(বাংলাদেশে ২০০১-এর নির্বাচনের পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর চালানো হয় নৃংশস নির্যাতন। আমি এ ব্যাপারে তখন-স্বাভাবিকভাবেই, বয়স ছিল দশ বছর-কিছুই জানতাম না। যখন একটু বড় হবার পর সেই অবিশ্বাস্য ঘটনাগুলো জানলাম, তখন মনে হল "সংখ্যাগুরু" সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে আমার প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত আমার ধর্মভাইদের কৃতকর্মের জন্য। কিন্তু যেই সাত বছরের মেয়েটির উপর দলবেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল মধ্যযুগের অন্ধকারেরা, যার অসহায় মা সেই শূয়োরের বাচ্চাদের পা ধরে বলেছিলেন কাঁদতে কাঁদতে, "আমার মাইয়াডা ছোড, ওর এহনো ... শুরু হয় নাই; ও সইজ্য করতে পারবো না, তোমরা একজন একজন কইরা যাও"; তার কাছে কোন মুখে ক্ষমা চাইব !!! তাই এই কবিতাটি লিখেছিলাম ব্যক্তিগত প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে। জানি না আমার সেই বোনগুলি কেমন আছে; যারা বেঁচে আছে, তারা কি ভালো আছে ??? জানি না।)
১
সুবর্ণাদির অনেক রকম স্বপ্ন ছিল
স্বপ্ন ছিল খুব সাধারণ খুব দামি নয়
স্বপ্ন ছিল ছুটির কালে গ্রামের বাড়ি
টিনের চালে নীল বিজলি আর বৃষ্টির
যুগলবন্দি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া
স্বপ্ন ছিল একলা কোনো বিকেল বেলায়
একা একাই দুপুর দেখা ছাদের রেলিং
স্বপ্ন ছিল কুলফি মালাই স্বপ্ন ছিল
হাওয়াই মিঠাই গোলাপি রঙ মিষ্টি ভীষণ
আকাশজোড়া মেঘের ছায়ায় স্বপ্ন ছিল
আঙুল ছোঁয়ায় জলতরঙ্গ শিহরণের
স্বপ্ন ছিল একটা আপন মানুষ পাবার
সুবর্ণাদির স্বপ্ন ছিল যেমন ইচ্ছে তেমনি বাঁচার
স্বপ্ন ছিল হাজার হাজার !!!
২
একদিন এক অন্ধকারের সময় এল
উৎসবটার আগেই এল হিংস্র অসুর
মা দুর্গা কোথায় তুমি দ্যাখো তোমার
মেয়েটি আজ আটকে গেছে গোলকধাঁধায়
এলোমেলো পড়ার টেবিল খাতা কলম
ছেঁড়া শাড়ি অশ্রু গালে গড়ায় বৃথাই
মুখে গামছা চিৎকারও যেন যায় না শোনা
বন্ধ দরজা নিশ্বাসেরও নেই কিছু নেই
একের পর এক জানোয়ারের আঁচড় কামড়
রক্তে ভাসে শাদা চাদর রক্তে ভাসে
মানবতার মহান শ্লোগান সব অভিনয়
সুবর্ণাদির স্বপ্নগুলো কেমন সহজ হারিয়ে গেছে
আমার বোনটি বেঁচে আছে শুনতে তো পাই
আমার বোনটি বেঁচে আছে, ভালো কি আছে ???