কড়াঁ দুপুর ।প্রচন্ড রোদ মাথায় নিয়ে কলেজ
ক্যাম্পাস থেকে রাস্তায় নামল নুপূর ।
চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল ।
না ,সে আজো আসেনি।
"কাকে খুঁজছিস্ রে ?প্রশ্নটা শুনে থমকে গেল
সে।. .মুখপোড়া রেমি টা বুঝে ফেলেছে হয়তো ।
"না,কাউকে না ।
"আমি জানি তুই সেই ছেলেটাকে খুঁজছিস ।'
মুখে গাঁ জ্বলানো হাসি নিয়ে কখাগুলো বলল ।
"দূর ! কোন দুঃখে খুঁজতে যাব ইতরটাকে !
পাঁল্টা প্রশ্ন ,"ইতর বলছিস কেন ?ছেলেটাতো তোর
কোন ক্ষতি করেনি !"
"কি হয়েছে তাতে !তিন মাস ধরে পিছু নিয়েছে ।
প্রতিদিন কলেজ ছুটির সময় দাঁড়িয়ে থাকে আর ঢেব
ঢেব করে তাকিয়ে থাকে !রাগে আমার গাঁ জ্বলে !"
রেমি আর বৃথা বাক্যালাপ করলোনা ।নুপূর
ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করল ।. . . ছেলেটা আজ
নিয়ে তিনদিন এলোনা ।বাঁচা গেল ! নুপূর আপন
মনে বলল ।তবুও কোনো এক
অজানা ঝাপসা আকাক্ষা হয়তো এখনি দেখবে ছেলেটিকে ।. . . . .হঠাত্
পথ আগলিয়ে দাঁড়াল
কালো পাঞ্জাবী পরা একটি ছেলে ।চোখগুলো যেন
আগুনের ফুলকি ।কালি পরে গেছে নিচটায় ।
ছেলেটিকে একবার দেখেছিলাম "ওর" সাথে ।
"xcuse me! শান্ত কিন্তু গম্ভীর গলায়
বললো ।
"জ্বি ,বলুন ।
একটা হলুদ খাম এগিয়ে দিল ।এটা কি !দ্বিধায়
পরে গেল নুপূর।নিবে কি নিবে না !তবু না জানা এক
কৌতূহলে হাত বাড়িয়ে নিলো।
ছেলেটি আর দাঁড়ালো না ।দূর্ ! এ কোন নতুন
উত্পাত ।তিন দিন
আসেনি দেখে সোজা চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে ।অসভ্যটার
সাহস বেড়েছে ! ! . . .ঘরে ফিরে চেয়ার
টেনে গা এড়িয়ে দিয়ে খামটা খুলল।মলিন
একটা কাগজে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা . .. . . . .
প্রিয় "স্বপ্নচূড়া"
তোমাকে এই নামে সম্বোধন করলাম কারণ
তুমি আমার স্বপ্ন পর্বতের চূঁড়া বিন্দু।আমার
ক্ষুদ্র পরিসরের জীবনের সকল স্বপ্নের শেষ বিন্দু
।আমার অপূর্ণ একটি স্বপ্ন ।
সারাটি জীবন উদাসীনভাবে কাঁটিয়ে দিয়েছি ।
নিজেকে নিয়ে যেমন ভাবিনি ,নিজের মনকে বোঝার
অবকাশটুকু ও হয়নি ।প্রেম নামক শীতল অনুভূতিও
কখনো স্পর্শ করেনি ।কিন্তু যখন এই প্রেমই মনের
দুয়ারে এসে কড়া নাড়ল ।
আমি সাঁড়া দিতে গিয়ে থমকে গিয়েছি।
কখনো ভাবিনি আমার জীবনের মেঘমুক্ত আকাশ
হঠাত্ কালো মেঘে ছেঁয়ে যাবে ,জীবনে প্রভাতের
স্নিন্ধ আলো ফোঁটার আগেই নেমে আসবে সন্ধ্যার
গাঁঢ় আধাঁর ।তবুও মেনে নিয়েছি এই সত্যকে ।অনাগত
চরম বাস্তবতাকে ।ডাক্তারের বেঁধে দিয়া তিনটি মাস
ভেবেছি মুক্ত ডানায় ভর করে উড়ে বেড়াব ইচ্ছেমত
।কিন্তু তার আগেই আমায় বন্দি করলে ।
আমাকে মুক্তির স্বপ্ন দেখালে ।কিন্তু স্বপ্ন
যে আমার জন্য নয় ।এ তিনটি মাস
কেটেছে তোমাকে ভেবে ।তিনটি মাসে আমি বাস্তব
জীবন থেকে সরে এসেছি অনেকখানি ।প্রতিদিন সময়
হওয়ার আগেই ছুঁটে গিয়েছি ।. .তোমাকে এক পলক
দেখব বলে ।জানি এ তিন মাসে আমি তোমার
বিরক্তির কারণ হয়েছি ।কিন্তু আমি যে নিরুপায় !
যুক্তি আর আবেগের যুদ্ধে আমার যুক্তি ক্ষত-
বিক্ষত হয়েছে ,সরে দাড়িঁয়েছে মাথা নত করে ।আর
আমার আবেগ তোমার কাছে টেনে নিয়েছে প্রতিবার ।
তোমাকে দেখে স্বপ্ন সাজাতাম ।ভুলেই যেতাম যে , এ
স্বপ্ন আমার অর্থহীন ,এ মাএই
মরিচীকা ।. . . .আমি যে স্বপ্ন দেখতে পারিনে ! . .
তোমার সামনে দাড়াঁনোর সাহস আমার
কখনো হয়নি ।তোমার কাছে চাওয়ার ও কিছু
ছিলো না ।কারণ তোমার কাছ থেকে এখন কিছু
পাওয়াটা হবে মৃত্যু অপেক্ষা অধিক যন্তনাদায়ক !
শুধু তাকিয়ে দেখেছি আমার জীবনের শেষ
সম্পদটাকে ।যাকে পেয়েও ধরতে পারিনি ।যাকে নিজের
বলে দাবি করতে পারিনি ! . . . অনাগত ওই
বাস্তবতার সাথে মনে মনে বহুবার লড়েছি !
যদি পারতাম পাল্টে দিতে এই অনাকাক্ষিত
সত্যকে ! ! . . . .মাঝে মাঝে ভাবি হয়তো স্বপ্ন
দেখছি !এখনি আমার দুঃস্বপ্নের ঘোর কেটে যাবে ।
কিন্তু না ! !
ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছি অজানা গন্তব্যের দিকে ।
গাঁঢ় অন্ধকার গ্রাস করবে আমায় ।. . .তবু
ভেবোনা আমার চলে যাওয়ায় আমার
পরিসমাপ্তি ঘটবে !বরং মুক্তি পাবে আমার
বন্দি সত্তা ।যে সত্তা কখনো তোমার সম্মুখীন
হতে পারেনি ,সে সত্তাই
তোমাকে ঘিরে থাকবে সারাটা জীবন,তোমার সুখের
হাসি আর তোমার দুঃখের অশ্রু হয়ে ! . . .. .
এখন গভীর রাত ।হয়তো এটাই আমার জীবনের শেষ
রাত ।যখন এই চিঠিটা তুমি পাবে হয়তো তখন
আমি অতীত ! এই চিঠিটা এই কারণেই
লিখছি ,আমি চাই যাকে আমি এতটুকু
ভালবাসি সে জানুন তার অল্পটুকু হলেও ! স্বপ্ন
হতে না পারি স্মৃতি হয়ে থাকতে চাই আজীবন ।
ভালো থেকো সবসময় ,এই কামনায় . . . . . .
______________________
চিঠির অপর পৃষ্ঠায় শুকনো গাঁঢ়
রক্তে লিখা "ভালবাসি". . .তাতে মিশল নুপূরের
কয়েক ফোঁটা অশ্রু বিন্দু । { $åÀÐ}