somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশে উচ্চ শিক্ষার হার বাড়ছে কিন্তু উচ্চ শিক্ষার মান কমছে । পরবর্তী প্রজন্ম হয়ত অনুসরনীয় শিক্ষক পাবে না ।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরাই পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষক । বর্তমান শিক্ষকরা আমাদের প্রস্তুত করে দিতে না পারলে সুনিশ্চিত ভাবে পরবর্তী প্রজন্ম সুযোগ্য শিক্ষক পাবে না । যোগ্য শিক্ষকের অভাবেই শিক্ষার মান দিন দিন আরো কমবে একই অনুপাতে কমে যাবে জাতির উন্নতির সম্ভবনা । অধ্যাপক নজরুল ইসলাম স্যারের একটি সাক্ষাতকার । ছাত্র-শিক্ষক সবার জন্য শেয়ারিত সাথে আমার কিছু কথা ।







প্রথম আলো অনলাইন: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ শতাংশ শিক্ষক পড়াতে পারেন না। শিক্ষকদের একটি বড় অংশ কোনো ধরনের গবেষণা করেন না। বলা হয়, উচ্চশিক্ষার মান ক্রমেই কমছে। আপনি দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। দেশের উচ্চশিক্ষার মান আসলে কেমন বলে আপনার মনে হয়?
নজরুল ইসলাম: দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে এককথায় মন্তব্য করা কঠিন। দেশে এখন একটা ধারণা আছে যে উচ্চশিক্ষার মান আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কিন্তু এটা এভাবে ঢালাও বলা যায় না। কারণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণভাবে গড় মান কমে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উন্নতিও হয়েছে। আবার কোনো ক্ষেত্রে মান বজায় নেই। এটি নির্ণয়ের জন্য সারা দেশে উচ্চশিক্ষার ওপর জাতীয়ভাবে জরিপ চালানো উচিত। তাহলে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বোঝা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় দুই রকম। পাবলিক, প্রাইভেট। সরকারি প্রায় সবগুলোতেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষাদান হয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা নেই। শুধু এমএ পর্যন্ত—বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটি গবেষণাহীন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব হলো শিক্ষাদান ও গবেষণা। এখানে যথেষ্টসংখ্যক শিক্ষক আছেন—তাঁদের কাছে গবেষণা আশা করব। শুধু শিক্ষক থাকলে হবে না। গবেষণার সুযোগ থাকতে হবে। আর্থিক সহযোগিতা লাগবে, সময় এবং লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরির সুযোগ দিতে হবে।

প্রথম আলো অনলাইন:
যেটুকু সুযোগ সুবিধা আছে, সেটুকুরও সদ্ব্যবহার কি হচ্ছে?
নজরুল ইসলাম: এটা একটা ভালো প্রশ্ন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুযোগের ব্যবহার হচ্ছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুযোগের বেশি হচ্ছে। আবার কিছু শিক্ষক কখনোই গবেষণা করেন না। যতটা লেখালেখি তাঁদের করার কথা, তার অনেক কম করেন তাঁরা। আবার কেউ অনেক বেশি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছে সবার প্রত্যাশা যে তিনি সব প্রতিবন্ধকতা, সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে কিছু করবেন।

প্রথম আলো অনলাইন:
বলা হয়ে থাকে যে শিক্ষকদের গবেষণা বা গুণগত মান কমে যাচ্ছে। তার বড় কারণ রাজনৈতিক বা দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
নজরুল ইসলাম: এটা আংশিক সত্য। প্রভাষক হতে হলে চারটা বা তিনটা প্রথম শ্রেণী প্রয়োজন। তার পরও উনিশ-বিশ হয়। এখনো হচ্ছে। আগেও হয়েছে। পাকিস্তান আমল, ব্রিটিশ আমলেও হয়েছে। দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত যোগ্যতর প্রার্থী বাদ দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হয়। কখনো দলীয় বিবেচনায়, কখনো স্বজনপ্রীতি, কখনো বিশেষ গোষ্ঠী বা কখনো এলাকা বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এসব এখন একটু বেশি হয়। এটা হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান কমবে। সর্বোচ্চ মূল্যায়ন হতে হবে মেধা ও যোগ্যতা। এটা যদি না হয়, আস্তে আস্তে কম মেধার ব্যক্তিদের বেশি সুযোগ দেওয়া হয়, তখন সার্বিকভাবে অধঃপতন ঘটবে। প্রকৃত মেধাবীরা নিরুত্সাহিত হবে। তাই পরিবেশটা ধরে রাখা খুব জরুরি।
গড়পড়তা মানের নিচের সংখ্যা যদি ভারী হয়ে যায়, সেটি হয় আশঙ্কার বিষয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ঝুঁকিতে পড়ে যায়। মান ধরে রাখতে পারে না।

প্রথম আলো অনলাইন: এখন পরিবেশ কোন দিকে যাচ্ছে...
নজরুল ইসলাম: দুঃখজনক হলেও সত্য বেশ কিছুদিন ধরে সর্বশ্রেষ্ঠ মেধার বদলে অন্যরা চলে আসছে। এমনকি এত নিম্নমানের শিক্ষকও আছেন, যাঁরা পরে পরিবেশ নষ্ট করেন। মেধার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন না হলে এটি হবে।

প্রথম আলো অনলাইন: নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নেই—এ অবস্থায় কতটুকু গুণগত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব।
নজরুল ইসলাম: এটা খুব কঠিন। আমরা চাই, উচ্চশিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণ হোক। তবে কিছু সমস্যা আছে। বিশেষত শিক্ষক পাওয়া বড় সমস্যা। তরুণ শিক্ষক পাওয়া যায়। প্রবীণ পাওয়া যায় না। প্রবীণ শিক্ষকও আমাদের কম। তার পরও বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষকদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়ার চিন্তা করা যায়। এ জন্য তাঁদের আলাদা সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। নীতিমালার মাধ্যমে এটি করা দরকার।

প্রথম আলো অনলাইন: কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে তো শিক্ষকেরা থাকেন...
নজরুল ইসলাম: বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকেরা থাকেন কেন—এটার একটা ব্যাখ্যা আছে। তাঁরা অন্যখানে গেলে অনেক টাকা পেতেন। না যাওয়ার কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিপুল স্বাধীনতা। তাঁরা কী করেন, কেউ খবর রাখেন না। ক্লাসে যান, পড়ানোয় বেশি জবাবদিহি করতে হয় না। প্রমোশনের সময় কিছু প্রকাশনা লাগে। এমফিল পিএইচডি হয়ে গেলে তাঁকে আর পায় কে? তিনি হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন পাশাপাশি অন্য কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন, কনসালটেন্সি করছেন, আর্থিকভাবে ভালোই সলভেন্ট হচ্ছেন।

প্রথম আলো অনলাইন:
শিক্ষকদের এ ধরনের আচরণের জন্য শিক্ষার্থী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর তো প্রভাব পড়ছে, নাকি?
নজরুল ইসলাম: প্রভাব তো পড়ছেই। তবে দুই ধরনের প্রভাব পড়ছে। কেউ বাইরে কাজ করেও নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, আবার কেউ কেউ করছেন না। আবার যাঁরা বাইরে কাজ করেন না, তাঁরা সবাইও ক্লাস ঠিকমতো নিচ্ছেন না। এখানে আসল দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তা হলো নজরদারি করা। সেটি করতে গেলেও সমস্যা। শিক্ষকেরা তখন বলেন, আমাদের এ তো নজরদারি কর কেন। আমাদের তো টাকা দাও কম।

প্রথম আলো অনলাইন: এই অবস্থায় করণীয় কী?
নজরুল ইসলাম: উচ্চশিক্ষা যে মানেরই হোক, শৃঙ্খলা খুব জরুরি—নিয়মিত ক্লাস, পড়ালেখা, গবেষণা হতে হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনা খুব দরকার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও নিয়মের মধ্যে, জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। পিএইচডি করার সুযোগ বাড়াতে হবে। দেশেই এক শ-দুই শ-পাঁচ শ পিএইচডি ডিগ্রিধারী তৈরি করতে হবে। শিক্ষকদের সুযোগসুবিধা বাড়ানো, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল করা এবং গবেষণার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।


-------------------------------------------------------------------------
আমার কিছু কথা :
বলা হয় শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড তাহলে শিক্ষকই শিক্ষার মেরুদন্ড । বর্তমানে অনুকরনীয় ও অনুসরনীয় শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম । যেখানে উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকতা পেশাই সর্বাধিক সম্মানিত সেখানে আমাদের দেশে প্রচুর শিক্ষক সম্পৃক্ত হয় ধর্ষন ,জঙ্গী তৎপরতা সহ বহু অনৈতিক কাজে ।তাহলে বলা যায় দেশের শিক্ষা নামক মেরুদন্ড সুগঠিত হচ্ছে না । এছাড়া শিক্ষকের বড় দায়িত্ব হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষক প্রস্তুত করে দিয়ে যাওয়া । কিন্তু কমসংখ্যক শিক্ষকই এই ধরনের মন-মানুষিকতা নিয়ে শিক্ষকতা করেন । পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু এমন শিক্ষক থাকলেও অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের মান প্রশ্নবিদ্ধ । পড়ালেখা দানে, নতুন গবেষনায় তাদের অনীহা সর্বাধিক । এতে ছাত্রছাত্রীদেরও মনমানুষিকতা পরিবর্তন হয়ে কেবল সার্টিফিকেট অর্জন নির্ভর হয়ে পড়ছে । আমরা কিছু না দেখলে নতুন চিন্তা ধারা করব কি ভাবে । তাই বলা চলে উচ্চ শিক্ষার হার বাড়ছে অথচ উচ্চ শিক্ষার মান নিম্নমুখী । বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরাই পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষক । বর্তমান শিক্ষকরা আমাদের প্রস্তুত করে দিতে না পারলে সুনিশ্চিত ভাবে পরবর্তী প্রজন্ম সুযোগ্য শিক্ষক পাবে না । যোগ্য শিক্ষকের অভাবেই শিক্ষার মান দিন দিন আরো কমবে একই অনুপাতে কমে যাবে জাতির উন্নতির সম্ভবনা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৩৭
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×