somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ডাক্তারের খামখেয়ালীপনায় ভুল চিকিৎসার শিকার

২৭ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিডিয়ায় চোখ বুলালেই চোখে পরে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় বা অবহেলায় রোগীর মৃতু। স্বজনের আহাজারী, বিক্ষোভ, ভাংচুর।চিকিৎসা যে একটা সেবা এ ধারনা পাল্টে এটা একটা ব্যাবসায়িক পন্য হিসেবে ভয়াবহ বানিজ্য করছেন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা। একটু ভাল উন্নত আন্তরিক চিকিৎসার জন্য সামর্থ্যবানার বেসরকারী মেডিকেল বা ক্লিনিকে যান চিকিৎসার জন্য। কোন একটি সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে কথায় কথায় টেস্ট আর অপারেশনের কথা বলেন। যত বেশি টেস্ট আর অপারেশন ততই তাদের কমিশনরে পাল্লা ভারী। এমনও দেখা যায় বার বার অপারেশন করান। আমি নিজে এধরনের পরিস্থিতির শিকার হযেছি। আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
আমি ফিস্টুলা নামক রোগে ভুগছিলাম কয়েক বছর যাবত। এত দিন বড় কোন সমস্যা ফিল না করায় ডাক্তার দেখাই নি। বিগত মাস খানেক যাবত সমস্যা ফিল করায় আমি প্রথমে খিলগাঁও এ খিদমাহ্ হসপিটাল প্রাঃ লিঃ হাসপাতালে একজন সার্জন দেখাই । তিনি আমাকে দেখে বলেন ফিস্টুলা হয়েছে অপারেশন করাতে হবে। আমি বললাম, "অপারেশন করলে কি সুস্থ্য হয়ে যাব?
ডাক্তার বললেন," হ্যা সুস্থ্য হয়ে যাবেন।
তারপর কয়েকজন শুভাকাঙ্খি পরার্মশ দিলেন, অপারেশন যেহেতু করতে হবে তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন দেখিয়ে তার মাধ্যমে অপারেশন করাই ভাল হবে। কারন মলদ্বারে অপারেশন ভাল বিষেজ্ঞ সার্জন দ্বারা অপারেশন করাটা নিরাপদ। সে মোতাবেক ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মতিঝিল শাখায় যাই। সেখানে গিয়ে ইনফরমেশন ডেস্কে গিয়ে আমার রোগটার কথা উল্লেখ করে কোন ডাক্তার দেখালে ভাল হয় জিজ্ঞেস করি। তারা আমাকে প্রফেসর ডাঃ আব্দুলহ আল-আমিন সার্জনকে দেখাতে বলেন। তখন আমি উনার ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করি। সেই সাথে আরো কয়েকজনের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে চলে আসি।

ভিজিটিং কার্ডে উল্লেখ অনুযায়ী প্রফেসর ডাঃ আব্দুলাহ আল-আমিন বারডেম হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং আরো বিভিন্ন ডিগ্রি উনার কার্ডে উল্লেখ আছে। যাইহোক চিন্তাভাবনা করে ডাঃ আব্দুল আল-আমিন এর কাছে ৩০.০৭.২০১১ইং সিরিয়াল দিয়ে যথারিতী উনার চেম্বারে যাই। আমার সিরিয়াল এলে চেম্বারে ঢুকে আমার রোগের বিস্তারিত বলা শুরু করতেই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন এখন কি সমস্যা সেটা বলেন?
তারপর আমি খুব দ্রুত আমার উপসর্গগুলো বলা শেষ না করতেই আমাকে বেডে উঠতে বলেন। তারপর আমার মলদ্বার দেখে (ভাল করে দেখেন নি ) বলেন, "এটা ফিস্টুলা অপারেশন করতে হবে। ডাক্তার সাহেব সর্বসাকল্যে আমাকে ১মিনিট .৩০ সেকেন্ড সময় দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে আমার ফিস্টুলা ডান সাইটে । প্রেশক্রিপশনে ফিস্টুলা অপারেশনের এডভাইস লিখে দিয়ে ৩৫০টাকা ভিজিট নেন।
পরদিন ৩১.০৭.২০১১ তারিখ সকাল বেলা অপারেশনরে প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তির জন্য সিরিয়াল দিলাম আর দুপুর ২টায় কেবিন পেলাম। অপারেশনের যাবতীয় কার্যাদী সম্পন্ন করে রাত ৯.১৫মিনিটে আমাকে ওটিতে নেয়া হল। তারপর এনেস্তিশিয়া দিয়ে আমাকে কোমর থেকে পা পর্যন্ত অবশ করে আমাকে রেডি করা হল। তখনো প্রফেসর আব্দুলাহ আল-আমিন এসে পৌছাননি । উনি পাশের ভবনে রোগী দেখছিলেন। আমাকে রেডি করে উনাকে ফোন দেওয়া হল। কিছুক্ষনের মধ্যে ডাঃ আসলেন এবং অপারেশন শুরু করলেন, ৯.৩৫মিনিটে উনি অপারেশন শুরু করলেন ৯.৪৩ মিনিটে উনি অপারেশন শেষ করে বের হয়ে গেলেন। তারপর আমাকে অবজারভেশন রুমে রাখা হল ঘন্টা দুয়েক। রাত ১২টার দিকে আমার কোমর থেকে পা পর্যন্ত বোধ আসার পর আমাকে কেবিনে দেওয়া হল। পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আমি অপারেশনরে জায়গাটা স্পর্শ করেই আমি শক্ড হয়ে গেলাম । একি আমার অপারেশনের কাটা বাম পাশে কেন? আমার ফিস্টুলা তো ডান পাশে, ডাক্তার আমার বাম পাশে কাটল কেন? আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে দেখলাম ডান পাশে ফিস্টুলার যে রগ সেটা আগের অবস্থায়ই আছে। আমার ওয়াইফ বলল "ডাক্তার নিশ্চই বুঝেই অপারেশন করেছেন তুমি টেনশান করনা।"
রাতে যখন ডাক্তার কেবিনে ভিজিটে আসলেন তাকে বললাম " ডাক্তার সাহেব আমার ফিস্টুলার রগটা ডান পাশে আপনি --- আমাকে কথা শেষ না করতে দিয়েই তিনি বললেন 'শুকিয়ে যাবে।'
আমিও ভাবলাম যে বাম পাশে অপারেশন করেছে হয়ত ফিস্টুলা অপারেশনের নিয়মই এটা ।

পরদিন সকালে রিলিজ নিয়ে চলে যেতে বললেন আর ৭দিন পর চেম্বারে এসে দেখিয়ে যেতে বললেন। পরদিন সকালে রিলিজ নিয়ে চলে আসলাম । চেক আপের জন্য ৭দিন পর ০৭.০৮.২০১১ ইং তারিখে আবার তার চেম্বারে গেলাম। দেখে বললেন "শুকিয়ে যাচেছ " আমি আবারো তাকে বললাম যে "আমার ডান পাশে হল ফিস্টুলা আপনি বাম পাশে কেটেছেন কেন? মানে কথা শুনার মত ধৈর্য্য কেন জানি ডাক্তারদের নাই। কথা বলার সুযোগই দিতে চান না। আবার ৭দিন পর দেখা করতে বললেন। ১৬.০৮.১১ ইং তারিখে আবার তার চেম্বারে গেলাম ডাক্তার আমার অপারেশনের জায়গাটা দেখে বললেন " এইতো শুকিয়ে যাচ্ছে"

আমি বেড থেকে নামতে নামতে তাকে বললাম, " আচ্ছা ডাক্তার সাহেব আমাকে একটু ক্লিলিয়ার করে বলবেন আমার সমস্যা হল ডান পাশে, ডান পাশের রগটা তো রয়েই গেছে কিন্তু আপনি অপারেশন করেছেন বাম পাশে, কিন্তু আমার বাম পাশে তো কোন সমস্যা ছিলনা"।

তখন উনি বললেন "আবার উঠেন বেডে" আবার একটু দেখে বললেন " এটা তো ফিস্টুলা অপারেশন করতে হবে। "
আমি বললাম " তাহলে আপনি আমার কি অপারেশন করলেন?" উনি বললনে " বাম সাইটে ফিসার ছিল, ফিসার অপারেশন করেছি"।
আমি বললাম "আমি ফিস্টুলা সমস্যায় ভুগছি আজ কয়েক বছর যাবত আর আপনি প্রেশক্রিপশনেও ফিস্টুলা উল্লেখ করেছেন, তাহলে ফিসার পেলেন কোথায়"।
ডাক্তার বললেন " ফিস্টুলাতো তখন দেখা যায়নি"।
আমি বললাম " ফিস্টুলা সমস্যায় নিয়ে আপনার কাছে আসছি আর আপনি অপারেশনের সময় ফিস্টুলা খুজে পেলেন না"।
ডাক্তার বললেন " সমস্যা নাই তিন মাস পর আবার আসবেন অপারেশন করে দিব" আমি বললাম, "একই জায়গায় আবার অপারেশন করাটা কি ঠিক হবে? ডাক্তার বললেন "একই জায়গা হল কোথায় এটা আরেক সাইটে"। চিন্তা কররে দেখুন অপারেশন করাটা তার কাছে কোন ব্যাপার না খালি ধরবেন আর কাটবেন এরকম একটা মনোভাব। আমি জিজ্ঞেস করলাম "তখন আবার কত টাকা লাগবে"। উনি বললেন "তখন কিছু টাকা কম নিব"। আমি রাগে, ক্ষোভে, দাতেঁ দাতঁ চেপে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসলাম। অপারেশনের পূর্বে ও পরে যতবার ডাক্তারের সাথে দেখা করেছি ততবার আমি একাই গিয়েছি। ২২.০৮.২০১১ইং তারিখে আমার সাথে আমার শশুড় গিয়েছিলেন। ডাক্তারের সাথে অনেক তর্কাতর্কি, বাক-বিতন্ডা হল একপর্যায়ে সে বলল আবার অপারেশন করে দিবেন তিনি নিজের কোন চার্জ নিবেন না শুধু হাসপাতালের চার্জ দিতে হবে। তার পরও সে স্বিকার করলনা যে সে ভুল অপারেশন করেছে।
আমার আত্নীয় স্বজনেরা কেউ আবার এই ডাক্তারের উপর দ্বিতীয়বার অপারেশনের ভরসা করলেনা।
এখন চিন্তা করে দেখুন বেসরকারী চিকিৎসকেরা যদি এরকম অবহেলা আর খামখেয়ালী ভাবে চিকিৎসা দেন তাহলে সরকারী মেডিকেলে যারা চিকিৎসা দেন তারা কি করছেন। ভাল চিকিৎসার জন্য ঘাটের পয়সা খরচ করে প্রাইভেট মেডিকেলে গেলাম সেখানেও অবহেলার শিকার হলাম।

আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন আমি আগামী ৩০ শে অক্টোবর বা ৩১শে অক্টোবর আবার অপারেশন করাব অন্য কোন ভাল সার্জন দিয়ে।
পোস্ট সংক্ষেপ করার চেষ্টা করেছি তারপরও কিছুটা বড় হয়ে গেল। ক্ষমা চাচ্ছি সবার কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:১৯
২৩টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×