somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চারপাশে চারিদিক-২

২৫ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Bismillahir Rahmanir Rahim

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

কুফা

আমার পরিচিত আনিতা। আনিতার স্বামী ব্যবসায়ী। আনিতার বিয়ের পর তার শ্বশুর বাড়ীর একজন বললো, এবার যদি তোমার স্বামীর নতুন ব্যবসাটা হয়ে যায় বুঝবো তুমি লক্ষী বউ। আর না হলে তুমি একটা কুফা। আনিতার মন খারাপ হয়ে যায়। সে সারাক্ষণ ভয়ে থাকে, মন খারাপ করে থাকে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না। যদি সত্যি ব্যবসাটা না হয়, তাহলে কি হবে ?

যাই হোক , এক সময় জানা গেলো ব্যবসাটা হয়নি। আনিতার প্রচন্ড মন খারাপ হোল। কেউ আর কিছু বলেনি তাকে। এরপর আরেকটা ব্যবসা, সেটাও হোল না। তারপরেরটাও হোল না। এর পরেরটাও হোল না। কেউ কিছু বলে না সরাসরি, কিন্তু আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় ‘তুমি কুফা’।

এখন আনিতা নিজেও বিশ্বাস করা শুরু করে যে, সে আসলেই কুফা। তার স্বামী যখন নতুন কোন ব্যবসার কথা বলে , সে তখন আর শুনতে চায় না। কি জানি, শুনলেই যদি আর ব্যবসাটা না হয় ! একটা সময় পরিবারের হাল ধরার জন্য আনিতা নিজেই উপার্জন শুরু করে। আর যখন তার আয় বাড়তে থাকলো, তখন সে চিন্তা করতে লাগলো যে, সে যদি সত্যি ‘কুফা’ হয় তাহলে তার ইনকামটা হয় কিভাবে !

এই কিছুদিন আগেও আমার পরিচিত একজন বললো, ‘ এই আশরাফুলটা একটা কুফা। দলে থাকলেই দল হারতে থাকে’।
কিন্তু তার দুদিন পরই আশরাফুল টেস্ট ম্যাচে ১৯০ রান করে ফেললো।আবার অনেক সময় আমরা বলি যে, এই জামাটা আমার জন্য কুফা। যেদিন জামাটা গায়ে দেই ,সেদিনই একটা বিপদ ঘটে। হয়তো কারো বাসায় ঢুকার সময় ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলো, আর অমনি বলা হলো ‘তুই একটা কুফা’। আবার বলি, ধুর, আজকের দিনটাই কুফা, কোন কাজ ঠিক মত হলো না। এমন হাজারোটা ঘটনা আমরা আমাদের চারপাশে দেখে থাকি।

আসলেই কি ‘কুফা’ বলে কিছু আছে? ইসলাম কি বলে এই ব্যাপারে ?

সূরা ফাতির এর ২ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন “ আল্লাহ্‌ মানব সম্প্রদায়কে কোন অনুগ্রহ দান করলে কেহ তা বন্ধ করতে পারে না। আবার যা তিনি বন্ধ করতে চান তিনি ব্যতীত কেহ তা প্রদান করতে পারে না । ক্ষমতায় তিনি পরাক্রমশালী , প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ”।
সূরা ফাতির এর ১৬০ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন, “ আল্লাহ্‌ যদি তোমাদের সাহায্য করেন, তবে কেহ-ই তোমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমাদের পরিত্যাগ করেন এর পরে আর কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করবে ? মুমিনগণ তাদের আনুগত্য আল্লাহ্‌র উপরে অর্পণ করুক”।

আবার সূরা তওবার ৫১ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন, “ বল, "আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যা নির্দিষ্ট করেছেন তা ব্যতীত আমাদের অন্য কিছু হবে না। তিনি আমাদের রক্ষাকর্তা এবং বিশ্বাসীরা তার উপরেই তাদের আনুগত্য স্থাপন করুক।"

আবার সূরা আন-আম এর ১৭ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন “যদি আল্লাহ্‌ তোমাকে নিদারুণ যন্ত্রনা দিয়ে স্পর্শ করেন, তিনি ব্যতীত আর কেউ তা দূর করতে পারবে না।যদি তিনি তোমাকে সুখ দ্বারা স্পর্শ করেন, সকল বিষয়ের উপর তিনিই তো ক্ষমতাবান”।

উপরের আয়াত গুলো পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে আল্লাহ্‌ সকল জীবের সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা। তাঁর করুণা ও দয়া সকল সৃষ্টিকে আপ্লুত করে থাকে। পৃথিবীতে এমন কেউ বা এমন কিছু নাই যা তার করুণা ধারাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে বা বান্দার জন্য তাঁর অনুগ্রহে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবেই। যদি তিনি কাউকে তাঁর অনুগ্রহ বঞ্চিত করতে চান, তবে পৃথিবীর কোনও শক্তির ক্ষমতা নাই তা পুণরুজ্জীবিত করা। একজন মুসলিম কে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে সমস্ত কিছুই পুর্বনির্ধারিত। তাহলে কোন ব্যক্তি বা বস্তু কোন ভাবেই নিজের বা অন্যের জন্য ‘কুফা’ বা ‘অশুভ’ অথবা ‘ব্যাড লাক’ হতে পারে না। পৃথিবীর সমস্ত কিছুই ঘটে আল্লাহ্‌র নির্দেশে। যদি কেউ কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে এবং সময় কে অশুভ বা কুফা হিসাবে মেনে নেয়, তাহলে সে শিরক করে ফেললো। কিভাবে শিরক হবে ? কারণ আল্লাহ্‌ যেহেতু ভাল মন্দ সব নিজেই দিয়ে থাকেন, কোন ব্যক্তি বা বস্তু সেই ভাল মন্দ দিতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি এটা বিশ্বাস করে ফেলে যে কোন ব্যক্তি বা বস্তু ভাল মন্দের কারণ হয় তখন সে ঐ ব্যক্তিকে বা বস্তুকে আল্লাহ্‌র সাথে তুলনা করে ফেললো বা আল্লাহ্‌র সমান করে ফেললো। নাউজুবিল্লাহ । আর এভাবেই শিরক করা হয়ে গেলো।

বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ইত্যাদি হাদীস শরীফ-এ বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সাঃ) বলেন “কোনো বিষয়কে অশুভ কুলক্ষণে মনে করো না, তবে শুভ লক্ষণ আছে। তখন কিছু সাহাবা (রাঃ) বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শুভ লক্ষণ কি? তখন তিনি বললেন, উত্তম কথা, যা তোমাদের মধ্য হতে কেউ শুনতে পায়।”

রাসুল (সাঃ) আরো বলেন, “যে কোনো বিষয়কেই অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তিনি এ বাক্যটি তিনবার উল্লেখ করেন।” যাই হোক, যে নামেই হোক, কুলক্ষন নেয়া শিরক। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “কুলক্ষন ধরা শিরক, অশুভ লক্ষন ধরা শিরক, অশুভ লক্ষন ধরা শিরক।” আবু দাউদ ৩৯১০, তিরমিযী ১৬১৪।

এখন অবস্থা দেখুন আমাদের সমাজের। আমরা কয়জন আছি যে এমন ধারণা পোষণ করি না ? নিজের অজান্তেই শিরকে লিপ্ত হচ্ছি।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×