somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ্রার কুরবানি

১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারিদিকে যখন মানুষ কুরবানির পশু কেনাবেচায় ব্যস্ত .তখন শুভ্রার ফ্যামিলিতে অন্যরকম একটা কেনাকাটার দরকষাকষি চলছে !২লাখ এর কমে মানতে রাজিনা একপক্ষ !তবে শেষ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকায় একমত হলো সবাই !শুভ্রার জন্য অবশেষে কেনা হলো একটা গরু !গরু ?এই শব্দটাই কেন মাথায় এলো ওর ?
নামটা শুভ্রা হলেও শুভ্রা দেখতে মোটেই শুভ্র নয় ।মা অনেক শখ করে নামটা রেখেছিলেন ।এখন এই নামটা যেন ওকে ব্যাঙ্গই করে .দেখতে খুবই কালো বলে ছেলে পক্ষ এসে বার বার ফিরে যায় ।
মাকে হারিয়েছে সেই কবে .সত্‍মায়ের সংসারে মানুষ বলে আদর যত্ন খুব একটা পায়নি বললেই চলে ।সত্‍মা ওকে খুব একটা পছন্দ করেনা .শুভ্রার দুই ভাই বিদেশে থাকে বলে টাকার লোভে হলে ও খুব একটা অবহেলা হয়তো করেনা ।আনমনে এসব ভাবতে খাকে শুভ্রা ।
"কিরে শুভ্রা স্বপ্ন রাজ্যে হারিয়ে গেলি নাকি রাজকুমার কে নিয়ে ? সিমুর ঠাট্টায় চমকে উঠে শুভ্রা ।বলে কখন এলি তুই ?
তোর রাজকুমার কেনার একটু আগেই .সিমু ঠাট্টা করে বলে ।
রাজকুমার ?আমারতো একটু আগে গরু শব্দটাই মাথায় এলো ।
গরু ?কি বলছিস তুই ?যার সাথে কিছুদিন পরেই সংসার পাতবি তাকেই ?সিমুর অবাক প্রশ্ন ,
শুভ্রার মুখে একটা ব্যাঙ্গ হাসি ফুটে উঠে .সেটা কি কষ্টের নাকি অপমানের ?
বলে সে গরু নয়তো কি?গরু না হলে কি কেউ বিক্রি হয় ?ও তো আমাকে বিয়ে করছে না .করছে টাকাকে .নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা শুভ্রা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।সিমু ও যেন শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে পেলে ।সেই ছোট বেলা থেকে এই দুঃখি মেয়েটিকে মানুষের নানা কটু কথায় ঝর্ঝরিত হতে দেখেছে সে ।মানুষের এই হীন মানসিকতায় নিজেরই কষ্ট হয় সিমুর ।
শুভ্রা সেই ছোটবেলা থেকেই একটা ছেলেকে ভালবাসতো .কালো বলে ছেলেটি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে চরম অপমান করে ।কিন্তু কালো হওয়াটা কি তার অপরাদ ?বিধাতাই যে ওকে কালো করে পাঠিয়েছেন !এখানে তার কি করার ছিল ?কালো বলে তার কোন স্বপ্ন দেখতে নেই ?কাউকে ভালবাসার অধিকার নেই ?
কিছুদিন পরেই সব স্বপ্নের .সব ভালবাসার সব আনন্দের কুরবানি দিয়ে শুভ্রার নতুন জীবন শুরু হয় ।
শুভ্রার জীবনটা কি নতুন কোন স্বপ্নের শুভ্রতায় ভরে উঠবে ?না কি যৌতুকের বলী হয়ে অকালেই ঝরে যাবে অযত্নে ফোটা একটি ফুল ?
শুভ্রার নতুন জীবনের সুচনাটা খুব একটা সুখকর হয়নি ।নতুন কনে দেখতে এসে নানা জন নানা ভাবে ঠাট্টা করতে থাকে .যা কিনা সে ছোট থেকেই শুনে অভ্যস্ত ।
"দেখেতো দূর্গা কে ও হার মানায় !নাম তার শুভ্রা !ঢং দেখে আর বাঁচিনা "!
এতোক্ষণ শুভ্রা মাথা নিচু করে সব শুনলেও এই কথাটা শুনে ওর মনটা মোচড় দিয়ে উঠে .চকিতে মুখ তুলে বক্তাকে দেখার লোভ সামলাতে পারেনা সে ।দেখে তাকে রাজকন্যা মনে হয়না ওর .হায়রে মানুষ !
টাকাটা নিয়ে সোহানের বিদেশ যাওয়ার কথা থাকলেও মদ ও জুয়ার আসরে দুইহাতে টাকা উড়াতে থাকে।শুভ্রা প্রতিবাদ করতে গেলেই নেমে আসে নির্যাতন।ওর ননদ ও শ্বাশুড়ি পারলে সোহান কে আর ও উসকিয়ে দেয় ।
কিছুদিন পর শুভ্রার ভাই ওকে দেখতে আসে শীতের পিঠা নিয়ে ।ভাইকে খুব একটা আপ্যায়ণ করা হয়না।কেউ ভাল করে কথা ও বলেনা তার সাথে ।শুভ্রা কে ও ভাইয়ের সাথে কথা বলার খুব একটা সুযোগ দেয়া হয়না ।ওর ভাই চলে যাওয়ার পরেই ওর শ্বাশুড়ি পিঠা গুলো ছুড়ে ফেলে উঠানে ।পাড়ার কুকুর গুলো মহানন্দে মেতে উঠে পিঠা উত্‍সবে ।শুভ্রা নিজেকে সামলাতে পারেনা .নিজের রুমে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
"নবাবের বেটি শুয়ে যে আছেন রান্না করবে কে ?
শ্বাশুড়ির কথায় কান্না ভেজা চোখে শুভ্রা রান্নার কাজে যায় ।মনে মনে ভাবে তার কপালে কি এক ফোটা শান্তি ও লিখা নেই ?
কিছুদিন পরেই নিজের ভেতর নতুন প্রাণের অস্তিত্ত অনুভব করে শুভ্রা ।নতুন স্বপ্ন .নতুন আশায় বুক বাধে সে ।কিছু একটা নিয়ে তো বেঁচে থাকা যাবে .মনকে প্রবোধ দেয় ।খবরটা শুনে সোহান খুব খুশি হলেও অন্যরা খুব একটা খুশি হয় বলে মনে হয়না ওর ।আগের মতোই মানসিক নির্যাতন চলে .মাঝে মাঝে সোহান কে ক্ষেপিয়ে শারীরিক নির্যাতন ও ।সন্তানের আশায় সোহানের কিছুটা মানসিক পরিবর্তন হয় ।
দিন যতই ঘনিয়ে আসতে থাকে শুভ্রার উপর কাজের চাপ ও ততই বাড়াতে থাকে ওরা ,পর্যাপ্ত খাবার ও পেতোনা সে।সোহানের এক ফোটা ভালবাসাই ওকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে ।
২দিন নিজের ঘরে প্রসব বেদনায় ছটফট করে শুভ্রা ।শেষ পর্যন্ত সোহান মায়ের অবাধ্য হয়েই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ।শুভ্রা ও সন্তানের অবস্হা সংকটাপন্ন দেথে ডাক্তার সোহান কে বকাঝকা করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় ।সোহান প্রয়োজনীয় টাকা ও রক্তের সন্ধানে পাগলের মত ছোটাছুটি করে ।অস্হির ভাবে রাস্তা পার হতে গিয়ে ঘাতক ট্রাকের চাকায় মুহুর্তেই তার সব স্বপ্ন পিষ্ট হয়ে যায় !সদ্য প্রসুত ছেলের মুখটাও দেখা হয়না তার !ছোট্ট শাওন কে নিয়ে শুভ্রা কোথায় দাঁড়াবে ?
"শাওন ছিঃ বাবা ওটা মুখে দিসনা "ছোট্ট শাওন মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে ফেলে দেওয়া আমের আঁটিটা মুখে নিয়ে চুশতে থাকে।শুভ্রা দৌঁড়ে এসে শাওনের মুখে চড় দিয়ে ওটা ফেলে দেয় .শাওন চিত্‍কার করে কাঁদতে থাকে.শুভ্রা ও শাওন কে বুকে জড়িয়ে কাঁদে .হঠাত্‍ তার মনটা বিদ্রোহী হয়ে উঠে.সারা জীবন অনেক অপমান সহ্য করেছে আর নয় ।শাওন কে নিয়ে শহরের উদ্যেশে পা বাড়ায় !
সোহান মারা যাওয়ার পর শুভ্রার ভাই ওদের হাসপাতাল থেকে সোহানদের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল ।তখনো সোহানের লাশ উঠানে .শুভ্রার শ্বাশুড়ি ওদের কে দেখেই চিত্‍কার করা শুরু করে "এই অপয়া ছেলেটি কে নিয়ে যা চোখের সামনে থেকে।সোহান কে কবর দেয়ার পরই ভাইয়ের সাথে চলে আসে শুভ্রা ।সত্‍ মায়ের সংসারেও ঠাঁই হয়নি শুভ্রার ।শুভ্রার ভাবী ওকে দাসির মতই আশ্রয় দেয় .শাওনের মুখের দিকে তাকিয়ে সবই মেনে নিতে বাধ্য হয় ।সেই শাওন আজ শুভ্রার ভাবীর ফেলে দেওয়া আমের আঁটি কুড়িয়ে খায়।
আরে শুভ্রা তুই এখানে ?সিমুর অবাকপ্রশ্নে শুভ্রা চমকে উঠে .সিমু সব শুনে ওকে জোর করে নিয়ে আসে !ওর বরকে বলেNGOতে চাকরি নিয়ে দেয়।
ছোট্ট শাওন কে নিয়ে শুভ্রার নতুন জীবনটা ভালই কাটে .শাওন যতই বড় হতে থাকে ওকে ঘিরে শুভ্রার স্বপ্নের পরিধি ও ততইবাড়তে থাকে।
শাওন সবে কলেজে পা দিয়ছে ।এর ই মধ্যে বন্ধুদের পাল্লায় নেশার আসরে যেমন যেতে শুরু করেছে তেমনি ওর স্বপ্নের রাণী নিলার পিছনেও তাকে অনেক টাকা গুনতে হয় ।
'কাল কয় তারিখ মনে আছে ?নিলা শাওনের একটা হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে ।হ্যাঁ আছে বৈকি কাল মহারাণীর জন্ম দিন ।শাওনে হেসে বললেও ওর চোখে মুখে একটা টেনশন ফুটে উঠে ।নিলার জন্ম দিনের গিফট কিনার টাকা কোথায় পাবে সে ?এমনিতেই মায়ের বেশকিছুদিন থেকে জ্বর !
মা মাগো শাওন মায়ের গলা জড়িয়ে আদুরে ভঙ্গিতে বলে আমার কিছু টাকা লাগবে মা ।একটা বই কিনতে হবে
শুভ্রা বলে এখন নেই পরে নিস বাবা।
রাতে সিমু আসে ওকে দেখতে .সিমু ওকে শাওনের নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা জানায়।
তুই নিজেকে এভাবে আর কত কষ্ট দিবি ?যে ছেলে কে মানুষ করতে এত কষ্ট করছিস সে কি মানুষ হচ্ছে ?
না আমার শাওন নষ্ট হতে পারেনা আমার সব স্বপ্ন ই যে ওকে ঘিরে ।আমি বিশ্বাস করিনা আমার শাওন এমন হতে পারেনা ,শাওন ওর প্রতি মায়ের বিশ্বাস দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা।ধীর পায়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়ায়.মায়ের কোলে মাথা গুঁজে কাঁদে ।স্বপ্ন পুরণের দৃঢ প্রত্যয় মনে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×