somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় কি সত্যিই বিজয়?! নাকি আরও এটি রাজনৈতিক আপোষ!

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আমার একটি academic assignment করতে গিয়ে আমি অনেক অবাক হয়ে গেলাম! আমরা অনেকেই কম বেশি ২০১২ সালের ১৪ মার্চের (ITLOS) আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন আদালতের রায়ে আমাদের সমুদ্র বিজয়ের কথা জেনেছি। কিন্তু আসলেই কি সেই রায়ে আমরা সমুদ্র বিজয় লাভ করতে পেরেছি, নাকি ওটাও ছিল একটি রাজনৈতিক মিথ্যে আশ্বাস! ব্যাপারটা একটু পরেই হয়ত বুঝতে পারবেন।

আমার এই লেখার মাধ্যমে আমি যদি অন্তত কিছু মানুষকেও ব্যাপারটা বোঝাতে পারি তবেই আমার লেখাটি সার্থক। আর এ বিষয়ে আমার লেখাটি কতটুকু যুক্তিপূর্ণ হবে সে নিয়ে যদি কারো মনে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাই আমি আগেই একটা ব্যাপার জানিয়ে দিচ্ছি যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪র্থ বর্ষের একজন ছাত্রী এবং সমুদ্র আইন সম্পর্কে আমাদের একটি সম্পূর্ণ আলাদা course পড়ানো হয়ে থাকে। তাই এই বিষয়ে আমরা মোটামুটি ভালোই ধারণা রেখে থাকি। উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে সমুদ্র অঞ্চলের কতটুকু দাবী করার নিয়ম রয়েছে তা UNCLOS(United Nations Convention on the Law Of the Sea)-এ উল্লেখ করা রয়েছে। তবে এসব বোঝানোর জন্য যেসব পদ্ধতি রয়েছে তা এই ব্যাপারে গবেষণা না করলে অনেকেই বুঝবেন না বলে আমি একটি ছবি ব্যাবহার করব যাতে করে যারা এ বিষয়ে সব কিছু জানেননা তাদের বুঝতে সুবিধা হয়। বাংলাদেশের মানচিত্র এবং বঙ্গোপসাগরের অবস্থান অন্যান্য দেশ থেকে একটু ভিন্ন ধরণের বলে এর দাবী নিয়ে একটু বিতর্ক রয়েছে। নিম্নক্ত লিঙ্কের ছবিটিতে তা হয়তো কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন যে বাংলাদেশের আকৃতি একটু চোঙের মত মানে দক্ষিণ দিক থেকে একটু বাড়তি ভূমির মত মনে হয়। কিন্তু সব কিছু হিসেব করে নিয়ম অনুসারেই ITLOS (International Tribunal on Law Of the Sea) -এর কাছে দাবী করা হয়েছিল।

সমুদ্র বিজয়, নাকি আপোষ!

উপরোক্ত লিঙ্কের ছবিটিতে খুব স্পষ্ট ভাবেই দেখা যাচ্ছে যে কালো রঙের চারকোণা অংশটুকু বাংলাদেশ দাবী করেছে সমুদ্র আইন এর নিয়ম অনুসারে যে নিয়ম ১৯৮২ সালে UNCLOS-এ সকল UN সদস্য রাষ্ট্র দ্বারা অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্ত ২০১২ সালের ১৪ মার্চে বাংলাদেশের যে সমুদ্র জয়কে সমগ্র পৃথিবীর সামনে দেখানো হয়েছে সেখানে আসলেই কি একটি উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছে? নাকি এখানেও বাংলাদেশ গোপনে ভারত এবং মায়ানমার এর সাথে আপস করেছে?
এই ছবিটিতে যে ত্রিবুজ আকৃতির অংশটুকু দেখা যাচ্ছে ITLOS বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় হিসেবে ততঃটুকু অংশকে বুঝিয়েছে। আর বাংলাদেশের সমুদ্র প্রকৌশলীরা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রিরা তাই নিয়েই হইচই করে ফিরে এসেছে এই বলে যে বাংলাদেশ তার প্রাপ্য সমুদ্র অঞ্চল জয় করেছে। কিন্তু শুধু মাত্র এই ছবিটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে আসলেই বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় কতটুকু সার্থক করতে পেরেছে! এখানে ভারত ও মায়ানমার এর স্বার্থ আগে দেখা হয়েছে এবং আপস করে শুধু মাত্র দীর্ঘের দিক থেকে বাংলাদেশ যতটুকু দাবী করেছিল ততঃটুকু পেলেও প্রস্থের দিক থেকে তা পেয়েছে ১/৩ অংশ মাত্র। সমুদ্রের মানচিত্র ও একটা উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে কতটুকু দাবী করার অধিকার এসব বিষয়ক জিনিস গুলো নিয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই সঠিকভাবে জানেননা বলে এটাকেই সমুদ্র জয় হিসেবে চালিয়ে দিতে বাংলাদেশের স্বার্থান্বেষী রাজনিতিবিদদের তেমন কোন ঝামেলাই পোহাতে হল না! অন্যসব ঝামেলার মধ্যে এই ব্যাপারটিও ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে ধীরেধীরে। ঠিক যেমন ভাবে অন্য সকল বিষয়ই ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে আর বিদেশী স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে এদেশের সম্পদ ব্যাবহার করে। বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরাশক্তির কাছে আপোষ মেনে নিচ্ছে আর এই সমুদ্র বিজয়ের ব্যাপারটিও তার বেতিক্রম নয়।

আমার এই লেখাটি পড়ে অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন যে সামনে নির্বাচন আসছে তাই একটা পুরানো ব্যাপার কে নতুন ভাবে তুলে ধরছি সরকারের বিরোধিতা করার জন্য। কিন্তু আমি বলবো যে সরকারের কোন গোপন নীতি বুঝতে পেরে সবাইকে জানানোটা সরকারের বিরুদ্ধে গেলেও দেশবাসীর পক্ষে।
সমুদ্র বিজয়ের ব্যাপারটা কতটুকু সত্যি আর কতটুকু আপোষ এই সম্বন্ধে একবার হলেও ভেবে দেখবেন। আর আপনাকে একবার ভেবে দেখার ক্ষেত্রে আমার এই লেখাটি সামান্যতম যদি সাহায্য করতে পারে তবেই আমি সার্থক। :)


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৫৪
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×