somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব নথি গায়েব ॥ স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধাপরাধী বিচার- প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধীদের কাজ :-/:-/:-/:-/:-/

২৬ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ৬০টি ট্রাইব্যুনালের সব ফাইলই আইন মন্ত্রণালয় থেকে গায়েব হয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এ সংক্রান্ত নথিপত্র গায়েব করা হয়েছে। পঁচাত্তরপরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা যে এ ফাইল গায়েব করেছে তা আর বলার অপেৰা রাখে না। আইন মন্ত্রণালয় বলছে, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরই এটি সংরৰণ করার কথা। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ট্রাইব্যুনালের ফাইল থাকবে আইন-আদালতে। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বাংলার মাটিতে রাজাকার-আলবদরদের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এ লক্ষে সারাদেশে মোট ৩৭ হাজার রাজাকার-আলবদরকে অভিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ২৬ হাজার অপরাধী সাধারণ ৰমায় মুক্তি পায়। বাকি ১১ হাজারের বিচার কার্যক্রম চলে। এতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয় ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীর। ২২ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ৬৮ রাজাকার-আলবদরের যাবজ্জীবন দণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। বিচারাধীন থাকে আরও ১০ হাজারেরও বেশি অপরাধী। ৬০টি ট্রাইবু্যনাল গঠন করে তখন এ বিচার কার্যক্রম চালানো হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুনের মাধ্যমে এ বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। বিচারপতি সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৮ নবেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান নিযুক্ত করার পর মাত্র দেড় মাসের মাথায় এসে ৩১ ডিসেম্বর এক অধ্যাদেশের (দালাল আইন রহিতকরণ অধ্যাদেশ-১৯৭৫) মাধ্যমে দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইবু্যনাল) ১৯৭২ বিলুপ্ত করে এবং ওই আইনের অধীনে গঠিত ৬০টি ট্রাইবু্যনাল বিলুপ্ত ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ওই ট্রাইবু্যনালে বিচারাধীন ১০ হাজারেরও বেশি রাজাকার-আলবদরের মামলা প্রত্যাহার করা হয়। এমনকি গঠিত ট্রাইব্যুনালের অধীনে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তি দেয়া হয়।
উলেস্নখ্য, সাজাপ্রাপ্ত মামলার মধ্যে রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী হত্যা মামলা। এ মামলায় দু'জনের যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করে আদালত। বিশিষ্ট গণিতবিদ ড. আহাদ হত্যা মামলায় একজনকে মৃতু্যদ- প্রদান করা হয়। বরিশালের একটি মামলায় (হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাট) ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। এ সময়ে ১৯৭১ সালের মালেক মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েক মন্ত্রীকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ের পরে ওই দালাল আইন রহিতকরণ অধ্যাদেশ-১৯৭৫ বাতিল হয়ে যায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইবু্যনাল) ১৯৭২ কার্যকর হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন-২০১১ দ্বারাও ওই দালাল আইনকে কার্যকর আইন হিসেবে সংবিধানের তফসিলে অনত্মভর্ুক্ত করা হয়েছে। এতে যে কোন সময় ১৯৭২ সালের দালাল আইনের অধীনে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী তথা রাজাকার-আলবদরদের বিচার শুরম্ন হতে পারে। এ বিচারের জন্য ১৯৭২ সালে গঠিত ৬০টি ট্রাইবু্যনালের নথিপত্র প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আইন-মন্ত্রণালয় বা সলিসিটর উইংয়ে এর কোন নথিপত্র নেই।
এ ব্যাপারে সলিসিটর আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ে এ ট্রাইবু্যনালের কোন ফাইল বা নথিপত্র নেই। তিনি বলেন, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার ঘোষণা দিলে তখন খোঁজ করে এ ধরনের কোন নথি আইন মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এসব ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকার কথা। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হিসেবে তাদেরই এ ফাইল সংরৰণ করার কথা।
এ ব্যাপারে সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব বর্তমানে জনপ্রশাসন সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার জনকণ্ঠকে বলেন, কোন ট্রাইবু্যনালের ফাইল বা নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকার কথা নয়। ট্রাইবু্যনালের মামলার নথি থাকবে আইন-আদালতে। এটি আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তিনি বলেন, আমার জানা মতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের কোন ফাইল নেই।
সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সাজাপ্রাপ্ত রাজাকার-আলবদরদের সাজা মওকুফ করার পাশাপাশি আইন মন্ত্রণালয় তথা সরকারের কাছে রৰিত এ মামলার ফাইলের বিভিন্ন কাগজপত্র গায়েব করে দেয়া হয়। সর্বশেষ মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা দিলে আইন মন্ত্রণালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা চারদলীয় জোটের আস্থাভাজন কর্মকর্তারা ট্রাইবু্যনালের পুরো ফাইল গায়েব করে দেয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে সুদূরপ্রসারী লৰ্য নিয়ে তারা এ কাজ সম্পন্ন করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে আইন মন্ত্রণালয় রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের মোট ৮ যুগ্ম-সচিবের মধ্যে ৫ জনই চারদলীয় জোটের আস্থাভাজন। এর মধ্যে চারদলীয় জোটের অতি আস্থাভাজন এবং জামায়াত-বিএনপি জোটকে ৰমতায় আনতে নীলনঙ্া প্রণয়নকারী সাবেক এক সচিবের বোন, উত্তরা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত এবং চারদলীয় জোট আমলের কুষ্টিয়ার ডিসির বোন হোম ইকোনমিঙ্ কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদল নেত্রীও রয়েছেন। এ ৫ যুগ্ম-সচিবই আইন মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করেছে।
সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদে যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইবু্যনাল) ১৯৭২-এ সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ১৯৭৮ সালে এক সামরিক ফরমান বলে সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়, যা বর্তমানে আবার পুনর্বহাল হয়েছে। সূত্র জানায়, মূলত মালেক মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও রাজাকারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে সংবিধানের এ অনুচ্ছেদটি বাতিল করা হয়।
সূত্র জানায়, যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭২-এর অধীনে রাজাকার-আলবদরদের বিচার শুরুর কার্যক্রম চলছে। কিন্তু নথিপত্র গায়েব হয়ে যাওয়ায় এ মামলা সরকারকে চাপের মধ্যে ফেলে দেবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×