পঁচিশে মার্চের শহীদদের স্মরণে –
স্বাধীনতার বীজ বাঙালির রক্তে
- যাযাবর জীবন
একাত্তুরের কালরাত
ভয়াবহ পঁচিশে মার্চ
স্তব্ধ নিশিরাত
ট্যাঙ্কের ঘরঘর শব্দ শুনি
আঁতকে ওঠে মানুষ
আঁতকে ওঠে ঘর বাড়ি
একটানা মর্টারের বুম বুম ধ্বনি
রাজারবাগের পুলিশ লাইন
সার দিয়ে ঘুমিয়ে বাংলার পুলিশ বাহিনী
মেশিনগান আর বন্ধুকের শব্দে জেগে ওঠে পৃথিবী
গ্রেনেড চার্জ আর ট্যাঙ্কের গোলাগুলি ধ্বনি
রক্তের বন্যা ভেসে যায় ভূমি
নরপশুর উল্লাস হো হো হাসি শুনি
মানুষ না পশু তারা আজো বুঝিনি।
সহায় সম্বলহীন নিরীহ জনগণ
বিছানো ছালায় সার দিয়ে শুয়ে ছিল রাস্তায় সেদিন
শীতার্ত রাতে জড়িয়ে একে অপরকে
শিশু ওম নেয় মায়ের বুকেতে
হঠাৎ ট্যাঙ্কের ঘর ঘর ধ্বনি
চমকে ওঠে মানুষজন বুম বুম শুনি
পিশাচেরা নির্দয় মেশিনগানের গুলি
কেড়ে নেয় কত প্রাণ সে রাতে অগুনতি
প্রাণহীন মায়ের বুকে শিশু লুটায় কাঁদে
গুলিতে ছিন্নভিন্ন শিশুর দেহ, স্তব্ধ মা বসে রয়
এদিক ওদিক পড়ে থাকা শত মানুষের লাশ
কারো মা, কারো বোন, স্বামী সন্তান আর বাপ
স্তব্ধ তারা, স্তব্ধ পৃথিবী
থেমে থাকে সময় কাঁদে ধরিত্রী
পিশাচদের মুখে হায়েনার হাসি
গুড়ো করে দিয়ে স্বাধীনটার আশা
স্তব্ধ করেছিল সেদিন বাঙালির ভাষা
ঘরে ফেরে তারা মুখে একরাশ হাসি
মানুষের রক্তে পিশাচের হোলি।
পেরেছিল কি তারা স্তব্ধ করতে বাঙালির আশা
দামাল বাংলার ছেলেদের বুকে ছিল না সেদিন কোনো ভাষা
শুধুই ধিকি ধিকি আগুনের জ্বালা
হারিয়ে প্রিয়জন বাঁধে নতুন করে মন
রুখে দিতে হায়েনাদের হো হো করা হাসি
শাবাশ বাঙালি;
মাত্র নয় মাসে দেশ ছাড়া করে
পিশাচের দল সব লেজ গুটে দৌড়ে
পালিয়ে যায় তারা নিজ নিজ ঘরে
বিজয়ের বীজ বপন হয় বাংলা মায়ের কোলেতে
মাত্র নয় মাস
মাত্র নয় মাসের অঙ্গার সইতে না পেরে
পালিয়ে গেল পিশাচেরা অন্ধকার গর্তে।
নয় মাস ধরে
পঁচিশে মার্চের শোধ নেয়া হয়
তবু সেই সব শহীদরা আজো জেগে রয়
ষোলো কোটি বাংলার মানুষের মনে
জেগে আছে আজো সেই ঘৃণার আগুন
সত্যিকার বাঙালির হৃদয় আর মনে
নরপশু পিশাচ তোরা পাকসেনা
মানুষ রূপী তোরা বর্বর হায়েনা
বেয়াল্লিশ বছর তোদের মুখে থুতু ছিটিয়েছি
পরিণামে তোদের দোসর
ঐ রাজাকারদের আজ ফাঁসি দিয়েছি
শাহবাগ চত্বরে বসে
মাত্র কিছু বাংলা মায়ের দামাল ছেলে।
তবু কোথায় যেন বুকের ভেতর বাজে
তিরিশ লক্ষ শহীদের আত্মারা কাঁদে
বাংলার মাটির আনাচে কানাচে
ভুলবো না তোমাদের হে মহান
যতদিন বাঙালির দেহে আছে প্রাণ।