somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়...

২১ শে নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি সমিতির (বি এন পি সমর্থিত) সভাপতি। তার জীবনের এই ৭০ পেরুনো বয়সে যত শক্তি রয়েছে, ঠিক তার চাইতেও বহুগুন শক্তি দিয়ে তিনি লড়ে চলেছেন নিজামী, সাঈদী, গোলাম আজম, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, সাকা তথা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আসামীদের পক্ষে। সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট, আমেরিকা, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, কোথায় নেই তিনি?? "সূর্যের থেকে বালি গরম" কথাটির মর্ম প্রতি দিনেই তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষকে। ২০১০ সালের ২৫ শে মার্চ তারিখে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল শুরু হবার আগের থেকে আজ পর্যন্ত তিনি তার মুখ দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন রাত দিন এসবের হিসেব না করেই।

আজও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক একটি খবরে জানতে পারলাম যে, ট্রাইবুনালে মাহবুব হোসেন যুদ্ধাপরাধে আটক সাঈদীর পক্ষ হয়ে, "নিজামুল হক নাসিম বিষয়ে" আদালতে বক্তব্য দিয়েছেন। এই খবরটি পড়েই বেশ নস্টালজিক হয়ে গেলাম। চলে যেতে ইচ্ছে হলো আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগের একটি ঘটনায়। যে ঘটনাতে খন্দকার মাহবুব এই বিচারালয়েই ছিলেন চীফ পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে। দালাল আইন ১৯৭২-এ লড়েছেন রাজাকারদের বিপক্ষে। বক্তব্য দিয়েছেন তাদের অপরাধের কথা বলে, তাদের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের কথা উদ্ধৃত করে। যার এডভোকেসিতেই raরাজাকার-আলবদরদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে, বছরের পর বছর শাস্তি হয়েছে, সেই মাহবুব হোসেন আজ সেই একই মুখ দিয়ে বলছেন রাজাকারদের পক্ষে। সেই একই মানুষ।




আসুন ১৯৭২ সালে খন্দকার মাহবুব হোসেনের ওকালতিতে শাস্তি হওয়া কয়েকটি মামলার সংক্ষিপ্ত রায় জানিঃ

১) সেপ্টেম্বর ৮, ১৯৭২ সাল। দৈনিক সংবাদের একটি রিপোর্টে জানা যায়, হানাদার বাহিনীর দালালী ও অগ্নিসংযোগ অভিযোগের দায়ে দুই জনের যাবদজ্জেবন কারাদন্ড। (ট্রাইবুনালের স্থানঃ কালিগঞ্জ। বিচারকঃ জনাব আব্দুল হান্নান চৌধুরী। আইনের ধারাঃ ১৯৭২ সালের দালাল আইন এর ১(খ) এবং বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪৩৬ নাম্বার ধারা।


২) ২৯ নভেম্বর ১৯৭২ সালের দৈনিক বাংলার একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে,২৮ শে নভেম্বর তারিখে খুনী রাজাকার আব্দুর রহমানের মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করে ট্রাইবুনালের জজ খোরশেদ আলী। খুনী রাজাকার আব্দুর রহমান নারায়নগঞ্জ পৌরসভার কর্মচারী গোলাম মোস্তফাকে তার রাজাকার বাহিনী নিয়ে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করে। এই মামলায় রাজাকারদের বিপক্ষের উকিল ছিলেন এই তৎকালীন স্পেশাল পিপি খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার এডভোকেসিতেই ফাঁসির হুকুম হয় রাজাকার আব্দুর রহমানের।

৩) ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সালের দৈনিক বাংলার একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, হত্যার উদ্দেশ্যে ব্যাক্তিকে অপহরণ, দখলদার বাহিনীর দালালী ও বস্তিবাসী বহু বাঙালীক মেয়েকে ধর্ষন করার দায়ে অভিযুক্ত শাহাজানপুর কলোনীর ত্রাস রাজাকার কমান্ডার শাহাজান ওরফে মুন্নাকে মৃত্যুদন্ড দেবার রায় ঘোষনা করেছেন স্পেশাল ট্রাইবুনালের জজ জনাব এস এম মাহমুদ। এই মামলাতে রাজাকারদের বিপক্ষ আইনজীবি হিসেবে মামলা পরিচালনা করে স্পেশাল পি পি খন্দকার মাহবুব হোসেন।

অথচ...

উপরের ভিডিওটিতে কিংবা দেশের সকল পত্র-পত্রিকাতে আজ আদাজল খেয়ে নেমে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কি বলছে খন্দকার মাহবুব হোসেন, এই কথাটি আজ সকলেই জানেন।




উপরের ভিডিওটিতে একের পর এক মিথ্যাচার করে গ্যাছে খন্দকার মাহবুব। সবচাইতে বড় যে মিথ্যেটি বার বার উল্লেখ করেছে মাহবুব সেটি হলো- বর্তমানে আটককৃতদের কারো বিরুদ্ধেই নাকি তখন কোনো মামলা ছিলো না।

কিন্তু ইতিহাস যে তা বলে না... মাহবুবের কথা যে মিথ্যা, সেটির উদাহরণ মাত্র দুইটি মামলা দিয়েই সহজেই প্রমাণ করা যায়।

ক) রাজাকার কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পর প্রথম মামলা হয় ১৯৭২ সালে। মামলার নম্বর হচ্ছে- (৫)৭২, জি আর নং- ২৫০ (২) ৭২। মামলা করেন শহীদ বদিউজ্জমানের ভাই হাসানুজ্জামান। উল্লেখ্য যে, কামারুজ্জামান তখন পলাতক আসামী ছিলো।

খ) সাকা চৌধুরীর নামে ১৯৭২ সালে দালাল আইনে চট্রগ্রাম জেলার হাট হাজারী থানায় ১৩/৪/১৯৭২ তারিখে ১৭ নং মামলা দায়ের হয়। রাউজান থানা ৪১(১)৭২ নং এবং ৪৩(১)৭২ নং মামলা দায়ের করা হয়।

নতুন চন্দ্র সিংহ হত্যা মামলা হয়েছিলো ১৯৭২ সালে। নতূন চন্দ্র সিংহ এর পূত্র সত্যরঞ্জন সহ মোট ১২ জন সাক্ষী ছিলো ছিলেন এই মামলায়। মামলার এফ আই আর নাম্বার হচ্ছে- ইউ/এস/৩০২/১২০(১৩)/২৯৮ দন্ডবিধি। আসামীদের মধ্যে সাকা সহ আরো ৫ জন পলাতক ছিলো এবং সাকার বাবা ফকা সহ অন্য আসামীদের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে চার্জশীটে বলা হয়েছিলো।


উপরের এসব উদাহরন দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। আর কত মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন করা যায়? আর কত জবাব দেয়া যায় মিথ্যের? একটি দেশে এতগুলো মানুষকে ধরে ধরে মেরে ফেলা হয়েছে আর সেটির জন্য, সেটির বিচারের বাঁধা দূর করবার জন্য সবচাইতে বড় যুদ্ধ করতে হচ্ছে এই দেশেরই কিছু ভ্রষ্ট আর নষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষের বিপক্ষে। যারা এই দেশেরই আলো বাতাসে জন্ম নেয়া বেঈমান। এই দুঃখ আমি কই রাখি?


খন্দকার মাহবুব আজকে বদলে গ্যাছেন ক্ষমতার লোভে, প্রতিপত্তির লোভে। অথচ এই লোকটিই ১৯৭২ সালের শুরু হওয়া দালাল আইনে এজলাসের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছেন রাজাকার-আলবদরদের বিপক্ষে। যে লোকটি গরু চোর, ছাগল চোর, মানুষ হত্যাকারী, ধর্ষনকারী রাজাকারদের শাস্তি নিশ্চিত করাবার জন্য মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ওকালতি করে গিয়েছিলেন, সেই লোকটি-ই আজ সেই একই কন্ঠে রাজাকারদের বিচার বন্ধের সবচাইতে বড় অগ্রদূত। পৃথিবীর কাঠিন্য দেখতে দেখতে এতই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি যে, আজ নৈতিকতার এত বড় পতন দেখেও যতটা অবাক হবার ততটা হতে পারিনা। যতটা বিষ্মিত হবার, ততটা বিষ্মিত হতে পারিনা।

নিজেকে বুঝাবার চেষ্টা চালাই। নিজেকে বলি, ১৯৭২ সালে মাহবুব পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে শুধু মাসিক সেই সরকারী ৩০০ টাকার জন্যই রাজাকারদের বিরুদ্ধে লড়েছে। আজ সময়ের ব্যাবধানে হয়ত এই মাহবুব ৩০ কোটি টাকার পেয়েই আবার যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বলেছে। কাল হয়ত এই মাহবুবকে আরো কোটি খানেক বাড়িয়ে দিলে তার মায়ের বিরুদ্ধেই আদালতে বলবে।

ইনফ্যাক্ট... বলছেই তো!!! মা আর দেশ কি আলাদা???
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৭:৫৬
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×