somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রিক পুরাণের দেব-দেবী : বিচিত্র ,বীরত্ব, প্রেম-বিশ্বাস-ত্যাগে পরিপূর্ণ জীবনকাহিনী ৩

২১ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রিক পুরাণের দেব-দেবী : বিচিত্র ,বীরত্ব, প্রেম-বিশ্বাস-ত্যাগে পরিপূর্ণ জীবনকাহিনী ১ দেখতে : Click This Link

গ্রিক পুরাণের দেব-দেবী : বিচিত্র ,বীরত্ব, প্রেম-বিশ্বাস-ত্যাগে পরিপূর্ণ জীবনকাহিনী ২ দেখতে : Click This Link

এবার জানব গ্রিক পুরাণের অন্যতম সুন্দর দেবতা নার্সিসাস সর্ম্পকে


নার্সিসাসের পিতা ছিলেন নদীদেবতা সেফিসাস। মাতা জলপরী লেরিওপি। নার্সিসাস দেখতে এত সুন্দর ছিল যে, তা নিয়ে মায়ের মনে আনন্দ ও উৎকণ্ঠার অন্ত ছিল না। সবসময় ভয় নার্সিসাসের এত রূপ, না জানি কী হয়!
তাই একদিন লেরিওপি ভবিষ্যদ্বক্তা টাইরেসিয়াসের কাছে গেলেন পুত্রের ভবিষ্যৎ জানার জন্য। নার্সিসাসের মা জিজ্ঞাসা করলেন নার্সিসাসের পরমায়ু কতখানি? অন্ধ ভবিষ্যদ্বক্তা টাইরেসিয়াস বললেন, যত দিন না সে শুধু নিজেকে ভালোবাসে। এ কথার অর্থ ঠিক বুঝতে পারলেন না নার্সিসাসের মা। টাইরেসিয়াস বললেন, সময়ই বলে দেবে সবকিছু।
নার্সিসাস বড় হতে থাকে। বাড়তে তাকে তার সৌন্দর্যও। সবাই তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করে। নিজের রূপের প্রশংসা শুনতে শুনতে অহঙ্কার জাগে নার্সিসাসের মনে। সে অহঙ্কার বড় অদ্ভুত। অহঙ্কারের ফলে সে শুধু নর নয়, নারীদেরও তার তুলনায় নিকৃষ্ট ভাবতে শুরু করে দেয়। ধীরে ধীরে তার মধ্যে জাগতে থাকে আত্মরতি। অহঙ্কারের কারণে তার সঙ্গী-বন্ধুরাও তাকে পরিহার করে চলতে থাকে।
নার্সিসাস বেড়ানোর সময় কাউকে সঙ্গে নিত না। একদিন সে যখন বনের মধ্যে একাকী ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তখন এক বনপরী তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে একনজরেই ভালোবেসে ফেলে। বনপরীর নাম ছিল ইকো। দৈব অভিশাপে ইকো অন্যের শেষ কথার প্রতিধ্বনি করা ছাড়া আর কোনো কথা বলতে পারতেন না।
ইকোকে এ অভিশাপ দিয়েছিলেন দেবরানী জিউসপত্নী হেরা। জিউস ছিলেন প্রণয়কলা বিশারদ। বনপরীদের ব্যাপারে তার আলাদা আসক্তি ছিল। বনপরীদের সঙ্গে জিউসের মিলনে বড় সহায় ছিল ইকো। ইকো ছিল অতিশয় বাচাল। সুযোগ পেলেই নানা ছলছুতোয় গল্পগুজব করে হেরাকে অন্যমনস্ক করে রাখত আর সেই সুযোগে জিউস অন্য বনপরীদের সঙ্গে অবাধে প্রেমচর্চা করতেন। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা হেরার কাছে ধরা পড়ে যায়। ক্রোধান্বিত হেরা বাচাল ইকোকে এই বলে অভিশাপ দেন যে, ইকোকে কেউ কোনো কথা বললে সে শুধু সেই কথার প্রতিধ্বনি ফিরিয়ে দেবে।
বাকশক্তিহীন ইকো তাই নার্সিসাসকে আলিঙ্গন করে তার বোবা প্রেমাবেগ প্রকাশ করতে চাইল; কিন্তু ইকোর আলিঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গে আত্মপ্রেমে মগ্ন নার্সিসাস অত্যন্ত রূঢ়ভাবে তাকে দূরে ঠেলে দিল।

অপমানিত ও মর্মাহত ইকো লজ্জায় ঘন ঝোপের আড়ালে গিয়ে মুখ লুকালো। তারপর নীরবে তার অভিমান ব্যক্ত করল প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতির কাছে। আফ্রোদিতি সাড়া দিলেন ইকোর আহত আহ্বানে। অতিশয় রুষ্ট হয়ে তিনি নার্সিসাসকে অভিশাপ দিলেন_ নারীর প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় আত্মঘাতী পরিণতি লাভ করবে তার আত্মরতি।
আফ্রোদিতির অভিশাপে নার্সিসাস এরপর পথ চলতে চলতে তৃষ্ণার্ত হয়ে অকস্মাৎ এক জলাশয়ের ধারে গিয়ে উপস্থিত হলো। জলের জন্য হাত বাড়াতে গিয়ে সে দেখতে পেল নিজের অনিন্দ্যসুন্দর মুখচ্ছবি। শান্ত জলাশয়ের ধার ঘেঁষে নতজানু হয়ে মুগ্ধ নার্সিসাস স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জলে প্রতিবিম্বিত নিজের দিকে। ভুলে প্রচণ্ড আবেগে যখনই সে প্রতিবিম্বকে আলিঙ্গন করতে যায় তখনই জলে হাত পড়ে তা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। প্রতিবিম্ব স্থির হওয়া পর্যন্ত প্রতীক্ষায় থাকে নার্সিসাস। আবার সে প্রতিবিম্বের দিকে হাত বাড়ায়। এভাবে চলতে থাকে দিনের পর দিন।
ক্ষুধা-তৃষ্ণা সব ভুলে সেখানেই থেকে গেল নার্সিসাস। এক মুহূর্তের জন্যও কোথাও যেতে পারল না। এভাবে বসে থাকতে থাকতে শান্ত জলাশয়ের ধারে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে একদিন নীরব-নির্জন মৃত্যুবরণ করল আত্মমুগ্ধ নার্সিসাস। তার মৃত্যুতে চোখের জল ফেলার কেউ ছিল না। ইকোর ব্যর্থ কণ্ঠ শান্ত বনস্থলীতে বিচিত্রভাবে প্রতিধ্বনিত হয়ে হাহাকার সৃষ্টি করল শুধু।
তারপর একদিন নার্সিসাসের দেহ মাটির সঙ্গে মিশে গেল। আর সেই জায়গা থেকে উদ্যত হলো একটি সুন্দর ফুল গাছ। দেবী আফ্রোদিতি সেই ফুলের নাম দিলেন নার্সিসাস।
যদিও খুব অহঙ্কারী কাউকে এখনো ইউরোপে নার্সিসাস বলে গালি দেয়া হয়।

আজ এ পর্যন্ত , ইচ্ছে আছে আর ও দেবতা-দেবীদের গল্প শোনানোর ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:২৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×