somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেনাকাটায় চুরির ধুম

১৪ ই নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Original Source: Click This Link

কেনাকাটার রসিদে আছে টিউবারসুলিন ইনজেকশনের একটি সিরিঞ্জের দাম এক হাজার ৩৭০ টাকা। দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সিরিঞ্জটির দাম আসলে মাত্র ১০০ টাকা। একইভাবে জানা গেছে, ২৫ টাকার ডিসপোজেবল হ্যান্ডগ্লাভস কিনে রসিদে দাম দেখানো হয়েছে ৪৪০ টাকা। দুই হাজার ৫০০ টাকা দামের ব্যাকটেরিয়াল পেপটনের প্যাকেট নাকি কেনা হয়েছে ১০ হাজার ৩০০ টাকায়। যে সেমি অটোমেটিক ফিলিং মেশিনের বাজারমূল্য ৯০ হাজার টাকা, তার ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে চার লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ছয় হাজার ৬৫০ টাকা দামের প্রতি লিটার অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোঙ্াইড জেল কিনে দাম দেখানো হয়েছে ১৮ হাজার ৯৫০ টাকা। এই 'অবিশ্বাস্য' কেনাকাটা করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (এলআরআই)। একটি-দুটি নয়, এ রকম অসংখ্য পণ্য কিনে বিপুল অঙ্কের টাকায় পকেট ভারী করেছেন ঢাকার মহাখালীর এ প্রতিষ্ঠানটির এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও দোকানিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে কেনাকাটার নামে সরকারি টাকা হরিলুটের এই প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট যে আমবারক্লাস ভ্যাকসিনের বোতলের দাম দেখিয়েছে ১৯ টাকা ৮০ পয়সা করে, বাজার যাচাই করে এর প্রকৃত মূল্য পাওয়া গেছে সাত টাকা মাত্র। বোতলের লেবেল, ক্যাপ ও স্টপারের দাম বাজার ঘুরে দেখা গেছে গড়ে ৪৫ পয়সা। এগুলোর ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে আড়াই টাকা করে। একইভাবে ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত ৮৫ টাকা লিটারের গি্লসারিন কেনা হয়েছে ৩৯৯ টাকা করে; এক লাখ ৬০ হাজার টাকার এগ ইনকিউবেটর মেশিন কেনা হয়েছে আট লাখ ৯০ হাজার টাকায়; এক লাখ ৩৫ হাজার টাকার ডিস্টিল্ড ওয়াটার প্লান্টে খরচ দেখানো হয়েছে ছয় লাখ ১০ হাজার টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, এলআরআইয়ের কেনাকাটায় কার্যাদেশ অমান্য করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অসাধু সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন কেনাকাটায় বারবার দুর্নীতির প্রমাণ মিললেও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরবতায় সম্প্রতি এখানে দুর্নীতি বেড়েই চলছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উজ্জ্বল বিকাশ দত্তের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'অনিয়ম হলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' এর আগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ মিললেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি_এ কথা তুললে সচিব বলেন, 'বিভাগীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।' প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে দুর্নীতি-অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ উঠলেও পদক্ষেপ না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি অনিয়ম পেলেই তদন্তের নির্দেশ দিই।'
প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মহসীন আলী খানের কাছে জানতে চাইলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'বিভিন্ন কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়েছে, এমন খবর আমিও শুনেছি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারিনি। আর কেনাকাটার স্বাধীন ক্ষমতা রয়েছে শাখাপ্রধানদের। এতে হস্তক্ষেপ কিংবা নাক গলানো আমার কাজ নয়। তবে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই দুর্নীতির ব্যাপারটি খতিয়ে দেখব।'
এদিকে এলআরআইয়ের দুর্নীতির প্রমাণ তুলে ধরে গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন আকারে 'নিরীক্ষা জিজ্ঞাসাপত্র' জমা দিয়েছেন স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তরের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার সৈয়দ জিল্লুর রহমান। তিনি ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, শিডিউল বিক্রি, ভ্যাটের অর্থ জমা না দেওয়া, নিম্নমানের পণ্য ক্রয়, সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে পণ্য না কিনে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছ থেকে কেনাসহ নানা খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি করায় সাম্প্রতিক কয়েকটি কেনাকাটায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সাত কোটি ৪৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩০১ টাকা।
প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারে সরবরাহ করা পণ্যের প্রকৃত দাম জানতে তিন দিন ধরে প্রথমে ক্রেতা সেজে ও পরে সংবাদকর্মী পরিচয়ে টিকাটুলীর হাটখোলা বাজারের জনতা, ঢাকা, বাংলাদেশ প্রভৃতি নামের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির দোকানসহ পাইকারি ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় যাচাই করে অতিরিক্ত দাম দেখানোর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জলাতঙ্ক টিকা উৎপাদন শাখায় সম্প্রতি ৬৮টি টিউবারসুলিন ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জ্যোতি ট্রেড থেকে ৯৩ হাজার ১৬০ টাকায় কেনা হয়েছে। একেকটি সিরিঞ্জের দাম দেখানো হয়েছে এক হাজার ৩৭০ টাকা। অথচ এ সিরিঞ্জ ঢাকার টিকাটুলীর হাটখোলায় সায়েন্টিফিক স্টোরগুলোয় বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকা করে।
একই শাখায় ২০০ জোড়া ডিসপোজেবল হ্যান্ডগ্লাভস জ্যোতি ট্রেড থেকে কেনা হয়েছে ৮৮ হাজার টাকায়। প্রতিটি গ্লাভসের দাম ধরা হয়েছে ৪৪০ টাকা। বাজার যাচাই করে এর দর মাত্র ২৫ টাকা পাওয়া গেছে। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিটি ৫০০ টাকা মূল্যের ফানেল কেনা হয়েছে চার হাজার ৭৫০ টাকা করে। বাজার ঘুরে আরো জানা গেছে, ১৮০ টাকা দামের ৫০০ এমএল বিকার কেনা হয়েছে এক হাজার ২৫০ টাকা করে। এ ছাড়া ১৫০ টাকার ২৫০ এমএল বিকার ৫৮০ টাকা এবং ১২০ টাকার ১০০ এমএল বিকার কেনা হয়েছে ৪৭০ টাকা করে। এ শাখায় ৫০ টাকার টেস্টটিউব কেনা হয়েছে ৮৭০ টাকা করে। ১০ টাকার রাবার পাম্প কেনা হয়েছে ৩৫০ টাকায়। ৬০ টাকা দামের এক প্যাকেট এবসরবেন্ট কটন কেনা হয়েছে ৪৩০ টাকায় এবং এক হাজার টাকার ২০০০ এমএল ধারণক্ষমতার ক্লিনিক্যাল ফ্লাস্ক কেনা হয়েছে ৯ হাজার ৪৫০ টাকা করে।
জলাতঙ্ক টিকা উৎপাদন শাখায় মেসার্স মিলন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল থেকে ছয় লাখ ১০ হাজার টাকা খরচে একটি ডিস্টিল্ড ওয়াটার প্লান্টের সরঞ্জামাদি কিনে স্থাপন করা হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশ থেকে এসব পণ্য কেনার নির্দেশনা থাকলেও তা নেওয়া হয়েছে হাটখোলার ওই দোকান থেকে (চীন থেকে আমদানি করা), যার প্রকৃত দাম মাত্র এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
একই শাখায় একই ঠিকাদারের কাছ থেকে একটি এগ ইনকিউবেটর মেশিন কেনার খরচ দেখানো হয়েছে আট লাখ ৯০ হাজার টাকা। এটিও কার্যাদেশের শর্ত ভেঙে কেনা হয়েছে সাতক্ষীরা থেকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার রনি ইনকিউবেটরের মালিক রনি টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মহাখালী প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে সরবরাহের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিলন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কাছে আমার প্রতিষ্ঠানের তৈরি একটি এগ ইনকিউবেটর মেশিন এক লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। পরে আমার লোকজন মহাখালীতে গিয়ে মেশিনটি স্থাপন করে এসেছে।'
এ শাখার সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমানে রানীক্ষেত টিকা উৎপাদন শাখার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পণ্যগুলো যাচাই কমিটির সুপারিশেই কেনা হয়েছে। বাজারদরের চেয়ে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হয়ে থাকলেও আমার কিছু করার ছিল না।'
প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারের বাদলা শাখায় দুই হাজার ৫০০ টাকা দামের ব্যাকটেরিয়াল পেপটন কেনা হয়েছে ১০ হাজার ৩০০ টাকা করে। মেসার্স মিলন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল দুটি সেমি অটোমেটিক ফিলিং মেশিন সরবরাহ করেছে চার লাখ ৯৮ হাজার টাকা করে। সরবরাহ করা কপিতে আছে, মেশিন দুটি কেনা হয়েছে ঢাকার দিলু রোডের মার্ক ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড থেকে। মার্ক ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র এঙ্িিকউটিভ মাহফুজুল ইসলামের কাছে দাম জানতে চাইলে তিনি জানান, মেশিনটির বর্তমান বাজারদর ৯০ হাজার টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাদলা টিকা উৎপাদন শাখার বর্তমান মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পিএসও) গোলাম কাদের বলেন, 'আমি কয়েক দিন আগে এ শাখার দায়িত্ব নিয়েছি। আমার যোগদানের আগেই এই কেনাকাটা হয়েছে।' পরে বাদলা শাখার সাবেক পিএসও আবদুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, 'যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে কেনাকাটা হয়েছে। তাই বেশি দামে কেনার ব্যাপারে শুধু আমি একা দোষী নই।'
খুরা রোগ টিকা উৎপাদন শাখায় দুটি পৃথক কার্যাদেশে এমএএস কনসোর্টিয়াম লিমিটেড থেকে এক হাজার ৩৫০ লিটার অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোঙ্াইড জেল কেনা হয়েছে দুই কোটি ৫৫ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকায়। প্রতি কেজির দাম ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৯৫০ টাকা। সূত্রের দাবি, কার্যাদেশে নমুনা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদিত জেল সরবরাহের নির্দেশ ছিল। কিন্তু খোলাবাজার থেকে মাত্র ছয় হাজার ৬৫০ টাকা লিটার দরে নিম্নমানের জেল কিনে সরবরাহ করা হয়েছে। এমএএস কনসোর্টিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল দাবি করেন, 'আমরা এফএনএফের উৎপাদিত জেলই সরবরাহ করেছি।' সরকার ভ্যাট পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি নিরুত্তর থাকেন।
এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের স্বত্বাধিকারী মোখলেছুল ইসলাম নীলু কালের কণ্ঠের কাছে অভিযোগ করে বলেন, 'আমাদের জেলের নমুনা ও মানবিষয়ক ছাড়পত্র সংযোজন করে কাজ পেলেও পরে তারা খোলাবাজার থেকে কিনে এফএনএফের লেবেল লাগিয়ে গবেষণাগারে সরবরাহ করেছে।'
তড়কা রোগের টিকা উৎপাদন শাখায় পৃথক দুটি কার্যাদেশের বিপরীতে এমএএস কনসোর্টিয়াম লিমিটেড থেকে ১০ লাখ পিস আমবারক্লাস ভ্যাকসিনের বোতল কেনা হয়েছে চীন থেকে। প্রতিটির বাজারদর সাত টাকার স্থলে দেখানো হয়েছে ১৯ টাকা ৮০ পয়সা করে। এ ক্ষেত্রে সরকারের গচ্চা গেছে প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ টাকা। সূত্রের দাবি, গবেষণাগারে কাচের এসব বোতলের বার্ষিক চাহিদা মাত্র ৫০ হাজার পিস। অথচ নষ্ট হবে জেনেও ১০ লাখ বোতল ২০ বছরের জন্য মজুদ করা হয়েছে।
এ শাখায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল থেকে ১০ হাজার লিটার গি্লসারিন কেনা হয়েছে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টাকায়। অথচ লিভার ব্রাদার্সের এ গি্লসারিনের দর ১০৫ টাকা লিটার। আর সরবরাহের সময় (দুই মাস আগে) এর দাম ছিল মাত্র ৮৫ টাকা।
একই শাখায় ফ্যালকন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল থেকে ৮৫০ টাকা লিটারের রেক্টিফায়েড স্পিরিট কেনা হয়েছে দুই হাজার ৯৯৫ টাকা করে, এক হাজার ৮০০ টাকা কেজির ফেনল পাউডার তিন হাজার ৯৯০ টাকা করে, ৩২০ টাকার মেথেলেন ব্লু এক হাজার ৯৯৫ টাকা করে, ২৭৫ টাকার কার্বন ফ্লাকসিন এক হাজার ৯৯০ টাকা করে, ৭৫০ টাকা লিটারের এসিটন কেনা হয়েছে তিন হাজার ৪৯৫ টাকা করে।
কেনাকাটার অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বোতলগুলো অন্যান্য শাখাও নিতে পারে বলেই বেশি করে কেনা হয়েছে। আর গুণগত মান ভালো হওয়ায় দামও বেশি পড়েছে।'
এ ছাড়া গলা ফোলা শাখা, রিন্ডারপেস্ট শাখা, ভেটি পাবলিক হেলথ শাখা, কলেরা শাখা, পঙ্ শাখাসহ অন্যান্য শাখায়ও কেনাকাটায় একই ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ কেনাকাটায় লোকাল টেন্ডার ম্যাথড পদ্ধতি ব্যবহার হওয়ায় এবং মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানার অংশীদার হওয়ায় এসব দুর্নীতি হয়ে আসছে।
নিরীক্ষায় দুর্নীতির প্রমাণ : সম্প্রতি স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তরের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার সৈয়দ জিল্লুর রহমানের করা 'নিরীক্ষা জিজ্ঞাসাপত্রে' দেখা যায়, কেনাকাটায় আয়কর কম কর্তন করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ১৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৪ টাকা। টেন্ডারে প্রাপ্ত বৈধ এবং নিম্ন দরদাতার কাছ থেকে না কিনে উচ্চ দরদাতার কাছ থেকে পণ্য নেওয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার ৩০০ টাকা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেমিক্যাল, গ্লাসওয়্যার, অ্যাকসেসরিজ সরবরাহ বাবদ সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ৫৪ লাখ ১৭ হাজার ৭১৫ টাকা। সরকারের নির্দেশিত শর্ত ও মূল্য অনুযায়ী টেন্ডার শিডিউল বিক্রি না করে কম মূল্যে বিক্রি করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৫৯০ টাকা। রানীক্ষেত শাখায় স্কট ব্র্যান্ডের পরিবর্তে চায়না ব্র্যান্ডের গ্রাস ভায়েল কেনায় ক্ষতি হয়েছে ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সিকিউরিটি সার্ভিস খাতের (শ্রমিক মজুরি) প্রদত্ত বিল থেকে উৎসে কর কর্তন না করায় সরকারের পাঁচ লাখ ১২ হাজার ২৬১ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এমএসআর সামগ্রী বেশি দরে কেনায় সরকারের ২৮ লাখ ৩৮ হাজার ৭১০ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এক আর্থিক বছরের ব্যয় পরবর্তী বছরের বরাদ্দ থেকে অনিয়মিতভাবে এক কোটি ৫৯ লাখ ১৪ হাজার ৮০০ টাকা পরিশোধ করে আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ ছাড়া কার্যাদেশ মোতাবেক যথাসময়ে কাজ সম্পাদন না করায় বিলম্ব জরিমানা বাবদ সাত লাখ ৬৬ হাজার ৬৪৫ টাকা আদায় করা হয়নি।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এলআরআইয়ের পরিচালক ডা. মহসীন আলী খান বলেন, 'কেনাকাটার জন্য প্রত্যেকেই স্বাধীন। তাই কেউ দুর্নীতি করলে তাকে স্বাধীনভাবে শাস্তিও ভোগ করতে হবে।'
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, 'কেনাকাটায় অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' তিনি পরিচালক থাকাকালে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওসব মিথ্যা।'
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×