জেদি শিশুর মতো ঘড়ির কাটা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে
যেন মায়ের কাছে বায়না - বেলুন না দিলে এক পা হাঁটবে না ।
অথচ তুমি নিয়ম করেই ব্যাটারি বদলাও
ঘড়িও পাল্টে দিয়েছো বারকয়েক
কিন্তু আমি একটি সময়ই দেখতে পাই -
চৈত্রের দুপুর , ঘড়িতে ঠিক ১২ টা বাজে
দিনরাত এক সময়ে বন্দি ।
এক সময়ের আমি তো এমন ছিলাম না
ঝুমঝুম বৃষ্টি , অশান্ত কাশবন , শিশিরে ভেজা শিউলি
কি ভালোবাসিনি বলতো !
আর ভালোবাসতাম গাছ ! ইচ্ছে হতো গাছের মতো হতে
মমতার ছায়া নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা গাছ !
এই একটি স্বপ্নই কেমন করে সত্যি হয়ে গেলো !
মানুষের শরীর নিয়েই আমি গাছ হয়ে গেলাম
যে আর কোনদিন তোমায় টেনে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে না
জোছনায় হাঁটবে বলে তোমায় পাগল করবে না
ভালোবাসার লজ্জায় লুকোতে চাওয়া তোমায়
দৌড়ে আর ধরে ফেলতে পারবে না !
গাছের শেকড় এতো ভালো লাগতো আমার !
সৃষ্টিকর্তা বোধকরি সে কারণেই
আমার ১০০মিটার দৌড়ে ফার্স্ট হওয়া পা কে শেকড় বানিয়ে দিলেন
সেই শেকড়ের সাথে এই বিছানাটাকে আঁকড়ে থাকি ! একা !
আমার ছায়ায় কোন ক্লান্ত পথিক জিরোয় না
কোন পাখি নীড় বাঁধে না
কিশোরীর দোলনায় দুলতে পারিনা আমি
আমি তো এমন গাছ হতে চাইনি ।
পুরনো আসবাবের মতো এক কোনে পড়ে আছি
মেকি হাসি আড়াল করতে পারে না তোমার চোখের ক্লান্তি
আমাদের ছোট্ট বাবাই কেমন দূরে সরে থাকে
বাবার কাঁধে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর বায়না করে না আর
ওর ছোট্ট কল্পনার জগত এখন শাহেদ আংকেলের দখলে ।
আমার প্রিয় বন্ধু শাহেদ !
আমার বাবুটাকে অনেক ভালোবাসে ইদানিং
শাহেদের জন্য তোমার ঝলমলে হাসি
পাশের ঘরে গাছ হয়ে যাওয়া আমায় খুব ঘাবড়ে দেয়
চৈত্রের সূর্যে পুড়তে থাকি আমি
তোমরা গন্ধ পাও না ? মানুষ পোড়ার গন্ধ ?
আমার চেয়ারটায় আগে তুমি কাউকে বসতে দিতে না
চমৎকার বিকেলগুলোতে চেয়ার আর শূন্য থাকে না ।
তোমাদের দুজনের কফির কাপ থেকে ওঠা ধোঁয়া
শ্লথের মতো ধীরে এগিয়ে আসে আমার চোখে
ঝাপসা চোখে তখন ঠিক দুপুর ১২ টা
মাঝে কিছু কর্তব্য - কফি খাবে একটু ?
সন্ধ্যা হয়ে গেছে লাইট দাওনি যে , বেড সুইচ তো হাতের কাছেই ।
কি করে বোঝাই ! কেন বুঝতে পারোনা তুমি
আমার ঘরে রাত নামে না
কৃষ্ণপক্ষের রাতেও আমার চৈত্রদিন । দুপুর ১২ টা ।
০৯/১১/২০১১