somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপূর্ণ স্বপ্ন...

১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাতের কাজ গুলো শেষ করার দ্রুত চেষ্টা সেই কখন থেকেই করে যাচ্ছে মিনা,কিন্তু শেষ হয়েও হচ্ছে না।এদিকে ঘড়িতে বাজে প্রায় ২টা,সন্ধায় বান্ধবী সোমার গায়ে হলুদে যাবার প্রোগ্রাম আছে,শ্বাশুড়ীর কাছ থেকে পারমিশন নিতে হবে,তারপর রেডী হতে হবে কিন্তু এখনো পর্যন্ত কিচেনের কাজই শেষ করতে পারছেনা সে...!
মোবাইলটা বেজে চলছে সেই কখন থেকে কিন্তু মিনা সেদিকে খেয়াল করেও করছেনা,কে ফোন দিচ্ছে কে জানে!
আবারো বাজছে মোবাইলটা,ডাইনিং এ এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল সেতু কল দিয়েছে,রিসিভ করে বলল,
--সেতু দোস্ত শোন,আমি এখন খুবই বিজি,কথা বলার একদমই চান্স নাই,সন্ধায় দেখা হচ্ছে তখন যত খুশী কথা হবে ঠিক আছে?
--আরে ট্রেনের মত স্পিডে কি বলে যাচ্ছিস?একটু দম নে...তোকে একটা খারাপ খবর দেয়ার জন্য ফোন দিয়েছি...
একটু অবাক হলো মিনা!খারাপ খবর মানে??
--কি ব্যাপার?কি হয়েছে?
--মিনা,সোমার বিয়েটা হচ্ছেনা,আজকে গায়ে হলুদের প্রোগ্রামে আর আমাদের যাওয়া লাগবেনা...
চুলায় তরকারী নাড়তে থাকা হাতটা থেমে গেল মিনার,কিছুক্ষন কথা বলতে পারল না,ওকে চুপ থাকতে দেখে সেতু বলল,
--খুব অবাক হয়েছিসনা?আমিও শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম,ওদের বাসার সবার অবস্থা খুব খারাপ,আর সোমার কথা কি বলব...
--কিন্তু এমনটা হলো কেন?কাল পর্যন্ত তো সবই ঠিক ছিল...
--সোমার যেই ছেলেটার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার অন্য মেয়ের সাথে তিন বছরের সম্পর্ক ছিল,কিন্তু ছেলের বাবা কোনভাবেই সেটা মানবে না,সবার চাপে পড়ে ছেলেকে বিয়েতে রাজী করানো হয়েছিলে এটা সোমাদের বাড়ির কেউই জানত না,গত কাল সকালে সেই ছেলে সোমাকে ফোন দিয়ে বলেছে তার পক্ষে সোমাকে মন থেকে বউ হিসেবে মেনে নেয়া সম্ভব না,সে যে মেয়েকে ভালোবাসত তার সাথে নাকি ছেলেটার ফিজিক্যাল রিলেশন ও হয়েছে!সব জানার পরেও যদি সোমা তাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে করতে পারে।এসব শোনার পর সোমা নিজেই বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে...
কোন রকমে ফোনটা রেখে দেয় মিনা...
মিনা কেন জানি মুখে কিছুই বলতে পারছে না,কিছুই বলতে ইচ্ছে করছেনা ওর...কিন্তু অসম্ভব খারাপ লাগছে ওর...খুব...

দুপুরে কিছুই খেল না মিনা,সবাইকে খাইয়ে চুপচাপ নিজের ঘরে এসে বসে রইল।আসরের নামায পড়ে সবাইকে চা দিয়ে সেই একই ভাবে নিজের ঘরে বসে রইল মিনা।কিছুই ভালো লাগছেনা ওর...সোমাকে ফোন দিবে ভাবল কিন্তু দিল না,পারলে একবার কাল দেখা করে আসবে ভাবল...এলোমেলো হাজারো চিন্তা ঘুরতে লাগল মিনার মাথায়...সোমাদের বাসায় কিভাবে যাবে ও?সেসব দৃশ্য কি সহ্য করতে পারবে?কত শত আয়োজন,কত স্বপ্ন,কত আনন্দের মৃত্যু হয়েছে সেখানে...সোমার জন্য কেনা গিফট টার কি করবে মিনা?...অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল...

তিন বছর...অনেক সময়...কিন্তু মিনার মনে হয় এই সেদিনের কথা।বড় ভাইয়ার বন্ধু রাশেদ ভাইয়ের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হল।
রাশেদ ভাইয়ের মা ওকে খুব পছন্দ করতেন,নিজে এসে আংটি পড়িয়ে দিয়ে মিনার মাকে বলেছিলেন,''মিনার মা,তোমার মেয়েকে বউ করে না আমার মেয়ে বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছি,দেখো তোমার মেয়ে আমার ঘরে যেয়ে এতো সুখ পাবে যে তোমাদের কথা ভুলেই যাবে...''
অপরিসীম আনন্দে ভরে গিয়েছিল সেদিন সবার মন।আর মিনা...
কত শত স্বপ্নই না ভীড় করেছিল সেদিন ওর চোখে...
কিন্তু স্বপ্ন গুলো অপূর্ণই রয়ে গেল মিনার।বিয়ের দু'দিন আগে কাউকে কিছু না বলে ঢাকা চলে যান রাশেদ ভাই,মিনার জন্য একটা চিঠি রেখে যান,কিছু অর্থহীন কথা দিয়ে লেখা সেই চিঠি মিনার চোখের জল থামাতে পারেনি।খুব সহজ ভাষায় লেখা ''আমাকে ক্ষমা করে দিও মিনা''এই কথাটি মিনার বাবার হার্ট এটাক কে আটকাতে পারেনি।থামাতে পারেনি মানুষের নানান কথা বলাকে...

তারপর পেরিয়ে গেছে কতগুলো দিন,কত কিছু বদলে গেছে মিনার জীবনে।কিন্তু সময় আজ এতগুলো দিন পর আবার সেই অতীতকে বর্তমান করে ওর সামনে এনে দাড় করিয়েছে।মাগরিবের আজান হচ্ছে,চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায় মিনা,কেমন আছে এখন সোমা?সেও কি ওর মতো করে এখন গায়ে হলুদের জন্য সাজানো স্টেজটার পাশে বসে কাঁদছে?নাকি বসে বসে বিয়ের কার্ডগুলো ছিড়ছে...জানেনা মিনা...
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলারঃ কবি কালিদাস স্পেশাল

লিখেছেন এইচ তালুকদার, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমার আগ্রহ শুরু হয় এই ব্লগেরই একজন অসাধারন ব্লগার ''ডক্টর এক্স'' এর লেখা পড়তে যেয়ে। বাংলা ভাষায় সাইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেলফ হেল্প ধরনের অসাধারন কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনে কী শান্তি সম্ভব!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:২১

এক.
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আলজাজিরা দেখি৷ গাজার যুদ্ধ দেখি৷ রক্ত দেখি৷ লাল লাল৷ ছোপ ছোপ৷ সদ্য জন্মানো শিশুর৷ নারীর৷ কিশোর কিশোরীর৷ বৃদ্ধের৷ সারি সারি লাশ৷ সাদা কাফনে মোড়ানো৷ ভবনে চাপা পড়া৷... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রাকৃতিক দূর্যোগে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫

আমার জীবনে আমি সরাসরি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভেতরে পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । ২০১৯ সালের ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়ের নাম সেবার ছিল সম্ভবত বুলবুল ! সেটা যখন আসছিল তখন আমি ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্কাই ডাইভিংয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টায় সফল বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৬




দেশে এখন চলছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর তান্ডব। তার মধ্যেই সুখবর এলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে-

বিশ্ব রেকর্ড গড়তে ৪১ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে শূন্যে লাফ দিলেন বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×