somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আয়কর রিটার্ন দাখিলের বিধান

২৪ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আয়কর রিটার্ন হলো আয়কর বিধি-১৯৮৪ অনুযায়ী নির্ধারিত ফরমে আয়করদাতার বা আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ অনুযায়ী যার আয়ের জন্য তার ওপর কর নির্ধারিত হয়, এমন কোনো ব্যক্তির আয়ের রিটার্ন (বিবরণ) উপ-কর কমিশনারের কাছে দাখিল করা। আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫(১) ধারায় আয়কর রিটার্নকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের পূর্ববর্তী তিন বছর যদি কারো আয়কর নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাকেও আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এ বিধান দুটির একটি ব্যতিক্রম ৭৬ ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে। উপর্যুক্ত ধারা অনুযায়ী কোনো করদাতা আয়কর রিটার্নের স্থলে উপযুক্ত ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট দাখিল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে স্মরণীয়, কোনো আয়বর্ষে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ আয়কর মওকুফ থাকে, কোনো করদাতার মোট পরিমিত আয় যদি সে পরিমাণ অতিক্রম না করে, তবে তাকে রিটার্ন দাখিল না করলেও চলবে।
যেসব বাংলাদেশি দেশের বাইরে বসবাস করেন, তাঁরা আয়ের রিটার্ন সাপেক্ষে দাখিলকৃত করের সমপরিমাণ ব্যাংক ড্রাফটসহ ওই রিটার্ন তাঁর নিকটস্থ বাংলাদেশ মিশনে জমা দিতে পারবেন এবং মিশন তার অফিসের সিলমোহরাঙ্কিত করে এ ধরনের রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকার করবে এবং রিটার্নটি বোর্ডে পাঠাবে। আয়কর রিটার্ন সম্পর্কে আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫, ৭৭, ৮৯(২), ৯১(৩) ও ৯৩(১) ধারাগুলোতেই মূলত আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ নম্বর ধারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে লক্ষণীয়, প্রথমে বর্ণিত বিধান দুটির আওতাধীন না হওয়া মানে যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা, তা কিন্তু নয়। নানা কারণেই কোনো ব্যক্তির বার্ষিক আয়ের সীমা মওকুফকৃত আয়ের সীমা অতিক্রম নাও করতে পারে বা তার ওপর নির্ভরশীল কোনো ব্যক্তি, যার আয়ের জন্য তিনি কর দিতে বাধ্য, তার ক্ষেত্রেও এরূপ না-ও হতে পারে। এই বিধানের বাইরেও যেসব কারণে কোনো ব্যক্তিকে রিটার্ন দাখিল করতে হতে পারে, ৭৫(১এ) ধারা অনুসারে তা হলো :
(এ) কোনো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা বা বিভাগীয় সদর বা জেলা সদরে বসবাসকারী এবং যিনি সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের কোনো সময় নিম্নবর্ণিত শর্তাবলির কোনোটি পূরণ করেন_
(র) তিনি একাধিক তলাবিশিষ্ট ভবনের মালিক এবং যার আয়তন ১৬০০ বর্গফুটের বেশি (বাড়িটি তিনি যেখানে বসবাস করছেন সেখানেই থাকা লাগবে এমনটি নয়, বাড়িটি (এ) অংশে বর্ণিত এলাকার বাইরে হলেও তাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে),
(রর) যদি মোটর গাড়ির মালিক হন (মোটর গাড়ি মানে মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-এর ২ ধারার ২৫ দফায় সংজ্ঞায়িত মোটর কারকে এবং জিপ ও মাইক্রোবাসকে বোঝাবে),
(ররর) টেলিফোনের গ্রাহক হয়ে থাকলে,
(রা) মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১-এর অধীনে নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্য হলে,
(বি) সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গৃহীত ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কোনো ব্যবসা করলে এবং একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে,
(সি) স্বীকৃত পেশাদার সংস্থায় নিবন্ধিত কোনো ডাক্তার, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, আয়কর পেশাজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার বা এ জাতীয় কোনো পেশাজীবী হয়ে থাকলে,
(ডি) চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অথবা ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হলে,
(ই) ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনে অথবা সংসদ সদস্য পদের জন্য প্রার্থী হলে,
(এফ) সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আহূত কোনো টেন্ডারে অংশ নিলে, এবং
(জি) ১৮৪(এ) ধারা অনুযায়ী করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (ঞওঘ) নিয়ে থাকলে।
সময় : প্রত্যেক করদাতাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা লাগে। ৭৫(১বি)(সি) ধারা অনুযায়ী উপধারা (৩) অনুসারে সময় বাড়ানো না হলে নিম্নোক্ত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা লাগবে :
(র) কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে আয়বর্ষ শেষ হওয়ার পরবর্তী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে বা যে ক্ষেত্রে আয়বর্ষ শেষ হওয়ার পরবর্তী ছয় মাসের আগেই ১৫ জুলাই এসে যায়, সে ক্ষেত্রে অনুরূপ ছয় মাস উত্তীর্ণ হওয়ার পর,
(রর) অন্য সব ক্ষেত্রে আয়বর্ষ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
তবে শর্ত থাকে যে বাংলাদেশের বাইরে প্রেষণে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত বা লিয়েনে চাকরিতে নিযুক্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশে তার ফেরার তিন মাসের মধ্যে অনুরূপ প্রেষণ বা লিয়েনের সময়ের জন্য রিটার্ন বা রিটার্নসমূহ দাখিল করবেন।
তবে এই সময়ের মধ্যে কেউ রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে ধারা ৭৫(৩) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি (চবৎংড়হ) বা ব্যক্তিশ্রেণীর (পষধংং ড়ভ ঢ়বৎংড়হ) ক্ষেত্রে উপ-কর কমিশনার কর্তৃক সময় বর্ধিত হতে পারে। কিন্তু শর্ত থাকে যে উপ-কর কমিশনার এভাবে নির্ধারিত তারিখ থেকে তিন মাস পর্যন্ত সময় বর্ধিত করতে পারবেন এবং পরিদর্শী যুগ্ম কমিশনারের অনুমতিসাপেক্ষে আরো তিন মাস পর্যন্ত সময় বাড়াতে পারবেন।
তবে উপ-কর কমিশনার ৮২ বিধির আওতায় সর্বজনীন স্বনির্ধারিত পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়াতে পারবেন না।
সরকার নিজ থেকে মাঝেমধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়িয়ে থাকে এবং এ সময়ের মধ্যেও কেউ রিটার্ন দাখিল করতে না পারলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
শাস্তি : নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে বা মিথ্যা তথ্য দিলে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-তে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। বিধান অনুযায়ী কোনো আয়করদাতা রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে উপ-কর কমিশনার আর্থিক জরিমানা আরোপ করতে পারেন, যার পরিমাণ হবে সর্বশেষ নিরূপিত করের ১০% বা নূ্যনতম হিসাবে তাৎক্ষণিক এক হাজার টাকা এবং এরূপ প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে। রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থতার জন্য উপ-কর কমিশনার সংশ্লিষ্ট করদাতার কর নির্ধারণী কার্যক্রম সর্বোত্তম বিচারের ভিত্তিতে একতরফাভাবে সম্পন্ন করবেন।
রিটার্নের সত্য প্রতিপাদনসহ মিথ্যা তথ্য দিলে অধ্যাদেশের ১৬৫ ধারা অনুযায়ী সর্বনিম্ন তিন মাস ও অনধিক তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
সময়মতো সঠিকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা প্রত্যেক করদাতার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রিটার্নে যে কেবল করদাতার পুরো বছরের আয়ের বিবরণ থাকে তা-ই নয়, করদাতার সম্পদের বিবরণ, জীবনযাত্রার মান, তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সম্পদের বিবরণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও স্থান পায় এবং গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। তাই এ বিষয়ে সচেতন হয়ে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করা সব নাগরিকের কর্তব্য। কারণ, একমাত্র কর দেওয়ার মাধ্যমেই রাষ্ট্রের জন্য কার্যকর অবদান রাখা সম্ভব।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×