somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যপ্রাচ্য গাদ্দাফি হত্যাকাণ্ড, সিরিয়ার চোখে

০১ লা নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গাদ্দাফি খুন হওয়ার দুই দিন আগে বৈরুতে বেশির ভাগ কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় অবিস্মরণীয় এক সংবাদ দেখলাম। গাদ্দাফি যখন সির্তে লুকিয়ে ছিলেন, সেই সময়টায় খোদ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে দাঁড়িয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, ‘আশা করছি, দ্রুতই তাঁকে ধরা যাবে এবং হত্যা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাতে আপনারা আর তাঁর ভয়ে ভীত না হন।’ খুবই বিরল বিবৃতি বিধায় আমি সংবাদটা কেটে রাখলাম, ‘দ্রুতই তাঁকে ধরা যাবে এবং হত্যা করা হবে।’ তারপর ন্যাটো তাঁর পলায়মান গাড়িবহরে বোমা ফেলল এবং বৃদ্ধ বালককে আহত অবস্থায় নর্দমার পাইপের ভেতর থেকে ধরে যা করার করা হলো।
এমন এক যুগে, যে যুগে যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতভাবে শত্রুনিধন করে চলেছে, সে সময় হিলারি ক্লিনটনের এই উক্তি লক্ষণীয়। অবশেষে তারা সত্য স্বীকার করল। প্রায়ই আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তর অথবা হোয়াইট হাউস থেকে বাখোয়াজি করা হয় যে কীভাবে তারা গাদ্দাফি বা বিন লাদেন বা অমুক-তমুককে ‘বিচারের মুখোমুখি’ করবে। তখনো আমরা জানি যে এর মানে কী। ব্যক্তিগতভাবে সাধু ওবামাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, কেউ এমন পরিণতি চায় না, কিন্তু গাদ্দাফির মৃত্যু দুনিয়ার ‘সব স্বৈরশাসকের জন্য একটা শিক্ষা’। এবং আমরা জানি যে তিনি কী বুঝিয়েছেন। মূলত এটা বলা হয়েছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের উদ্দেশে।
অতএব, আমি হাজির হলাম দামেস্কে এবং সিরীয়দের জিজ্ঞেস করলাম, পুরো ব্যাপারটা নিয়ে তারা কী ভাবছে। আমি যখন বললাম যে গাদ্দাফি বাতিকগ্রস্ত মানুষ, তারা পুরোদমে একমত হলো। কিন্তু সরাসরি সিরীয় নেতৃত্বের হয়ে কাজ করেন এমন এক খুবই উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা কিছুটা ভিন্ন সুরে জবাব দিলেন, ‘আমরা কোনো তুলনা করা পছন্দ করি না।’ কিন্তু গাদ্দাফি হত্যাকাণ্ডের গুরুতর দিকটা এই যে, ভবিষ্যতে পাশ্চাত্য বলতে থাকবে: ‘দেখো, লিবীয়দের এ কেমন আচরণ! দেখো, আরবরা কেমন! দেখো, মুসলিমরা কী করে!’ এটাকে ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। এটা গাদ্দাফির জন্য যতটা না, তার থেকে বেশি অপমানকর লিবীয়দের জন্য। সে জন্যই আমার ভয়, ভবিষ্যতে এই ঘটনাকে আমাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। এটাই আমার মূল দুশ্চিন্তা।
এ সপ্তাহেই সিরীয় টেলিভিশনে আমি বললাম যে গাদ্দাফি উন্মত্ত ছিলেন এবং—আর যা-ই ভাবুন না কেন—আসাদ তা নন। (স্বাভাবিকভাবেই) উপস্থাপক সোৎসাহে একমত হলেন। এর কিছু পরে যে সাংবাদিক আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, তাঁকে একটু ঝাড়লাম। হায় হায়, তিনি বললেন, তিনি ভেবেছিলেন শনিবারের রাতে প্রচারিতব্য ওই অনুষ্ঠানের সাবটাইটেল ও অনুবাদ করানো যায়নি, তাই হয়তো দেখানো যায়নি। হয়তো তিনি আবার আমার সাক্ষাৎকার নেবেন।
আরেকটি ঘটনায় সিরীয় ফার্স্ট লেডির ব্যক্তিগত সহকারী জানিয়েছেন, ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার একটি সংবাদে বাশার আল-আসাদের স্ত্রী কতটা ‘মর্মাহত’ হয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে প্রকাশিত ওই সংবাদে জানানো হয়েছিল, সিরীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নাকি ফার্স্ট লেডি ‘নীরব’ থাকেন। সেই খবরে দামেস্কের এক সাহায্য-কর্মকর্তার বরাত দেওয়া হয়েছিল; তিনি ফার্স্ট লেডির সঙ্গে সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে যখন তাঁকে হতাহতদের বিষয়ে বলা হয়, তখন ‘কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি’।
বলা বাহুল্য, আরব মিডিয়া খবরটি গোগ্রাসে তুলে নেয়, এর মধ্যে আসাদের চক্ষুশূল আল-জাজিরাও আছে। আর এখন সিরীয় আরব রেড ক্রিসেন্টের (সার্ক) সঙ্গে সেই বৈঠকের আরবি বিবরণ আমাকে দিলেন আসমা আল-আসাদের ব্যক্তিগত সহকারী। সেটা পড়া খুব দারুণ অভিজ্ঞতা। সার্কের স্বেচ্ছাসেবীরা আসমাকে বলেন যে সিরিয়াজুড়ে চেকপয়েন্টগুলোতে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে তারা ভালো আচরণ পেয়েছে, কারণ ‘তাদের নির্দিষ্ট নেতৃত্ব ছিল’। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থা ‘মুহাবাররাত’-এর নির্দিষ্ট নেতৃত্ব বা নীতি আছে বলে মনে হয়নি তাদের কাছে। তা ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যানবাহনের অপব্যবহারও হয়েছে তাদের দ্বারা। ‘তাদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এবং এর জন্য নাগরিকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।’ মিসেস আসাদকে বলা হয় সার্কের পক্ষে বিপজ্জনক এলাকায় কাজ করা এবং আহতদের নিয়ে আসা কতটা কঠিন কাজ।
সার্কের প্রতিবেদন বলছে, ‘মিসেস আসমা আমাদের কর্মীদের সমস্যাগুলো বুঝলেন বলে পরিষ্কারভাবে মনে হলো।’ এবং ‘মানবতা ও ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য সার্ক-কর্মীদের সেবামূলক প্রচেষ্টার সঙ্গে তিনি একাত্মতাও বোধ করেন...একই সঙ্গে তিনি তাঁদের কিছু কিছু দাবিকে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিলেন।’ মিসেস আসাদের ওই সাক্ষাৎকারটি ছিল ‘অনানুষ্ঠানিক’ এবং আলোচনাটি হয়েছিল ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ মনোভাবে।
সেই দিনের পরে সার্ক প্রতিবেদন বলছে, নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সার্ক-কর্মীদের প্রতি আচরণের উন্নতি দেখা গেছে। এর পরপরই সাপ্তাহিক সিরিয়াতে মিসেস আসাদকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি রেড ক্রিসেন্টের কর্মীদের বলেছেন যে তাঁরা যেন ‘এই সময়টাতে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও স্বাধীন থাকেন, এবং বিশেষ করে মানবিক প্রয়োজনগুলোতে মনোযোগী হন।’
সুতরাং বলা যায় না যে ফার্স্ট লেডি নির্বিকার ছিলেন। তিনি সাড়া দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর কণ্ঠ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কোনো নিন্দাবাদ উচ্চারিত হয়নি। অবশ্যই আসমা আল-আসাদের সমস্যা আমি দেখতে পাচ্ছি। যদি তিনি বেসামরিক নাগরিক হত্যার প্রতিবাদ করেন, তাহলে দুনিয়ার সংবাদপত্র ও টেলিভিশনগুলো অবশ্যই বলবে না যে মিসেস আসাদ মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তাদের বিরাট শিরোনামগুলো হবে রাজনৈতিক এবং সেখানে হয়তো লেখা থাকবে: ‘স্ত্রীর আক্রমণের মুখে সিরীয় প্রেসিডেন্ট’। আমার ভয় এটাই যে যুদ্ধের সময় সবার আগে সত্য পরাজিত হয়। তাই আপনি জিতবেন না, এমনকি যদি হন কোনো প্রেসিডেন্টের স্ত্রী।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×