somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা,মমতা,মৃদুছায়া...

৩১ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধা হয়ে এলো প্রায়,কিন্তু পিয়ালের আজ আর ঘরে ফিরতে মন চাইছে না,সেই কখন খেলতে বের হওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছে কিন্তু খেলার মাঠে না এসে বাসার ছাদের ট্যাংকির উপর শুয়ে আছে,কিছুক্ষন আগে রোদের তাপ ছিল এখন আর
নেই,তবে ট্যাঙ্কির ছাদটা এখনো অনেক গরম হয়ে আছে,কিন্তু পিয়ালের এসবের দিকে কোন খেয়াল নেই।কিছুক্ষন পর পরই চোখ ভিজে উঠছে,আবার মুছছে আবার ভিজে উঠছে...
ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া পিয়ালের আজ খুব মায়ের কথা মনে পড়ছে।
পিয়াল কোনভাবেই হিসেব মেলাতে পারেনা,সে তো কখনো আম্মুর কথার অবাধ্য হয়নি,আম্মু যখন যা বলতো তাই শুনতো,ক্লাসে সব সময় ভালো রেজাল্ট করতো,সময় মতো বাসায় ফিরতো এ নিয়ে আম্মু সবাইকে খুব খুশী হয়ে বলতো''আমার পিয়াল অনেক লক্ষী ছেলে''তাহলে আম্মু সেই লক্ষী ছেলেটাকে ছেড়ে কেন চলে গেলেন?আল্লাহ কেন নিয়ে গেলেন আম্মুকে?
আজ চারমাস হতে চলল,ওকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসার পথে রাস্তা পাড় হবার সময় ট্রাকের ধাক্কায় মারা গেছে পিয়ালের আম্মু,পিয়ালের এখনো সেই দৃশ্যগুলো মনে পড়ে...এক মুহুর্তেই কিভাবে সব শেষ হয়ে গেল,কিছু সময় আগেও আম্মু তার পাশেই ছিল তার হাত ধরে আর সেই আম্মু এক মুহুর্তের মধ্যেই কোথায় চলে গেলেন,পিয়াল কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে ওর আম্মু সত্যিই চলে গেছেন,আর কখনো ওকে নামাজের জন্য ডাকবে না,নাস্তা বানিয়ে দিবেন না,ওকে পড়তে বসাবেন না,স্কুলে নিয়ে যাবেন না...সারাটা দিন পিয়াল আম্মুর লাশটা জড়িয়ে ধরে বসেছিল,আর বলছিল,
''আম্মু,প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা,আমাকে রেখে এভাবে তুমি যেওনা,দেখো,আমি এবার ক্লাসে ফার্স্ট হবো,আম্মু তুমি কথা বলো,উঠো না হলে সবাই তোমাকে নিয়ে চলে যাবে,তখন আমি কাকে আম্মু ডাকবো?ও আম্মু,তুমি আমার লক্ষী আম্মু,প্লিজ উঠো,হে আল্লাহ,আপনি প্লিজ আমার আম্মুকে নিয়ে যাবেন না,আমার একটাই আম্মু,আমি আম্মুকে ছাড়া থাকতে পারবো না...''
কিন্তু না,শত আকুতি করার পরেও পিয়ালের আম্মু আর জেগে উঠেন নি,ওর মাথায় আর হাত বুলিয়ে দেননি।সেদিনের পর থেকে পিয়ালের ছোট্ট বুকটা কেন জানি সারাক্ষন জ্বলতে থাকে,ছটফট করতে থাকে সারাক্ষন,কিন্তু কাউকে বলতে পারেনা।বাসায় কতো মানুষ,আব্বু,দাদী,মেঝ ফুপ্পি,বড় মামী কেউ না কেউ থাকছেই কিন্তু পিয়ালের খালি মনে হয় কেউ নেই বাসায়,সব কিছু শূন্য লাগে শুধু...সেই একই বাসা,একই ঘর,একই আসবাব পত্র তবু খুব অচেনা লাগে,সারাক্ষন চুপ করে থাকে আর শুধু দেখে চারপাশ,আব্বু অফিস যাচ্ছেন পিয়ালের মনে হয় এই বুঝি আম্মু রান্না ঘর থেকে দৌড়ে আসবেন আব্বুকে লাঞ্চবক্স দিতে,স্কুলের সময় হয়ে গেছে পিয়াল ইচ্ছে করে দেরি করে আর ভাবে এই বুঝি আম্মু এসে ওকে তাড়া দিবেন স্কুলে যাওয়ার জন্য...কিন্তু না আম্মুকে আর খুঁজে পায় না পিয়াল।
আস্তে আস্তে আম্মুকে ছাড়া স্কুলে যেতে অভ্যস্থ হচ্ছে পিয়াল,একাই নাস্তা করে এখন,একাই টিচারের বাসায় পড়তে যায়,নিজে থেকেই নামাজ পড়তে চলে যায়,রাতে ঘুম না আসলে আব্বুর পাশে যেয়ে শুয়ে থাকে,আব্বুর বুকে মাথা রেখে কাঁদে।পিয়াল বুঝে আব্বু নিজেও কাঁদেন,ও দেখেছে আম্মু চলে যাবার পর আব্বু অনেক নীরব হয়ে গেছেন,আব্বুর চোখেও পিয়াল ওর মতই শূন্যতা দেখতে পায়,আর তাই তো আব্বুর সাথে বেশি থাকে পিয়াল,ও চায় না আব্বু ওর মতো নিজেকে একা ভাবুক,মাঝে মাঝে রাতে যখন আব্বু ল্যাপটপে কাজ করে ও নিজে বুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে আব্বুর জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসে,যেভাবে আম্মু করতেন। পিয়াল আড়াল থেকে দেখে আব্বু চোখ মুছতে মুছতে সেই কফি খাচ্ছেন।তা দেখে পিয়ালের মনটা ভরে যায়...
আজ ক'দিন ধরেই পিয়াল কথাটা শুনছে,দাদী,ফুপ্পি আব্বুকে কার যেন ছবি দেখাচ্ছে আর আড়ালে ডেকে নিয়ে কি যেন বুঝাচ্ছে, পিয়াল খেয়াল করেও করছেনা,হবে হয়তো কোন জরুরী কিছু,কিন্তু আজকে সকালে যখন দাদী ওকে ডেকে বললেন,
--পিয়াল,তুই তো এখন বড় হয়েছিস,সব বুঝিস,তোদের বাড়িটা তো একদম খালি হয়ে গেল,আমি আর ক'দিন তোর কি মনে হয় না তোদের সংসার দেখাশুনা করার জন্য একজন দরকার?''
পিয়াল কিছু না বুঝেই বলে ফেলে।
--কেন?জুলেখা বুয়া তো আছেই,সে তো অনেক দিন ধরে আমাদের বাসা দেখাশুনা করছেন।
--আরে না দাদু,আমি তার কথা বলছি না,আমি ঘরের গিন্নীর কথা বলছি,আচ্ছা সোজা করে বলি,আমি তোর ফুপ্পিরা আর চাচ্চু,মামারা মিলে ঠিক করেছি তোর জন্য একটা আম্মু এনে দিব। তোর দেখাশুনার জন্য,তোর আব্বুর জন্য,তুই কি বলিস?হ্যাঁ জানি প্রথমে একটু মানতে কষ্ট হবে কিন্তু ক'দিন পর দেখবি ঠিক হয়ে গেছে।
পিয়ালের মনে হল সারা দুনিয়াটা মনে হয় সমানে কাঁপছে...কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে...এসব কি বলছে দাদী!!এটা কি করে সম্ভব?
পিয়ালের ভেতর থেকে কেউ যেন চিৎকার করে বলছে,না এটা হতে পারে না,কিছুতেই না...দুনিয়ার অন্য কেউ আমার আম্মু হতে পারে না...কোন দিন না...''পিয়াল এক দৌড়ে আব্বুর ঘরে গেল কিন্তু যেয়ে দেখে আব্বু নেই অফিসে চলে গেছেন,পাগলের মতো আলমারী খুঁজে আম্মুর ছবি বের করে,গত চারমাস ধরে জমিয়ে রাখা কান্না যেন প্রবল ভাবে ওর ছোট্ট বুকে ধাক্কা দেয়।
আজ আর স্কুলে যাওয়া হয়নি পিয়ালের,সারা দিন আম্মুর ছবি,আম্মুর শাড়ি,কসমেটিকস আম্মুর সব কিছুকে একসাথে করে সেগুলো সামনে নিয়ে বসেছিল রুমের দরজা লাগিয়ে।কিছুই খায়নি সারাদিন।দাদী,ফুপ্পি অনেক ডাকাডাকি করেও লাভ হয়নি।
দাদী ভয়ে আব্বুকে ফোন করেন নি,তাহলে আব্বু মহা ক্ষেপে যাবেন।বিকেলের দিকে বের হয়ে ছাদে এসে বসে আছে পিয়াল।
একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর অবুঝের মতো অভিমানী হয়ে কাঁদছে।মাগরিবের আযান হচ্ছে,কিন্তু পিয়ালের ঊঠতে ইচ্ছে করছে না,ইচ্ছে করছে না বাসায় যেতে...কি করবে আর ঐ বাসায় যেয়ে?ক'দিন পর সেখানে নতুন কেউ আসবে আর পুরনো হয়ে যাবে সে,স্মৃতি নিয়ে পড়ে থাকবে দিনের পর দিন একাকী।আব্বুর কি তার কথা ভাবা উচিত না ওর মতো করে?আব্বুর কি ওকে একবার জিজ্ঞেস করা উচিত না?যে ও কি চায়?এখন তো আব্বুই ওর সব,কিন্তু
পিয়াল জানেনা আব্বু কি করবে...সবার মতো তিনিও কি বদলে যাবেন?নাকি ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর দিয়ে ওর কষ্ট ভুলিয়ে দিবেন...জানেনা পিয়াল...
পর পর এতগুলো ধাক্কায় সে কি হারিয়ে যাবে নাকি পাল ছাড়া নৌকার মত ভেসে চলে যাবে...তা জানেনা পিয়াল...সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে আর একবার আকাশের দিকে তাকায় পিয়াল,
নাহ,আম্মুকে দেখতে পায় না...
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১০:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×