somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরা টুকরা আবোল তাবোল স্মৃতি গুলা। -২

১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোপীবাগ বেলাঃ

১৯৯২ থাইকা ১৯৯৪ পুরাটা সময় কাটছে এই গোপীবাগ এলাকায়। এলাকার সৌন্দর্য উপভোগ করার মত বয়স আমার তখন ছিল না তবে সময়টা কাটছে খুব ভালো। প্রত্যেকটা দিন বিকালে চার পদের খানা খাইতাম। বিকাল ৪ টার দিকে বাড়ির কেয়ারটেকারের সাথে বাইর হইতাম। বাইর হইয়া প্রথমে যাইতাম মহসীন চাচার কনফেকশনারী দোকানে লাল লাল লাড্ডু খাইতে। লাড্ডু খায়া যাইতাম মহিলা কলেজের গলিতে একটা চটপটির দোকান আসিল অই খানে। চটপটি খাওয়া শেষ হবার পর তার পাশের দোকান থাইকাই বাকরখানি খায়া গোপীবাগ বাজারের দিকে যাইতাম, অইখানে যায়া খাইতাম শাহী হালিম। এইসব করতে করতে সন্ধ্যা হইয়া যাইত বাসায় আইসা পরতাম। বাসায় ঢুকার সময় নিচতলায় আব্বার চেম্বারে ঢুইকা আব্বার লগে দেখা কইরা পাঁচতলায় উঠতাম।

এই টাইম টায় আমার প্রিয় খেলনা আসিল নানা পদের বন্দুক আর পিস্তল। গ্রামে যখন ছিলাম তখন আসিল দাও বটি আর ঢাকায় আইসা এইটা বদলায়া হইল পিস্তল। ঢাকার আবহাওয়া মনে হয় সব কিছুই বদলায়া দেয়।

এইভাবে বেশ কিছুদিন কাটার পরে আব্বা আমার লাইগা একজন হুজুর আর স্যার ঠিক করল। গত পর্বেই উনাদের কথা বলসিলাম। হুজুর আর স্যার এই দুইজন লোকই অসম্ভব ভালো আসিল। হুজুর আস্ত ঠিক মাগরিবের নামাজ শেষ কইরা। আমার তখন প্রধান কাজ আসিল বারান্দায় খারায়া হুজুর রে পাহারা দেয়া। যখনই দেখতাম হুজুর আইতাছে ধুপ কইরা বিছানায় যায়া চোখ বন্ধ কইরা শুইয়া পড়তাম, যত যাই হউক চোখ আর খুলত না। তবে এই ভাবে কয়েকটা দিনই ফাঁকি দিতে পারছিলাম। এরপরে অইটাইমে আমারে বিছানার দিকে যাইতে দেখলে আম্মা সাইজ লাগাইত। হুজুর যাওয়ার পরপরই স্যার আইত। তবে আমি আরবীর আগে বাঙলা আর ইংলিশ শিখছিলাম।

এই স্যার লোকটা ব্যাপক মজার আসিল। আমি যখন ঠিকঠাক মত এবিসিডি ও শিখি নাই, সে তখন একদিন আমারে কইল আজকে পড়া শেষ কইরা তোমার আব্বার চেম্বারে যায়া তোমার আব্বারে কইবা " ফাদার গিভ মি টেন টাকা " । আমি জিগাইলাম এইডা কই জিনিস? স্যার কইছিল তোমার আব্বারে কইলেই বুঝব। আমিও আমার বাপরে যায়া সবার সামনেই চিল্লায়া কইলাম ফাদার গিভ মি টেন টাকা , বাপ আমারে উত্তর দিল হোয়াই? এইবারে আমি ধরা। কি কইল কিছুই তো বুঝলাম না। সবার সামনে চুপসাইয়া গেলাম। এর পরে আমার বাপ আমারে কাছে ডাইকা পুরা জিনিস বুঝায়া দিল। সেই ছিল প্রথমবারের মত আমার বাপের কাছে আসা। "ফাদার গিভ মি টেন টাকা" আমারে আমার বাপের খুব কাছাকাছি নিয়া গেল। আজকে সেই স্যার রে ধন্যবাদ বলার একটা সুযোগ পাইলাম। ধন্যবাদ স্যার।

এর কিছুদিন পরে আব্বা আমারে স্কুল এ ভর্তি করায়া দিল। আমার জীবনের আরেক মজার যায়গার সন্ধান পাইসিলাম আমি তখন। স্কুলের নামটা আসিল " মিষ্টিমণিদের বিদ্যাপীঠ " ।

আমি তখনও স্কুলটার পুরা নাম ইংলিশ এ কইতে পারতাম না এখনো পারি না। নামটা হইল " দি সুইট লিটল বয়েজ অ্যান্ড গার্লস " তখনো এইটুকুই কইতাম এখনো এই টুকুই পারি। এই স্কুলে তখন আর্ট টিচার ছিলেন চিত্রলেখা গুহ। হ্যা এখন টিভিতে যাকে দেখা যায় তিনিই। আমি যতবার উনার আর্ট ক্লাসে গেসি ততবারই "আমরা সবাই রাজা" আর " ক -এ কলা , খ - এ খাই " এই গান ২টা গায়া আইসা পরতাম। আমার শিল্প সাহিত্য চর্চার দৌড় এখনো অই পর্যন্তই আছে, বাড়ে কমে নাই। তবে এই স্কুলে গিয়াই আমি ডায়লগ দেয়া শিখছিলাম " মা মা আমি ফার্স্ট হয়েছি "।

স্কুলে যাইতে আসতে আমার খুব মজা লাগত। যাওয়ার সময় টিফিন হিসাবে কিনতাম অই সময়ের বিখ্যাত তিন টাকার টিফিন ব্রেড। সাদা গোলাকার ছোট্ট একটা প্যাকেট আর প্লাস্টিকের ছোট বোতলে ভরা দুই টাকা দামের কমলা জেলী। আর স্কুল থাইকা আসার সময় প্রত্যেকদিন আম্মা আমারে কোন আইসক্রিম কিন্যা দিত। দুঃখের বিষয় হইল সেই কোন আইসক্রিম আমি কোনদিন পুরাটা খাইতে পারি নাই। একটু খাওয়ার পরেই জিনিসটা গইলা রাস্তায় পইড়া যাইত। এর পরে আমি খালি অইটার বিস্কুট টা খাইতে খাইতে বাসায় আইতাম।

শুধু এই ২টা জিনিসের লাইগাই আমি কখনো স্কুল মিস দিতে চাই নাই।

আমাদের বাসায় তখন একটা ছোট ক্যাসেট প্লেয়ার আসিল। আর আসিল তপন চৌধুরীর কয়েকটা ক্যাসেট। খুব ভাব লইয়া বারান্দায় খারায়া এই একই গান শুনতাম বারবার। কয়দিন আর ভালো লাগে। এর পরে আব্বারে কইয়া আর দুইটা ক্যাসেট কিনছিলাম। একটা আসিল ত্রিরত্নের ক্ষ্যাপা আর আরেকটা আসিল ফীডব্যাক এর একটা ক্যাসেট যেইটার একটা গান আসিল " গঠিত হয়েছে উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি "।

ক্যাসেট দুইটা কিনছিলাম স্কুল থাইকা আসার পথে একটা গানের দোকান আসিল, সেই দোকানে তখন এই ২ টা অ্যালবামই বাজত সারাদিন। স্পেশালি প্রথম অ্যালবামের " বাথ রুমে বাথ রুমে " এই গানটা শুইনাই ক্যাসেট ২ টা কিনসিলাম। এর পরে তো " বাথ রুমে বাথ রুমে " এই গানটা আমি দিন কাল পাত্র ভুইলা সারাদিনই চিল্লাইতাম।তবে কপাল খারাপ কয়েকদিন পরে সেই ছোট্ট ক্যাসেট প্লেয়ারটা আমার অত্যাচার সহ্য করতে না পাইরা খালি ফিতা প্যাচায়া ফালাইত। তখন যে গান গুলা কি সুন্দর ভাবেই না অদ্ভুত শোনা যাইত। এই জিনিস হওয়ার পরে আমার ব্যাপক আনন্দের খেলা আসিল সেই ক্যাসেটের প্যাচাইন্না ফিতা টাইনা টাইনা খুলা। এই রকম একদিন হটাত মনে হইল ফিতা কেন প্যাচায় এইটা আমার দেখা লাগব, সুতরাং গান চলার সময় এইটারে বাইরায়া আছড়াইয়া টুকরা করলাম, মাগার আইজও বুঝি নাই ফিতা কেন প্যাঁচায়। গান বাজনার কাহিনী শেষ।

এর মইদ্যে চার তলায় এক হিন্দু আনটি আসল ভাড়া। তার একটা মেয়ে ছিল আমার বয়সী। নাম ছিল পিউ। ততদিনে ছাদে যাওয়ার অ্যাক্সেস পাইসি, কারন ছাদের রেলিং দেয়া হইছে। আমরা মোটামোটি ছাদেই খেলতাম। যখন জানতে পারছিলাম এই মেয়ে হিন্দু তখনি টার্গেট করছিলাম অরে গরুর মাংস খাওয়ামু। বিকালে খেলার সময় বাসায় যদি গরুর মাংস রান্না করত আমি এক পিস লইয়া যায়া খেলতাম আর খাইতাম। তো এই মেয়েও খাইতে চাইত। ওরেও দিতাম। :)এইভাবে কতদিন এক লগে গরুর মাংস খাইছি। একদিন অর আম্মা দেইখা ফালাইছিল কাহিনী। এর পরে অর আম্মা আইসা আমার আমার আম্মারে কইল, আম্মা আমারে দিল সাইয। :(

গোপীবাগের মজা আপাতত এইখানেই শেষ। ১৯৯৪ এর শেষের দিকে উত্তরা আইসা পরছিলাম। পরের পর্বে উত্তরার কাহিনী বলা হবে আশা করি।
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাইনারি চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি: পূর্ণাঙ্গ তুলনার ধারণা এবং এর গুরুত্ব

লিখেছেন মি. বিকেল, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩০



সাধারণত নির্দিষ্ট কোন বস্তু যা শুধুমাত্র পৃথিবীতে একটি বিদ্যমান তার তুলনা কারো সাথে করা যায় না। সেটিকে তুলনা করে বলা যায় না যে, এটা খারাপ বা ভালো। তুলনা তখন আসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×