somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ অবলম্বনে পদ্মা নদীর বোটম্যান ২০২১ (আজকের প্রথম আলোতে লেখা)

১৪ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নাসিফ চৌধুরী | তারিখ: ১৪-১১-২০১১


সময়কাল: ২০২১ স্থান: ডিজিটাল বাংলাদেশ

মাঝি কুবের ও তাহার পরিবার
পদ্মাপারের এক অজপাড়াগাঁ কেতুপুর। সেই গ্রামের মাঝি সমিতির নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুবের। কুবের গরিবের মধ্যে গরিব আর ছোটলোকের মধ্যে ছোটলোক। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড তো দূরের কথা, একখানা ভিজিটিং কার্ডও তাহার নাই।
পুত্র লখা, কন্যা গোপী আর স্ত্রী মালাকে লইয়া কুবেরের পরিবার। হিন্দি সিরিয়ালভক্ত মালা সর্বদা মনের মাধুরী মিশাইয়া কুবেরের সাথে ঝগড়া করিবার চেষ্টা করিতে থাকিল। তাই ঘরের অশান্তিতে কুবের পিক আওয়ার, অফ পিক আওয়ার—সর্বদা পদ্মার বুকে মাছ ধরিতে ব্যস্ত থাকিত।

পদ্মার ইলিশ
সারা দিন জাল টানিয়া নদীতে দুই-তিনখানা ছোট মাছের বেশি কিছু পাওয়া যায় না। ইলিশ মাছ পাওয়া তো ভাগ্যের বিষয়! সমগ্র পদ্মায় বছরে দু-একটা ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। তাই বর্তমানে বড় সাইজের একখানা ইলিশ মাছ বেচিয়া ঢাকা শহরে অভিজাত ফ্ল্যাট কিনিয়া লওয়া সম্ভব। গত বৎসর একসাথে দুইখানা ইলিশ মাছ ধরিয়া গণেশ মাঝি সপরিবারে আমেরিকা চলিয়া গিয়াছে।
তিন-চার বছর পূর্বে একখানা ছোট সাইজের ইলিশ মাছ পাইয়া কুবের তাহা বিক্রয় করিবার জন্য সেলবাজারে দিয়াছিল। সেই দিন তাহাকে প্রায় লক্ষাধিক কল রিসিভ করতে হইয়াছিল। উহা বিক্রয় করিয়া সেই টাকা কুবের ইউনিপেথ্রিইউতে বিনিয়োগ করিয়াছিল। তাহার পোড়া কপাল, কোম্পানি সব লইয়া চম্পট দিয়াছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে পদ্মার ইলিশ খাওয়ার সৌভাগ্য শুধু রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর মাঝে মাঝে হইয়া থাকে। নববর্ষের দিন মানুষ পদ্মার পানি জ্বাল দিয়া পান্তা ভাতের সাথে খাইয়া থাকে। ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের কেউ রাষ্ট্রীয় সফরে আসিলে উপহার হিসেবে তাঁদের প্লাস্টিকের দুইখানা ইলিশ মাছ দেওয়া হয়।

কপিলার আগমন
এক বিকেলে দুইখানা পুঁটি মাছ ধরিয়া কুবের ক্লান্ত হইয়া নদীর ধারে বসিয়া ল্যাপটপে কুয়েতি এক বোরকাওয়ালির সাথে ফেসবুকে চ্যাট করিতেছিল। কুয়েতি তাহাকে ভিডিও চ্যাটের আমন্ত্রণ জানাইলেও মাছ ধরিয়া তাহার চুল অগোছালো ছিল বিধায় সে তাতে রাজি হইল না। এমন সময় স্ক্রিনে ‘কপিলার’ স্ট্যাটাস ভাসিয়া উঠিল। কপিলা মালার ছোট বোন, সম্পর্কে কুবেরের শ্যালিকা।
Kopila shundhori লিখিয়াছে, too much flood in my village, lol, omg, too much water...lol...don’t know swimming...omg...lol...lol, pray for us.
কুবের কমেন্ট দিল, tumi koi, kopila?
কপিলা উত্তরে লিখিল, I am in my father’s house, lol, dulavai.
কুবের আবার লিখিল, I’m coming. wait for me, kopila. কপিলা সেই কমেন্টে লাইক মারিল।
কপিলাকে উদ্ধার করিতে কুবের দ্রুত শ্বশুরবাড়ি ছুটিয়া গেল। যেন কপিলা ডুবন্ত লঞ্চ আর কুবের উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা।
স্বামীফেরত কপিলাকে তাহার বোনের বাড়ি পাঠাইতে কপিলার বাবা-মায়ের মোটেও আপত্তি ছিল না। কারণ, এমন নারীকে খোলা স্থানে রাখা মোটেও নিরাপদ নহে। শত শত পরিমল লোভী দৃষ্টিতে চারদিকে ঘোরাঘুরি করিতেছে।
কপিলার নতুন স্থান হইল কুবেরের সংসারে। কপিলা আসিয়াই সংসারের সকল দায়িত্ব গ্রহণ করিল। মালার কাজ হইল শুধু রাষ্ট্রপতির ন্যায় খাওয়াদাওয়া আর ঘুম।

কুবের ও কপিলার রোমান্স
মালার সাথে বিবাহ হওয়ার পর হইতেই কপিলার প্রতি কুবেরের দুর্নিবার আকর্ষণ। কপিলা ফেসবুকে কোনো ছবি পোস্ট করিলে কুবের কোপাইয়া কমেন্ট করিত, how cute so sweet, khub shundor...tomake angeler moto lagche.
অবশ্য কুবেরের বিবাহের সময় কপিলা নিতান্তই কিশোরী ছিল। তখনকার প্রস্ফুটিত পুষ্প আজ সুবাসিত ফুলে পরিণত হইয়াছে। সেই ফুলের কড়া সুবাস প্রতিনিয়ত কুবেরের নাকে আসিয়া লাগিতেছে।
নারীজাতি ছলনাময়ী আর কপিলা তো ছলনাময়ীদের জীবন্ত কিংবদন্তি। কুবের মাঝির মনে ঢেউ তুলিতে সে সদাব্যস্ত রহিল। গৃহে মালার সামনে কপিলা নিতান্ত ভদ্রতা বজায় রাখিলেও তামাক দেওয়ার নাম করিয়া কুবেরের পিছু পিছু আসিয়া কপিলা বিভিন্ন প্রকার রং-তামাশা করিবার চেষ্টা করিত। পাছে লোকে দেখিয়া ফেলে ভাবিয়া কুবের ধমক মারিয়া বলিত, বজ্জাতি করছোস যদি, নদীতে চুবান দিমু কপিলা! তুই কি আমারে ‘ইমরান হাশমি’ পাইছস? কপিলা ‘আরে পুরুষ’ বলিয়া মুখ ঝামটা দিয়া চলিয়া আসিত।
রাতে মাছ ধরিতে ধরিতে কুবের কপিলার সাথে সারা রাত চ্যাট করিত। চ্যাট করিতে করিতে কপিলা প্রায়ই কুবেরের সঙ্গে মশকরা করিত, আর উত্তরে কুবের একখানা হাসির ইমো দিত। কপিলা তৎক্ষণাৎ লিখিত, ‘হাসলা যে মাঝি?’ কুবের কোনো উত্তর দিত না।
কুবেরের মোবাইলের ওয়ালপেপারে মালার ছবি বদলাইয়া দ্রুত কপিলার ছবি স্থান করিয়া নিল।

ময়নাদ্বীপ আবাসন প্রকল্প
‘মতিঝিল হইতে বিমানপথে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে পদ্মার চরে গড়ে উঠছে ঢাকার সর্বাধুনিক আবাসন প্রকল্প “ময়নাদ্বীপ আবাসন প্রকল্প”। ময়নাদ্বীপে থাকা মানে ঢাকা সিটিতেই থাকা।’ এই ধরনের বাহারি বিজ্ঞাপন দেখিয়া কুবের ভাবে, ময়নাদ্বীপে একখানা প্লট কিনিয়া যদি সারা জীবন কপিলাকে লইয়া থাকা যাইত...তবে জানা গেল, ময়নাদ্বীপ ছয় মাস পদ্মার পানিতে ডুবিয়া থাকে।

গোপীর অসুস্থতা ও গোপন প্রণয়
একদিন কুবের-কন্যা গোপীর গ্যাস্ট্রিকের তীব্র প্রদাহ শুরু হইলে কুবের, কপিলা ও রাশু মিলিয়া গোপীকে ঢাকা লইয়া যাইবার ব্যবস্থা করিল। রাশু গোপীর বয়ফ্রেন্ড। গার্লফ্রেন্ডের এমন বিপদে সে না থাকিয়া পারে না। কুবের অবশ্য গোপী আর রাশুর সম্পর্কের ব্যাপারটা জানিত না।
ঢাকার ডাক্তার গোপীকে দেখিয়া উদাস হইয়া বলিলেন, ‘রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ তিনি পরামর্শ দিলেন রোগীকে তাহার নিজস্ব ক্লিনিকের আইসিইউতে ভর্তি করিবার জন্য। অসহায় কুবের তাহাই করিল। অচেনা শহর, সুযোগ পাইয়া কুবের ও কপিলা রমনা পার্কে হাত ধরাধরি করিয়া কিছুক্ষণ ডেটিং করিয়া আসিল। দূর হইতে তাহাদের একনজর দেখিয়া রাশুর পুরো বিষয়টা বুঝিতে কোনো সমস্যা হইল না।
এদিকে দুইখানা অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট খাওয়াইয়া ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পরদিনই গোপীকে সম্পূর্ণ সুস্থ ঘোষণা করিল। তবে লাখখানেক টাকার বিল দেখিয়া কুবের পাঁচ মিনিটের ভেতর অজ্ঞান হইল সাতবার। উপায় না দেখিয়া কপিলা তাহার স্বর্ণালংকার জমা দিয়া সে যাত্রায় রক্ষা করিল কুবেরকে। রোগী সুস্থ হওয়া সত্ত্বেও গোটা পরিবার সেইবার কাঁদিতে কাঁদিতে গ্রামে ফিরিয়া আসিল।

কপিলার চলে যাওয়া
কুবের আর কপিলার প্রেম বিপৎসীমা অতিক্রম করিবার আগেই কপিলার স্বামী আসিয়া কপিলার মান ভাঙাইয়া লইয়া গেল।
কপিলাকে হারাইয়া প্রায় প্রতি রাতেই কুবের ফেসবুকে ঢুকিয়া চ্যাটে তাহাকে খুঁজিত, পাইত না। একদিন ফেসবুকে ঢুকিতেই কুবেরের নজরে আসিল ‘gopi is now in a open relationtip with ‘rashu’, কুবের অবাক হয়! তাহার বাগানের চারা পাশের বাসার ছাগল আসিয়া খাইতেছে আর সে কিছুই জানে না?

আদর্শ প্রেমিকা গোপী
রাশুর ৯৯% ভালো, শুধু একখানা চাকুরীর অভাব। কুবের তাই দ্রুত অন্যত্র গোপীর বিবাহ ঠিক করিল। রাশু অনেক অনুরোধ করিয়াও কুবেরের মন গলাইতে না পারিয়া শেষে হুমকি দিয়া গেল, ‘টের পাইবা মাঝি, কত আমে কত জুস!’ আশঙ্কা ছিল গোপী বাঁকিয়া বসিবে কিন্তু আদর্শ প্রেমিকার ন্যায় গোপী হাসিতে হাসিতে বিবাহে রাজি হইয়া গেল।

কপিলার প্রত্যাবর্তন ও বাংলার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
বিবাহ উপলক্ষে কপিলা সপ্তাহ খানেকের জন্য আবার কেতুপুরে বেড়াইতে আসিল। কপিলাকে দেখিয়া হঠাৎ করিয়াই রাশুর রমনা পার্কের কথা মনে পড়িল। প্রতিশোধ নিতে সে মালার কাছে আসিয়া উইকিলিকসের অ্যাসাঞ্জের ন্যায় কুবের ও কপিলার গোপন প্রেমের রহস্য ফাঁস করিয়া দিল।
রাগে কাঁপিতে কাঁপিতে মালা কুবেরের মোবাইলে ভয়েস এসএমএস পাঠাইল ‘আইজকা বাড়িত আহো মাঝি, তুমার পিরিতি আমি ছুডাইতেসি।’

অবশেষে...
শুনিয়া কুবের বুঝিল তার আর বাঁচিবার আশা নাই। নিরুপায় হইয়া সে ময়নাদ্বীপ আবাসন প্রকল্পে ছুটিয়া গেল। অতঃপর ৯৯৯৯টা কিস্তিতে একখানা প্লটের জন্য নামমাত্র মূল্য ডাউন পেমেন্ট করিয়া আপাতত কেতুপুর হইতে পালাইবার ব্যবস্থা করল। কপিলা তাহার কোনো গতি না দেখিয়া কুবেরকে বলিল, ‘আমারে নিবা মাঝি লগে?’ কুবের বলিল, ‘দোষ কি একলা আমার? কিস্তির টাকা কি আমি একলাই দিমু?’
অতঃপর দুইজনে মিলিয়া যাত্রা করিল ময়নাদ্বীপের উদ্দেশে...।

সুত্র: Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×