তখন শ্রাবণ মাস ,আকাশে মেঘের ঘনঘটা বা বিনা নোটিশে ঝুম বৃষ্টির অবাধ বিচরন ।হিজল গাছগুলো কোমর পর্যন্ত পানিতে দারিয়ে বর্ষার আগমনে বাহুবন্ধনে কঠিঁন বাঁধনে জড়ায়ে রেখেছে বর্ষার অনন্ত ভরা যৌবন কে যেন তাদের যুগ-যুগ ধরে অপেক্ষার মিলন বন্ধন ।চারিদিকে থৈ-থৈ পানি গ্রামগুলো বিচ্ছন্ন একএকটা দ্বীপের মত পানির ওপর ভাসমান।আকাশে-ছায়ার যেন গভীর খেলা ।আমি নৌকায় বসে বর্ষার অনাবিল সৌন্দর্য অবলোকন করতেছিলাম ।নৌকার মাঝি আমাদের গ্রামের এক হৃতদরিদ্র ছেলে আরিফ ভালো সাঁতারু ।এক মাত্র বিধবা মা ছারা আপন -জন বলতে ত্রীভূবনে আরিফের আর আপন-জন নাই বললেই চলে । আমি ভয়ন্কর অহংকারী ,
একটা মেয়ে গরীবদের মানুষ হিসাবে দেখতে আমার ভীষন কষ্ট হয় ।কারণ আমাদের জমিদার বংশের চৌদ্দ পুরুষরা ছিল গরীব প্রজাদের শোষনকারী এবং অত্যাচারকারী তাদের রক্ত আমার শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে সুতরাং আমার অহংকারী এবং নির্যাতনকারী হওয়াটাই যেন স্বাভাবিক ।আরিফ এক মনে নৌকা বেয়ে চলছে ,আমি নৌকায় বসে হাত বাড়িয়ে
জলজ উদ্ভিদ গুলো টেনে --টেনে খেলার ছ্বলে ছিড়তে ছিলাম ,আরিফ আমাকে বার -বার হাজার বার নিষেধ করলো এবং বললো গাছ টেনে ছিড়লে পানিতে পরে যাবে ।আমি আরিফকে ভীষন জঘষ্য ভাষায় গালি দিলাম সে শুধু নীরবে মাথা নীচু করে রইলো ।এবার বেশ জোড়ে একটা জলজ গাছ ধরে টান দিলাম ব্যাস ওমনি ওপুর হয়ে পানিতে পড়ে গেলাম
সাথে-সাথে আরিফ পানিতে ঝাপিয়ে পড়লো ,আমি হাবু-ডুবু খাচ্ছি পানি খেয়ে ক্রমশ আমার শরীর ভারী হয়ে অতলে তলিয়ে যাচ্ছে ।আরিফ প্রানপন চেষ্টা করছে আমাকে ভাসিয়ে রাখতে ।আমার আর জ্ঞ্যান ছিলোনা ।যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলাম আরিফ আমার পাশে দাড়ানো ।আমি নত মুখে মৌন হয়ে বসে থাকলাম ,তার শরীর থেকে কাদা-মাটির গন্ধ তখন আমাকে মাটির বুকে পা রাখার জন্য গোপন নিবেদন জানালো ।আমি ধূলির সর্গে নেমে এলাম চির দিনের জন্য ।
এলিনা মোঘল
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:৫২