পোকামাকড় প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয় । প্রাচীন পোকামাকড়গুলো না থাকলেও তার মতো পোকামাকড় এখন আছে । যেমন ফড়িং । যদিও ফড়িং আগে এখনকার চেয়ে অনেক বড় ছিল । তখনকার ফড়িংগুলো ২ ফিট হতো । কিন্তু এখন মাত্র ৬ ইঞ্চি হয় । এখন পৃথিবীতে ২০ লক্ষ্য প্রাণী আবিষ্কার হয়েছে । এর মধ্যে ১০ লক্ষ্যই হলো পোকামাকড় ।
সপুষ্পক উদ্ভিদ ১০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে । তখন থেকে পোকামাকড় ফুলের রস খাওয়া এবং পরাগায়ন করা শুরু করে । এতে করে পোকামাকড়ের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায় এবং সপুষ্পক উদ্ভিদেরও সংখ্যা ও প্রজাতি বাড়ে । বেশীর ভাগ সপুষ্পক উদ্ভিদ পোকামাকড়ের ওপর নির্ভরশীল । আমরাও সপুষ্পক উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল ।
সব পোকামাকড়ই প্রয়োজনীয় কিন্তু কিছু পোকামাকড়ের ওপর আমারাও সরাসরি নির্ভরশীল । যেমনঃ প্রজাপতি,রাঙাপোকা,মৌমাছি,বোলতা ইত্যাদি । এ্যাফিডও দরকার! কারণ এ্যাফিডের ওপর বিভিন্ন পোকামাকড় নির্ভরশীল । সেই পোকামাকড়ের ওপর আমরা এবং বিভিন্ন পাখি এবং অন্যান্য প্রাণী নির্ভশীল ।
আমরা বিভিন্ন খাবারে,কেকে লাল রং করি । মিষ্টিকে উজ্জল করার জন্য বিভিন্ন পদার্থ ব্যবহার করি । স্কেল পোকা ফসলের খুব ক্ষতিও করে আবার আমাদেরই উপকার করে । তবে এই উপকারি স্কেল পোকার নাম দেওয়া হয় ল্যাক পোকা । এই ল্যাক পোকা গরম পানিতে সিদ্ধ করে তারপর পরিষ্কার করে আ্যলকোহল বানায় । এই আ্যালকোহলকে বলে সুল্যাক । এই তরল সুল্যাক চকচ্যক্ করে । একে শুকিয়ে মিষ্টিতে দিলে মিষ্টি দেখতে সুন্দর হয়!
ঘৃণার কিছু নাই,কারণ আমরা যে মধু খাই তা তো মৌমাছির মাধ্যমেই আসে । নাকি অন্য কিছুর মাধ্যমে আসে ? তারপর বাজারে সবচেয়ে দামি কাপড় সিল্ক সে সিল্কও রেশমমথ থেকেই আসে ।
গোবরে পোকা দেখেও ঘৃণার কিছু নাই , যে গোবরের মধ্যে থাকে । যদি গোবরে পোকা (Dung Beetle) না থাকতো তাহলে গোবর মাটির সাথে মিশতো না,পরিবেশ দূষিত হতো । গোবরে পোকা মাটিতে গোবর মিশায় এতে করে মাটি উর্বর হয় । প্রাকৃতিক ভাবেই পরিবেশ ভালো থাকতো যদি মানুষ প্রকৃতির কোন কিছুকে বাধা না দিত ।
একটি বড় পিঁপড়ার বাসা প্রতিদিন ১০০,০০০ পোকা শিকার করে । এর মধ্যে বেশীর ভাগই ক্ষতিকারক পোকা । একটি রাঙাপোকা প্রতিদিন ৫০টি এ্যফিড খায় । একটি রাঙাপোকা তার জীবনে ৫,০০০ টি এ্যফিড খায় । আরও বিভিন্ন পোকা খায় যেমনঃ স্কেল পোকা,মিলিবাগ,হোয়াইট ফ্লাই ইত্যাদি । পর্যাপ্ত পরিমাণ রাঙাপোকা থাকলে আমাদের ফসলের কোন ক্ষতি হবে না ।
বোলতাও অনেক উপকারি পোকা । বিভিন্ন প্রজাতির বোলতা বিভিন্ন রকম শুয়াপোকা এবং আরও বিভিন্ন নরম ক্ষতিকারক পোকা শিকার করে । বোলতা দুই প্রকারে ভাগ করা যায়ঃ একটি হলো পরজীবী বোলতা আরেকটি হলো চাক বাধা বোলতা ।পরজীবী বোলতাও দুই প্রকারঃ একটি পরজীবি বোলতা বাসা বানিয়ে তারপর তার বাচ্চার জন্য একটি পোকা শিকার করে দরজা বা মাটিতে গর্ত করে তারমধ্যে পোকাটাকে রাখে এবং সেই পোকার গায়ে একটি মাত্র ডিম পারে । এই বোলতা গুলো একটু বড় আকৃতির হয় । আরেক প্রকার খুব ছোট বোলতা সেগুলো এগুলোর চেয়েও উপকারি, কারণ সে সব বোলতা একটি শুয়াপোকার গায়ে অনেক ডিম পারে এবং ডিম থেকে বাচ্চা হলে বাচ্চা খুব শীঘ্রই শুয়াপোকার বিভিন্ন জিনিস খায় এবং শুয়াপোকা তাড়াতড়িই মারা যায়।আর চাক বাধা বোলতা হলো যে বোলতা সামাজিক । এই বোলতার রাণী প্রথমে চাক বানায় তার মধ্যে ডিম পাড়ে । বাচ্চা ফুটলে রাণী তাদের জন্য খাবার যোগাড় করে । তারপর বাচ্চাগুলো বড় হলে এবং পুর্ণাঙ্গ হলে পরের বাচ্চাগুলোর জন্য খাবার যোগাড় করে ।
শেষে বলা যায় যে, আমরাও পোকামাকড়ের ওপর নির্ভরশীল । খুব ক্ষতিকারক পোকা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সমস্যা, কারণ বিভিন্ন পোকা তার ওপর নির্ভরশীল অথবা আমরাও তারপর নির্ভরশীল ।
মানুষের একটি খারাপ গুণ হলো যে,যেটা উপকার করে না তাকে বিলুপ্ত করে ফেলতে হবে । আপাতত ঐ পোকাকে ক্ষতিকারক মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে ঐ পোকা ক্ষতিকারক নয়। কারণ তার ওপর বিভিন্ন প্রাণী নির্ভরশীল । আমরা যদি প্রকৃতির কোন জিনিসের ক্ষতি করি তাহলে আমাদেরও ক্ষতি হবে । বরং মানুষের বুদ্ধির পরিচয় তখনই পাওয়া যেত যখন মানুষ প্রকৃতির বিভিন্ন জিনিসকে পর্যেবেক্ষণ করতো এবং প্রকৃতির কোন ক্ষতি না করতো । তাহলে কোন সংকট,সমস্যা কিছুই হতো না ।