somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বলির পাঁঠা তৈমুর!

০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ৩০ অক্টোবরের মেয়র পদে ভোটাভুটিতে অবশেষে ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বিজয়ী হয়েছেন।

কিন্তু তার আগের রাতেই ঘটে গেছে আরও একটা নাটক। ২৯ অক্টোবর দিনগত রাতে নাসিক নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেন। অর্থাৎ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিলেন যে, তিনি নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।

এই সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে তিনি সাংবাদিকদের জানালেন, হাইকমান্ডের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এ কথা বলার পর পরই তিনি কেঁদে ফেলেন। কাঁদলেন এ কারণে যে, তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, একমাত্র মৃত্যু ছাড়া তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। কিন্তু, মৃত্যু পর্যন্ত তাকে যেতে হয়নি, তার আগেই জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশে (নাকি সিদ্ধান্তে!) নাসিক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হলো।

কান্নাটা সেই কারণে, কারো বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে বা তার প্রতিপক্ষ দল আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে নয়। নিজের সব ইচ্ছাই হার মানলো দলীয় নেতাদের সিদ্ধান্তে, এই কারণে।

তিনি সাংবাদিকদের আরও জানালেন, ‘আমি সব বেঁচে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম এবং আমার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টিও হয়েছিল।’

এর কারণ হিসেবে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মেয়র পদের প্রার্থীর সমর্থনের ব্যাপারে আওয়ামীলীগের একের পর এক নাটক। আওয়ামী লীগ শামীম ওসমানকে সমর্থন দেবে না আইভীকে?- এই প্রশ্ন নিয়ে সারাদেশের মিডিয়ায় গুঞ্জন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত সব গুঞ্জনের অবসান হলো শামীমের পক্ষে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় তিন নেতার সমর্থন ও মাঠে প্রচারণা শুরুর পর। পরিষ্কার হয়ে গেল আওয়ামীলীগ শামীম ওসমানকে সমর্থন করেছে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের নাটকে সিদ্ধান্তে অনড় ও অটল রইলেন নারায়ণগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিনা হায়াত আইভী। তিনি মিডিয়ার ভাষায় তখন পরিচিতি লাভ করলেন ‘আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের হাতেগোনা কয়েকজনের সমর্থন নিয়ে মনের জোর বাড়িয়ে মাঠে নেমে পড়লেন আইভী। নাগরিক কমিটি এবং সংস্কৃতি কর্মীরা তাকে সমর্থন দিয়ে গান রচনা, প্রচার-প্রচারণায় নিরবে কাজ করে যেতে লাগলেন।

এর পাশাপাশি দেখা গেল, কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম শামীম ওসমানকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন ছাপতে শুরু করে। এসে যায় মিডিয়ায় বিভক্তি। সাধারণ মানুষের আলোচনায় চলে আসে যে, অমুক মিডিয়া অমুককে সমর্থন দিয়েছে। অমুক মিডিয়া তাকে সমর্থন দিয়েছে। ঠিক যেন গ্রেট ব্রিটেনের নির্বাচন! ব্রিটেনের অত্যন্ত প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’ বামঘেঁষা বলে সে দেশের মানুষ জানে। আবার দ্য সান বা অন্য মিডিয়াগুলো একটু ডানঘেঁষা!

নাসিক নির্বাচনে ঠিক তেমনি সাধারণ মানুষের চায়ের কাপে ঝড় উঠলো কোন সংবাদমাধ্যম কাকে সমর্থন করছে! তবে আইভীর পক্ষে বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলোর সমর্থন তেমন একটা চোখে পড়েনি।

এরই ফাঁকে নারায়ণগঞ্জের বিএনপি কর্মীরা আশায় বুক বাঁধলেন যে, আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর ভোট ভাগাভাগির ফলাফলটা তৈমুরের পক্ষেই যাবে। কিন্তু তখন কি তারা জানতেন যে, তৈমুর শেষ পর্যন্ত বিএনপিরই বলির পাঁঠা হয়ে যাবেন?

অবশেষে ২৯ অক্টোবরের মধ্যরাতে সংবাদকর্মীরা বিএনপির আরেক নাটকের খবর ছড়িয়ে দিলেন সারা পৃথিবীতে।

নাসিক এলাকার ভোটাররা ৩০ অক্টোবর সকালে যখন সবাই ভোট দিতে যাবেন, তখন তারা সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে জানলেন, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার নাসিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

বিএনপি দলীয় কর্মীরা কেউ কেউ সরাসরি আওয়ামীলীগকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ২৯ অক্টোবর রাতেই। আর এদিকে ‘তৈমুর রুমালে চোখ মুছলেন’ দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে। এখানে কেউ কেউ অভিযোগও করেছেন যে, এখানে দলীয় কিছু হিসাব-নিকাশও নাকি ছিল। তৈমুরকে বসিয়ে দেওয়ার পেছনে আর্থিক লেনদেনের কথাও বলেছেন দলীয় কর্মীরা। কিন্তু কেউ সঠিকভাবে এর হিসাব মেলাতে পারেননি।

তারা ভেবেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমান্ড হয়ত এ সরকারের অধীনে আর নির্বাচন করবে না। আর তাই হয়তো তৈমুরকে নির্বাচন থেকে বসে যেতে হলো! কেউ কেউ ভেবেছেন যে, তৈমুরের ‘রাজনৈতিক ক্যারিয়ার’ শেষ করে দেওয়ার জন্য খোদ বিএনপির কিছু নেতা চেয়েছেন যেন, তৈমুর নাসিক নির্বাচন থেকে সরে যাক। তিনি সরে গেছেন। হয়ত এর ফলটা আইভীর ঘরেই গেছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে বিএনপি কতটা লাভবান হলো, এ প্রশ্ন খোদ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেই জেগেছে।

কথা উঠেছে যে, স্বয়ং তৈমুরও নাকি ২৯ অক্টোবর জানতেন না যে, শেষ পর্যন্ত তার এ পরিণতি হবে। জানলে তিনি নির্বাচনী খরচের জন্য সম্পত্তি হয়তো বিক্রি করতেন না।

কত কষ্টে একজন বলতেন পারেন, ‘আমি সম্পত্তি বেঁচে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি।’ সেই কথাই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তৈমুর আলম। তার ধারণা ছিল, নাসিক নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হতেও পারেন আওয়ামীলীগের বিভক্ত ভোটের কারণে। সেজন্য তৈমুর নিজে ছিলেন খুবই আশাবাদী যে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) প্রথম মেয়র হবেন তিনিই।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আশার গুড়ে বালি পড়লো!

তিনি ভাবলেন কী, আর হলো কী! বলির পাঁঠা হয়েই নির্বাচন থেকে তাকে বিদায় নিতে হলো!

তার দল কি তার এই কষ্ট, বেদনার মূল্যায়ন করতে পারবে, নাকি পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে প্রার্থী মনোনয়নে ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ করবে- এ প্রশ্ন নাসিক নির্বাচন থেকে করুণভাবে বিদায় নেওয়া তৈমুর তার দলের কাছে করতেই পারেন।

তবে সে মূল্যায়নটান হবে- দলের একনিষ্ঠ নেতাকর্মী হিসেবে নয়, ‘বলির পাঠা’ হিসেবে! তাই নয় কি?

লেখক: সাংবাদিক
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×