গত ১৩ই আগস্ট মিশুককে হারিয়ে ছেলেকে নিয়ে চলে এলাম টরেন্টোতে।আমি তো দেশে গিয়েছিলাম ছুটিতে।সমস্ত হারিয়ে যখন বেঁচে থাকার চেষ্টায় যুদ্ধ করে যাচ্ছি,তখনই দেখি বাংলা টেলিভিশনে একটি সংবাদ।সংবাদটা দেখে আমি মর্মাহত,মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদদের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাস চালকের মুক্তির দাবীতে উত্তরাঞ্চলে বাস ধর্মঘট। সেদিক ২৪ অক্টোবরের সমাবেশে শ্রমিক নেতারা এমন ভাবে কথা বললেন যেন সেই চালক কোণ অন্যায় করেনি।যেন পাঁচটি মশা-মাছি মেরেছে বলে তাকে জেলে দেয়া হয়েছে।সেই চালককে আইনী সহায়তা দেবারও আশ্বাস দিলেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
আমাদের রাজনৈতিক নেতারা সংসদে উত্তপ্ত ভাষণে সেই সময়ে বলেছিলেন, "মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদ বারবার আসে না"। তা হলে এই দুই গুনী হত্যার বিচার হবে না কেন?কেন নিরাপদ সড়ক ও ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার আবদারের প্রতিবাদ হবে না?তিন মাসও হয়নি, এই দুই মানুষকে হত্যা করেছে সেই বাস চালক,সাথে আরো তিনজন। মানুষের জীবনের কি কোন দাম নেই এই সরকারের কাছে?২৪ হাজার পরিবহন লাইসেন্স এর দাবী জোরালো হয়ে উঠেছে।তথাকথিত শ্রমিক নেতারা যেভাবে কথা বললেন,তাতে মনে হলো যেহেতু রোযার ঈদের ঠিক আগে মিশুক-তারেক এর দুর্ঘটনাটি হয় তাই তারা কিছু বলতে বা করতে পারিনি জনগনের রোষের কারণে।৩মাসও হয়নি মিশুক-তারেক চলে গেল যা দু মাস আগে তারা করতে পারে নি আজ এখন তা তারা করছে।সাধারন মানুষকে জিম্মি করে তারা তাদের আসল নোংরা চেহারাটা দেখাচ্ছে এবং বাংলাদেশের সরকার প্রধান তা দেখেও না দেখার চেষ্টা করছেন।প্রধানমন্ত্রী তো বলেন,"স্বজন হারানোর ব্যাথা কি আমি জানি"।তা হলে আমাদের মত যারা সড়ক দুর্ঘটনায় স্বজন হারিয়েছি তাদের ব্যাথা তিনি কেন বুঝতে চেষতা করছেন না?তিনিতো ঠিকই তার পরিবারের হত্যার বিচার আদায় করে নিলেন এবং অপরাধীদেরও সাজা হলো,বিরোধী দলের নেত্রীও তার স্বামী হত্যার বিচার পেয়ে গেলেন।তাহলে আমরা কেন সেজন হারানোর বিচার পাবো না?তারা রাষ্ট্রের কর্ণধার বলে তারা বিচার পাবেন আর আমরা সাধারণ জনতা পাবো না?দুর্ঘটনার জন্য দায়ী একজন চালকের জামিনের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি কি করে দিতে পারেন সরকারের একজন উচ্চপদস্থ লোক?আমি যদি প্রশ্ন করি," ঐ চালককে ছেড়ে দিন,আর তার বদলে মিশুক ও তারেককে ফিরিয়ে দিন",পারবেন দিতে?পরিবহন শ্রমিকরা কি করে ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিতে জুতা মারে? ওই উছৃংখল,গুন্ডাদের সাথে কাদের হাত আছে,তার মানে কি আমরা বুঝতে পারি না?২৪তারিখে শহীদ মিনারের ওই শোডাউনে কি প্রমান হয়?
কিন্তু সাধারন মানুষ আমরা দেখেছি এবং নিজেদের প্রস্তুত করছি নিজেদের রক্ষা করার জন্য।দেশের জনসাধারনকে যদি কেউ মুর্খ বা অন্ধ ভাবেন তাহলে ভুল করবেন।সাধারন মানুষের হয়তো বিদ্যালয়ের শিক্ষা নেই আছে প্রকৃতিগত শিক্ষা,যে শিক্ষায় একজন সাধারন মানুষ ভালো মন্দ বুঝতে বা চিনতে পারে।তাই বলছি যে অন্যায় আবদার নিয়ে আজ ২১টি জেলায় পরিবহন ধর্মঘট হয়ে গেল,ঠিক এমন দাবী তো আমিও করতে পারি।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলতে পারি," দাও ফিরিয়ে মিশুক'কে,দাও ফিরিয়ে তারেক'কে"।
মঞ্জুলী কাজী।
প্রয়াত মিশুক মুনীরের স্ত্রী,
টরেন্ট থেকে।
___________________________________________________
ঠিক যেই সময়ে লেখাটি লিখলাম ঠিক তখনই দেখতে পেলাম একটা সংবাদ।সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ নিহত ৪ আর কত মারা যাবে এভাবে?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২২