somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোচিং সেন্টার বন্ধ আন্দোলন এবং কিছু অপ্রিয় সত্য

১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি বাংলাদেশের শিক্ষাবিদেরা তথা শিক্ষাবোদ্ধারা বেশ উঠেপড়ে লেগেছেন কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে। তাদের দাবী – কোচিং সেন্টারগুলো দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে । কোচিং সেন্টারগুলোতে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের কোমল মনের উপরে চাপ সৃষ্টি করে তাদের প্রতিভা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিচ্ছে। তাই কোচিং সেন্টারগুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে যে করেই হোক। বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায় এ সম্পর্কিত কিছু বোদ্ধাদের মতামত দেখে এই অধমের মনে কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হলো। তাই লেখক না হয়েও লেখার মতো দুঃসাহসিক কাজে হাত না দিয়ে পারলাম না।

এইসব শিক্ষাবিদদের প্রতি আমার প্রশ্নঃ “আপনি কি আপনার বাড়ি তৈরির সময় ভিত আগে না দিয়ে ছাদ তৈরি করেছিলেন?”

কোচিং সেন্টারগুলো কেন গড়ে উঠেছে সেটা আগে আমাদের বুঝতে হবে। কোচিং সেন্টারগুলো গড়ে ঊঠেছিলো আমাদের শিক্ষার্থীদের যাদের বাসায় বাবা-মা পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেননা তাদের ক্লাসের পড়ার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য। আর বাসায় যেখানে ২ জন ব্যক্তি বাচ্চাকে সব বিষয় দেখান সেখানে কোচিংএ সব বিষয়ের আলাদা আলাদা শিক্ষক থাকেন। আমি স্কুল কলেজের শিক্ষকদের কথা বলছিনা, যারা ক্লাসে না পড়িয়ে ব্যাচে পড়ান। আমি বলছি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা বা সদ্য পাশ করা একদল মেধাবী শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত কোচিং সেন্টারগুলোর কথা যেখানে আসলেই স্কুল কলেজের শিক্ষকদের চাইতেও কোন কোন ক্ষেত্রে যোগ্য শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেন তারা। আমার এই কথাতে আবার অনেক শিক্ষকই মুখ গোমড়া করে বসে থাকবেন, তাই আমার কথার স্বপক্ষে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করছি-

১। প্রাইমারি স্কুল বা হাই স্কুলের কতজন শিক্ষক নিজ নিজ বিষয়ের উপরে ক্লাস নিচ্ছেন সেটা নিশ্চই আমাদের সবার জানা। হাতে গোনা কয়েকটি বিষয় যেমনঃ বাংলা ছাড়া আর প্রায় সব বিষয়েই এক বিষয়ে পাশ করা শিক্ষক আর এক বিষয়ের ক্লাস নেন। স্বীকার করতে না চাইলেও এটাই বাস্তবতা, সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসুন। কোচিং সেন্টারে শিক্ষক নিয়োগের সময় এটা অনেক ভালোভাবে দেখা হয় যে শিক্ষকের ব্যাকগ্রাউন্ড কী। কারন তাদের অভিভাবকদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।

২। প্রাইমারি স্কুল বা হাই স্কুলের শিক্ষকেরা চাকরি করেন সরকারের। পড়াতে পারা আর ডিম পাড়া তাদের কাছে একই ব্যপার মনে হয়। ক্লাসে শিক্ষার্থীরা বুঝলো কি না বুঝলো তা নিয়ে তাদের কোন মাথব্যাথা নেই। বরং না বুঝলে তো আরো ভালো তাদের ব্যবসার জন্য... ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বাসায় আলাদা করে ব্যাচ পড়তে আসবে, টু পাইস কামাই হবে। ক্লাসে পড়াবে ঘোড়ার ডিম, ছাত্রছাত্রীরা যারা শুধু ক্লাস করবে তারা পরীক্ষার খাতাতেও পাবে ঘোড়ার ডিম। কোচিং এ না গিয়ে কি আর উপায় আছে? অপরপক্ষে কোচিং সেন্টারগুলোতে প্রতিটি শিক্ষক টিকে থাকে যুদ্ধ করে। ক্লাসে না পড়াতে পারলে, না বুঝাতে পারলে ফিডব্যাক খারাপ আসবে, আর সেটা হলে পরবর্তীতে আর ক্লাস পাবেনা। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি- স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা টিকে আছেন বেত আর নাম্বার পকেটে থাকার ক্ষমতার জোরে আর কোচিং সেন্টারগুলোর ভাইয়া নামক শিক্ষকেরা টিকে আছে যোগ্যতার বলে।

৩। এবার একটু কমার্শিয়াল কথা বলি। একটা স্কুল বা কলেজে যে টাকা অভিভাবকেরা বা সরকার দেয় সেটা দিয়ে আর কয়টিই বা পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। বরং পরীক্ষা না নিলে তার খরচটা পকেটে চালান দেয়া যাবে এবং সেটার জন্য কারও কাছে জবাবদিহি তো করতে হচ্ছেনা। কিন্তু বাজারে কোচিং সেন্টার কিন্তু একটা নয়, অনেক। এতগুলো কোচিং সেন্টারের মাঝে টিকে থাকতে হলে নিয়মিত ক্লাস আর পরীক্ষা নিয়েই টিকে থাকতে হবে। এখন আপনারাই বুঝে দেখুন কেন ছাত্রছাত্রীরা কোচিং সেন্টারে যায়।

এত কথা বলে ফেললাম, সবাই হয়তো মনে করছেন যে কোচিং সেন্টার তুলে দেয়ার বিপক্ষে কথা বলছি আমি। ব্যাপারটা তা নয়। আমি বলতে চাচ্ছি ছাগলের মতো ব্যা ব্যা না করে সঠিক পথে আসুন। আগে ঘরের ভিত তৈরি করুন। দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে সঠিক শিক্ষক নিয়োগ দিন। শিক্ষকদের জবাবদিহিতার পথ তৈরি করুন। প্রয়োজনে আপনাদের চোখের বালি “কোচিং সেন্টারগুলোর” কাছ থেকে ট্রেনিং নিন এ ব্যাপারে। শিক্ষকদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে প্রাইভেট বা টিউশনির পথ থেকে সরিয়ে আনুন। টাকা হালাল করে খাওয়া শিখুন। সরকার থেকে বেতন নিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়ার জন্য। তাদের ধরে ধরে নিজেদের টাকা উৎপাদনকারী মেশিন বানানোর জন্য না। দেশের সমস্ত স্কুল কলেজে শিক্ষার মান নিশ্চিত করুন, শিক্ষার্থীরাই কোচিং বর্জন করবে। আপনাদের আর কষ্ট করে ভাষন দিতে হবে না, বড় বড় দুর্বোদ্ধ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবেনা, কলাম লিখতে হবে না (যদিও কলাম লেখেন কি জন্য সেটাও একটা দেখার বিষয়)।

আমি নিজে একজন ক্যাডেট কলেজের ছাত্র। ক্যাডেট কলেজের স্যারেরা প্রাইভেট বা টিউশনির সাথে জড়িত নন। খুব কাছে থেকে দেখেছি যেসব শিক্ষকদের মনে প্রাইভেট পড়ানোর ধান্দা থাকেনা তারা ক্লাসে কতটা আন্তরিক হতে পারেন শিক্ষাদানের ব্যাপারে। কই ... আমাদের তো কোন প্রাইভেট পড়তে হয়নি , কোন কোচিং করতে হয়নি , আমরা নিজেরাই এর প্রয়োজন বোধ করিনি।

তাই শিক্ষকদের বলছি – টাকা টাকা করবেন না। শিক্ষাদান একটি মহান পেশা। একে কলুষিত করবেননা। কোচিং সেন্টারগুলো আপনাদের প্রাইভেট পড়ানোর সম্মানীতে ভাগ বসাচ্ছে বলে ঈর্ষাপরায়ন হবেননা। ক্লাসে ঠিকমতো শিক্ষাদান করুন, কোচিং সেন্টারগুলো এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।

আর শিক্ষাবিদদের বলছি আপনাদের শিক্ষকদের ক্লাস নেবার প্রতি মনযোগী করার জন্য পদক্ষেপ নিন, কাজে লাগবে। হঠাৎ হঠাৎ শিক্ষানীতি পরিবর্তন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলবেন না। তারা গিনিপিগ নয়, আমাদেরই ভবিষ্যত প্রজন্ম।

লেখকঃ আরিফ হাসান
শিক্ষার্থী (বিবিএ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)
এক্স-ক্যাডেট, রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×