somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারী কোটা

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত কয়েকদিন ধরে যে খবরটি বার বার শোনা যাচ্ছে তা হল সরকারী কর্মচারী নিয়োগে কোটা পদ্ধতি। সম্প্রতি ৩৪মত বিসিএস পরিক্ষার পর এটা নিয়ে শোরগোল শুরু হয় এবং কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে পরিক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্ররা রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে থাকে। তাদের ওপর হামলাও হয়েছে দেখলাম। গতকাল প্রথম আলো পত্রিকা হেডলাইন করেছে শাহবাগে কোটা বিরোধী আন্দোলনে সারা ঢাকায় তীব্র যানজট। অথচ কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত পুরো শাহবাগ মোড়টাই অচল করে রাখা হয়েছিল,সেটার কারনে সৃষ্ট যানজট নিয়ে কোনো মিডিয়া কথা বলেনি।

যাইহোক মূল বক্তব্যে আসি। এদেশের লোক সংখ্যা ১৮কোটি। এদেশ পরিচালনার জন্যে মেধাবী লোক দরকার আছে এ ব্যাপারে সকলেই একমত হবেন। কিন্তু সে মেধা আমরা কিভাবে সংগ্রহ করি ?

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্যে ৩০% এবং অন্যান্য কোটা মিলে ৫৫%,বাকী ৪৫% চাকুরীর জন্যে ১৮কোটি লোকের ভেতরকার সবথেকে মেধাবীরা প্রচন্ড প্রতিযোগীতার সম্মুখিন হয়। এর ভেতর আছে স্বজনপ্রীতি এবং অর্থ বাণিজ্য। টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাস হওয়া এখন নতুন কিছু নয়। প্রেসের লোকেরা জোটবদ্ধ হয়ে একাজটি বিরাট অংকের টাকার মাধ্যমে করে বলে পত্রিকায় পড়েছি এবং অনেকের মাধ্যমে জেনেছি।

দেশকে যারা স্বাধীন করেছিল বা অগ্রনী ভূমিকা রেখেছিল তাদের প্রতি আমরা চীর কৃতজ্ঞ। তারা দেশের পক্ষ থেকে সুবিধা পাবেন এতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু সেই সুবিধার খাতও থাকতে হবে। একজন আমাকে পানিতে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে উদ্ধার করাতে কৃতজ্ঞ হয়ে তাকে আমি প্লেনের পাইলট হিসেবে নিয়োগ দিলে তা শুধু যাত্রীদের জন্যে বিপদের কারন হবেনা বরং তার নিজের জন্যেও সেটা বিপদ ডেকে আনবে। আমরা ইতিমধ্যে কিছু প্রমান পেয়েছি। প্রশাসনে অযোগ্য,চরিত্রহীন লোকের ছড়াছড়ি। তারা সমাজের মানুষের ক্ষতি করছেন এবং নিজেদের শারিরীক,মানুষিক,চারিত্রিক,পারলোকিক ক্ষতি করছেন।

এজন্যে আমাদেরকে পুরো ব্যাপার আবারও ভেবে দেখতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা বা তাদের সন্তানরা কোনো নির্দিষ্ট একাউন্ট থেকে অর্থ সাহায্য গ্রহন করুক। জাতি তাদেরকে উপহার সামগ্রী,পদক,সার্টিফিকেট দিয়ে সম্মানিত করুক। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী আরও বাড়িয়ে দিক। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদেরকে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে মোটামুটি বিনা প্রতিদ্বীতায় বসিয়ে দিলে তার কুফল ভোগ করতে হয় গোটা জাতিকে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মেধাবী নয় এমনটা বলছি না কিন্তু তারাও অন্যদের মত প্রতিযোগীতায় আসুক আর অন্য ক্ষেত্রে সুবিধা গ্রহন করুক,বিসিএসে নয়।

দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিমান দুই লক্ষের কিছু বেশী ,তারা মোট জনতার এক শতাংশেরও কম। তাদের জন্যে এক শতাংশ কোটা বরাদ্য হলে সম্ভবত কারো আপত্তি থাকত না। এমনকি ৫% শতাংশ হলেও সেটা যথেষ্ঠ হত। তাছাড়া বর্তমানে খুব বেশী সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা চাকুরীর নির্ধারিত বয়স সীমায় অবস্থান করছেন না। দিন দিন এটা আরও কমছে। কারন,তাদের বয়স বাড়ছে।আর দেশে ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা মোট জনতার দুই শতাংসের কম। তাদের জন্যে ২/৩% কোটা থাকাই যথেষ্ট ছিল। বর্তমানে ছেলে মেয়ে যেহেতু একই মর্যাদা সম্পন্ন তাই মেয়েদের জন্যে আলাদা কোটা রাখা তাদের প্রতি বিশেষ বৈষম্য আরোপ করা বৈ কিছু নয়। এতে তাদের মেধাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তারা যেহেতু এক তাই নারী-পুরুষ একসাথে মেধার প্রতিযোগীতায় আসুক।

এটা খুব অবাক কান্ড যে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ৪৫% পদের জন্যে মরনপণ লড়াই করছে আর মাত্র কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ৫৫% পদের জন্যে আবেদন করছে। একদিকে কয়েক শত চাকুরীর জন্যে হাজার হাজার মেধাবীকে কয়েক স্তরে নিংড়ে তারপর মনোনিত করা হচ্ছে,আরেক দিকে তারচাইতেও বেশী সংখ্যক চাকুরীর জন্যে অল্প কিছু মানুষকে যা তা ভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কোটা প্রথার কারনে একদিকে মেধার আধিক্যের জন্যে বাদ দিতে হচ্ছে,আরেক দিকে মেধার কোটা পূরণ না হওয়া সত্তেও কম মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলাফল ভোগ করতে হচ্ছে আম জনতাকে। অযোগ্য ,অপদার্থ লোকেদের শাসনে ইতিমধ্যেই আমরা ক্লান্ত,পরাস্ত।

আমার মনে হয় পুরো কোটা ব্যবস্থা উঠিয়ে দিলেই সেটা সকল মানুষের জন্যে ভাল হবে। আর যদি সেটা রাখতেই হয় তবে সর্বোচ্চ সর্বমোট ৮ থেকে ১০% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। কোনোভাবেই এর বেশী নয়। আর সরকারে উচ্চ পদের জন্যে কোনো রকম কোটা রাখা উচিত নয়। যারা দেশকে,মানুষকে ভালবাসে বলে দাবী করে,তাদের এ ব্যাপারটি ভেবে দেখা উচিত শুধু তাই নয়,অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সকল জনতার দাবী হওয়া উচিত, কোটা প্রথা বন্ধ হোক ! আর হলে সেটা সব মিলে ১০% এর নীচে হোক। তবে না থাকা অধিক সঙ্গত এবং ন্যায় বিচারে সহায়ক।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×