somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না...

২৮ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাত বাড়ালেই সবুজ ছোঁয়া যায়। যেনো সবুজের রাজ্যে হাঁটাচলা আর বিচরণ। যেতে যেতে এক চিলতে প্রাকৃতিক সুগন্ধি বার বার নাকে এসে ঝাপটা দিয়ে যায়। পাতা বা কুঁড়ির ডগায় শীতের শিশির বিন্দু। সকালের কুয়াশায় এক রূপ আর বিকেলে আরেক রূপ। এই দৃশ্য বিরল। থরে থরে সাজিয়ে থাকা পাতা ও সবুজ গালিচার মধ্যে শুয়ে আছেন বাঙালির গর্ব, স্বাধীনতার গর্ব, লক্ষ-কোটি জনতার প্রাণের বীর বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান।

শুক্রবার শ্রেষ্ঠ বীর তৎকালীন এক নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য ঝিনাইদহসহ বাঙালি জাতির গর্ব বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের চল্লিশতম মৃত্যুবার্ষিকী। একাত্তর সালের এই দিনে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তচৌকিতে তিনি শহীদ হন।

হামিদুর রহমান ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামের অককাশ আলি ও কায়সুননেছার ছেলে। তিনি একাত্তর সালে কিছু সময়ের জন্য আনসার বাহিনীতে চাকরি করেন এবং একই বছর ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন এক নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক পদে যোগ দেন।

‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না’ গানের এই চরণ মনে করিয়ে দেয় বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের। সারাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নাম না জানা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর, গণকবর, শহীদ মিনার ও স্মৃতিস্তম্ভ। তেমনি এক বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলই সীমান্তে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ।

ধলই সীমান্তে হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধটির তিনদিকেই চা গাছ, সারিসারি বৃক্ষের সমাহার। স্মৃতিসৌধের সম্মুখে ১৯৯২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ১৭ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সৌজন্যে একটি বীরশ্রেষ্ঠ সরণিও নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া এখানে সীমান্ত যাত্রী অবকাশ নামে একটি সুদৃশ্য ছাউনিও রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশে ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে যুদ্ধ হলেও এগুলো ভারতের ত্রিপুরা, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হত। ১১টি সেক্টরের মাঝে ৪ নং সেক্টরের মেজর জেনারেল সিআর দত্তের অধীনে ছিল ত্রিপুরার কমলপুর সাব-সেক্টর। এ সাব-সেক্টরে অধিনায়ক ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব: ) সাজ্জাদুর রহমান।

বুধবার ক্যাপ্টেন (অব. ) সাজ্জাদুর রহমানের শমসেরনগরস্থ সিংরাউলি গ্রামের বাড়িতে গেলে সেদিনের যুদ্ধের স্মৃতি বাংলানিউজকে জানান এভাবে: মেজর জেনারেল সিআর দত্তের অধীনে ত্রিপুরার কমলপুর সাব-সেক্টর ছিল। ২৪ অক্টোবর ১৯৭১ সালের ভোররাতে ২৮ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) ফাঁড়ির সামনে পাক সেনাবাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়।

তিনি জানান, ধলই সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের এই প্লাটুনের অ্যাসল্ট অফিসার ছিলেন মেজর (অব: ) কাইয়ূম চৌধুরী। আর সিপাহী হামিদুর রহমান ছিলেন কাইয়ূম চৌধুরীর রানার। টানা চারদিনেও পাকিস্থানি বাহিনীকে যখন পিছু হটাতে পারছিল না মুক্তিযোদ্ধারা। তখন মেজরের নির্দেশে সিপাহী হামিদুর রহমান ২৮ অক্টোবর ঘন কুয়াশা ও প্রবল গুলি বর্ষণের মধ্যে প্রায় আধা কিলোমিটার গ্রেনেড হাতে করে ধলই ইপিআর ক্যাম্পে পাকিস্থানি বাংকারের উপর ছুড়ে মারেন। গ্রেনেডের তেজস্ক্রিয়তায় বাংকার উড়ে যাবার পর পাকিস্থানি সেনাদের একটি গুলি পেছন দিক থেকে এসে শরীরে লাগে সিপাহী হামিদুর রহমানের। সেদিন দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করলেও নিজের শরীর রক্ষা করতে পারেননি। কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঝরে পড়েন। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধারা হামিদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২৫/৩০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ত্রিপুরার আমবাসায় নিয়ে তাকে দাফন করেছিলেন।

ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি; লক্ষ লক্ষ লোক নিহত হয়েছে। সেই সত্যিকারের স্বাধীনতা আজও আমরা পেয়েছি কি না সন্দেহ রয়েছে।’

বিগত চার দলীয় জোর সরকার আমলে কমলগঞ্জের সাংবাদিকদের লিখিত আবেদনে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ধলই সীমান্তে যেখানে হামিদুর শহীদ হয়েছিলেন সেখানেই ২০০৩ সালের ৩০ এপ্রিল ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে ওখানেই স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়।




সুত্র- Felani : Resistance Starts From Here (ফেলানী : প্রতিরোধের শুরু এখানেই)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:১৪
২৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×