somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটদের বুদ্ধিমত্তা!

১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্প ১:

স্কুল-কলেজ লাইফে ভীষণ অলস ছিলাম। ক্ষিদে পেলেও রান্নাঘর থেকে কিছু নিয়ে বা ফ্রিজ খুলে কিছু খাব এ কাজটা করতাম না, আস্তে বিছানায় শুয়ে ঘুম! খাওয়া হতো তখনই যখন আম্মা এসে আমার পড়ার টেবিলে খাবার দিয়ে যেতেন। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে খেয়েছি খুব কম বেলাই। আমার দেখাদেখি আমার একেবারে ছোট ভাইটাও মাঝে মাঝে আমার পড়ার টেবিলে খেত, আমার চোখের আড়ালে মানে যখন স্কুলে থাকতাম।

একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি আমার কিছু বইপত্র ভিজে আছে, দেখেই তো মেজাজ খারাপ। আম্মার কাছে থেকে জানলাম আসল ঘটনা, ছোট ভাইটি আজো যথারীতি দুপুরে আমার টেবিলে খেতে বসেছিল এবং পানির গ্লাস উল্টে ফেলেছে। X(

তিন ভাইবোনদের মাঝে আমি বড় হলেও ভাইদের গায়ে হাত তুলিনি তেমন একটা, মাঝে সাঝে বকা দিতাম বড় জোর।

সন্ধ্যায় যখন পড়তে বসলাম, তখন সে আমার পাশে এসে বসলো গপ্প মারার জন্য, তখন তার বয়স মাত্র আড়াই বছরের মতো মনে হয়। কৃত্রিম গাম্ভীর্যতা এনে জানতে চাইলাম আমার এই বইগুলো ভিজলো কিভাবে?

আমার ভাইয়ের নির্বিকার জবাব, উপর থেকে বৃষ্টির পানি পড়েছে। :|

আমি অবাক হয়ে গেলাম তার তাৎক্ষণিক বুদ্ধিদীপ্ত কথা শুনে, নিজেকে কি সুন্দর বাঁচিয়ে দিয়ে কথা বললো। আর এতো ছোট একটা মানুষ এরকম মিথ্যে বলে নিজেকে বাঁচিয়ে দেবার বুদ্ধিও বা শিখলো কোথা থেকে?!

বাসায় আমরা কেবল অল্প কয়জন, তেমন কেউই মিথ্যে বলি না, তার এখনো স্কুলে যাবার বয়স হয়নি। আশে পাশে আর কয়জনের সাথেই বা মিশেছে, এরই মাঝে মিথ্যে বলাটা শিখে ফেললো!

হতে পারে ছোটদেরকে খাওয়াতে গিয়ে বা তাদের দুষ্টামী কমাতে গিয়ে নানারকম সহজাত মিথ্যে আমরা খুব সহজেই বলে ফেলি যেটা আমাদের কাছে দোষণীয় কিছু বলে মনে হয় না, কিন্তু সেটা অবচেতন মনেই বাচ্চাদেরকেও মিথ্যে বলতে শিখিয়ে দেয়।

আমি অবশ্য পাল্টা বললাম বাসার উপরে কি খোলা, আকাশ দেখা যায়? সরাসরি বৃষ্টি পানি পড়বে কেমন করে, আর আজ তো বৃষ্টিই হয়নি। তখনি সে ফিক করে হেসে দিল। :)


গল্প ২:

এই ছোট ভাইটি একদিন ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো, বাসার কাছের এক কিন্ডারগার্টেনে যেটাতে আম্মাও শিক্ষকতা করতেন, সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে এবার শহরের জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। আগের স্কলটা কাছে ছিল, আর এলাকার ভিতর রিকশ-গাড়ি কম চলে তাই তত ভয় ছিল না। এবার মেইন রোডে স্কুল, বাসা থেকে একটু দূরেই, বড় বড় বাস-ট্রাক চলে, প্রচুর রিকশা। স্কুলে যাওয়া-আসা করবে বড় ভাইটির সাথেই, তবুও বড় রাস্তা্য চলাচল করার জন্য কিছু নিয়ম-কানুন শেখানো হচ্ছে তাকে।

বড়টা বলতে শুরু করেছে, ধর তুই স্কুলে যাওয়ার সময় দেখলি ওপাশ থেকে একটা বড় ট্রাক আসছে, তাহলে তুই কি করবি? ... সে নিয়মটা বলতে যাচ্ছিল...

এরই মাঝে ছোটটার নির্বিকার জবাব, আমি ট্রাকের মাঝ বরাবর সোজা নিচে রাস্তায় শুয়ে পড়বো, ট্রাক আমার উপর দিয়ে চলে যাবে। আমার কিছুই হবে না! :-/

রুমে আমিও ছিলাম। বড়টা তো বেকুব হয়ে গেল! আমিও অবাক আবারো তার তাৎক্ষণিক একটা বুদ্ধি খাটানোর চেষ্টা দেখে। এরপর তিনজনে মিলেই হো হো হাসি।


ভাইটি এখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দ্বারপ্রান্তে...



গল্প ৩:

আমার বড় মামার ছেলে যখন ছোট ছিল, খুবই খুবই দুষ্ট ছিল। আর তিন খালার পর ঐ এক মামার সবে একজন সন্তান হলো, আমার নানা-নানীর খুব আদরের, আমাদের সবারও প্রথম একটা মামাতো কাজিন, আমরাও আদর-আশকারা দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছি। ধুমছে সবাই হাত-পা ছোড়াছোড়ি করে মাইর দিত, মাথা দিয়ে গুঁতো দিতো। তার আবার হাত-পায়ের, মাথার হাড়গুলো ছিল ভীষণ শক্ত। একটা খেলেই খবর হয়ে যেত আমাদের! নিরাপদ দূরত্বে থাকার চেষ্টা করতাম সবসময়ে।

অবশ্য সে কেবল আমাদের বড়দের কাছেই বেশ পালোয়ান ছিল, :P যখন তার সমবয়সী আমার আরেক খালাতো ভাই নানার বাসায় বেড়াতে আসতো তার মাইরের সাথে সে কুলাতে পারতো না। আমরা যদি তখন লজ্জা দিতাম সে এই বলে নিজেকে সান্তনা দিত, ও তো মেহমান, তাই ওকে আমি বেশি মারি না, মারলে ব্যাথা পাবে তো, কাঁদবে, এটা তো খারাপ। :-* দাদা বকা দিবে।

একদিন আমরা খালা-ভাগ্নিরা মিলে রুমে বসে গল্প করছি, মামাতো ভাইটা বেশ লাফালাফি করছে আমাদের মাঝখানে। আমার বড় খালাতো বোন বিরক্ত হয়ে ওকে ধমকালো, আর যদি একবার মাঝখান দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করো, এক্কেবারে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখবো!

এ কথায় সে একটু থমকালো, ভয়ও মনে হয় একটু পেল। কিছুক্ষণ চুপ করে বসলো, একবার আপুর দিকে তাকায়, একবার ফ্যানের দিকে। আমরা যেন কিছুই হয়নি এমনভাব করে নিজেদের মতো গল্প করে যাচ্ছি।B-)

কিছুক্ষণ পরই তার তড়াক লাফ!

এহহে, আপ্পি তুমি আমাকে ফ্যানে ঝুলাতে পারবে না, ঐখানে তুমি নাগালই পাবে না। :-/

আবার শুরু হলো লাফালাফি... |-)

আসলেই ফ্যানটা ভালই উঁচুতে ছিল যেটা আপুর নাগালের বাইরে ছিল। বাচ্চাদের বোকা বানানো এতো সোজা নয়।:)


গল্প ৪:

এক বন্ধের দিন বাসায় আমি রান্নাঘরে কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত।সকালে ঘুম থেকে উঠেই রুম গুছিয়ে রেখেছিলাম। বাচ্চারা খেলছিল সেখানে। কাজের ফাঁকে একবার রুমে ঢুকে চারপাশে তাকিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ !

সারা রুম, বিছানায় টুকরো টুকরো কাগজ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে একাকার অবস্থা! এটা তাদের খেলার একটা অংশ।X((

একটু বিরক্ত হয়েই বললাম আমার রুমটা তোমরা এভাবে এলোমেলো করলে কেন, আমি গুছিয়ে রেখেছিলাম না... আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলাম...

মাঝপথেই আমার ছেলের উত্তর, তাহলে আমাদের রুম কোনটা? আমরাও তো এখানে ঘুমাই। :| :| :|

পিচকিটার কথা শুনে টাসকি! আর কিছুই বলতে পারিনি। ঐটুকুন বয়সেই তার নিজস্ব অধিকারবোধ দেখে অবশ্য মা হিসেবে মনে মনে আমি বেশ খুশীই হয়েছিলাম।




গল্প ৫:

গত ডিসেম্বরে দেশে গিয়ে ঢাকায় নানার বাসায় বেড়াচ্ছি বাচ্চাদের নিয়ে, সেই সাথে নিজের টুকটাক কাজকর্ম সারছি। একদিন রাতে মেয়েটা বেশি দুষ্টামী করছিল, এশার নামাজ পড়ছি, জায়নামাজের সামনে দিয়ে বার বার লাফ দিচ্ছে। কয়েকবার বারণ করেও যখন কথা শুনছে না, ফাইনাল ট্রাম্পকার্ড ছাড়লাম। এরকম কথা না শুনলে কিন্তু আম্মু কোরিয়া চলে যাব।

আর যায় কোথায়! সাথে সাথেই মেয়ের চোখ ছলছল, খুব অভিমান বেরিয়ে এলো বুক ফেটে। তাহলে তুমি এখনি চলে যাও কোরিয়ায়, আজ রাতেই। আমাকে ধাক্কা দিয়েই বাসা থেকে বের করে দেয় আর কি!

যতই বুঝাই আচ্ছা এখন যাবো না, কয়েকদিন পর যাবো। প্লেনওয়ালারা আমাকে এখন টিকেট দিবে না। ওরা বলেছে লক্ষ্মী মেয়েটার সাথে আরো কিছুদিন থেকে যেতে। কিন্তু তাকে কি আর থামানো যায়? বারবার ঐ এক অভিমানী কথা, না তুমি এখনি যাও, প্লেনওয়ালাদের বলো তোমাকে টিকেট দিয়ে দিতে। অনেক আদর করে, এই সেই বলে আমি আর আমার ছেলে মিলে তাকে থামালাম। এটা বুঝলাম বাচ্চাদের এভাবে ইমোশনালী ব্ল্যাকমেইল করা ঠিক না, ওরা কষ্ট পায় ভীষণ।!

সেই সাথে এও বুঝলাম আমার মেয়েটা আমারই ডুপ্লিকেট!





এ কয়বছর ধরে ওরা আমার মায়ের কাছেই আছে। আব্বা-আম্মা দুজনের অনেক কষ্টই হচ্ছে তাদেরকে দেখা শোনা করতে গিয়ে, তাদের বাবাও মাসে দুইবার নিয়মিত গিয়ে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটিয়ে আসে। এর মাঝে আম্মার দুই তিন মাস আগে ক্যান্সার ধরা পড়লো। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়েছে বলে ডাক্তাররা আশা দিচ্ছেন। বাকী আল্লাহর ইচ্ছে। এখনো চিকিৎসা চলছে, সবাই দোয়া করবেন আমার মায়ের জন্য। উনাদের এ ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো কিনা জানি না, উনারা করেই যাচ্ছেন। বিনিময়ে খুব কম কিছুই উনাদের জন্য করতে পারছি। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের নিজস্ব কিছু সিদ্ধান্তও আপাতত ঝুলে আছে এসব নানান পারিবারিক বিপদ-আপদে। কত তাড়াতাড়ি লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে যেতে পারবো সেই দিন গুণছি আপাতত ...



সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:১৬
২৯টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×