somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ : জাল সনদ।। চিকিৎসা ও প্রকৌশলবিদ্যা, নামকরা সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স, মাস্টার্স ও ডিপ্লোমা, উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক অহরহ জাল করা সনদগুলো টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনায়াসে সংগ্রহ করা যাচ্ছে !!!

১২ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নগরীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদপত্র জাল করে বিক্রি করছে এক শ্রেণীর প্রতারকরা। পরীক্ষা না দিয়ে এমনকি শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও চাহিদা মাফিক টাকার বিনিময়ে জাল চক্রের সদস্যদের কাছে সব ধরনের সনদপত্রই মিলছে। এক সময় জাল সনদের ব্যবসা শুধু নগরীতে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে বৃহত্তর চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলেও এ প্রতারণা বিস্তৃত হয়েছে। এখন এসব সনদপত্র চাইলেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়। যার ফলে মেধার বিকাশ প্রতিফলিত হচ্ছে না। র‌্যাব পুলিশ এদের পাকড়াও করতে মাঠে থাকলেও জাল সনদ চক্রের সদস্যদের অপতৎপরতা বেড়েই চলেছে।

সরজমিনে অভিযোগ পাওয়া গেছে, চিকিৎসা ও প্রকৌশলবিদ্যা, নামকরা সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স, মাস্টার্স ও ডিপ্লোমা, উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক অহরহ জাল করা সনদগুলো টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনায়াসে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। এ সনদপত্র নিয়ে অনেকেই নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অনায়াসে চাকরি করে যাচ্ছেন দাপটের সঙ্গে। কিন্তু গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানে অভিযোগের ভিত্তিতে বাছাইয়ে ধরা পড়লে তখন শুরু হয় তোলপাড়। প্রশাসনিকভাবে এদের অনেককে ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হলেও নিয়মিত নজরদারি না থাকায় এরা অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এরই মধ্যে র‌্যাব সদস্যরা গত তিন মাসে নগরীতে বিভিন্ন সময়ে হানা দিয়ে জাল সনদপত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করলেও এখনো চলছে তাদের সনদ বাণিজ্য।

এদিকে জাল সনদপত্র তৈরি ও বিক্রি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, জাল সনদের বিস্তারে লেখপড়ার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় পুরো সমাজ পঙ্গু হয়ে পড়বে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাল সনদপত্র হাতের নাগালে পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন আর পড়ালেখায় মনোযোগী নয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসল সনদের আদলেই তৈরি করা হয় জাল সনদ। সংশ্লিষ্ট বোর্ড কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচাই ছাড়া সাধারণ চোখে এসব জাল সনদ ধরা খুবই কঠিন। মূল সনদের মতো ছাগলের জলছবি পর্যন্ত আছে জাল সনদে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা জাল সনদ। বিশেষ করে বিভিন্ন বাসাবাড়ি এবং কম্পিউটারের দোকানগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে আসল সনদের আদলে জাল সনদ তৈরি করছে একটি চক্র। বিগত দিনে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে এসব তথ্য উঠে আসছে। তারা বলছে, যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সনদ তৈরি করা হয়, মূলত সেসব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের মাধ্যমে সনদের কাগজ সংগ্রহ করা হয়। এজন্য বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সঙ্গে জাল সনদ ব্যবসায়ীদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় নগরীর সিইপিজেড এলাকা থেকে জল সনদপত্র তৈরির সরঞ্জামসহ হবিগঞ্জের সদর থানার শাহাদাত আলীর ছেলে আব্দুল কাইয়ূমকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা। কাইয়ূম বন্দর থানার ওয়াকিল চৌধুরী পাড়ায় আরাফাত হোসেনের ভবনের পাঁচতলায় ভাড়া বাসায় বসে জাল সনদপত্র তৈরি করে টাকার বিনিময়ে এগুলো মানুষের হাতে তুলে দিত। এ সময় দোকান থেকে ১টি এইচএসসি পাসের সনদপত্র, একটি কম্পিউটার সিপিইউ, ১টি ১৫ ইঞ্চি মনিটর, ১টি কালার প্রিণ্টসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করে র‌্যাব। খাবারের দোকানের আড়ালে কাইয়ূম অবৈধভাবে জাল সনদ তৈরি এবং সরবরাহের কাজ করে আসছিল। এর এক সাপ্তাহ পর ১০ আগস্ট বন্দরটিলার মেসার্স আজাদ কম্পিউটার দোকানে অভিযান চালিয়ে জাল সনদপত্র, কম্পিউটার ও সনদপত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ জাল সনদ ব্যবসায়ী মোঃ জয়নাল আবেদীনকে (৫০) র‌্যাব সদস্যরা গ্রেপ্তার করেন। এ সময় বেশকিছু এইচএসসি পাসের সনদপত্র, কম্পিউটার সিপিইউ, স্যামসং ১৫ ইঞ্চি মনিটর ও প্রিন্টারসহ হরেক রকম সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। একইভাবে গত ২৩ অক্টোবর নগরীর কোতোয়ালি থানার নিউমার্কেট গোলচত্ত্বর সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশন সুপার মার্কেটের হানিম্যাক্স ফুডপার্কে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। প্রথমে কবির হাওলাদারকে (৩৫) ১টি এইচএসসি পরীক্ষা পাসের জাল সনদপত্রসহ হাতেনাতে আটক করা হলে তার দেয়া তথ্যানুসারে তারই সহযোগী শফিউল আলম ওরফে সমাধান শফিক (৫৫) ও সাজ্জাদুর রহমানকে (৩২) কম্পিউটার ও জাল সনদপত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধারসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে সনদ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে জাল সনদপত্র তৈরির বেশ কিছু পন্থা অবলম্বন করে বলে উল্লেখ করে জানায়, দিনে সাধারণত জাল সনদপত্র তৈরি করা যায় না। রাতে নিরিবিলি সময়কে সনদ তৈরির উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেয়া হয়। ফটোশপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কম্পিউটার অপারেটররা কাজগুলো করে থাকে। প্রথমে মূল সনদপত্র স্ক্যান করা হয়। তাতে লেখা নাম, রোল নং, রেজিস্ট্রেশন নং, পাসের সাল উঠিয়ে ফেলা হয়। যে নামে জাল করা হবে সে নাম বসানো হয়। বয়স অনুযায়ী বসানো হয় পাসের সাল। এভাবে তথ্য পরিবর্তন করে আসল সনদের আদলে তৈরি করা হয় জাল সনদপত্র। সনদপত্রে ব্যবহƒত কাগজের মতো এক ধরনের কাগজে প্রেসে নিয়ে সেটি ছাপানো হয়।

উল্লেখ্য, দেশের স্বনামধন্য ঢাকার এপোলো হাসপাতালেও স¤প্রতি জাল সনদধারী ভুয়া ডাক্তার ধরা পড়েছেন। ভুয়া ডাক্তারি সনদপত্র নিয়ে বিশেষায়িত এ হাসপাতালে দীর্ঘ চার বছর ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন কাজী তানভীর জামান। এক পর্যায়ে তার চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র অনুসন্ধানী শাখা ও মেডিকেল কাউন্সিল কাজী তানভীর জামানের সনদপত্র জাল প্রমাণ করে। ২০০২ সালের মে মাসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব মেডিসিন এন্ড সার্জারি পাসের জাল সনদপত্র সংগ্রহ করেন কাজী তানভীর। এসব জাল সনদপত্র দাখিল করে ২০০৭ সালের আগস্টে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন এপোলোতে। নিয়োগ পাওয়ার এক বছরের মাথায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বিভিন্ন মহলে বিষয়টি আলোচিত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কাগজপত্র যাচাই করতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই ঘটনা ধরা পড়ে। এছাড়া ২০০৭ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়েজির সনদপত্রও জাল বলে ধরা পড়ে ।

সূত্র: দৈনিক ভোরের কাগজ
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×