড়ানো লালিমা, বাতাস বইছে। দাদাবুড়ো আর মীনা হাঁটছে, রাজু দৌড়াচ্ছে, সাথে মিঠু কখনো উড়ছে, কখনো রাজুর ঘাড়ে আর কখনো ডালে বসছে। দাদাবুড়ো, মীনা, রাজু চুপটি করে আছে, মিঠু অন্য পাখিদের সাথে গলা মিলিয়ে গান করছে। ধীরে ধীরে আকাশ ফর্সা হচ্ছে। সকলে ঘরে ফিরল। দাদাবুড়ো আবার আরম্ভ করলেন কথা, মীনা সময় নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে কথা শোনার জন্য। রাজুর সময় নেই, সে আবার গেছে গরুর সাথে খেলতে। দাদাবুড়ো বলছেন :

‘মানুষ তার চিন্তায়, মনে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। যূথবদ্ধ সমাজ থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রতিটি মানুষ তার স্বতন্ত্র একটা সত্তার সন্ধান পায়। খাদ্য আর আশ্রয়ের চিন্তার বাইরেও তার চিন্তার ক্ষেত্র প্রসারিত হয়। তার শিল্পসৃষ্টিতে তার ভাবনার প্রকাশও ঘটে। তার চিত্রকর্মে এক ধর্ম ভাবনার প্রতিফলন ঘটে। সুর সৃষ্টির মাঝেও কোনো মহাশক্তির প্রতি বন্দনার প্রকাশ ঘটে। ধীরে ধীরে ভাষার জন্ম হয়। ভাষার জন্ম মানুষের চিন্তার ক্ষেত্রকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়।

সভ্য হবার এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে বিভিন্ন মতবাদের জন্ম হয়। এসব প্রাচীন মিথ মানুষের ভাবনার প্রকাশ, তার চিন্তাক্ষেত্রের ক্রমোন্নতির প্রতীক। মানুষ থেমে থাকে না। তার মাঝে ধর্মভাবনার গণ্ডীর পর বিজ্ঞানচেতনা আসে। মানুষ প্রাচীন মতবাদের বিরোধিতা করা শুরু করে তার যুক্তিবোধ থেকে। লালিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মানুষ অবস্থান নেয়। সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্বের। একটি মিশরীয় মিথের উদাহরণ দিই :
চিত্র ২



দেবদেবীদের অস্তিত্ব সৃষ্টির আগে পৃথিবী ছিল অন্ধকার, পানিতে ডুবন্ত সেই অবস্থাকে নান (ঘটঘ) বলা হয়। তারপর পানির তল থেকে এক টুকরো ভূখণ্ড ভেসে উঠল আর সময়ের শুরুও সেখান থেকে। সেই ভূখণ্ডে প্রথম দেবতা আশ্রয় পেল। সেই দেবতা পাখির রূপ নিল। কখনও বাজপাখি, কখনওবা সারস, আবার কখনও হলুদ দোয়েল। প্রথম দেবতা ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন যে তিনি একা। তখন অন্যান্য দেবতা ও মানুষ সৃষ্টি করা হয়। সূর্যদেবতার ঘাম থেকে দেবতা আর অশ্র“বিন্দু থেকে মানুষ সৃষ্টি। মিশরের হেলিপলিসে সূর্যদেবতার মন্দিরে প্রথম দেবী পাখিটির ছবি আছে। সেই পাখিকে সূর্যদেবতা পৃথিবীতে প্রেরণ করেন এবং পাখিটি প্রথম অন্ধকার পৃথিবীতে আলো বয়ে আনলেন আর পাখিটি পৃথিবীর ভূখণ্ডে অবতরণ করা মাত্র প্রচণ্ড চিৎকার করেন আর সেই চিৎকারটি থেকেই শব্দের উৎপত্তি। (প্রাচীন মিশরবাসীর বিশ্বাস)

এখন দেখি বিজ্ঞান কী বলে : কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে নানা পরিবর্তন, সংঘর্ষ থেকে জীবের জন্ম আর তারই বিবর্তন হতে হতে এবং প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বেঁচে আছে। পৃথিবী যখন পানিতে ডুবে ছিল তখন অমেরুদণ্ডী প্রাণী অর্থাৎ খোলস দিয়ে ঢাকা ‘সামুদ্রিক শেল’জাতীয় (গড়ষষঁংশ) প্রাণীর উদ্ভব হয়। ধীরে ধীরে তাদের দেহে মেরুদণ্ড ও হাড়ের উদ্ভব হয়। তারা পানির মাঝেই অক্সিজেনকে প্রশ্বাসে গ্রহণ আর কার্বনডাইঅক্সাইডকে নিঃশ্বাসে ত্যাগ করে। এরা হচ্ছে মৎস্যকূল অর্থাৎ মাছ। ধীরে ধীরে পৃথিবীর পানি কমে মাটি ভেসে ওঠে। তখন মাছদের কেউ কেউ জলে ও ডাঙ্গায় উভয় জায়গায় বাস করতে চায়। সেই উভয় (দুই) জায়গাতেই চরে (চলতে পারে) মাছের বিবর্তিত ‘উভচর’ প্রাণী। আরও পরে পানি কমে মাটি বাড়তে থাকে। তখন জল ছেড়ে ডাঙ্গাতে প্রাণীরা বাস করতে চায়। ‘উভচর’ প্রাণীর মধ্যে কেউ কেউ বিবর্তিত হয়ে ‘সরীসৃপ’ হয় অর্থাৎ এরা বুকে ভর করে চলে। চলার পর প্রাণী উড়তে চায়। সরীসৃপ থেকে উষ্ণ (গরম) রক্তের ডানাওয়ালা প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে। পৃথিবীর রূপ পরিবর্তন হয় সাথে সাথে। এই ডানাওয়ালারাই পক্ষিকূল অর্থাৎ পাখি।

উদাহরণটা একটু বড় হয়ে গেল। মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। দেখা যাচ্ছে, মিথ আর বিজ্ঞানভাবনা উভয়ের মাঝে সাধারণ (পড়সসড়হ অর্থে) একটা বক্তব্য আছে। কিন্তু বিশ্লেষণ ও যুক্তির মাধ্যমে কিছু ভ্রান্ত ধারণা থেকে একটা যৌক্তিক মতবাদের আবির্ভাব হয়েছে।

এই যুক্তির আগমন আর শব্দের সম্মিলন উভয়ের উপস্থিতি থেকেই বিতর্কের জন্ম।

যখন অনুভূতি ছাড়াও কোনো বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচারের জন্য শিল্পকর্ম সৃষ্টি হয় এবং সেগুলো কোনো মতবাদ আকারে রূপ নেয়, কালক্রমে মানুষের চিন্তার পরিবর্তনের সাথে সেই মতবাদ বিতর্কিত হয়ে যায়। মানুষের চিন্তাভাবনার সীমাহীন ক্ষমতা আছে, আছে নানা দৃষ্টিতে দেখবার শক্তি। আর এই অসীম ক্ষমতার কারণে চিন্তার জগতে দ্বন্দ্বের বা বিতর্কের আবির্ভাব ঘটেছে, মতে মতে সংঘর্ষের জন্যে বিতর্ক সমৃদ্ধ হচ্ছে উত্তরোত্তর। এগিয়ে যাচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা।

দাদাবুড়ো থামলেন। হঠাৎ তার ছোটবেলার কথা মনে পড়ল, তিনি ছবি একেবারেই ভালো আঁকতে পারেন না। ক্লাস ফাইভের ড্রইং পরীক্ষায় পাখির ছবি এঁকে তিনি শূন্য পেয়েছিলেন।

শূন্য নিয়ে খেলা

মীনা কিছুটা দিশা পেয়েছে। সে বুঝতে পারে হাজার, লক্ষ, কোটি বছর ধরে পৃথিবী গড়ে উঠেছে, মানুষ মানুষ হয়ে উঠেছে। সে মানুষ তার পরিচয় হোমো সেপিয়েন্স (বুদ্ধিমান মানুষ) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে তার দীর্ঘ সাধনার জন্য। সে সোজা হয়ে দুই পায়ে দাঁড়িয়েছে, হাতকে ব্যবহার করেছে হাতিয়ার তৈরিতে, ভাষা আবিষ্কার করেছে ধীরে ধীরে, গড়ে তুলেছে সভ্যতা।

মীনা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ হোঁচট খায়। নিজেকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা, সে কেন ‘হাজার, লক্ষ, কোটি বছর’ বলছে? একটি কারণ এমন হতে পারে যে, শব্দগুলো প্রায়ই শুনে শুনে তার ভাবনার মাঝে গেঁথে গেছে। তবে এই ‘হাজার, লক্ষ, কোটি বছর’ পরিমাপের কে,নো ভিত্তি আছে কি? তার মনে প্রশ্ন জাগে। সে দাদাবুড়োর কাছে যায়।

দাদাবুড়ো মীনাকে পড়তে দেন :

পৃথিবীর বুকে আছে এক রকমের জিনিস, যার নাম ইউরেনিয়াম। এই ইউরেনিয়াম বলে জিনিসটা ভারী মজার। এর থেকে একটানা যেন একই রকম তেজ বেরিয়ে যাচ্ছে। আর ওই তেজ বেরিয়ে যাবার জন্য ইউরেনিয়াম ক্রমাগতই বদলে যাচ্ছে, বদলাতে বদলাতে এক রকম সিসে হয়ে যাচ্ছে।

ধরো মাটি খুঁড়ে একতাল ইউরেনিয়াম পাওয়া গেল। এর ওজন এক সের। হিসাব করে দেখা যায়, এই এক সের ইউরেনিয়ামের মধ্যে প্রতি বছর ১/৭৪০০০০০০০০ সের করে ইউরেনিয়াম বদলে গিয়ে এক রকম সিসে হয়ে যায়। এখন ব্যাপারটা হয় কী জানিস? মাটি খুঁড়ে খানিকটা ইউরেনিয়াম তুললে দেখতে পাওয়া যায় ইতিমধ্যেই এর অনেকখানি সিসে হয়ে গেছে। তাহলে ইউরেনিয়াম তুললে তার মধ্যেকার সিসের ওজন কতখানি এ থেকে নিশ্চয়ই হিসাব করে বলে দেওয়া যায় ইউরেনিয়ামের ওই তালটার বয়স কত হলো। যেমন যদি দেখি এক সেরের মধ্যে ১/৭৪০০০০০০০০ সের সিসে, তাহলে বলব ইউরেনিয়ামটার বয়স হলো এক বছর। যদি দেখি ১০০/৭৪০০০০০০০০ সের সিসে, তাহলে বলতে হবে ওটার বয়স একশো বছর। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবী যখন সবে জন্মাল তখন তার বুকে যে ইউরেনিয়াম সেটা ছিল খাঁটি ইউরেনিয়াম, তার মধ্যে কোন সিসের ভেজাল ছিল না। কিন্তু আজকের দিনে যেখান থেকে ইউরেনিয়াম জোগাড় করা যাক না কেন, দেখা যায় তার মধ্যে খানিকটা করে সিসের ভেজাল। আর তাই, মোট ইউরেনিয়ামটার তুলনায় সিসের যে ভেজাল তা কতখানি, এই দেখে হিসাব করে দেওয়া যায় পৃথিবীর বয়স কত হলো।

এবার দাদাবুড়ো কথা আরম্ভ করলেন,

তুই কি বুঝতে পারছিস, কেন হাজার, লক্ষ, কোটি বছর শব্দগুলো তোর মাথায় এসেছিল? তুই ছোট থেকে এই শব্দগুলো বারে বারে শুনেছিস। কেন বলা হয়েছে, তা নিয়ে ভাবিসনি। এখন ভাবতে গেলে তোকে কতগুলো বিষয় বুঝতে হবে। এই যে ইউরেনিয়ামের পদ্ধতি বললাম এটিকে আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলি। কতগুলো বিষয়, উপাদান নিয়ে পরীক্ষা করে এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে। এখন পরীক্ষা করতে গিয়ে নানা ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। বছরের হিসাব ঠিক নির্ভুল নাও হতে পারে। এতে বিজ্ঞান দুর্বল হয়ে পড়ে না। কেননা, ঠিক কী ফল পেলাম তা বিজ্ঞানচিন্তার মূল বিবেচ্য নয়। পদ্ধতিটিই আসল। যে কারণে বিজ্ঞান পরম নির্ভরতার সাথে বলতে পারে ও ধস হড়ঃ ৎরমযঃ ঁহঃরষ ও ধস নবরহম ঢ়ৎড়াবফ ৎিড়হম. এমনকি, কতগুলো অভিজ্ঞতা থেকে একটি পদ্ধতি বের করা হলো, পরে দেখা যেতে পারে এর চেয়ে ভালো পদ্ধতিও আছে। হয়তো ইউরেনিয়াম নয়, অন্য কোনো পদার্থ থেকে আরও ভালো হিসাব পাওয়া যায়। বিজ্ঞান তার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করার জন্যই এত সমৃদ্ধ, এত বিশ্বস্ত। অভিজ্ঞতা অর্জন করে, এর সাথে হিসাব এবং যুক্তি প্রয়োগ করে এই চিন্তা গড়ে উঠেছে। সদা পরিবর্তনশীল হওয়ার জন্য বিজ্ঞানশিক্ষা চিন্তাপদ্ধতি হিসেবে এত আস্থাবান। এর ফল অনিশ্চিত হতে পারে, তারপরও এর পদ্ধতির কারণেই মানুষের চিন্তার রাজ্যে বিজ্ঞান প্রতিদিন দিশা দিচ্ছে।

দাদাবুড়ো থামলেন। একটু পানি পান করে, এক ফাঁকে বইয়ের শেলফ থেকে একটি কবিতার বই হাতে নিয়ে আবার আরম্ভ করলেন :

কল্পনার রাজ্যে ‘হাজার, লক্ষ, কোটি বছর’ অন্য অর্থ রাখে। মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে ভাবে। শিল্পীর আসা-যাওয়ার পথের মাঝে নানা ভাবনার জন্ম আর এগুলোর প্রকাশ ঘটে তার সৃষ্টিতে। শিল্প তার সৃষ্টির গুণে মর্যাদা পায়, অনেক উদ্ভট ভাবনাও কেবল প্রশ্রয়ই পায় না, এর অর্থহীনতার পরও সমাদর পায়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় এরা সত্য নয়, আরো সত্য। জীবনানন্দের কবিতার চরণ ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে/সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগর
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×