somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ না চাইলে ভারত ট্রানজিটের মূল্য দেবে কেন?

১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আবু আহমেদ
[সূত্রঃ যুগান্তর, ১৯/১১/১১]

আপনি যদি আপনার সম্পত্তিটা কাউকে বিনামূল্যে নিতে দেন, অথবা আপনি যদি আপনার ঘরটার জন্য উপযুক্ত ভাড়া না চান তাহলে তো ক্রেতা আপনাকে যেচে মূল্য দেবে না বা ভাড়াটিয়াও বলবে না, না জনাব আপনার ঠক হয়ে যাচ্ছে, আমি ঘরটার ভাড়া বাড়িয়ে দিলাম। বাংলাদেশের অবস্থাও অনেকটা তা-ই। বাংলাদেশ তার রাস্তা-নদী-বন্দর ব্যবহার করতে দিচ্ছে ভারতকে, অথচ মূল্যটা কত দিতে হবে সেটা ভারতকে বলছে না। ভারত ধরেই নিয়েছে, বাংলাদেশ অতি সামান্য মূল্যে তাদের ট্রানজিট সুবিধা তথা তাদের রাস্তা-নদী-বন্দর ইত্যাদি ব্যবহার করতে দেবে। তাই তো কিছুদিন আগে ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার রজিত মিত্র বলেই ফেললেন, আপনারা তো নৌকা ও ট্রাকভাড়া পাবেন। রজিত মিত্রের দোষ নেই। তিনি তো তার নিজের দেশের স্বার্থ দেখবেনই। বাংলাদেশ ট্রানজিটের মূল্য হিসাব করতে না জানলে তিনি তো আমাদের সাধারণ জ্ঞান নিয়ে তামাশামূলক কথা বলবেনই।

এ কথা শুনেও যে সরকারের মধ্যে কারও কোন প্রতিক্রিয়া হয়েছে সেটা দেখলাম না, বরং সরকারের উপদেষ্টারা যখন ট্রানজিটের ফি ও মাশুল নিয়ে কথা বলেন, তখন মনে হবে তারা ভারতেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন। একজন উপদেষ্টা আরও বলে থাকেন, ট্রানজিট ফি হবে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। জানতে ইচ্ছা করে, এখানে প্রতিযোগিতাটা কারা করছে? আমাদের ট্রানজিট ব্যবহার করার জন্য কি অনেক দেশ ইচ্ছা প্রকাশ করেছে যে সর্বোচ্চ ডাক তোলা মূল্যকে আমরা প্রতিযোগিতার মূল্য বলব? এখানে ভারত হল আমাদের ট্রানজিটের ক্রেতা, আর বাংলাদেশ হল এই সুবিধার বিক্রেতা। বিক্রেতা তার সেবার উপযুক্ত মূল্য না চাইলে ক্রেতা কি সেই মূল্য যেচে দেবে? একসময় ভারত বলত, তারা ট্রানজিটের জন্য উপযুক্ত মূল্য দেবে। এমনও ইঙ্গিত দিত, বাংলাদেশ এই সুবিধার বিনিময়ে যা চায় তা-ই দেবে। এরই জের ধরে এ দেশের কিছু লোক বলত, ভারতকে অর্থনীতির বা উপযুক্ত মূল্যের বিনিময়ে এই সেবা-সুবিধা দিলে ক্ষতি কী? তাদের যুক্তিটা ছিল অর্থনীতির, তাদের হিসাব অনুযায়ী এতে বাংলাদেশ শুধু ফি ও মাশুল বাবদই বছরে এক বিলিয়ন ডলার পেতে পারে। এখনও ট্রানজিটের সুবিধা-অসুবিধাগুলো অনেকেই তুলে ধরেছেন। তবে আমার জানা মতে, বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে এ সম্পর্কে কোন স্বাধীন সমীক্ষা বা স্টাডি কখনও হয়নি। ট্রানজিটের ক্ষেত্রে মূল উৎস চারটি এবং এই সুবিধা দিলে বাংলাদেশ কত টাকার উপকার পাবে। প্রাপ্য টাকাটা বাংলাদেশ কিসের ভিত্তিতে হিসাব করবে। বাংলাদেশ কি তার পূর্ণ ইকোনমিক কস্ট হিসাব করবে, না-কি এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতকে ভর্তুকি দেবে।

দুই.
ভারত এই সুবিধা নিতে উপযুক্ত মূল্য বাংলাদেশকে দেবে তো? সেই উপযুক্ত মূল্য হল- ১. ভারতের যে সাশ্রয় হবে তার হয় পুরোটা বা কমপক্ষে ৮০-৯০ শতাংশ। ২. বাংলাদেশ তার রাস্তা ও বন্দর নির্মাণে যে বিনিয়োগ করেছে তার আনুপাতিক অংশ ভারত বহন করবে তো? বাংলাদেশের নদী ও রাস্তা ব্যবহারের একটা ইকোনমিক কস্ট আছে, সেই কস্ট দিতে ভারত রাজি থাকবে তো? ৩. ট্রানজিটটি কি শুধু ভারতের সঙ্গে হবে, না-কি এ অঞ্চলের সব দেশের সঙ্গে হবে? ভারতের সঙ্গে তার ব্যয় হিসাবটা একরকম হবে, আর চীনসহ আঞ্চলিক ভিত্তিতে হলে ব্যয়ের হিসাবটা অন্যরকম হবে। ৪. ট্রানজিট হল ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ট্রাম্প কার্ড। আপনি যদি ট্রাম্প কার্ডটা খেলতে না জানেন তাহলে ওই ট্রাম্প কার্ডের মূল্য শূন্য। আজকে বাংলাদেশ যেন ভুলে যাচ্ছে যে, ট্রানজিট সেবাদানের ক্ষমতা সম্বন্ধে তার একটি ট্রাম্প কার্ড আছে। অতি সাধারণ জ্ঞান বলে, ট্রানজিটের ব্যাপারটা কেবল আলোচনায় আসতে পারে, যদি ভারত এ জন্য আমাদের ন্যায্যমূল্য দেয় এবং ভারত তিস্তার পানিবণ্টনসহ অন্যান্য অমীমাংসিত সমস্যা খোলা মন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমাধানের জন্য এগিয়ে আসে। কিন্তু সত্য হল, অন্যান্য ফ্রন্টে ভারত এগোতে অনিচ্ছুক। এই অনিচ্ছাটা আরও বেশি প্রবল হবে যদি প্রায় বিনামূল্যে ভারত ট্রানজিট সুবিধা পেয়ে যায়।

এখানে অন্য প্রসঙ্গ বিবেচনার দাবি রাখে। সেগুলো হল ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে, তার মালামাল ভারতের পূর্বাঞ্চলে অতি সস্তায় নিতে দিলে বাংলাদেশ ওইসব অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য হারাবে কিনা। এ ব্যাপারেও কোন স্টাডি হয়েছে বলে মনে পড়ে না। ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের লোকেরা যদি পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের অন্য অঞ্চলের পণ্য সস্তায় কিনতে পারে তাহলে তারা বাংলাদেশের পণ্য কিনবে কেন?

কিছু ট্রাক ব্যবসায়ী ট্রানজিটের ব্যাপারে খুশি হবে বটে। তবে মনে রাখতে হবে, তারা যে ট্রাক ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য সীমান্তে পৌঁছে দেবে, সেই ট্রাককে কিন্তু বাংলাদেশ ভর্তুকি দিয়ে ডিজেল ও পেট্রল দিচ্ছে। ভারতে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কি রাস্তা নির্মাণে ভর্তুকি এবং ডিজেল-পেট্রলের ভর্তুকি তুলে নেবে? আমাদের নীতিনির্ধারকদের কথা শুনলে মনে হবে তারা এসব ইস্যু নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে কোনভাবে ভারতকে ট্রানজিট দিতে। তবে বিনামূল্যে এই উৎসাহেরও একটা ক্ষতি আছে। সেই ক্ষতিটা হল একতরফা ট্রানজিট সুবিধা দিলে সে সুবিধা হবে অতি ক্ষণস্থায়ী। দেশের জনগণ ওই ধরনের সুবিধা প্রদান বা কোন রকমের চুক্তি কোনদিনই মানবে না। সরকারের যদি জবাবদিহিতার বালাই থাকে তাহলে উচিত হবে ট্রানজিট সুবিধা দিলে বাংলাদেশ কীভাবে কত টাকার লাভবান হবে সেটা জনগণকে বোঝানো।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×