somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এভাবে আর কতদিন : শিক্ষাই কি যত নষ্টের মূল?

২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা না করেই আসুন জেনে নিই কিছু খন্ডচিত্র।

প্রথমেই বলি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে ছোট-খাট একটা টাকার খেলা চলে। লিখিত পরীক্ষার উত্তীর্ণ হবার পরে ভাইবা এর সময় অনেককেই ৫০হাজার থেকে ১লক্ষ টাকা দিতে দেখা যায়। তবে না দিয়েও অনেকে উত্তীর্ণ হন। আবার অনেকে টাকা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন। লিখিত পরীক্ষায়ও নানা অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করা হয়ে থাকে।


বিসিএস পরীক্ষায়ও চলে নানান দুর্নীতি। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা দলীয় নিয়োগ। কিছু কিছু খাতে দুর্নীতি হওয়াতো অলিখিত সংবিধান। কেউ কেউ আছেন যারা ঘুষ খাওয়ার জন্য বিসিএস এ উত্তীর্ণ হবার চেষ্টা করে। আমাদের দেশে অনেকের চিন্তাই এমন থাকেযে টাকা দিয়ে বিসিএস এ উত্তীর্ণ হব, আর এই টাকা তুলবো ঘুষ খেয়ে। সচিবালয়ে দেখা যায়যে প্রতিবছর অনেক লোককে ওএসডি করা হয়। এটি থেকেই বোঝা যায়যে এখানে কতটা দলীয়করণ রয়েছে।



সরকারি অফিসসমূহে দুর্নীতি অনেক রকম। ঘুষ তার একটি প্রধান মাধ্যম। আমার একটি সাধারণ অভিজ্ঞতার কথা বলি। ২০০৯ সালে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম জমা দিতে গিয়ে দেখা যায় যে একজনের ফর্ম অন্যজন জমা দেয়ার নিয়ম নাই। কিন্তু ৫০টাকা দিলে ফর্ম জমা নেয়া হচ্ছে। প্রতিবছরই এমন চিত্র দেখা যেত। অনলাইন ব্যবস্থার কারনে এটি দূরীভুত হয়েছে যদিও।



ভার্সিটি সমূহেও চলে নানান দুর্নীতি। বিশেষ করে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে চলে টাকা এবং দলীয়করণের খেলা। সুপারিশের মাধ্যমে নিয়োগ পান কমযোগ্য অনেক শিক্ষক, ল্যাব সহকারী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে পত্রিকায় এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিল। পদ না থাকলেও নিয়োগ চলার কথাও শোনা যায়। উপাচার্য পরিবর্তন হল আর একটি প্রমাণ দূর্ণীতি কিংবা দলীয়করণের। প্রকাশ্যেই সরকার দলীয় উপাচার্য করা হয়ে থাকে।



সর্বশেষ আর একটি চিত্র। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে হল বরাদ্ধ নিয়ে চলে নানান দূর্ণীতি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর চিত্র দেখা যাক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে থাকার জন্য রাজনীতি করা আবশ্যক। রাজনীতি না করলে সিট বরাদ্ব পেলেও থাকতে হয় হলের বাইরে। তাই ৩য়-৪র্থ বর্ষে পড়ার পরেও রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণে অনেক কষ্ট সহ্য করে থাকতে হয় মেসে।



উপরের যে সব চিত্র বললাম তা আমাদের দেশের অল্প কিছু চিত্র মাত্র। এরকম সর্বক্ষেত্রে দেখা যায়। আমরা সবাই এই দুর্নীতিগুলোর কথা জানি কিংবা হয়তো নিজেও করে থাকি। জানার পরেও আমরা চুপ থাকি। মেনে নিই কিংবা আমাদের মনে হয়না এইসব যে দুর্নীতি। শুধুমাত্র দুর্নীতির কারণে সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানকে লাভ করতে দেখা যায় না।



আমার প্রশ্ন হল, শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কি?



আজকে আমাদের দেশেতো শিক্ষাই দুর্নীতি শিখাচ্ছে। ছাত্র জীবনে আমাদের শেখানো হচ্ছে দুর্নীতি করতে হবে, যদি না করা যায় তাহলে সহ্য করতে হবে। কেননা আমাদের দেশে দুর্নীতি-ই হচ্ছে নীতি।শিক্ষক যেখানে শেখাবে মনুষ্যত্ব শেখানে তাদের নিয়োগ পেতে হয় দুর্নীতির মাধ্যমে। দুর্নীতি দিয়ে শুরু হচ্ছে আমাদের অনেকের কর্মজীবন।



খুবই অবাক হতে হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাফর ইকবাল স্যারের মত একজন মানুষ থাকতেও কেন শিক্ষার্থীদের কতিপয় ছাত্রনেতার জন্যে হলের বাইরে থাকতে হয়! উনিও কি রাজনীতির হতে বন্ধী?



শিক্ষাই নাকি মানুষকে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য শেখায়। কিন্তু আমাদের দেশে সকল বড় রকমের দুর্নীতি করে থাকেন এই শিক্ষিত মানুষেরাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে দেখতে হয় কিভাবে দুর্নীতি করতে হবে। দুর্নীতির প্রতিবাদ যেখানে করবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেখানেই তারাই দুর্নীতির ধারক এবং বাহক।



আমাদের আজ চোখের পর্দা নেই। শিক্ষিত হতে গিয়ে আমরা সবার আগে বিসর্জন দিচ্ছি এই চোখের পর্দাকে। ভাবতে অদ্ভুত লাগে যেসব ছাত্র রাজনীতি করে তারা তাদের নেতাদের দুর্নীতির কথা অবহিত থাকলেও তাদের নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছে। কিন্তু কেন এই মেনে নেয়া? দুর্নীতি করার শিক্ষা কিংবা অযোগ্যদের কথা মেনে চলার শিক্ষা কি এখানেই পাচ্ছিনা আমরা?



পত্রিকাগুলো আজ নিরপেক্ষতার নামে পক্ষপাতের চরম পারাকাষ্ঠা প্রদর্শন করছে। পরিমল, পারসোনার ঘটনা থেকে তা সহজে বোঝা যায়। তার উপর ভারতের সাথে নানা চুক্তির ব্যাপারগুলোও পত্রিকায় ফুটে উঠেনি। ফলে আমরা অন্ধকারে থাকছি। পত্রিকাগুলো অবশ্যই নানা জ্ঞানীগুণী মানুষ কর্তৃক পরিচালিত হয়। পত্রিকাগুলোর ব্যাবহারও আমাদের শিক্ষা দেয়যে অন্যায়কে দেখেও না দেখতে হবে। অন্যায় করা আর সহ্য করা সমান অপরাধ বলে পড়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হয় অন্যায় করা যেমন অনেক বড় গুন,তেমনি সহ্য করা আরো বড় গুন। কেননা আমাদের দেশে এই দুই শ্রেণীর মানুষকেই সফলতার আসনে দেখি আমরা।



বিসিএসের মাধ্যমে আমাদের দেশে সবচেয়ে যোগ্য এবং শিক্ষিত মানুষদের দেশের নানা কাজে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে বলে আমরা জানি। কিন্তু আমাদের দেশে ঘুষ যারা নিচ্ছে, এবং প্রশাসনে যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদের অনেকেই এই বিসিএস উত্তীর্ণ প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা।



পুলিশে অশিক্ষিত কেউ নিয়োগ প্রাপ্ত হয় বলে জানা নেই আমার। কিন্তু তাদের ব্যাবহার দেখে আসলেই বোঝা মুশকিলযে তারা শিক্ষিত কি না! গাড়িতে চড়ার সময় দেখি চালক শ্রেণী অহরহ গালি দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। সাধারণ মানুষ পুলিশকে ভয় পায়। পুলিশ নাকি নেতাদের পকেটে থাকে-এই কথা আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু একদিন নিজের চোখে দেখে এটি উপলব্ধি করলাম। পুলিশের কিছু কর্মকাণ্ড এটিকে আরো জোরালোভাবে প্রমাণ করে। মনে পড়ে নোয়াখালীতে মানুষের হাতে ছেড়ে দেয়া সেই ছেলেটির কথা, লিমনের কথা।



আর কত? শিক্ষিতরা যদি এভাবে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন তাহলে কি প্রয়োজন এই শিক্ষার? শিক্ষার মুখোশে গড়ে উঠছে এক একজন বিষধর সর্প। কে দায়ী এর জন্য? সরকার, শিক্ষা, সমাজ না আমরা? আর কতদিন এইসব দেখতে হবে? আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়না। কেননা ওখানেই গেলে বোঝা যায় দুর্নীতির কাছে আমরা কতটা অসহায়। যেখানে আমরা শিখবো কিভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ করে শিক্ষার আলো জ্বালতে হবে, সেখানে আমরা শিখছি কিভাবে দুর্নীতির জয় হচ্ছে, কিভাবে দুর্নীতি করতে হবে। দেখছি কয়েকজন ভালো মানুষ কিভাবে অসহায় হয়ে পড়ে আছে প্রশাসনের কাছে? তাদের অসহায়ত্ব দেখে মনে হয় তারাই বুঝি কিছু শিক্ষা নিতে পারেনি, তারাই বোধহয় অযোগ্য আমাদের সমাজে। ভাবি ভবিষ্যতে চাকুরী করতে গিয়ে আমাদের সহ্য করতে হবে আরও অনেক দুর্নীতি, তখন হয়তো মনে হবে আমাদের শিক্ষাগ্রহণ-ই আমাদের স্বাধীনতা হারানোর কারণ।



---------মো: ইয়াসিন কবির।
খবর২৪.কম এ প্রকাশিত।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×