somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাঃ জাহিদ—অ্যা ফেনোমেনা

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বি এম এ র সাবেক মহাসচিব ডাঃ জাহিদ অসুস্থ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বি এস এম এ ইউ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর আরোগ্য কামনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া উচিৎ হবে কি না বা ‘তিনি সুস্থ হয়ে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগদান করুন’ এমন কোন বক্তব্য দেয়া মানেই নিজের দল জানিয়ে দেয়া। আসলে পুরো দেশের মতই চিকিৎসক সমাজও দুই ধারায় বিভক্ত। প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির দুটি লেজ। এই কাজ কবে থেকে শুরু হয়েছে, ছাত্র রাজনীতিরই একটি কন্টিনিউয়েশান কি না কিংবা পেশাজীবীদের এমন রাজনৈতিক ধারায় বিভক্ত হওয়ার কাজটা ভালো হচ্ছে কি না—এই আলোচনা শুরু করলে ‘টক শো’ র মত দশা হবে। অনেকক্ষণ বকবক, ঝগড়া ঝাটি, দেখে নেয়ার হুমকি এবং পরিণতি ‘আমাদের অনুষ্ঠানের সময় আজ এখানেই শেষ’।
ডাঃ জাহিদ এর নামে বিস্তর অভিযোগ আছে। এবং যথারীতি এই অভিযোগের সিংহ ভাগই অপর রাজনৈতিক শক্তির চিকিৎসক দের করা। আবার প্রচুর প্রশংসা ও তিনি পেয়েছেন যার অধিকাংশ তাঁর নিজের দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া। সবার কাছেই তিনি জাহিদ ভাই। ফলে নিরপেক্ষ দৃষ্টি তে তিনি আসলে কেমন তা নিয়ে বোধহয় আলোচনা শুরু হলে থামানো মুশকিল হয়ে যাবে। কিছু টক শো মাঝে চেষ্টা করেছিল পরিণতি হয়েছিল এক ঘন্টার মনোরঞ্জন। তাই সেই আলোচনায় ও যাচ্ছি না।
আমার কাছে অনেক বেশী আলোচনার বিষয় এদেশে ডাক্তার দের অবস্থা। বিশেষ করে সরকারী চাকুরিতে থাকা ডাক্তারদের অবস্থা। দারুণ ভয়ংকর এক পরীক্ষা ‘বি সি এস’ দিয়ে সুযোগ পেতে হয়। অন্যান্য আর সব সরকারী চাকুরীর মত। এক্ষেত্রে দুর্নীতি অপেক্ষাকৃত কম। তবে প্রোজেক্টে সুযোগ পেতে চাই দলীয় তকমা কিংবা উৎকোচ। কারণ সেখানে পুরো যাচাই পরীক্ষাই হয় ভাইবা বা মউখিক পরীক্ষা ভিত্তিক। ফলে দুর্নীতির অবাধ সুযোগ।
এরপর পদায়ন হয় কোন এক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে উচ্চতর ডিগ্রী না করলে কেবল বেতন বৃদ্ধি ছাড়া ( তাও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ) আর কোন পদোন্নতি হবে না। ফলে সে যদি মেডিকেল অফিসার হিসেবে সাড়া জীবন না থাকতে চায় তবে তাঁকে অবশ্যই উচ্চতর ডিগ্রী করতে হবে।
সরকারের তরফ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী করবার জন্য ডেপুটেশান দেয়া হয়। তবে তাঁর আগে উচ্চতর ডিগ্রিতে ভর্তি হতে হবে কিংবা এফ সি পি এস এর প্রথম পর্ব পাশ করতে হবে। এই কাজটি প্রায় প্রতিটি ডাক্তারই (যাদের উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা আছে) চেষ্টা করেন। তাই ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে কিংবা একটানা ডিউটি করে বাকী সময় পড়াশুনাটা সেরে ফেলেন। এরপর আসে উচ্চতর ডিগ্রীতে প্রবেশের সেই ভর্তি পরীক্ষা। যোগ্যতা থাকলে পেরে যান। আর না থাকলে? তখনই শুরু হয় খেলা। টেলিফোন, কিংবা প্রশ্নপত্র আউট। পরীক্ষাপত্র পুনঃযাচাই এর যেহেতু কোন সুযোগ নেই তাই রেজাল্ট সঠিক হয়েছে কি না তা জানবার ও কোন উপায় নেই। ফলে উত্তীর্ণ দের তালিকাটা সঠিক না প্রশ্নবিদ্ধ তার ফয়সালা কখনই হয় না। পরীক্ষার তত্ত্বাবধায়নে যিনি থাকেন তাঁর সততার ওপরই নির্ভর করে এই ফলাফল কতটা সঠিক। তাই অসৎ একজনকে পরীক্ষা তত্ত্বাবধায়নের দ্বায়িত্ব দিলেই ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল নিজের ইচ্ছামত করা সম্ভব। এই সুযোগটা ব্যবহার করে অনেক নেতা গোত্রীয় ডাক্তার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশান এ সুযোগ পেয়েছেন বলে রটনা আছে। এবং এর শুরু জাহিদ ভাই এর আমল থেকে শুরু হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
চিকিৎসকদের আরও একটি দুর্বল অংশ হচ্ছে তাঁদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস। অফিস শেষের পর বাকী সময় তিনি প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা সেবা চাইলে দিতে পারেন। সাধারণতঃ সব চিকিৎসকই এই কাজটি করেন। প্রাইভেট চিকিৎসায় কতটি রুগী হবে তা নির্ভর করে তাঁর পসার এর ওপর। আর এই পসারটি তৈরি হয়ে ধীরে ধীরে। রুগীরা ভালো হলে সে তাঁর এলাকায় যেয়ে ডাক্তারের গুণগান করেন। আরও অনেকে সেই ডাক্তার সম্পর্কে জানতে পারেন। একসময় রুগীর সংখ্যা বাড়ে। একবার রুগী বেড়ে গেলে সেই ডাক্তার সাহেব আর চান না সেই জায়গা থেকে বদলী হয়ে অন্য কোন জায়গায় যেতে।
বদলীর যেহেতু কোন নির্দিষ্ট নিতিমালা নেই তাই এটিকে সহজেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ডাক্তার নেতারা নিজের পছন্দের লোকদের তাঁদের পছন্দের জায়গায় দিতেন আর অপছন্দের লোকদের অপছন্দের জায়গায় দিতেন। তাই বদলী আটকাতে কিংবা ভালো প্র্যাকটিস হয় এমন জায়গায় বদলী পেতে অনেকেই এই দুই ধারার কোন একটাতে নাম লেখাতেন। কখনও কাজটা করা হত উৎকোচের বিনিময়ে। কখনও ডিজি অফিসে, কখনও সচিবালয়ে আবার কখনও ডাক্তার নেতাকে। বদলী ব্যাপারটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার প্রত্যেক আমলেই হয়ে এসেছে। কেউ এটা থামাতে কখনই চেষ্টা করেন নি। যা করেছেন তা হচ্ছে কোন একজনকে খল নায়ক বানিয়েছে, ‘জাহিদ ভাই এসব শুরু করেছেন’।
ডাক্তারদের আরও একটি দুর্বল জায়গা হচ্ছে পদোন্নতি। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশান আছে কিন্তু পদোন্নতির জন্য তাঁকে দিতে হবে পিএসসি (দুর্নীতি হয় এই অভিযোগে এখন বন্ধ) কিংবা ডিপিসি। পি এস সি এর মাধ্যমে যখন পদোন্নতি দেয়া হত তখন পি এস সি তে কে বসবেন তা নির্ধারণ করা গেলেই ফলাফল নিজের অনুকুলে আনা সম্ভব। নিজের দলের অনুসারী কাউকে পি এস সি র চেয়ারম্যান করলেই কাজটা সহজ হয়ে যায়। যদিও পদগুলো সাংবিধানিক, শপথ নিতে হয়, কিন্তু এক জায়গায় ফাঁক রাখা হয়েছে। তা হচ্ছে পদে কে নিয়োগ পাবেন তা ঠিক করবেন একজন সরকার প্রধান। যিনি একটি দল করেন। ফলে এই ধরণের সাংবিধানিক পদ গুলো ধীরে ধীরে দলীয় লোকদের দেখলে যাওয়া শুরু করল। কাজটা কি থেমেছে? জানি না। তবে কাজটা শুরু করার জন্য খল নায়ক হিসেবে সেই জাহিদ ভাই এর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। নতুন পদ্ধতি ডিপিসি তাই চালু হয়েছে।
জাহিদ ভাই কোন অন্যায় করেছেন কি না তা নিয়ে আলোচনায় যেতে চাই না। কারণ এদেশে কোন মানুষই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন না (সাধারণতঃ)। আর অভিযুক্ত হওয়ার আগে কাউকে দোষী বলা আইনসংগত না। ফলে তাঁকে আইন মেনে দোষী বলা যাবে না। অভিযোগ করা হয়তো যাবে। তবে আসল সমস্যা কি জাহিদ ভাই? নাকি সিস্টেম। যে সিস্টেম ডাক্তার দের বদলির ব্যাপারে কোন নিয়ম নীতি রাখে নি। পদোন্নতির প্রক্রিয়াকেও এমন এক সিস্টেমের কাছে বন্দী রেখেছেন যেখানে চাইলেই দুর্নীতি করা সম্ভব। কিংবা উচ্চতর ডিগ্রীতে ভর্তি পরীক্ষার সিস্টেমকেও চাইলেই সহজে ওলট পালট করে দেয়া যায়।
আমরা কি আদৌ এই সিস্টেমের পরিবর্তন চাই? নাকি একজনের ওপর সব দোষ চাপিয়ে সেই সিস্টেমকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই? ‘জাহিদ ভাই এর আমলে আমাদের ছেলেরা সুযোগ পায় নি, এবার আমাদের পালা সুযোগ নেয়ার।‘ ফলে সিস্টেম থেকেই যাচ্ছে, দুর্নীতি থেকেই যাচ্ছে। দুর্নীতিটার নাম শুধু একই রাখা হচ্ছে ‘জাহিদ ভাই—অ্যা ফেনমেনা’।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×