somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ন্যায্য পৃথিবীর ডাক দিয়ে যাই

১৪ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[বৈষম্য আমাদেরকেও নিঃশেষ করে দিচ্ছে কিন্তু ওয়াল স্ট্রিটে যে ঝড় উঠেছে, আমরা পারছি না বৈষম্যের বিরুদ্ধে সেই ঝড় তুলতে! লেখাটা পড়ে মনে হলো সকলের সাথে শেয়ার করা দরকার তাই কপি পেষ্ট করে দিলাম।]
ডাক দিয়ে যাই; অসাম্য, অনৈতিক আর অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়ে যাই; কতোটা সম্ভব হবে সে বিবেচনা হয়তো ছিল না, কিন্তু তাদের ডাকে আন্তরিকতা ছিল একশ ভাগ; আহ্বানের ক্যানভাস ছিল যারপর নাই বৃহত্তর—সাম্য, স্বাধীনতা, ন্যায্যতা, সহযোগিতা, অংশীদারিত্ব আর নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি মানবিক সমাজ নির্মাণের আহ্বান। একটি ওয়েবসাইট, নাম ‘১৫ অক্টোবর নেট’, ডাক কিন্তু এসেছিল প্রথম সেখান থেকেই, পুরো বিশ্ব যেন সেই ডাকের আহ্বানে সাড়া দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে প্রহর গুনছিল। শুরুতে আগুন লেগেছিল পুঁজিবাদের মক্কা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, মাত্র শ দুয়েক মার্কিন নাগরিক ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১-এ মার্কিন ফিন্যান্স পুঁজির প্রতীক ওয়াল স্ট্রিট দখলের ডাক দিয়েছিল। ওয়াল স্ট্রিটের কাছে জুকোটি নামের পার্ক, যা এখন অমানবিক-পুঁজিতান্ত্রিক-বিশ্ব ব্যবস্থা বদলানোর প্রতীকী স্থানে রূপান্তরিত হয়েছে, সেখান থেকে আন্দোলন চালানো হয়েছিল এবং প্রচণ্ড শীতে এখনো মানুষ সেখানে অবস্থান করছেন, প্রতিদিন আর প্রতিরাতে আন্দোলনের উত্তাপে নিজেদের উষ্ণ করে নিচ্ছেন। ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথের গানের মতো তাদের জ্বালানো সে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে সবখানে সবখানে! মেলবোর্ন, লন্ডন, শিকাগো, রোম, হংকং—পৃথিবীর সর্বত্র এ আন্দোলন বিস্তৃত হয়েছে, ঢাকাতেও কিছু মিছিল হয়েছে, তবে তা খুব বেশি উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল করো’ আন্দোলনের জের ধরে ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে ধর্মঘট পালিত হয়েছে; অকল্যান্ড সমুদ্রবন্দর এতে অচল হয়ে পড়ে। ন্যায্যতার দাবিতে হাজার হাজার লোক পদযাত্রা করছে; প্রতিবাদী জনতা বড় বড় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সামনে ক্ষোভ দেখাচ্ছে; তুষারপাতের মধ্যে আন্দোলনকারীদের বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে; তবু তারা দমেননি, জেঁকে বসা শীতের তীব্রতার মধ্যেও অসাম্যের বিরুদ্ধে, বৈষম্যের অবসানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনকারী আর তাদের স্পিরিটিকে সাবাস না দেয়াটাই বরং অন্যায় হবে। হয়তো এক সময় এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে, কারণ পুঁজিবাদী কাঠামোর শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, দু এক ধাক্কায় তা হয়তো ওপড়ানো যাবে না; কিন্তু এই আন্দোলন ইতিমধ্যেই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে, রাজনৈতিক আর সামাজিক আন্দোলনের ইতিহাসে এই ‘অকুপাই’ আন্দোলন যে অবশ্য পাঠ্য হবে সে কথা বলা যায় নির্দ্বিধায়। বিশ্বব্যাপী ক্ষুব্ধ জনতা—সম্পদের ওপর যাদের প্রবেশাধিকার সীমিত, আর্থ-সামাজিক সুবিধাদিতে যাদের স্বত্বাধিকার নেই বললেই চলে—আন্দোলনের মাধ্যমে তারা বিদ্যমান এই অন্যায্য ব্যবস্থা ও ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তারা চাইছে প্রকৃত গণতন্ত্র, জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন। তাদের ওপর দমন-পীড়ন হচ্ছে, হুমকি-ধামকি গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে কাউকে কাউকে, তবু তারা সাধ্যমতো পুরো পৃথিবীর কাছে তাদের দাবি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

দুই. বিদ্রোহের এমন মাত্রার সঙ্গে বিশ্ব ঠিক পরিচিত নয়। ‘আমরা ৯৯%’ বলে এখানে যোগ দিয়েছে সব পেশা-শ্রেণীর মানুষ। কারা অংশ নিচ্ছে বিশ্ব জুড়ে? সাদা, কালো, বেকার, শিল্পী, শিক্ষক, লেখক, সমকামী, আদিবাসী, নারী, পুরুষ, সাবেক সৈনিক; হলিউডের তারকারাও যোগ দিয়েছে। হূদয়ের টানে সবাই এসে জড় হয়েছে। তাঁবু খাটিয়ে রাত্রি যাপন করছে এই কনকনে শীতেও। বিশ্ব মিডিয়া তাদের আন্দোলনের খবর ফলাও করে প্রচার করেছে। আন্দোলনকারীদের একটি দল ভ্যাটিকান সিটির দুটি গির্জায় হামলা চালায়; এতে কুমারী মেরির মূর্তি ভেঙে যায়। ধনিক শ্রেণীর মতো ধর্মীয় ক্ষমতাকেন্দ্রগুলোর ওপরও যে তারা ‘ক্ষুব্ধ’ এটি বোঝা যায়—যারা ইহলোকে অশান্তির সমাধানে ব্যর্থ, পরলোকের মিথ্যে শান্তির আশা শোনায়, ক্ষোভ রয়েছে তাদের প্রতিও। এ আন্দোলনের জন্য দাতা সংস্থা বা কোনো এনজিওর অর্থায়ন দরকার হয়নি। আন্দোলনকারীরা নিজেরাই নিজেদের সময় আর অর্থ খরচ করেছে এখানে। এটি একান্তই সামাজিক আন্দোলন যার প্রকৃতি আবার রাজনৈতিক; কারণ তারা বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছে—যার উদ্দেশ্য মূলত অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো। লক্ষণীয় যে, তারা কিন্তু বৈষম্যের অবলোপন চাইছে না বরং একে একটি সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে চাইছে। বাম/মার্কসিস্ট বিপ্লবীদের সঙ্গে এখানে তাদের তফাত্টা তাই স্পষ্ট। তবে অর্থনৈতিক সমতার সমতট নির্মাণের পাশাপাশি

তারা যা চাইছে তার অনুবাদ করলে এটাও দাঁড়ায় যে, এরা একইসঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সবক্ষেত্রেই গণতন্ত্রায়ন চাইছে। অর্থাত্ কেবল নির্বাচনী বা ইলেকটোরাল ডেমোক্রেসির বিপরীতে তারা প্রতিদিনের গণতন্ত্র চর্চার কথা বলছে। বিদ্রোহী তরুণদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে। তারা আন্দোলন চালাচ্ছে সেই এক ভাগের বিরুদ্ধে যারা সমস্ত সম্পদ দখলে নিয়েছে। কেউ কেউ এতে সরাসরি শ্রেণীযুদ্ধের পদধ্বনিও শুনতে পাচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিট, নিউইয়র্কের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকা, একচেটিয়া পুঁজির প্রতীক—আন্দোলনের তোপে কিছুটা হলেও টলছে। আন্দোলকারীরা ক্ষোভ দেখাচ্ছে ব্যাংক, বীমা, বহুজাতিক কোম্পানি, অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ওয়াল স্ট্রিট যেন রূপ পেয়েছে ওয়াল স্ট্রিটে! কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের মুনাফা নিশ্চিত করার স্বার্থেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাকি বিশ্বে যুদ্ধ বাধিয়ে রাখে, দখল আর সন্ত্রাসের শক্তি ক্ষয় করে। রাষ্ট্রের মনোযোগ যখন যুদ্ধে তখন অনাহার, অপুষ্টি আর দারিদ্র্যের কারণে শিশু মৃত্যু আর প্রসূতি মত্যুর হার বাড়তে থাকে। আশ্রয়হীন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয় অথবা এসব মৌলিক বিষয়াদি থেকে রাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। দৃশ্যমান সত্য এই হয়ে উঠেছে যে, এক দল লোক সম্পদ লুট করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে, বেউলআউটের নামে রাষ্ট্র আবার তাদেরই নতুন করে টাকা দিচ্ছে; কিন্তু গরিবের চাকরি বা জীবনের নিশ্চয়তা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। আন্দোলনকারীরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাকি বিশ্বকে জেগে ওঠার ডাক দিয়েছে। এটা সাধারণ মানুষের আন্দোলন, এর একক কোনো নেতা নেই; ফরমাল কোনো সংগঠন নেই; এই আন্দোলনের বার্তা খুব স্পষ্ট, রাষ্ট্রকে সম্পদের কেন্দ্রিভবনের প্রবণতা ভেঙে সুষ্ঠু বণ্টনে নজর দিতে হবে নইলে সামনে এ আন্দোলন আরো প্রকট হবে। বিভিন্ন তাত্ত্বিকরা রীতিমত সংখ্যা-উপাত্ত হাজির করে দেখিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ববিরোধী চরিত্র। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধে নেমে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই কতোবড় সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। নিরীহ মানুষ হত্যা করে আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের বুলি কপচাচ্ছে। নিজের পারমাণবিক শক্তির বিস্তার করে চলেছে কিন্তু বাকি বিশ্বে পারমাণবিক গবেষণাও বরদাস্ত করছে না; মুখে বলছে শান্তির কথা কিন্তু ফিলিস্তিনের ইউনেস্কোর সদস্য হওয়ায় তাদের অনুদান বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। আন্দোলনকারীরা নাটক, সাহিত্য, নয়া অর্থশাস্ত্র, দর্শন পড়ছে—নিজেদের আন্দোলনের একটি মতাদর্শিক পাটাতন খোঁজার চেষ্টা করছে। ওয়াল স্ট্রিট দখল আন্দোলন পৃথিবীর এক হাজারেরও বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বর্তমান পুঁজিবাদী কাঠামোর অন্তঃসারশূন্যতা এক লাফে বেরিয়ে পড়েছে। দুর্নীতি কমাও, বৈষম্য কমাও, বেকারত্ব দূর করা এর মূল দাবি। দরিদ্রদের সামাজিক সুযোগ কাটছাঁট করে ধনীদের বেলআউট করার চেষ্টা মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বলা হচ্ছে, এটি একটি সামাজিক উদ্যোগ, তবে কি রাজনৈতিক দলগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে? তবে আন্দোলন হচ্ছে কিন্তু মূলত শহরকেন্দ্রিক, গ্রামীণ মানুষদের ছুঁয়ে যেতে পারেনি। এর চরিত্র জনবিপ্লবী ধরনের। প্রান্তিক নয় উন্নত পুঁজিবাদী দেশ থেকে এর সূত্রপাত। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি যেমন ফেইসবুক, ওয়েবসাইট, ব্লগিং, টুইটার, এসএমএস—আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে এসবের ক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। বলা হচ্ছে এদের আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত, এতে কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। ভবিষ্যত্ অনেকটা অনিশ্চিত। নেই কোনো নেতৃত্ব। কিন্তু এটা কি কেবলই তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়াজাত? আন্দোলনের পেছনে প্রস্তুতি/পরিকল্পনা ছিল না তা একেবারেই ঠিক না। এদের পরিচিতি এরা ইন্টারনেট অ্যাকটিভিস্ট যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে জনমত তৈরির চেষ্টা চালাতো। একটা কমিটিও আছে তাদের। তারা বসছে কথাবার্তা বলছে, কমিটির নাম দিয়েছে জেনারেল অ্যাসেম্বলি। এরাই অকুপাই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তিন. জাতীয় আয়, জিডিপি-জিএনপি, মাথাপিছু আয়, স্টক ইনডেক্স, বাণিজ্য উপাত্ত—এসব পরিমাণগত সূচক দিয়ে একটি দেশের বা দেশের মানুষের উন্নয়ন মাপার চিন্তা যে পরিত্যায্য তা আমরা আগে থেকেই জানতাম, তবে এই বাতিল চিন্তাটিই বিভিন্ন দেশে ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সবচেয়ে প্রভাবশালী গজকাঠি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল। এই চিন্তা যে অচল খুব তীব্রভাবে এখন তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আর বিস্ময়কর যে, এর প্রমাণ মিলছে পুরো পৃথিবী জুড়ে। মানুষ বিকল্প কোনো অর্থনৈতিক তত্ত্ব হাজির করে পরিমাণগত সূচককে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে না, তারা প্রতিবাদ আর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার আগুন জ্বেলে উন্নয়নের প্রচলিত ধারণাকে বাতিল ঘোষণা করছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে উন্নয়ন পরিমাপের যে গুণগত চলক যেমন ন্যায়বিচার, সম্পদের ন্যায্য বণ্টন, আইনের শাসন, ভোটাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, মানসম্মত শিক্ষা, জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা, মানুষের অবাধ চলাচল, সমাজিক গতিশীলতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা—এগুলো উপেক্ষা করে উন্নয়ন মাপার যে চেষ্টা তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। জিডিপি প্রবৃদ্ধি আর মাথাপিছু আয় বেশি হতে পারে, কাগজে-কলমে প্রত্যেকের ভাগে সম্পদের হিসেবও থাকতে পারে, কিন্তু দেখতে হবে সত্যিই সেই সম্পদে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রবেশাধিকার আছে কিনা। সম্পদের হিসেব কি কেবল গড় অংকের হিসেব নাকি আর্থ-সামাজিক সুবিধাদিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বত্বাধিকার প্রতিষ্ঠার ইশতেহার? যেমন বিগত বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যযোগ্য হলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আমেরিকানদের আয় কমেছে। তবে খেয়াল করবার বিষয় টিউবের উপরে অবস্থিত ১ শতাংশ উচ্চবিত্তের আয় যদিও বেড়েছে কিন্তু প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন আমেরিকান বাস করছে দারিদ্য্রের মধ্যে; বেকারত্বের হারও বেশ উচ্চ।

অর্থনীতির নিচের দিকে অবস্থানকারীরা দেখলো শিক্ষা ব্যয়, স্বাস্থ্য ব্যয়, সামাজিক বীমার সুবিধা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নীতির যেসব সুবিধা অপেক্ষাকৃত দরিদ্ররা পেয়ে থাকে ব্যয় সংকোচনের ফলে তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। পরিসংখ্যানের মোট হিসেব দিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির সাফল্য বর্ণনা করা সম্ভব কিন্তু সামাজিক সাফল্যের ঘাটতি যে এতে স্পষ্ট ছিল অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলন সেটাই প্রমাণ করেছে। আমাদের দেশেও চলছে ১ শতাংশের লুটপাট, যাকে বলা চলে একরকম হরিলুট। শেয়ার বাজারের বড় খেলোয়াড়রা কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বারবার। প্রতিটি ব্যক্তি/মানুষ বা প্রতিটি পরিবারের ভাগে সম্পদ/সুবিধা বাড়াতে হবে, তাদের প্রতিদিনকার জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে হবে—তবেই কেবল একটি রাষ্ট্র তার উন্নয়ন নিয়ে আশাবাদী হতে পারে। নইলে রাষ্ট্র যদি মুষ্টিমেয় মানুষের আকাশচুম্বী সম্পদ অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হয় তবে তার পরিণাম কী ভয়াবহ হয় সাম্প্রতিক আন্দোলন তার বড় নমুনা! রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কেবল মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে সম্পদ তুলে দেয়ার আয়োজন করা নয়। বড় ব্যবসায়, বৃহত্ কর্পোরেশন, বিশাল মুনাফা সামগ্রিক অর্থে রাষ্ট্রের কল্যাণে আসবে না যদি না তা সাধারণ প্রান্তিক আর দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকা পরিবর্তনে ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। সবার জন্য সুযোগের সমান সমতট নির্মাণ করাই একটি মানবিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত। দরকার সক্ষম প্রতিষ্ঠান যাদের থাকবে জবাবদিহিতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ উত্স—এভাবেই নির্মাণ হতে পারে টেকসই ও স্থিতিশীল সমাজ; এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা জালের আওতা বাড়ানো, মানবিক সক্ষমতা বাড়ানো এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনমান বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সমস্ত সম্পদ কিছুর হাতে আর কিছু সম্পদ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হাতে—নৈতিকতার বিচারে কোনো বিবেকবান মানুষের কাছে তা ন্যায্য হতে পারে না; চলমান এই আন্দোলনের ডাকে সাড়া না দেয়াটাই বরং অন্যায় হবে।

[লেখক : রোবায়েত ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়] ই-মেইলঃ [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×