somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীবাসী রয়েছেন একেবারেই সৌভাগ্যের সুতোর ওপর, প্রতীকীভাবে বললে— সৃষ্টিকর্তার দয়ায়। এ নাকি অতিবড় অপ্রিয় সত্য।

২৫ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আকাশ থেকে হঠাত্ই নেমে এলো সাক্ষাত্ মৃত্যুদূত। হাজার হাজার পারমাণবিক বোমা যেন এক সঙ্গে বিস্ফোরিত হলো। শুধু মানব সভ্যতা নয়, নিমেষে ধ্বংস হয়ে গেলো প্রাণকূলের প্রায় সবটুকু। এমন দুর্ভাগ্যের সাক্ষী আমাদের হতেই হতে পারে, কবে কখন— তা কেউ বলতে পারে না। এবং তা প্রতিহত করার সাধ্যও খুব সামান্যই আছে মানুষের। কল্পবিজ্ঞানের রোমহর্ষক গল্পের মতো শোনালেও গত সপ্তাহে নাসা'র প্রধান ঠিক এই সুরেই কথা বলেছেন।



আমাদের এ পৃথিবী ভাসছে অসীম শূন্যের ভেতর। প্রতিনিয়ত মহাজাগতিক টুকরো বস্তু আছড়ে পড়ছে পৃথিবীর ওপর। কিন্তু যেহেতু সেগুলো আকারে নগণ্য, তাই তা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে বায়ুমণ্ডলেই। অথচ অসংখ্য ভাসমান বস্তু, উল্কা বা গ্রহাণু— যে নামেই ডাকি না কেন, প্রতিনিয়ত পৃথিবীর কান ঘেঁষে চলে যাচ্ছে। তার কিছু কিছু বিনানোটিসে ঢুকেও পড়ছে পৃথিবীর অন্দরে। এই যেমন গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিপজ্জনক উল্কাবৃষ্টি হলো রাশিয়ায়। রাশিয়ার চেলিয়াবিন্সক শহরের আকাশ থেকে হঠাত্ই খসে পড়েছিলো ওই মহাজাগতিক পাথরের টুকরো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই পাথরের টুকরো প্রায় ১৭ মিটার ব্যাসের। ওই দিনই সকলের অলক্ষ্যে পৃথিবীর কান ঘেঁ?ষে পার হয়ে যায় গ্রহাণু ২০১২ ডিএ১৪। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে স্পেনের লা সাগরা মানমন্দিরের নজরে আসে 'বিপজ্জনক'ওই গ্রহাণুটি। যদিও জ্যোতির্বিদরা হিসেব-নিকেশ করে জানিয়েছিলেন, পৃথিবীর সঙ্গে ধাক্কা লাগার কোনো সম্ভাবনাই ছিলো না ৫০ মিটার দীর্ঘ এই পাথরের টুকরোর।

বিজ্ঞানীদের মতে, কয়েকশ' কোটি বছর আগে প্রাণসৃষ্টির পর পৃথিবীতে এ যাবত্ পাঁচবার প্রাণের মহাবিলোপ ঘটেছে। এসব বিলোপের পেছনে গ্রহাণুও দায়ী অনেক ক্ষেত্রে। ধাবমান গ্রহাণু থেকে পৃথিবীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানীদের ভাবনার শেষ নেই। অতিসম্প্রতি রং ছিটানোর পদ্ধতি ব্যবহারের কথাও চিন্তা করেছে নাসা। পৃথিবীর সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়াতে গ্রহাণুর ওপর রঙের পাতলা আস্তরণ দিয়ে ধ্বংসের সম্ভাবনা ভেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রের এই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। বিজ্ঞানীদের মতে, উচ্চচাপে রঙের গুঁড়ো ছিটিয়ে হালকা আবরণ তৈরি করা হলে গ্রহাণুর সূর্যালোক প্রতিফলনের মাত্রা পরিবর্তিত হবে। এর ফলে তাপমাত্রার হেরফের হবে গ্রহাণুটির দুই পাশের, এবং এক পর্যায়ে এর গতিপথই পাল্টে যাবে। গ্রহাণুর আঘাতহানার ওপর হলিউডের সিনেমার সংখ্যা কম নয়। সবক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি, অল্পের জন্য শেষ মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা প্রতিহত করেছেন গ্রহাণুর আঘাতকে। কিন্তু বাস্তবতা নাকি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা'র প্রধান চার্লস বোল্ডেন জানিয়েছেন, বড় গ্রহাণু আঘাত হানলে আমাদের বাঁচার কোনো উপায়ই নেই। কারণ অনেক ক্ষেত্রে তা অতি আকস্মিক হতে পারে। তা ছাড়া যেসব পদ্ধতিতে গ্রহাণুকে প্রতিহত করার কথা ভাবা হয়, সে সব ব্যবহারিক ক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকর নয়। তার মতে, পৃথিবীবাসী রয়েছেন একেবারেই সৌভাগ্যের সুতোর ওপর, প্রতীকীভাবে বললে— সৃষ্টিকর্তার দয়ায়। এ নাকি অতিবড় অপ্রিয় সত্য।

গত মাসে রাশিয়ায় উল্কাবৃষ্টির পর নাসা'র পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য। পৃথিবীর চারপাশ দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে যত গ্রহাণু, তার ৯৫ শতাংশই এক কিলোমিটার বা তারও বড়! এমন কোনো গ্রহাণু যদি পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়ে, তা হলে সে দিনই হবে মানবসভ্যতার শেষ দিন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে অন্তত ১০ কিলোমিটার ব্যাসের একটি বিশাল উল্কাখণ্ড মেক্সিকো উপদ্বীপের ওপর আছড়ে পড়েছিলো। এর ফলেই পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো ডাইনোসরেরা। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো সেই সময়কার প্রায় ৯০ শতাংশ জীব প্রজাতিই। নাসা'র বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পৃথিবীর চারপাশে যে গ্রহাণুগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার মাত্র ১০ শতাংশ-ই নাকি আকারে ১৬৫ মিটার বা তার চেয়ে বেশি। এমন গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর যদি সরাসরি ধাক্কা লাগে, তা হলে যে কোনো বড় শহর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে মুহূর্তে। তবে আশার কথা হলো, এই মাপের গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা হাজার বছরে মোটে একবার। তারপরও নিজেদের খুব একটা নিরাপদ বলে মনে করছেন না বিজ্ঞানীরা। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, এখনও পর্যন্ত এমন কোনো প্রযুক্তিই নেই মানুষের হাতে যার সাহায্যে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।

-দৈনিক ইওেফাক
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×