somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাংক বিড়ম্বনার ত্রিশ মিনিট

১২ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘড়ি বলছে তিনটা বাজতে পনের মিনিট বাকি। ব্যাংক বলে কথা; দেরি করে ফেললাম কিনা ভেবে দ্রুত ঢুকলাম। পূবালী ব্যাংক, তেজগাঁও শাখা। ঢুকে বুঝলাম দেরি করিনাই, কারণ অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া টাকা নগদ প্রদান এবং গ্রহনের তিনটা চেয়ারের দুইটাই খালি। স্বস্তি পেলাম কিছুটা। কিন্তু কাছে গিয়ে যা দেখলাম তা না বলার নয়।


প্রথমে আগে ব্যাংকের ভেতরকার অবস্থা বর্ণনা করা যাক।
মোট কর্মকর্তা আছে পনের জনের মত। কাঁচ দিয়ে ঘেরা দুইটা রুম, একটায় অফিসার টাইপের কেউ একজন। ঢুকলেই হাতের বামে তার রুম। বিপরীতে আছে চারজনের চারটা টেবিলসহ চেয়ার। এর পরেই আয়না দিয়ে ঘেরা টাকা নগদ প্রদান এবং গ্রহনের কাউন্টার। এখানে সরাসরি গ্রাহকের সঙ্গে আদান-প্রদানে আছেন তিনজন, এছাড়াও আরেকজন আছেন, যিনি চেক ভেরিফাই করেন। আর এ কাঁচ ঘেরা রুমের ঠিক বামপাশেই আরেকজন কর্মকর্তা বসে আছেন।
মূল বিষয়ে আসি। কাঁচ দিয়ে ঘেরা টাকা নগদ প্রদান এবং গ্রহনের কাউন্টারে আমার কাজ। দেখলাম অন্য সকল কর্মকর্তা নিজস্ব চেয়ারে আসীন, কিন্তু এখানে আছে তিনজনের জায়গায় একজন, যেটা আগেই বলা হয়েছে। যাকে পেলাম তিনি মুরুব্বিই বলতে হবে। পায়জামা পাঞ্জাবি পরিহিত। বয়স পঞ্চাশের কম হবে না। অবশ্য তার পেছনে চেক ভেরিফাইয়ার কিছুটা মুড নিয়েই আছে, ভাবখানা এমন আমি কিন্তু বস।
যাহোক, এক গ্রাহক কয়েক বান্ডল টাকা নিয়ে এসেছে। ৫০, ২০ এবং ১০ টাকার বান্ডল। বান্ডল সংখ্যা শ’ তো হবেই। মুরুব্বি আর কি করবেন বসে বসে টাকা গুনছেন। গুনছেনতো গুনছেনই অন্যদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এদিকে অন্য গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গ্রাহকদের মাঝে কিছুটা আলোচনা চলছে, এই লোকটা কি করছে ৫-১০ মিনিট ধরে একজনের টাকাই গুণে যাচ্ছে। অন্য কারো প্রতি তার নজর নেই।
আমি নিজে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে মুরুব্বির অবস্থা দেখছি আর হাসছি। কারণ এখানে একটাও মেশিন নেই। তার হাতে যে টাকা আছে তা গুণতে আরও অন্তত বিশ মিনিট লাগার কথা। এরকম অবস্থায় গ্রাহকদের অস্বস্তিটা একটু বেড়েছে। প্রকাশ কিছুটা জোরেও বলা যায়। মুরুব্বি মনে হয় এবার একটু তাকালেন, বললেন-‘ভাই কি করবো আমি একা, আবার টাকা গোনার মেশিনও নাই’। অবশ্য পেছনের মুডধারির খবর নেই। গভীর মনোযোগের সঙ্গে কম্পিউটারে কাজ করেই যাচ্ছেন।
আয়নার বাইরে কাউন্টারে আমরা যারা দাঁড়িয়ে আছি তাদের সংখ্যাটা এতক্ষণে বিশ হয়ে গেছে। আমাদের সামনে এবং ওই কর্মকর্তাদের পেছনে একটা দেয়াল, যেখানে পূবালী ব্যাংকের লোগো সহ লেখা আছে ‘ঐতিহ্যের পথ বেয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতি’। লেখাটা পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মন্তব্য করছে, হুমম- ‘অগ্রগতি মানে পিছিয়ে যাওয়া’, ‘সবাই যখন এগিয়ে যাচ্ছে তাদের তখন এই দুর্গতি’ তিনি যোগ করলেন। আরেকজন বলছে- ‘অগ্রগতি তো বটেই, ওই যে দেখেননা নষ্ট মেশিনটা পড়ে আছে (আসলেই লেখাটার নিচে নষ্ট একটা টাকা গোনার মেশিন পড়েছিলো)।
ততক্ষণে শোরগোলটা আরও স্পষ্ট হয়েছে, গ্রাহকরা বলছে- ‘ওই মিয়া আপনার টাকা গোনা রাখেন, আমাদেরকে আগে বিদায় করেন, এতক্ষনে তো আমাদের কাজ হয়ে যেত’। আওয়াজ আরও বেড়েছে। এবার মনে হয় ভদ্রলোকের টনক নড়েছে। যার টাকা গুনছে তাকে সবাই ম্যানেজ করলো, এবার অন্যদের সেবা দেয়া শুরু করলেন তিনি।
ইতোমধ্যে সময় ৩:০০ টা পেরিয়ে গেছে। মুরুব্বির সঙ্গে দুইটা খালি চেয়ারের একটা পূর্ণ হলো- এক ভদ্র মহিলা বসলেন সেখানে। মাঝখানে একটা কিন্তু খালি। খালি কেন? উত্তরটা জানা গেল, ‘এই চেয়ারের উনি নাকি বদলি হয়েছেন’ একজন গ্রাহকই বললো। এবার দুজনে মিলেই সবার সেবা দেয়া শুরু করলেন। টাকা গুনার মেশিন নেই হাতেই গুনে গুনে সেবা দিচ্ছে। দেরি তো একটু হবেই। তবুও মুরুব্বির চাপটা যে কমলো, কিংবা তিনি যে ভরসা পেলেন তা তার পরবর্তী কিছুটা দ্রুত কর্মকান্ডেই বোঝা গেলো।

বেশি না, মাত্র পঁচিশ মিনিট দাঁড়িয়ে এবার আমার পালা। চেকটা পেয়েই মুরুব্বি তার কাজ শেষ করে ভেরিফাইয়ার এর কাছে দিল। চেক দেখে তার ভাব-ভঙ্গি দেখে বুঝলাম কিছুটা সমস্যা আছে। পাঁচ মিনিট ধরে দেখলাম চেকটা নানা কর্মকর্তার হাত ঘুরে আমার শেষ পর্যন্ত হাতে আসলো। না, তারা কোনো সমাধান করতে রাজি হয়নাই। কেন হয়নাই, কি সমস্যা সেটা এখন থাক। তবে, ব্যাংক হতে বের হতে পেরেছি এটাই আমার জন্য আনন্দের।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গল্প-একাকীত্বের অন্ধকার

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:০১





ব্রাজিলের পান্তানাল রেইন ফরেস্টে এর নির্জন জায়গায় পাশাপাশি বসে আছে ম্যারিনা ও মুহিব। পৃথিবীর অন্যতম এই বন রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের কাছে অসম্ভব শিহরন জাগানিয়া। অনেক অনেক মানুষের ভীরে ম্যারিনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে বসবাস করছি

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:৩৩

মুক্তিযুদ্ধের কোটা নিয়ে অভিযোগ তোলা উচিত নয়।
তাদের পরিবারকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই।

৬০% নারী কোটা শতকরা ১০০ জনের ভিতরে ৬০ জনের বেশি নারী পাওয়া যাবে। দেশের পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। গত... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাদৃশ্য- বড়ই অদ্ভুত এক বৈশিষ্ট্য!

লিখেছেন আহলান, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৪৯




সাদৃশ্য- বড়ই অদ্ভুত একটি বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর রাসুল ( সাঃ) বলেন কাল কেয়ামতে কোন ব্যাক্তির হাসর নাসর তাদের সাথেই হবে, যাদের সাথে তার সাদৃশ্য থাকবে। অর্থাৎ দুনিয়াতে যারা যাকে যেভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি কল্পকথা

লিখেছেন কালো যাদুকর, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬

আমি খুঁজে পাবো তোমায়
পুরোনো সব রাস্তায়
এ মন বাধাঁ - যেখানে, যেথায়।

সারাদিন ধরে ঘুরে-
ঐ খেলাঘরে,
ঐ মেলায়,
ঐ পলাশ শিমুল বনে,
ঐ নির্জন গলির কোণে,
ঐ ছোট্ট ড্রইং রুমে,
ঐ জীবন্ত ছবির ফ্রেমে,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

EU বাংলাদেশ, আফ্রিকা ও আরবদের সাহায্য করার চেষ্টা করে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১০ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৩



EU বাংলাদেশকে বিবিধভাবে সাহায্য করে আসছে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে; বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে সচল করার জন্য সহযোগীতা করতে চায়। আমাদের দেশে ও আফ্রিকায় ভালো যা ঘটছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×