somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালি-বৃটিশ প্রেমিক যুগলের বেদনাবিধুর সলিলসমাধি

২৩ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেমের মরা জলে ডোবে না। কিন্তু সেকথা মিছেই থাকলো ফয়েজ উদ্দিন ও সারা রিলেন্সের জীবনে। তাদের শোকে কাঁদছে বৃটেনের ওয়েস্ট মিডল্যান্ড ও তাদের কলেজের সহপাঠীরা। বৃটিশ কন্যা সারা প্রেমে পড়েছিলেন সিলেটের যুবক ফয়েজের। তারা পড়তেন হেলসেওয়েন কলেজে। ফয়েজের বয়স ১৮। সারার ১৭। তারা বসেছিলেন একটি খালের ধারে। গল্প করছিলেন। তারা আসলে চুটিয়ে প্রেম করছিলেন। গোপনীয়তা রক্ষা করা সত্ত্বেও বিষয়টি কলেজের সহপাঠীদের অনেকেই জেনে গিয়েছিলেন। কারণ, তাদের প্রেমের ব্যতিক্রমী দিক ছিল। একই জাতিগত পটভূমি থেকে আসা ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রেম স্বাভাবিক, সেটা বিরল নয়। কিন্তু তাদের জুটি যথেষ্ট বিরল ছিল। ইংলিশ দুহিতা সারা ও বাঙালি ছেলে ফয়েজ তাদের প্রেমের ব্যাপারে বিশ্বস্ত ও অকপট ছিলেন। গত ২৬শে অক্টোবরের ঘটনা। তারাবসেছিলেন ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের স্মেথউইক লকসে। তারা কে কিভাবে পানিতে পড়ে গিয়েছিলেন তার বিবরণ জানা যায়নি। বৃটিশ প্রেস বিশেষ করে ডেইলি সান ও মিরর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সারার বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব সকলেই একমত যে, প্রথমে পড়ে যান ফয়েজ। এরপর তাকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন সারা। কেউ বাঁচতে পারেননি তারা। হয়তো সাহায্য চেয়েছিলেন। হয়তো তারা আর্ত চিৎকার করেছিলেন। কিন্তু তাদের করুণ সলিলসমাধি ঘটে।
সারার একজন শোকাহত বান্ধবী যিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন, তিনি বলেছেন, ফয়েজ ডুবে যাচ্ছিলেন। এ সময় সারা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনিও নিজকে রক্ষা করতে পারেননি। আমি দেখলাম নার্সরা তার বুকে পাম্প করছিলেন। কিন্তু সারা সাড়া দিচ্ছেন না। ‘যুক্তরাজ্যের নিমজ্জিত প্রেমিক যুগল’ শিরোনামে বৃটিশ পত্রপত্রিকা ও ওয়েবসাইটগুলোতে এখনও ফলো আপ রিপোর্ট ছাপা হচ্ছে। সবশেষ খবর এসেছে, ফয়েজকে তার বিয়ানিবাজারের গ্রামের বাড়িতে গত ৫ই নভেম্বর দাফন করা হয়েছে। ৯ই নভেম্বর যোয়ান্নি ব্রাউন লিখেছিলেন, আজ সারার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। ৮ই নভেম্বর তেরি লুইস স্কেলডন, সারার বান্ধবী লিখেছেন, প্রিয় সারা, আমি কাল তোমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্রাইডজমেইড (যে পোশাক নববধূর বান্ধবীরা বিয়ের দিনে পরে থাকে) পোশাকে অংশ নেবো। এটাই হবে তোমার প্রতি আমার ভালবাসার নিদর্শন।’ বার্মিংহাম মেইল পত্রিকায় স্টিভ ব্রাডলি গত ২৮শে অক্টোবর লিখেছেন, মিডল্যান্ড ক্যানেলে দ্বৈত বিয়োগান্তক ঘটনার জন্ম নিলো। এক টিনএজ গার্ল খালে পড়ে যাওয়া তার প্রণয়ীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি। তারা সম্প্রতি পরস্পরের প্রেমে পড়েছিলেন। তাদের ডুবে যাওয়ার সময়টা হবে সন্ধ্যা সাতটা কুড়ি মিনিটের একটু আগে। অনুমান করা হয় ফয়েজ পা পিছলে পানিতে পড়ে গিয়েছিলেন। খালের পানি ছিল কনকনে ঠাণ্ডা। প্রতিবেশী এক মহিলার ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ইমার্জেন্সি সার্ভিসের লোকেরা। ফেসবুকে সারার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সারাহ রুইস হ্যান্ডলে লিখেছেন, তুমি কত সাহসী। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও তুমি যাকে ভালবাসো তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলে। তোমার প্রেম অমরত্ব পাবে। তোমাকে আমরা চিরটা কাল মনে রাখবো।
সলিলসমাধির মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে সারা ফয়েজের ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন, ‘আই লাভ ইউ বেবিজ।
১৭ বছর বয়সী ইয়াসমিন বলেন, ফয়েজ ছিলেন এক চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ। আর সারা ছিলেন খুবই দৃঢ়চেতা ও শপথবদ্ধ তরুণী। তারা সন্দেহাতীতভাবে এক জোড়া কপোত-কপোতী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু সামাজিক বাধাবিপত্তির কারণে তারা যতটা সম্ভব বিষয়টি গোপন করে চলছিলেন। সংবাদপত্রের একাংশ রিপোর্ট করেছিল যে, এই যুগল ওই সন্ধ্যায় খালের ধারে মদ পান করছিলেন। সারার ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবী একটি পত্রিকাকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে তারা একত্রে ছিল। তারা তাদের সম্পর্ক গোপন রাখতে সচেষ্ট ছিল। কারণ ফয়েজের একজন মুসলিম মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলাই স্বাভাবিক ছিল। ওই সময় তারা দৃশ্যত মদ্য পান করছিল এবং বেখেয়ালে খালের একেবারে কিনারায় চলে গিয়েছিল। ঘটনার সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে আরও ছয় জন ছিল। সারার চিৎকার শুনে তারা ছুটে গিয়েছিল। কিন্তু তারা কাজে লাগেনি। সাংবাদিক স্টিভ ব্রাডলি ২৯শে অক্টোবর পৃথক প্রতিবেদনে লিখেছেন, সংশ্লিষ্ট ব্ল্যাক কান্ট্রি এলাকার করোনার রবিন ব্যালমেন এক শ্রেণীর সংবাদপত্রের সমালোচনা করে বলেন, তারা মদ পান করেছিলেন তার কোন প্রমাণ মেলেনি। এই যুগলের উভয়ের পোস্টমর্টেম ও টক্সিকোলোজি টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু তাতে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ব্যালমেন আরও বলেন, সারার বাসা ওয়েস্ট ব্রমউইকের অ্যালবিয়ন রোডে। দুর্ঘটনার একটু পরেই তার বাবা অ্যান্থনি মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, আমার কাছে খবরটি যখন এলো তখন ২৬শে অক্টোবরের সাতটা ২৮ মিনিট। বলা হলো, এম্বুলেন্স কন্ট্রোল পুলিশকে জানিয়েছে, এক জোড়া তরুণ-তরুণীকে স্মেথউইকে হোয়াইট হাউস ড্রাইভের কাছে ডুবে যাওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। ইমার্জেন্সি সার্ভিস দূত এসে তাদের পানি থেকে টেনে তুলে। খবর পাওয়ার ছয় মিনিটের মধ্যে ফায়ার ফাইটাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু তাদের বাঁচানোর চেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়ে। ফয়েজকে নেয়া হয়েছিল সিটি হাসপাতালে। ফয়েজের বাসা স্মেথউইকের হ্যানসন ক্লোজে। তার লাশ চিহ্নিত করেন তার চাচা নাসির উদ্দিন। বৃটিশ ওয়াটারওয়েজের একজন মুখপাত্র বলেছেন, খালের তীর ছিল কিছুটা খাড়া ও পিচ্ছিল। সেখানে কোন বেড়া ছিল না। সাধারণভাবে আমাদের পরামর্শ হলো, যারা খালের কিনারায় আসবেন তারা যেন দূরত্ব বজায় রাখেন। ওয়েস্ট মিডল্যান্ড ফায়ার সার্ভিসের পিট মিলান বলেন, ডুবুরিদের তলব করা হয়েছিল। তারাই তাদের উদ্ধার করে। তখন তারা উভয়ে অচেতন। চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, ফয়েজের মৃতদেহ বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে ‘আউট অব ইংল্যান্ড’ আদেশে সই করেন করোনার ব্যারমেন। কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র বলেন, ওয়েস্ট মিডল্যান্ড পুলিশের ডিটেকটিভরা করোনারের পক্ষে এই যুগলের মৃত্যুর বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। তারা এখন ফ্যামিলি লিয়াঁজো অফিসারের মাধ্যমে শোকাহত দুই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যদিও ডেপুটি সার্জেন্ট অ্যান্ডি রবিনসন বলেছেন, তাদের অকাল মৃত্যুকে ঘিরে কোনোরকম সন্দেহপূর্ণ কিছু জানা যায়নি। ফয়েজউদ্দিন ও সারা রিলেন্স নামে একটি একাউন্ট খোলা হয়েছে ফেসবুকে। গতকাল পর্যন্ত তাতে ২,৯০৯ জন তাদের সমর্থনে সহানুভূতি সূচক মন্তব্য করেছেন। সারার বন্ধু মেগান পোল লিখেছেন, তোমাদেরকে আমরা সত্যিই খুব মিস করবো। স্কুলে আমরা কতই না খুনসুটি করেছি। আমি ভাবতেই পারি না, তুমি আর নেই। বহু লোকের চোখে তুমি একজন বীর। প্রিয়া কাউর লিখেছেন, স্বর্গে নিশ্চয় তোমাদের মিলন ঘটবে।
ফয়েজের চাচা নাসির উদ্দিন বলেন, খুব ভাল, এক চৌকস তরুণ ছিল সে। শেষ সে আমাকে বলেছিল, চাচা আমি পাঁচ মিনিটের জন্য বাইরে বেরুবো। সেই পাঁচ মিনিটই তার জীবনের শেষ সময় ছিল। আমরা উভয়ের পরিবারের প্রতি গভীর শোক নিবেদন করি।
হেলসওয়েন কলেজে ফয়েজ পড়তেন বিজনেস ও আইটি। ওই খাল থেকে আধা কিমি দূরবর্তী বাড়িতে ফয়েজের বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের ফোন পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা কিছুই আঁচ করতে পারিনি...

মানব জমিন থেকে শেয়ার করা।
link...
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×