অমাবস্যার অশ্রু
------------------------------------------------------------------
বিল্ডিংয়ের ছাদের রেলিংয়ের উপর দাড়িয়ে আছে ছেলেটি। আর তিন পা সামনে এগিয়ে গেলেই সে চলে যাবে অন্য একটি জগতে যেখান থেকে সে হয়তো আর ফিরে আসবে না। এগিয়ে যাচ্ছে সে,
এক পা•••••দুই পা••••তিন পা••••
ছয় মাস পূর্বে•••••••••••••••••••••••••
- কিরে আহসান, তুই তো এখনো ব্যাকডেটেড রয়ে গেলি?
- কেন কী হয়েছে?
- ডিজিটাল যুগে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট কানেকশন নাই তোর ঘরে।
বন্ধুদের এমন কথায় একটু অপমানবোধ করলো আহসান। আসলেই তো, সে কী পরিমাণ ব্যাকডেটেড। আজকেই, ইন্টারনেট কানেকশনটা নিতে হবে। যে কথা সে কাজ। মা-বাবার সাথে চিল্লাচিল্লি করে ইন্টারনেট কানেকশনটা নিয়ে নিল। কানেকশন নিয়েই যোগ দিলো সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে বড় সাইটে। সব বন্ধুকে রিকোয়েস্ট পাঠালো। শুরু হলো আহসানের অন্যরকম এক জীবন। দিনের অধিকাংশ সময় কাটাতে লাগলো সে ওই সাইটে। আসতে আসতে সাইটটি ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিলো সে। হঠাৎ করে মাথায় একটি বুদ্ধি এলো আহসানের। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী একটি গ্রুপ খুললো সে। খুব কয়েকদিনেই গ্রপটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। অনেক পোস্ট আসা শুরু হলো, অনেক ছবি আপলোড শুরু হলো। হঠাৎ একদিন একটি মেয়ে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু সুন্দর ছবি আপলোড করলো। ছবিগুলো খুবই পছন্দ হলো আহসানের। তাই সবগুলো ছবি নামিয়ে নিলো সে।
ওয়েবসাইট ডেভেলপের কাজ জানতো আহসান। তাই ঠিক করলো তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে একটি ওয়েবসাইট বানাবে। ব্যস•••যে কথা সে কাজ। কাজ শুরু করলো সে। হঠাৎ তার মনে পড়লো ওই ছবিগুলোর কথা। সেই ছবিগুলোতো এখানে দেওয়া যায়। কিন্তু সেগুলোর জন্যতো ওই মেয়েটার অনুমতি নেয়া দরকার।
- কী জানি নাম ছিল মেয়েটার••••••••••••• ও হ্যা মনে পড়েছে•••• জিনাত।
খুজে বের করলো তার আইডি। তাকে একটি মেসেজ দিলো আহসান এবং তার ছবিগুলো ব্যবহারের অনুমতি চাইলো। ১ দিন পর মেয়েটি উত্তর দিলো এবং তার সম্মতির কথা জানালো।
এভাবে, পরিচয় হলো আহসান আর জিনাতের । জিনাতকে রিকোয়েস্ট পাঠালো আহসান। রিকোয়েস্ট কনফার্ম করলো জিনাত। শুরু হয়ে গেল দু’জনের টুকটাক চ্যাটিং। প্রথমে, হালকা হালকা কথা হতো। দিনে দিনে সেই চ্যাটিংয়ের মাত্রা বাড়তে লাগলো। জিনাতকে ভালো লাগতে শুরু করলো আহসানের। তার কথাবার্তা, তার চিন্তাভাবনা সবকিছুই আহসানকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করলো। এভাবে, প্রায় তিনমাস হয়ে গেল।
হঠাৎ একদিন চ্যাটিংয়ের মাঝখানে জিনাত আহসানকে জিজ্ঞাসা করলো,
- আচ্ছা মনে করেন, আমি একদিন আপনার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম, আপনি কী করবেন?
চুপ করে রইলো আহসান। জিনাত আবারো জিজ্ঞাসা করলো। আহসান বললো যে সে পড়ে জানাবে। সারারাত আহসান কথাটা নিয়ে চিন্তা করলো। আসলেই তো। এমন হলে সে কী করবে? তার মন থেকে একটিই উত্তর আসতে থাকলো,
আহসান, তুইতো তাকে ছাড়া বাচবি না।
তাই, আহসান ঠিক করলো কালকে সে তার মনের কথা বলবে জিনাতকে। পরেরদিন, জিনাতকে একটি মেসেজ পাঠালো আহসান। সেখানে তুলে ধরলো তার মনের ইচ্ছা। নিজের ভেতরের যাবতীয় অনুভূতিকে তুলে ধরলো জিনাতের সামনে।
রাতে জিনাত এলো চ্যাটিংয়ে। আহসানের বুক ধুর ধুর করে কাপছে। কাপা কাপা হাতে সে কীবোর্ডে লিখালো,
- জিনাত, তুমি কী মেসেজটা পড়ছো? তোমার জবাব কী?
- কী বলবো? আমার ২৩ বছরের জীবনের সবচেয়ে সেরা গিফট ছিলো অইটা।
জবাব শুনে আহসান যে কী করবে ভেবে পেলো না। তার মনে হলো, পৃথিবীতে তার চেয়ে সুখে আর কেউ নেই।
কিন্তু, এরপর জিনাত যা বললো তা অনেকটা এইরকম।
- আহসান, শুনো। আমার বাসায় আমার জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে এবং গতকাল একটি ছেলে আমাকে দেখে গিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে তাদের উত্তর পজিটিভ হবে। শুনো, আমার পরিবারের যে অবস্থা, আমি আমার বাসায় কখনোই আমাদের এই সম্পর্কের কথা বলতে পারবো না। তাই, তোমাকে যেভাবেই হোক, আমার বাসায় একটা প্রোপোজাল পাঠাতে হবে যাতে এই বিয়েটি আটকানো যায়।
আহসানের মাথা খারাপ হয়ে গেল। প্রোপোজাল পাঠাতে হলেতো তাকে বাসায় জানাতে হবে। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? তারতো, এখনো বিয়ের বয়সই হয়নি। সেতো এখানো নিজের পায়ে দাড়াতে পারেনি। সে কী করে বাসায় বলবে? তবুও, অনেক সাহস সঞ্চয় করে সে বাসায় জানালো বিষয়টা। তার কথা শুনে তার পরিবারের জবাব ছিলো অনেকটা এরকম,
- তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এই বয়সে তুই বিয়ের কথা বলিস। তোর কী ক্যারিয়ার নিয়ে একটুও মাথাব্যাথ্যা নেই? ক্যারিয়ার থেকে কী এসব জিনিস বড় হয়ে গেল? তাছাড়া, তোর বড় কাজিনদেরই এখনো বিয়ে হয় নাই। তোকে যদি তাদের আগে বিয়ে দেই তাহলে কী মান-সম্মান কিছু থাকবে? মানুষ কী বলবে?
চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আহসান। ছাদে চলে গেলো। আকাশে অর্ধেক চাদ উঠেছে। নিজের অজান্তেই দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো আহসানের। তার সুখকে কেউ দেখলো না, তার কষ্টকে কেউ বুঝলো না, তার অনুভূতিকে কেউ গুরুত্ব দিলো না। মান, সম্মান, ক্যারিয়ার ইত্যাদি সবকিছুই তার অনুভূতিগুলোর চেয়ে, তার সুখের চেয়ে বড় হয়ে গেল।
১ সপ্তাহ পড়ে বিয়ে হয়ে গেল জিনাতের। সে যে বিয়েটা আটকানোর জন্য চেষ্টা করেনি তা কিন্তু নয়। সে শেষ পর্যন্ত বাসায় জানালো। কিন্তু, তার কথা শুনে তার পরিবারে হুলস্থল কান্ড বেধে গেল। আহসানকে না দেখেই সবাই এক বাক্যে না বলে দিলো।
ছাদের এককোণে দাড়িয়ে আছে আহসান। আজকে অমাবস্যা। তাই তার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানিগুলোকে কেউ দেখতে পায়নি।
১ সপ্তাহ পর•••••••••••••
নতুন এক রূপে দেখা গেল আহসানকে। ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় সিরিয়াস সে। সামনে তথাকথিত একটি সরকারি চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষা। এই চাকুরীটি পেয়ে গেলে তার পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। তারা আহসানের জন্য যেমন ক্যারিয়ার চায় এটি ঠিক তেমনি একটি চাকুরী। এই জন্য, রাতদিন পরিশ্রম করে পড়ালেখা করছে সে। চাকুরীটা তাকে পেতেই হবে।
দেখতে দেখতে নিয়োগ পরীক্ষার দিনটি চলে এলো। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আহসানতো ব্যাপক খুশি। কেননা, তার মনে হচ্ছে তার হয়ে যাবে এবং তার ধারণাই ঠিক হলো। তিনদিন পর পরীক্ষার ফলাফল দিলো এবং আহসান ভালোভাবে উত্তীর্ণ হলো। তার পুরো পরিবারে খুশির হিড়িক পড়ে গেল।
সন্ধ্যায় আহসান তার রুমে গেল এবং রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলো। তার ডায়রিটা নিয়ে পড়ার টেবিলে বসলো এবং একটি চিঠি লিখলো,
মা ও বাবা,
আমার সুখ, আমার অনুভূতির চেয়ে তোমাদের কাছে আমার ক্যারিয়ার, তোমাদের মান-সম্মান এই বিষয়গুলো অনেক বড় ছিলো। তাই, তোমরা আমার যেমন ক্যারিয়ার চেয়েছিলে আমি তোমাদের জন্য তেমন একটি ক্যারিয়ার গড়লাম। আমার ক্যারিয়ার আমি এমনিতেই গড়তাম। জিনাতের সাথে সম্পর্ক হলেও গড়তাম, না হলেও গড়তাম। কিন্তু তোমরা সেটা বুঝলে না। যা হোক, আমি তোমাদের মনের আশা পূরণ করলাম। আমার দায়িত্ব শেষ। আমি জানি যে সিদ্ধান্তôটা এখন আমি নিচ্ছি, তা খুবই ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমার আর কিছুই করার থাকলো না। জিনাতকে আমি অনেক অনেক ভালোবাসতাম। আমি তাকে আমার মনের যেই স্থানে বসিয়েছি, সেই স্থানে আমি আর কাউকে বসাতে পারবো না। পারলে আমাকে মাফ করে দিও।
ইতি
তোমাদের আহসান
রাত এখন ১২টা। বাবা মা সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। চিঠিটি নিয়ে বাবা-মার ঘরে গেল সে। খাটের পাশে চিঠিটা রাখলো সে। তারপর চলে গেলো তার প্রিয় সেই স্থানে••••তার বাসার ছাদে।
বিল্ডিংয়ের ছাদের রেলিংয়ের উপর দাড়িয়ে আছে ছেলেটি। আর তিন পা সামনে এগিয়ে গেলেই সে চলে যাবে অন্য একটি জগতে যেখান থেকে সে হয়তো আর ফিরে আসবে না। এগিয়ে যাচ্ছে সে।
এক পা•••••দুই পা••••তিন পা••••
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা
আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন
One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes
শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!
রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।
আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!
এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঁচতে হয় নিজের কাছে!
চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু। লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন