somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গনতান্ত্রিক দেশে আমরা জনগনই নাকি সব?আব্রাহাম লিঙ্কন গনতন্ত্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন-‘democracy is the people,by the people and for the people.’গনতান্ত্রিক হোক,সমাজতান্ত্রিক হোক,সামরিক শাসক হোক আর রাষ্ট্রপ্রধান কেন্দ্রিক সরকারই হোক,সব সরকারেরই কাজ হচ্ছে সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করা।দেশের অনুকুলে যুগোপযুগি পদক্ষেপ নেয়া,দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা।আর বিরোধীদের কাজ হচ্ছে তাদের সহযোগিতা করা।এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকা যাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয়।আমরা গনতান্ত্রিক দেশের অধিবাসী।আব্রাহাম লিংকনের কথা অনুযায়ী আমরাই সকল ক্ষমতার উৎস।আমিও এতে বিশ্বাস করি।কিন্তু বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ‘ডেমক্রেসি ফর দা পিপল’।হয়ত কথাটি ঠিক।আর ঠিক নয় একমাত্র বাংলাদেশের জন্য।বিশ্বের বুকে আমরাই একমাত্র গনতান্ত্রিক দেশ,যে দেশে গনতন্ত্রের সঠিক চর্চা হয়না।যে দেশে গনতন্ত্রের নামে গনতন্ত্র হরন করা হচ্ছে।গনতন্ত্র নাকি জনগনের জন্য কল্যানকর,সুখকর।যে জন্য এখন অনেক রাষ্ট্রে গনতন্ত্র চালুর জন্য অনেকে লড়াই করে যাচ্ছেন।উদাহরন স্বরুপ বলা যেতে পারে অং সান সুচি,লিও সিয়াওবোর কথা।দু জনেই বিশ্বের বড় সন্মাননা নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই করে যাচ্ছেন বলেই এ পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন।তাদের আন্দোলন রহিত করার লক্ষ্যে তাদের বন্দী করে রাখা হয়েছে।এবং বেশকিছুদিন হল অং সান সুচি মুক্তি লাভ করেছেন।গনতন্ত্র যদি আশীর্বাদই হয়,তাহলে কেন আমার দেশে একে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে।একপেশে শুধু সরকার বা রাজনীতিবিদদের দায়ী করা ঠিক হবেনা এর দায়ভার আমাদের আম জনতার উপর ও বর্তায়।এতভিন্নমাত্রার জনগন,এতজ্ঞান বিশেষজ্ঞ,এত নিরক্ষর জনগন এই দেশে ছাড়া আর কোথায়ও নেই।আমরা গনতন্ত্রে এতই মগ্ন হয়ে গেছি যে আমরা এর সতব্যবহার করতে ভুলে গেছি।আমরা ভুলে গেছি আমাদের অধিকারের কথা।প্রতীক,চেহারার মায়া আর কথার ফুলজুড়ি আমাদের গনতন্ত্রকে ভুলিয়ে দিয়েছে।আমাদের গনতন্ত্র এখন পরিনত হয়েছে নেতাতন্ত্রে,রাজনীতিতন্ত্রে।জনগনের অধিকার হরন করে এখন নেতারা তাদের অধিকার আদায় করছে।এটাকে ঠিক অধিকার বলা যায় না।কারন এটা তার বিপরীত।এমন ইতিহাস সৃষ্টি করে আর কোন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে জানা নেই।কিন্তু সে ইতিহাস আমরা ধরে রাখতে পারিনি।কেন পারিনি???একের পর এক ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড আমদের গর্বিত ইতিহাসকে পদদলিত করে চলেছে।আমরা সে ইতিহাসের দিকে হৃদয় দিয়ে তাকায়নি।সবার উর্ধ্বে চলে আসল ব্যক্তিস্বার্থ।একটা রাষ্ট্র হয়েছে এর নেতৃত্ব দিতে হবেনা?আমার কথামত সবাই চলবে।সব কিছু আমার অধিকারে চলে আসবে।এই মনবাসনা,ক্ষমতার লোভ,দেশপ্রেমের অনুপস্থিতি এর জন্য দায়ী।রাষ্ট্র হওয়ার সাথে সাথে সবার ভিতর নেতার বীজ গজে উঠল।আর তাই ক্ষমতার কাড়াকাড়ি খেলাও বেশ জমে উঠল।পশ্চিমা থেকে আলাদা হলাম কিন্তু তাদের সামরিক বীজ আমদের এখানে রয়ে গেল।পানি অনেক গড়াল।এ খাল ও খালে,এ নদী থেকে ও নদী,…।অবশেষে নুর হোসেনের জয় হল।জনগনের মনের ক্লান্তি রেখা কেমন অস্পষ্ট দেখাল মনে হল সেই উষা লগ্নের পরে জনগন আরেকবার হেসেছিল।নুর হোসেনের আবির্ভাব সবাই মনে করল আশীর্বাদ।আবির্ভাব হল অসংখ্য নেতার।চারিধিকে নেতার ছড়াছড়ি।আমরাও তাদের ভিতর ডুবে যেতে লাগলাম।তাদের বাহারি প্রতীক,চেহারা,আর কথার ফুলজুড়ি আমাদের আকৃষ্ট করে চলল।লাভ কি হল বুঝতে পারলাম খানিক পরে।কোন পার্থক্য খুজে পেলাম না নুর হোসেনের পরের অবস্থা আগের অবস্থার মাঝে।সব কিছু নষ্টদের অধিকারেই চলে যাচ্ছে।যেন ক্রমান্বয়ে অগোচালো হতে লাগলো।হাটি হাটি পা পা করে চল্লিশের ঘরে পা দিয়েছি।মানবকুলের বয়স যেমন বেড়ে যেতে থাকলে চেহারায় ক্লান্তি ভাব জন্মে,চুল দাড়ি পাকা হয়ে সাদা হয়,বার্ধ্যকের ছাপ পড়ে।আজ মনে হচ্ছে আমার দেশের ও চেহারায় ক্লান্তিভাব দেখা দিয়েছে,বার্ধক্যের চাপ পড়ে যাচ্ছে।কিন্তু আমরা তো এত তাড়াতাড়ি দেশের চেহারায় ক্লান্তিভাব দেখতে চাইনি।বয়সের তুলনায় আমাদের অনেক যৌবন থাকার দরকার ছিল।একটি দেশ তো এমন ভাবে চলতে পারেনা।যুগের সাথে আমাদের তো আরো অনেক এগিয়ে থাকার কথা।প্রজন্মের পর প্রজন্ম কি শুধু স্বপ্নই দেখে যাবে?আশা,প্রত্যাশার কি কখনো প্রতিফলন ঘটবেনা?আমরা তো শুরু থেকেই আমাদের ইতিহাস নিয়ে গর্ব করে আসছি।কিন্তু রাজনীতির রোষানলে পড়ে যেভাবে দিন দিন বিকৃত হচ্ছে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তাতে করে মনে হয় একদিন কোন এক প্রজন্ম জানবে ইতিহাস বলে এই দেশে কিছু ছিলনা।‘রাজনীতিবিদ’ কত বড় একটি শব্দ।যার মহাত্নতা সম্পর্কে আমরা এখনও হয়ত জানতে পারিনি।জানলে এইভাবে শব্দটির অবমুল্যায়ন হতনা বা করত না।একসময় বিশ্বের বড় বড় রাজনীতিবিদদের নাম শুনলে,তাদের সম্মান দেখে রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম,দেখতো অনেকেই।চেহারার উজ্জলতা,সুঠাম দেহ,বড় বড় কথা আর অঢেল টাকা থাকলেই রাজনীতিবিদ হওয়া যায় না।রাজনীতি মানে হচ্ছে অগাধ দেশপ্রেম,সবার উপরে দেশ সত্য তার উপরে নাই।কলংকের কালিমা থেকে নিজেকে সরিয়ে,ব্যক্তি স্বার্থ ত্যাগ করে,নিজেকে জনগনের কল্যানে বিলিয়ে দেয়ার বাসনা নিয়ে রাজনীতির চাদর গায়ে জড়াতে হয়।আমি যদি তা নাই পারি তাহলে এই চাদর গায়ে দেয়া বিবেক বিরোধি।এটা অনেক কঠিন কাজ বলেই সবার পক্ষে রাজনীতিবিদ হওয়া সম্ভব নয়।যদিও এদেশে তা সম্ভব।এদেশে বিবেক বিরোধিরাই রাজনৈতিক নেতা সাজতে ভালবাসেন।এদেশের মানুষ রাজনীতিবিদ হতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।যদি প্রকৃত রাজনীতিবিদ হওয়ার মনোভাব তাদের থাকত তাহলে বোধহয় অচিরেই বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের একটি আদর্শ দেশ হিসেবে পরিগনিত হবে।বড় কষ্ট লাগে স্বাধীনতার অবমুল্যায়ন দেখে।যখন কোথাও আমাদের ইতিহাস নিয়ে ঝগড়া করতে দেখি।ইতিহাসের স্বাক্ষীরা আজ বিভক্ত দলে দলে।আবির্ভাব ঘটেছে হাজারো ইতিহাস স্বাক্ষীর।তারা কি একটিবারের জন্যও বোঝতে সক্ষম হন না যে ইতিহাস নিয়ে ঝগড়া মানে তাদের অপমান করা।তাদের নিশ্চুপতাই আজকের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিলম্বের প্রধান কারন।দেশ নিয়েই যদি নেতারা পড়ে থাকেন তাহলে কেন চল্লিশ বছর লাগলো শুধু শুরু করতেই।চল্লিশ বছর হলেও একপক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটেছে।তাহলে বিপক্ষ দল কেন প্রশ্ন তুলবে?তাদের কেন আগে শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটেনি?দেশের প্রতি কি তাহলে তাদের কোন দায়িত্ব নেই?নাকি তারা চাচ্ছেনা।এতে তো কারো ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার কথা নয়,এটাতো তাদেরই একটা দায়িত্ব।আগে হয়ে গেছে আগে হয়ে গেছে বলে যারা চেচামেছি করছেন,তারা নিশ্চয় এদের মদদদাতা কিংবা এদের দারা উপকৃত।না হলে কেন তারা এড়াতে চাচ্ছেন?এটা তো কারো ব্যক্তিগত বিষয় নয়,সমগ্র জাতির বিষয়।এটা আদালতের কাজ।এখানে কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।আপনার চোখে কেউ যদি বাদ পড়ে আপনি আদালতে যথাযথ প্রমান উপস্থাপন করে চিহ্নিত করে দিন।যদি নাই পারেন তাহলে কিসের নেতা হলেন?বাইরে বসে দশবারোটা চ্যানেল একত্র করে চিৎকার করে অন্যকে দুষছেন,বলছেন এটা রাজনৈতিক কাজ।দেশে গনতন্ত্র নেই,নেতাতন্ত্র তো আছে।তাহলে পারবেন না কেন? আমরা তো এটাই চাই একজনের ভুল আরেকজন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে।শুধু দেখিয়ে দিলে হবেনা এর সমাধানের যথাযথ উপায়ও দেখিয়ে দিতে হবে।আমাদের স্বপ্ন,আমাদের আশা,প্রত্যাশাও যে আজ ক্লান্ত।প্রতিফলনের কোন বালাই না দেখে আমরা স্বপ্নকে ভুলতে বসেছি।আমরা উপায় না দেখে একের পর এক সায় দিয়ে যাচ্ছি।এটা কখনই আপনাদের সফলতা নয়।আপনাদের সফলতা আপনাদের কর্মই প্রমান করবে।দয়া করে দেশটাকে নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলবেননা।আজ আছেন তো কাল নেই।আমি যদি আমার সর্বস্ব ঠেলে দিতে না পারি তাহলে দয়া করে কেটে পড়ি।জাতির কাছে আর হেয়প্রতিপন্ন হবেন না।তরুন,মেধাবিদের সুযোগ করে দিন।আমরা চাই সুস্থ রাজনীতি।রাজনীতির মাঠে ঝগড়া বিবাদ সব হবে কিন্তু আমার দেশ অক্ষুন্ন থাকবে।দেশ এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে।
[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×