somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইটি ভিলেজ স্থাপন কর্মসূচী কি এক অধরা স্বপ্ন?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর-পরই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি করার কাজে হাত দেয়। এরই অংশ হিসেবে ২৩১ দশমিক ৬ একর জমির উপরে গাজীপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ যথাসময়ে শেষ করে একটি প্রযুক্তি-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। পাশাপাশি সরকার ঢাকা মহাখালীর কড়াইল বস্তির ৪৭ একর জমি উদ্ধার করে এর উপরে ১টি সহ ৬ বিভাগীয় শহরে ৬টি আইটি ভিলেজ বা আইসিটি পার্ক স্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সাথে কাওরান বাজারে আইসিটি ইনকিউবেটর, জনতা টাওয়ার ও বিসিসি ভবনে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে যশোরে আরও একটি আইটি ভিলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। আইটি ভিলেজ স্থাপনে মোট ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের কাজ ২০০৯ সালে শুরু হয়ে তা শেষ হবার কথা ২০১৩ সালের মধ্যে। অন্যদিকে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শুরু হওয়া দেশের একমাত্র হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হবার কথা ছিল ২০১০ সালের মধ্যেই। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়,হাইটেক পার্ক দ্রুত চালু করাসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উল্লেখিত প্রকল্প গুলির ভবিষ্যৎ এখনো তিমির অন্ধকারেই বলে মনে হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য সকল ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্বলিত হাইটেক পার্ক কবে নাগাদ যাত্রা শুরু করবে তা এখনো অনিশ্চিত।
সরকারের আইটি ভিলেজ তথা আইসিটি পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত এখনো পর্যন্ত কাগজ-কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আইটি ভিলেজের মোট ৭ টি প্রকল্পের মধ্যে একমাত্র যশোরের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। বাকি গুলির জন্য এখন পর্যন্ত কোন প্রকল্প পত্রই তৈরি করা হয়নি। বিভাগীয় শহরে আইটি ভিলেজ স্থাপনের জন্য সব থেকে বেশী সংকট দেখা দিয়েছে স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে। প্রাথমিক ভাবে এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা বাদে প্রতিটির ক্ষেত্রে ৫ একর পরিমাণ জমির প্রয়োজন নির্ধারিত হয়। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিভাগীয় শহরগুলিতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে একটি উপযুক্ত স্থানে এই প্রয়োজনীয় ৫ একর জমির নিশ্চয়তা পাচ্ছেনা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। যশোর প্রকল্পের যা অগ্রগতি তা প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ জনাব এন আই খানের অনেকটা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাতেই সম্ভব হয়েছে। খুলনাতে আই টি ভিলেজের জন্য সম্ভাব্য স্থান নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হচ্ছে না। এরই মধ্যে তিনবার স্থান নির্বাচনের চেষ্টা করেও প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ বা দান হিসেবে পাওয়া সম্ভব হয়নি। সবশেষে নগরীর শিরোমণি অঞ্চলে ক্যাবল শিল্পের অব্যবহৃত জমিতে আইটি ভিলেজ স্থাপনের জন্য জায়গা চেয়েও পাওয়া যায়নি। এ অঞ্চলে বাড়ি প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা জনাব মশিউর রহমান এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ক্যাবল ফ্যাক্টরি থেকে মাত্র ৩(তিন) একর জমি হস্তান্তরের অনুরোধ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। প্রথমে সম্মত হলেও পরবর্তীতে ঐ স্থানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় নিজেদের ফাইবার অপটিক ক্যাবল তৈরির একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করবে বলে এই জায়গা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। স্থান নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আরও একধাপ পিছিয়ে আছে রাজশাহী আইটি ভিলেজ প্রকল্প। এখানেও সব কিছু ঘুর-পাক খাচ্ছে স্থান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। রাজশাহীতে আইসিটি শিল্প প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এই অগ্রাধিকার প্রকল্পের জন্য মাত্র ৫ একর পরিমাণ জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে! অথচ এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটসহ এখানের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর পাশ করা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটা বড় ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, গড়ে উঠবে তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান।
সরকারের একটি নীতি রয়েছে কৃষি বা আবাদি জমি সম্ভব কম অধিগ্রহণ করার ব্যাপারে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অনেক সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ করা রয়েছে। বহুকাল ধরেই অব্যবহৃত পড়ে থাকা এই অতিরিক্ত জমি থেকে মাত্র ৫ একর পরিমাণে জমি হস্তান্তর করলেই আইটি ভিলেজ স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে অন্তত একটি সংকট দূর হয়। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গতিশীলতার অভাব ও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের টানাটানির কারনে সরকারি জমি ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছেনা।
প্রতিবেশী দেশ ভারত সফটওয়্যার রপ্তানীসহ আইসিটি শিল্পের বিকাশে সকল প্রকার সহযোগিতার উদ্দেশ্যে সরকারী ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন রাজ্যে গড়ে তুলেছে ৪৫ টি আইটি পার্ক, যা সে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সকল প্রকার সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে সফটওয়্যার রপ্তানি ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে আসছে। আমাদের দেশের তরুণ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ প্রজন্ম ইতিমধ্যে এই খাতে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছে। এখন শুধু প্রয়োজন তাদেরকে প্রযুক্তি-বান্ধব অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করা। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে সরকারের আইটি ভিলেজ স্থাপন কর্মসূচীর আদৌ কি বাস্তবায়ন হবে? না-কি রয়ে যাবে এক অধরা স্বপ্ন হয়েই? সরকার তথা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকারদের কাছে এ এক জিজ্ঞাসা।

লেখকঃ
শিক্ষক,
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×