somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুড্ডির পাইলট বলছি ৯ নং সেক্টরের সাব সেক্টর থেকে - পর্ব ২

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভেঙ্গে যাওয়া মন কখনো চুরি হয় না ! আর ভেঙ্গে যাওয়া মন কাউকে দিতে ইচ্ছা হয় না !

ঘটনার শুরু ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
সারাদেশ তখন সোচ্চার যুদ্ধাপরাধীর শাস্তির দাবীতে ! তখন আমার অবস্থান ছিলো ৯ নং সেক্টরের সাব সেক্টরে (আমার গ্রামের বাড়িতে )। হ্যা আমি এই পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করি ! বাংলাদেশ ১১ টি সেক্টরের বিভক্ত হয়ে যে যুদ্ধ শুরু করেছিলো , আমি মনে করি এদেশ এখনও সেই যুদ্ধ শেষ করতে পারেনি , আর আমি আপনাদের বলছি ৯ নং সেক্টরের সেই ৪২ বছর আগের শুরু হওয়া একটি যুদ্ধের ঘটনা যা আজও চলমান, লড়াই চলছে প্রতিটি মিনিটে, প্রতিটি সেকেন্ডে , লোকচক্ষুর আড়ালে মনের খুব গভীরে

যুদ্ধাপরাধীর সুষ্ঠ বিচারের দাবীতে , আমরা একটি গণস্বাক্ষরতা কার্জক্রম পরিচালনা করি । এখানেই মুক্তি যোদ্ধা রবমিয়া এসেছিলেন স্বাক্ষর দিতে ! আফসোস্ ! স্বাক্ষর দেবার মতো সম্বল হাত দুখানা ছিলো না তার ! মুক্তি যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর হাতে হারিয়েছেন তার দুটো হাত । কিন্তু যখন তিনি শুনলেন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবীতে স্বাক্ষর দিতে হবে তখন ছুটে চলে এসেছিলেন স্বাক্ষর দিতে , আবেগে ভুলে গিয়েছিলেন স্বাক্ষর করার মতো হাত তার নেই ! আমি এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বলেছিলাম , ৯ নং সেক্টরের সকল হাত এখন আপনার ! আপনি দুটি হাত হারিয়েছেন , এখন শহস্রাধীক হাত আপনার হয়ে কাজ করবে । দুই হাত হারানো মুক্তিযোদ্ধা যখন আবেগে কাঁদছিলেন তখন তার চোখের পানি মুছার ক্ষমতা তার ছিলো না , টপ টপ করে ঝরে পড়া প্রতিটি ফোটা সিক্ত করছিলো বাংলার মাটিকে ।

( ওনার কাছ থেকে শোনা ঘটনাটি আমি ঠিক ওনার মতো করেই বর্ননা করছি আমার ভাষায়। )

সময় সেপ্টেম্বর ১০ / ১৯৭১ সাল

একটি সুন্দর জীবন
গ্রামের নাম পাথর ঘাটা , বর্তমানে বরগুনা জেলার একটি থানা । কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত হতে মাত্র কয়েকঘন্টার পথ ।এই গ্রামের হাডুডু খেলার ব্যাপক স্বনামধন্য খেলোয়ার রব মিয়া, অত্যান্ত দুরন্ত প্রকৃতির এই হাডুডু খেলোয়ারের ছিলো গ্রামজুড়ে সুনাম , একই গ্রামের শেফালির প্রতি ছিলো তার অগাধ ভালোবাসা ! প্রতিবার খেলা শেষে জয়লাভ করে লুকিয়ে শেফালির সাথে দেখা করতে আসতো আর শেফালি তাকে নিজ হাতে গাথা বকুল ফুলের মালা গলায় পরিয়ে দিতো , এ পুরস্কার বিতরণ হতো নির্জনে ! সেখানে হতোনা কোন করতালি,হতোনা বিজয়ীর জন্য কোন প্রশংসা বক্তব্য, তবুও রব মিয়ার কাছে এই পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানটাই বেশি প্রিয় ছিলো ।

ঘটনার শুরু
সাগর ও নদী কাছে হওয়ার কারনে এখানে শত্রুপক্ষ সবসময় গানবোট নিয়ে টহল দিতো ( গানবোট = অস্র সজ্জিত বড় আকারের স্পিডবোট , নদীর ট্যাংক বলতে পারেন ) । ওদের তুলনায় আমরা ছিলাম অত্যন্ত দুর্বল, কারন আমাদের হাতে তেমন ভারী অস্ত্র ছিলো না । ওরা শুধু দুটো জিনিসই ভয় পেতো আর তা হচ্ছে আমাদের সাহস আর গানবোট বিদ্ধংসী ওয়াটার মাইন

একটি চমৎকার পরিকল্পনা !
পাথরঘাটার জেলে ঘাট নামক একটা জায়গায় নদীর পাড়ে শত্রুপক্ষের একটি নতুন গানবোট নোঙ্গর করেছে ! গুপ্তচর মারফত খবর পেয়ে আমাদের ছোট দলটির প্রধান ( বীর যোদ্ধা আনসার মাস্টার ) একটা গোপন বৈঠকের ডাক দিলেন । পুরো প্লানটি ছিলো এমন যে , স্থানীয় একদল জেলে আমাদের নৌকায় করে গানবোট হতে আধা কিলো বা তার কম পরিমান দুরত্বে নদীতে নামিয়ে দেবে । আর আমাদেরই কোন একজন যোদ্ধাকে নদীতে ভেসে গিয়ে ওয়াটার মাইন দিয়ে গানবোট টিকে ধ্বংস করতে হবে । কিন্তু আমরা এটা জানতাম না কে হবে সেই ঝুকি গ্রহনকারি যোদ্ধা ? আর কারা সেই জেলের দল । আনসার স্যারের পরিকল্পনা গুলোই হয় এমন ! সব কিছু পরিকল্পনায় থাকলেও সাহায্যকারি দল গুলোর পরিচয় আগে থেকে বলে না ! আক্রমনের তারিখ নির্ধারন হয় ১৬ই সেপ্টেম্বর ।

একজন রহস্যময় যোদ্ধা
সেই সময় নুরু মিয়া নামক একজন মুক্তিযোদ্ধার খুব নামডাক ছিলো ! তার হাতের নিশানা ছিলো অব্যর্থ, অন্ধকারেও সে সুনিপুণ দক্ষতায় শত্রুর উপর সফল আক্রমন চালাতো সিঙ্গেল শূটার দিয়ে ! সেই সময় তাদের দলটি বরগুনা শহর ও আমতলিতে ( কুয়াকাটার একদম কাছের গ্রাম ) হানাদার বাহিনিকে ব্যাপক নাস্তাবুদ করছিলো । নুরু মিয়া ছিলো সেই দলটির প্রধান । তার এমবুশ প্লান ছিলো অত্যন্ত ভয়ংকর ! সবসময় দ্বিতীয় আরেকটি প্লান তার মাথায় থাকতো । প্রথম প্লান বিফল হলে দ্বিতীয় প্লানের জন্য নির্দেশ প্রদান করতো । সেই সময় তার অব্যর্থ নিশানা আর এমবুশ প্লানের জন্য আমাদের কাছে তিনি ছিলেন একজন হিরো ! তাকে কখনো কেউ দেখতো না , একটা ঘটনা ঘটিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করতো, সবাই শুধু তার যুদ্ধের ফলাফল দেখতে পেতো , কিন্তু তাকে কেউ দেখতো পেতো না ! সকলের কাছে সে ছিলো একজন রহস্যময় ব্যাক্তি !

একটি বিদায়
১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ প্লান পরিবর্তন করে আজকে এমবুশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । রাতের অন্ধকারে শেফালির বাড়ির পিছনে ঘনঝোপের আড়ালে দাড়িয়ে আছি আমি ঝোপের অপর পাশে শেফালি ! শেফালি বার বার চোখ মুছছে ! দলের বাইরে একমাত্র সেই জানে গানবোট ধংস করার দায়ীত্ব আমাকে পালন করতে হবে ! হাডুডু খেলার শক্তি , আর প্রচুর দমের কারনে এই ধরনের ঝুকি পুর্ন কাজের জন্য মাস্টার আমাকে নির্বাচন করেছে । ( অবশ্য আমি এর জন্য প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ছিলাম ) শেফালির হাতে কোন একটা ফুলের মালা ছিলো, (ফুলের নামটা মনে নাই) ! শেফালি বলেছিলো : - বন্দুক অলা লঞ্চখান ডুবাইয়া আসো , হেরপর মালা দিমু এহন দিমুনা বলেই শেফালি চলে যায় আঁচলে মুখ চেপে চোখ মুছতে মুছতে ! আমার আরও কিছু বলার ছিলো শেফালিকে, কিন্তু বলতে পারিনি ।

একটি সফল এমবুশ
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো , ওয়াটার মাইন দিয়ে গানবোট ধ্বংস করাটা ছিলো অনেক ঝূকিপুর্ন ! গানবোটের অবস্থান হতে প্রায় আধা কিলো বা কম দূর হতে নদীতে মাইন সহ সাঁতরে যেতে হতো , নদীর স্রোত এর তোরে ভেসে ভেসে গানবোট পর্যন্ত পৌছাতে হতো । গানবোটের কাছে পৌছে গেলে মাইনটি গানবোটের সাথে সংযুক্ত করে ডুব দিয়ে নদীর স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে হতো , পুরো কাজটি ছিলো নিখুঁত সময় মেনে চলার কাজ । একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাইনটি বিষ্ফোরিত হতো ! এবং আমাদের যোদ্ধারা পানিতে ঝাপ দিয়ে পরা শত্রুদের আক্রমন করতো ।
পরিকল্পনা মোতাবেক নির্দিস্ট স্থান হতে জেলেদের নৌকায় উঠলাম । তিনজন জেলে আর আমার সাথে দুজন সহযোদ্ধা মোট ছয়জন । টার্গেট প্লেস এ পৌছানোর পরে দেখলাম গানবোটের পাশে একটা ছোট স্পিড বোট গানবোটটিকে একটু পর পর রাউন্ড করে চক্কর দিচ্ছে ! এই স্পিড বোটটির থাকার কথা ছিলো না ! এমুবশ প্লেস এর পরিবেশ যেমন হবে বলে ধরে নিয়েছিলাম তেমন হলো না ! বিষয়টা অনেক কঠিন হয়ে গেলো আমার জন্য ! কিছুটা হতাশায় পরে গেলাম ! আমাদের সাহায্য কারি জেলেদের একজন দেখলাম আমাকে ইশারায় কাছে ডাকলো ! তার হাতে একটা ঘড়ি । এধরনের ঘড়ি জেলেদের হাতে থাকার কথা নয় ! ভাবলাম দেশের পরিস্থিতি ভালো না হয়তো কোনও ভাবে সংগ্রহ করেছে বা চুরি টুরি করেছে ! সে তার ঘড়িটিকে ইশারা করে দেখালো , বুঝলাম সে আসলে আমাকে বোঝাতে চাইছে ঠিক কতো মিনিট পর পর স্পিডবোটটি চক্কর দিচ্ছে । এর পর আমার কানে কানে বললো ঠিক ৮ মিনিট সময় পাবা ! স্রোত এর সাথে যদি নিশ্বব্দে সাতরে যেতে পারো তবে তুমি সফল হবে, স্পিড বোটের কথা ভুলে যাও ! আমি জানি তুমি পারবা ! তোমাকে আরও সামনে এগিয়ে নৌকা থেকে নামায়ে দেয়া হবে । ৫টি সফল এমবুশে অংশগ্রহন করে এখনও একটাও আঁচর না লাগা আমাকে এভাবে উৎসাহমুলক কথা বলা এই গেঁও জেলেটার দিকে চেয়ে রইলাম অবাক হয়ে ! যাই হোক তার পরামর্শটা আমার কাছে ভালো লেগেছিলো ।
মাইন সেট করা হয়ে গেছে ! এবং যথা সময়ে সেটা বিরাট গর্জনে বিষ্ফোরন হলো আর চারিদিক বাড়ুদের আগুনের ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে গেলো ! আমি সাঁতরে চলেছি দ্রুত , আর মনে মনে হাসছি , শেফালির মালাটির কথা খুব মনে পরছে ,কিন্তু আমার হাসি টিকে থাকতে পারলো না ! চারিদিকে যখন আলোর ঝলকানি উঠেছিলো ঠিক তখন স্পিড বোট থেকে শত্রু পক্ষ আমাকে লোকেট করে ফেলেছে ! আর বৃষ্টির মতো গুলি ছুরছে ! ঠিক তখন বুঝতে পারিনি আমি আসলে শরীরের কোন অংশে হিট হয়েছি ! আমার দুটো হাত কাজ করছিলো না , চোখে অন্ধকার দেখছিলাম , শুধু এটুকু মনে আছে, আমাকে যে করেই হোক সাঁতরে কোন একটা নিরাপদ স্থানে পৌছাতে হবে ! আমাকে বাঁচতে হবে ! শেফালি মালা নিয়ে অপেক্ষা করছে !

একটি রহস্যময় উদ্ধার কার্য্য
কতখন পানিতে ভেসে ছিলাম জানি না , তবে যখন কিছুটা সম্বিত ফিরে পাই তখন চোখে ধোঁয়া ধোঁয়া দেখছিলাম আর কিছু একটা আমাকে পানির মধ্যে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো , এবং একসময় আমাকে একটা নৌকার উপরে ঠেলে তুলে দিচ্ছিলো । আমাকে নৌকার যাত্রিরা টেনে নৌকায় তুল্লো । আমাকে তারা বার বার আমার নাম ধরে নিচু স্বরে ডাকছিলো , এর মধ্যে একটা যান্ত্রিক জলযানের গর্জন শুনতে পেলাম ! এবং কোথাও হতে গুলি হচ্ছে বুঝলাম । অপ্সষ্টভাবে ঘোলা চোখে দেখলাম সবাই নৌকার পাটাতনের উপর শুয়ে পরলো , আমি শুধু দেখছি চোখ মেলে কিন্তু শরীরে কোন শক্তি পাচ্ছি না ! দেখলাম নৌকার একজন যাত্রী হাঁটু গেরে একটা রাইফেল তুলে নিয়ে খুব ধীর গতিতে একের পর এক শ্যুট করে যাচ্ছে ! তার আশে পাশে গুলির বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু সে সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে খুব যত্ন সহকারে একের পর এক সিঙ্গেল শ্যুট করে যাচ্ছে । একটা সময়ে মনে হলো অপরদিক হতে কোন গুলি আসছে না , নৌকার সেই শ্যুটার সেই একই অবস্থায় বসে আছে তবে তার রাইফেলটি নামানো আর ঠোঁটে মনে হয় বিড়ি ধরানো ! পাশ থেকে কেউ হয়তো চাপা স্বরে বলছে নুরুদা এই দিকে দেখেন এই দিকে দেখেন !

মানে ????? !!!!!!! নুরুদাটা কে ? এই লোকটা কে ?তার নামটা চেনা চেনা লাগছে ! মাথা কাজ করছে না আমি আবার জ্ঞান হারালাম ।

অত:পর জ্ঞ্যান ফিরে এলো
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমাদের সিক্রেট বেইজে শুয়ে আছি । মাস্টার আমার মাথার কাছে বসে আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন । সব ঘটনা শুনলাম তার কাছ হতে । আমাদের যোদ্ধারা যখন বিদ্ধস্ত গানবোটের যাত্রি শত্রু সেনাদের আক্রমন করে তখন প্সিডবোটটি আমাকে তাঁড়া করে , বিষ্ফোরনের ঝলকানিতে তারা আমাকে লোকেট করে ফেলেছিলো , হালকা মেশিনগান দিয়ে তারা আমার উপর গুলি বৃষ্টি শুরু করে , দ্রুত সাঁতরাতে আমি হাত বার বার পানির উপর উঠাচ্ছিলাম তাই আমার দুইহাতই গুলিবিদ্ধ হয় । আমাদের সহযোগিতায় সেই তিনজন জেলের একজন ছিলো বীর যোদ্ধা কমান্ডার নুরু মিয়া । তিনিই ছিলেন সেই ঘড়ি হাতের ব্যাক্তিটি ! আর তিনিই আমাকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে উদ্ধার করেন ! আর হাঁটু গেরে একের পর এক সিঙ্গেল শ্যুট করে শত্রু পক্ষের স্পিড বোটের ড্রাইভারকে হিট করলে স্পীড বোটটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দূরে একটা চরার সাথে আটকে যায় ! খুব ভালো লাগছিলো আমার , আমাদের মতো যুবকদের সেই সময়ের হিরো যাকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো , সেই আমার প্রান বাচালো অথচ পরিচয় দিলো না ! ধন্যবাদ দিতে পারলাম না , মনে হচ্ছিলো এই বীরত্বপুর্ন ঘটনাটি আনসার মাস্টার যদি শেফালির সামনে বলতো তবে আরও ভালো হতো !

যুদ্ধ চলছে অবিরাম !
আমার অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে ! সবসময় প্রচুর জ্বর থাকে , আর প্রলাপ বকতে থাকি ! হাতের অবস্থা ভালো না ! আমাকে ঝালকাঠির কাছা কাছি একটা যায়গা নাম শেখের হাট , এখানের একটা বাড়িতে স্থানান্তর করা হলো , এটা একজন ডাক্তারের বাড়ি সেখানেই শুরু হলো আমার চিকিৎসা ! এর পর অনেক ঘটনা অনেক সময় পার হয়ে যায়। স্বপ্নের দেশ হানাদার মুক্ত হয় । আমি ফিরে আসলাম আমার চিরচেনা পাথরঘাটা গ্রামে , আমার কাপর এর ছোট ব্যাগটি বহন করছিলো আমারই এক সহযোদ্ধা আমজাদ ! ব্যাগটি ছোট হলেও সেটা আমার পক্ষে বহন করা আর সম্ভব ছিলো না ! বাড়ি ফিরে এসে কারও কাছে শেফালির কথা জিজ্ঞেস করিনি । নিজেই ওদের বাড়িতে গেলাম , সেখানে শেফালির সাথে দেখা হলো, ও খুব ভালো আছে , পরিচয় করিয়ে দিলো তার নতুন বিয়ে হওয়া জামাই এর সাথে ! শেফালির বাবা বুদ্ধিমান মানুষ , এলাকার অবস্থা ভালো না , বিবাহ যোগ্য কন্যা ঘরে রাখা ঠিক না ! তার উপর শেফালির বাবা নিশ্চই একজন দুইহাত বিহীন মানুষকে নিজের মেয়ের জামাতা হিসাবে মেনে নেবেন না । চলে আসছিলাম , পেছন থেকে শেফালি ডাক দিলো দাঁড়াতে বললো , বলেই দৌড় দিয়ে ঘরে চলে গেলো , হয়তো কিছু আনতে গিয়েছে , আমি চলে আসলাম শেফালির জন্য অপেক্ষা না করে , আমি জানি সে কি দিতে চেয়েছিলো ! সেই রাতে দেখানো সেই ফুলের মালাটি ! মালা না নিয়েই চলে আসলাম ! এমনিতেই বরাবরের মতো মালা গ্রহন করার দুটি হাত আমার নেই !

পরবর্তিতে আর বিয়ে করিনি , কারন ভেংগে যাওয়া মন কখনো চুরি হয় না !..................................




------প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমি ঘু্ড্ডির পাইলট বিদায় জানালাম রণক্ষেত্রের আপোসহীন এক বীর যোদ্ধা রবমিয়াকে , দূরে পশ্চিম আকাশে সুর্য্যটা ডুবে যেতে শুরু করেছে , রব মিয়া রাস্তায় হেটে চলেছে , দূর থেকে তাকে সুর্য্যের মাঝখানে একটা জ্বল জ্বল করা বিন্দুর মতো মনে হচ্ছে ! ভাবছিলাম কোনটা বেশি উজ্জ্বল লাগছে ? সুর্য্যটা নাকি রব মিয়াকে ? কোনটার গভীরতা বেশি, সুর্য্যটার ? নাকি রব মিয়ার জিতে গিয়েও হেরে যাওয়ার বেদনার !
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০৩
৭৮টি মন্তব্য ৭৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×