somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ার না থাকলেও তাঁরাই কম্পানির মালিক!

০২ রা নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাতে কোনো শেয়ার নেই, তবু কম্পানির মালিকানায় বহাল রয়েছেন পরিচালকরা। নিয়মিত বোর্ড সভায় বসে কম্পানির নীতিনির্ধারণসহ সব বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাঁরা। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁদের হাতে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে অতি নগণ্য শেয়ার নিয়েও বিভিন্ন কম্পানির পরিচালকরা তাঁদের মালিকানা ধরে রেখেছেন। তাঁদের চেয়ে বেশি শেয়ারের মালিক হয়েও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা উপেক্ষিত। পরিচালনা বোর্ডে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোনো স্থান নেই। বার্ষিক সাধারণ সভায়ও (এজিএম) তাঁরা কেবল দর্শক হয়ে থাকেন।
ডিএসইর হিসাবে বর্তমানে উত্তরা বাংকের পরিচালকদের হাতে কম্পানির কোনো শেয়ার নেই (শূন্য শতাংশ)। ব্যাংকটির শেয়ারের ৯৬.৮১ শতাংশের মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, ব্যাংকটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যাঁদের কোনো ভূমিকা নেই। আর বাকি ৩.১৯ শতাংশ হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্টার্ন ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে বর্তমানে মোট শেয়ারের ৩.৪৩ শতাংশ রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের অংশ ৯.৭৭ শতাংশ। বাদবাকি ৮৬.৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাঁরা অনুপস্থিত।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ইনটেক অনলাইন লিমিটেড ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এখন কম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা মোট শেয়ারের ২.৫৫ শতাংশের মালিক। এতে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার রয়েছে ৯.৩৭ শতাংশ। আর বাকি ৮৮.০৮ শতাংশ শেয়ারই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
পুঁজিবাজারে এমন অন্তত ছয়টি কম্পানি আছে, যেগুলোয় উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ১০ শতাংশের নিচে। আর ৩০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে_এমন কম্পানির সংখ্যা অন্তত ৩৪টি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানির সংখ্যা ২৪১টি।
কম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে কী পরিমাণ শেয়ার থাকতে হবে, সেই বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। আইনেরও কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় তালিকাভুক্ত কম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী শেয়ার বিক্রি করেছেন। পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক ধসের মধ্যেও অনেক উদ্যোক্তা পরিচালককে ঘোষণা দিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে দেখা গেছে। এতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন বাজার সংশ্লিষ্টরা ।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি হলে এর উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা (লকইন) থাকে। রাইট শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রেও উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রিতে এই নিষেধাজ্ঞা থাকে। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো উদ্যোক্তা বা পরিচালক তাঁর শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না। নির্ধারিত তিন বছর পার হলে উদ্যোক্তা পরিচালকরা ইচ্ছে করলে তাঁদের সব শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারেন। তবে উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির আগে স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) মাধ্যমে ঘোষণা দিতে হয়।
শেয়ারবাজারে বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের নূ্যনতম শেয়ার সংরক্ষণে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে এসইসি। ইতিমধ্যে একটি খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি কম্পানি আইন, সিকিউরিটিজ আইন বা অন্য কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, খতিয়ে দেখতে কমিশন আইন বিভাগ নির্দেশ দিয়েছে।
তবে আইন হওয়ার আগেই অনেক উদ্যোক্তা পরিচালক তাঁদের হাতের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। মন্দা অবস্থার মধ্যেই গত কয়েক মাস বিভিন্ন কম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়েছিল। তাঁদের শেয়ার বিক্রি ঠেকাতে ২১ সেপ্টেম্বর এসইসি নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বর্তমানে পরিচালকরা ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। তবে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগেই অনেক পরিচালক তাঁদের সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন।
ইনটেক অনলাইন লিমিটেডের কম্পানি সচিব মহিবুল ইসলাম বলেন, যেহেতু আইনগত কোনো বাধা নেই, সেহেতু কম্পানির পরিচালকরা আইন মেনেই পরিচালক হয়েছেন। মাত্র আড়াই শতাংশ শেয়ার হোল্ড করেও কম্পানির পরিচালকরা কিভাবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকেন, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, নৈতিকতার বিষয়টি এখানে কোনো বিষয় নয়। আইন মেনেই পরিচালকরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে কম্পানির বেশির ভাগ শেয়ার থাকতে হয়। আমাদের দেশে এখনো এই আইন তৈরি হয়নি। আর এই সুযোগে পরিচালকরা তাঁদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নূ্যনতম ৪০ শতাংশ শেয়ার পরিচালকদের হাতে থাকা প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কম্পানির পরিচালকদের হাতে নূ্যনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকা প্রয়োজন। তা না হলে তাঁরা যে কম্পানি চালাচ্ছেন, সেখানে তাঁদের দরদ থাকবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যাঁরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন, তাঁরা মালিক না হলে কম্পানির ভালো-মন্দে তাঁদের কোনো কিছু যায়-আসে না। কম্পানির পরিচালকদের নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার হোল্ড করতে বাধ্যবাধকতা থাকা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটা জিনিস মনে রাখতে হবে_পরিচালকরা ভালো না হলে কম্পানিও ভালোভাবে চলে না।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-রশিদ-চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনো শেয়ার না থাকলেও পরিচালকরা খবরদারি করছেন। আর যাঁদের হাতে বেশি শেয়ার, তাঁদের বলা হচ্ছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী! কম্পানির যে পরিচালকদের কাছে কোনো শেয়ার নেই, তাঁদের এখনই সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, যাঁরা শেয়ারের মালিক, তাঁদের হাতে কম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ছেড়ে দেওয়া উচিত। কোনো শেয়ার না থাকলেও পরিচালকরা পরিচালনা পর্ষদে বসে নানা কারসাজি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
৩০ শতাংশের কম শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে_এমন কম্পানির মধ্যে রয়েছে কে অ্যান্ড কিউ (৫.২২ শতাংশ), এপেঙ্ এডেলসি (৯.০৯ শতাংশ), ইউনাইটেড এয়ার (১৩ শতাংশ), বেঙ্মিকো (১৩.২৫ শতাংশ), মুন্নু জুটেক্স (২০.৩০ শতাংশ), সিনোবাংলা (২২.৫৯ শতাংশ), কনফিডেন্স সিমেন্ট (২৪.৪৪ শতাংশ)।
সিটি ব্যাংকের পরিচালকদের হাতে রয়েছে ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ১২.৮৮ শতাংশ। এবি ব্যাংকে উদ্যোক্তাদের অংশ ১৩.৯০ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকে ১৬.৭৫ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৮.৮৮ শতাংশ।
মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্সের পরিচালকরা মোট শেয়ারের ১৫ শতাংশের মালিক। বিজিআইসিতে পরিচালকদের শেয়ার ১৬.৮২ শতাংশ, গ্রিন ডেল্টায় ২২.৫২ এবং কর্ণফুলী ইনস্যুরেন্সে ২৩.১৫ শতাংশ। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগি্ন সিস্টেমের মাত্র ৫.২৯ শতাংশ, বিডিকমের ১৩.৩২ শতাংশ এবং আইএসএনের ১৯.৫৪ শতাংশের মালিক উদ্যোক্তা পরিচালকরা।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে আলোচিত কম্পানি বেঙ্মিকো ফার্মার মোট শেয়ারের ১২.৯৭ শতাংশের মালিক হচ্ছেন উদ্যোক্তা পরিচালকরা। এ ছাড়া অ্যাকটিভ ফাইনে উদ্যোক্তাদের মালিকানা ১৯.১০ শতাংশ, ন্যাশনাল পলিমারে ২২.৭৩ এবং সালভো কেমিক্যালে ২২.৬৯ শতাংশ। প্রকৌশল খাতে আজিজ পাইপের ১০.৮৬ শতাংশ ও বিডি ওয়েল্ডিংয়ে ১১.৩১ শতাংশ মালিকানা রয়েছে উদ্যোক্তাদের হাতে। ফাইন ফুডের মাত্র ৮.৪ শতাংশ ও ফুওয়াং ফুডের ১২.২৬ শতাংশ, মুন্নু সিরামিকের ১৫.৬২ ও ফুওয়াং সিরামিকের ১৭.১৫ শতাংশের মালিক উদ্যোক্তারা।
এসব কম্পানির সিংহভাগের মালিকানা রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। কম্পানির নীতিনির্ধারণে কোনো ধরনের অংশগ্রহণ না থাকায় পুঁজিবাজারে তাঁদের ও কম্পানির স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারী সংগঠনের নেতাদের।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×