যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক মেরুকরণ ও সহিংসতার মধ্যে ১৯৭১ সালে সংঘটিত বাঙালি নিধনযজ্ঞে অংশ নেওয়ার দায়ে জামায়াতে ইসলামী নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
Published : 09 May 2013, 08:03 AM
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণা করে বলেন, কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা ও নির্যাতনের সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়েছে।
এর মধ্যে হত্যা ও গণহত্যার দুটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক। আর দুটি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরাই আল বদর, আল শামস নামের বিভিন্ন সশস্ত্র দলে যোগ দিয়ে সারা দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়।
আর সেই সময়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান কামারুজ্জামান যে আল বদর বাহিনীকে সংগঠিত করে মানবতাবিরাধী অপরাধ সংঘটনে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন- তাও উঠে এসেছে এই রায়ে।
তার আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক আদেশের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা স্তব্ধ, বিস্মিত, আতঙ্কিত।”
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রায়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের বাইরে অপেক্ষমাণ মুক্তিযোদ্ধা, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে উপস্থিত জনতাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে ট্রাইব্যুনালের বিচারে সন্তোষ প্রকাশ করে। কামারুজ্জামানের ফাঁসির খবর শুনে আনন্দ মিছিল হয় তার নিজ জেলা শেরপুরেও।
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে, যার বিরোধিতা করে সে সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করে কামারুজ্জামানের দল জামায়াতে ইসলামী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণেও জামায়াতের সাংগঠনিকভাবে যুদ্ধপরাধের বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি এ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয়। একই ট্রাইব্যুনালে ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, যা প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় হাজার হাজার মানুষ।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে জনতার দাবির মুখে সরকার ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন আনে। এর মধ্যে দিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে দুই পক্ষেরই আপিলের সমান সুযোগ তৈরি হয়।
তৃতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসি হলে দলটির ঘাঁটি বলে পরিচিত এলাকাগুলোতে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসেবেই পুলিশসহ নিহত হয় ৭০ জনেরও বেশি মানুষ।
সেই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সহিংস রূপ নেয় রাজনীতি। বিচারের পরোক্ষ বিরোধিতাকারী প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তোলে আওয়ামী লীগ ও মিত্র দলগুলো।
চতুর্থ রায় উপলক্ষ্যে বুধবার থেকেই ট্রাইব্যুনাল ঘিরে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। ট্রাইব্যুনালে আসা সাংবাদিক ও দর্শনার্থীদেরও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
আগের রায়ের দিনগুলোর মতো এদিনও সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনালের বাইরে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ দিতে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের। জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতেও স্লোগান দেন তারা।
রায়ের জন্য কামারুজ্জামানকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। বেলা ১১টা ৫ মিনিটে তাকে এজলাসে হাজির করার পর বিচারকরা আসন গ্রহণ করেন।
ট্রাইব্যুনাল প্রধান ওবায়দুল হাসান দুই পক্ষের আইনজীবীদের ধন্যবাদ দিয়ে মামলার ইতিবৃত্ত সংক্ষেপে তুল ধরার পর ১১টা ২১ মিনিটে ২১৫ পৃষ্ঠার রায়ের ৬২ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন ট্রাইব্যনালের সদস্য বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়ার পর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান সাজা ঘোষণা করেন।
রায়ে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মোহাম্মদ কামারুজ্জামান বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনীকে সংগঠিত করেন বলে যে তথ্যপ্রমাণ প্রসিকিউশন উপস্থাপন করেছে- আসামির আইনজীবীরা তা খণ্ডাতে পারেননি।
“প্রসিকিউশন অভিযোগে বলেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পর পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে বৃহত্তর ময়মনসিংহে যে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলা হয়, কামারুজ্জামান ছিলেন তার ‘চিফ অর্গানাইজার’।”
এর পক্ষে প্রসিকিউটররা দৈনিক সংগ্রামের সেই সময়ের একটি প্রতিবেদনও উপস্থাপন করেন, যে পত্রিকাটি জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র হিসাবে পরিচিত।
বিচারক বলেন, আসামির আইনজীবীরা প্রসিকিউশনের এ বক্তব্য খণ্ডাতে পারেননি।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা সাত অভিযোগের প্রথমটিতে প্রসিকিউশন বলেছে, তার নেতৃত্বেই একাত্তর সালের ২৯ জুন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার কালীনগর গ্রামে ফজলুল হকের ছেলে বদিউজ্জামানকে রামনগর গ্রামের আহম্মদ মেম্বারের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। এরপর তাকে নির্যাতন করে আহম্মদনগরের রাস্তার ওপরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলে, “বদিউজ্জামানকে অপহরণ করেছে আল বদর বাহিনী। তাই এ ক্রিমিনাল লায়াবিলিটি কামারুজ্জামান এড়াতে পারেন না।”
এছাড়া দ্বিতীয় অভিযোগে শেরপুর কলেজের শিক্ষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতন, তৃতীয় অভিযোগে সোহাগপুরে গণহত্যা এবং সপ্তম অভিযোগে টেপা মিয়ার ছেলেসহ ৫ জনকে হত্যার ঘটনায়ও যুদ্ধাপরাধে কামারুজ্জামানের ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
আর দল হিসাবে জামায়াতকেও যুদ্ধাপরাধে দায়ী করে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সেই সময়ে দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামীদের ‘সন্ত্রাসী ও গুপ্তচর’ আখ্যায়িত করে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। আর এ কাজে তারা ব্যবহার করে নিজেদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠিত আলবদর এবং জামায়াতকর্মীদের নিয়ে গঠিত রাজাকার বাহিনীকে।
“দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামী এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনায় মূল ভূমিকা রাখে। আর আল বদর বাহিনী কাজ করে খুনে বাহিনী (ডেথ স্কোয়াড) হিসাবে।”
যে কারণে ফাঁসি
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা সাত অভিযোগের মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে সোহাগপুরের গণহত্যা এবং গোলাম মোস্তফা তালুকদার নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় ফাঁসির আদেশ দিয়ে বিচারক বলেন, “আসামি যেভাবে এসব অপরাধ ঘটিয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিলে সুবিচার হবে না।”
এছাড়া ১ ও ৭ নম্বর অভিযোগে বদিউজ্জামানকে হত্যা এবং টেপা মিয়ার ছেলেসহ ৫ জনকে হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে কামারুজ্জামানকে।
আর ২ নম্বর অভিযোগে শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতনের ঘটনায় তাকে দেয়া হয়েছে দশ বছরের কারাদণ্ড।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বাকি দুটি অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়া
আদালতের আদেশের পরপরই সারা দেশের মতো শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের ডাকে জড়ো হওয়া ছাত্র-জনতা রায়কে স্বাগত জানিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন। শাহবাগ থেকে মিছিল করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত যান তারা।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “আমাদের যে ছয় দফা দাবি রয়েছে তার প্রথমটি সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি। যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে-এতে জনমনে স্বস্তি এসেছে।”
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, “এ রায়ে পুরো দেশের মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটেছে। জামায়াত নিয়ে ট্রাইব্যুনাল যা বলেছেন তা একেবারেই সঠিক।”
প্রসিকিউটর একে সাইফুল ইসলাম বলেন, যে দুটি অভিযোগ প্রমাণ হয়নি বলে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, সেগুলো তারা খতিয়ে দেখবেন এবং সুযোগ থাকলে আপিল করবেন।
অন্যদিকে এ ধরনের রায়ের নজির ‘বিশ্বের কোথাও নেই’ মন্তব্য করে কামারুজ্জামানের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক জানান, তারাও এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।
রায়কে স্বাগত জানিয়ে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ট্রাইব্যুনালের এই রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্তদের সুবিচার নিশ্চিত হয়েছে।
“বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী, গণহত্যা করেছিল তাদের বিচার করা। এ রায়ের মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহার আংশিকভাবে হলেও পূরণ হচ্ছে।”
যুদ্ধাপরাধের বিচার ‘রাজনৈতিক কারণে’- বিরোধী দলের এমন অভিযোগও নাকচ করে দেন তিনি।
রায়কে স্বাগত জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহ-সভাপতি কেএম শফিউল্লাহ।
শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমার এলাকার এ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়ে আমি সন্তুষ্ট। শেরপুরের মেয়ে আমি। এলাকার মানুষের কষ্ট দেখেছি। জঘন্য অপরাধ করেছে কামারুজ্জামান। তার ফাঁসির মাধ্যমে স্বজনহারানোদের কষ্ট অনেকখানি কমবে।”
আর যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংগ্রহে স্বতপ্রণোদিতভাবে কাজ করে আসা ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক এম এ হাসান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীই একমাত্র দল, যারা একাত্তর সালে পাকিস্তানি বাহিনীর আগেই গণহত্যার প্রণোদনা সৃষ্টি করেছিল। আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে তাদের সেই ‘নষ্ট দর্শনের সমাধির প্রক্রিয়া’ শুরু হলো।
অন্যদিকে রায় প্রত্যাখ্যান করে রোববার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে কামারুজ্জামানের দল জামায়াতে ইসলামী।
দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেন, “জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে নেতাদের হত্যার জন্য এই রায় দেয়া হয়েছে।”
অবশ্য কামারুজ্জমানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল থেকে তিনি কখনো ‘ন্যায় বিচার’ প্রত্যাশিই করেননি।
মামলার পূর্বাপর
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বহু প্রত্যাশিত বিচার কাজ শুরু হয়।
ওই বছর ২১ জুলাই কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে একটি মামলায় একই বছর ২৯ জুলাই তাকে গ্রেপ্তারের পর ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন গত বছর ১৫ জানুয়ারি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ৩১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।
গত বছর ৪ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১৮ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। আর আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন পাঁচজন।
স্বাধীনতার পরের বছর ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন কামারুজ্জামান। ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে থেকে মাস্টার্স পাস করার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমনের আমলে ১৯৭৮-৭৯ সালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালের অক্টোবরে কামারুজ্জামান মূল দল জামায়াতে ইসলামে যোগ দেন এবং ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর রুকনের দায়িত্ব পান।
১৯৮২-১৯৮৩ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি দলে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বে রয়েছেন।