ওহে মম নিঃসঙ্গ শয্যার একমাত্র সাথী,
সুবালিশ মোর! সেই সব যুবা, যারা বিষাদে কাটায় রাতি
বধূহীন নিদ্রাহীন অশান্তির ঘরে,
তোমারে সৃজিলা প্রভূ তাহাদের তরে
সহজেই যাতে তারা সব কষ্ট যেতে পারে ভুলি
এবং করিতে পারে তব সাথে হর্ষে কোলাকুলি!
কিসের বা কষ্ট তাহে, কিসের বিষাদ
যদিও এ ওষ্ঠ মম না পারিল নিতে কোনো সুন্দরীর অধরের স্বাদ?
নাহি তাতে খেদ মোর, তাহা লাগি এতটুকু দুঃখ না করি
আমার তো আছো তুমি সুকোমল স্বাস্থ্যবতী বালিশ-সুন্দরী!
যবে নিশি আসে নামি পৃথিবীর ’পরে;
প্রকৃতির তুলি দিয়া আঁকাআঁকি করে
মেদিনী গগন আর জলধির মুখ;
সেই ক্ষণে, মম এই তাপিত অন্তরে
তুমি শুধু ঢালি’ দাও কী মধুর সুখ!
এমন দয়াদ্র বন্ধু, বালিশ আমার,
এই ধরাধামে দুটি আছে বলো কার!
যদিও এ শয্যা ’পরে পড়েনি লুটিয়ে কোনো উর্বশীর রূপ,
শোয়নি সুন্দরী কোনো, স্বর্গধাম মোর প্রতি বিরাগ বিরূপ;
কিন্তু তাতে কষ্ট কী বা—সব কষ্ট সব দুঃখবিষ
তব স্পর্শ দিয়া ঘুচায়ে দিয়াছ তুমি, হে আমার রূপসী বালিশ!
কাহারও প্রেমিক আমি নই, কাহারে না আমি ভালোবাসি;
একদা যদিও ঢের বাসিতাম ভালো, বন্ধুগণে—সেই প্রেম হইয়াছে বাসি;
কত মানবিরে, আহা! দিয়াছি হৃদয়, কী দিয়াছে তারা বিনিময়ে?
দিয়াছে মৃত্যুর জ্বালা, দুঃখশোক ভাঙা সে-হৃদয়ে!
জীবন পেয়ালা আজি হয়ে গেছে পরিপূর্ণ শুধু তিক্ততায়—
কারণ তাহারা কেউ বাসে নাই ভালো; তবু এ ধরায়
একজন তো আছে মোর বেদনার সাথী
সুন্দরী, বিশ্বস্ত, যার সনে মহানন্দে কেটে যায় রাতি!
সুপ্রিয় বালিশ মোর, বুকে এস, বক্ষমাঝে ঢালো সুখমধু;
ধিক সব মানবিকে! আজ থেকে তুমি হও সম্রাজ্ঞী আমার, জীবনের একমাত্র বধূ ।
মূল কবিতা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত
ইংরেজি থেকে অনুবাদ : সায়ীদ আবুবকর