বিষ
ফাহিম আমার চাচাত ভাই। ঘটনাটা আসলে ওর জীবনের। এখনোও ও ভয়ে কেঁপে ওঠে। ওর
মুখেই শুনি।
"বছর ৩ আগের কখা। আমি তো চরম অবাক । সব কিছু এত সহজে হয়ে যাবে সে কল্পনাও
করেনি। ঢাকা শহরে ব্যাচেলরদের থাকার জায়গা যেন সোনার হরিণ। ওফ্ ... তার
ওপর চিলেকোঠা। ৭তলার ওপর ইচ্ছে মত ছাদ ব্যবহার করা যাবে। ভাড়াও
তুলনামুলক কম। ব্যাচেলর বলে বাড়িওয়ালার হাজারটা শর্তও নাই। একেই বলে
সোনায় সোহাগা। ২ রুম। ৪জন থাকবো। রুমগুলো একটু পরিষ্কার করতে হবে, দেখে
মনে হয় অনেক দিন খালি পরে ছিল। একটু অবাকই হলাম, ঢাকা শহরে এমন রুম ফাকা
থাকাটা অস্বাভাবিক। এটা নিয়ে কিছু কিছু বললাম না। শেষে দেখা গেল বাড়ি
ওয়ালা বিগড়ে গেল। থাক বাবা । একটু পর বাড়ি ওয়ালা নিজেই বলল, আগে এটা
Store room ছিল। টাকা পয়সা এডভান্স দিয়ে লাফাতে লাফাতে চললাম খবরটা
অন্যদের দিতে। ১ তারিখেই সবাই নতুন বাসায় উঠে গেলাম। বড়িওয়ালা রুমগুলো
পরিষ্কার করেই রেখে ছিল। এমন বাড়িওয়ালা পাওয়াও ভাগ্য। হেম, হেরা ২ভাই এক
রুমে আর আমি, হারুন অন্য রুমে। সরা দিন ধরে ঘর গুছানোর পর একটু রাত করেই
ঘুমাতে গেলাম। ক্লান্ত শরীর। শোয়া মাত্রই সবাই গভীর ঘুম।হঠাত্ করেই ঘুম
ভেঙ্গে গেল। কেন ভাঙ্গল বুজলামনা। ঘুমটা আমার পাতলা। ছাদে গিয়ে রেলিংএ
গিয়ে বসলাম। হঠাত্ কান্নার শব্দ। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না। ভাবলাম হয়তো
নির্যাতিত বৌ অথবা কাজের মেয়ের কান্না। ঢাকা শহরে এটাই সাভাবিক। একটা
সিগারেট ধরালাম।হঠাত্ করে কান্নাটাও থেমে গেল। সেই আগুনটাই আমার জীবন
বাঁচিয়েছে সেদিন। সিগারেট শেষ করে তারাতাড়ি ঘুমাতে গেলাম। কাল আমাকেই
আবার বুয়া ঠিক করতে হবে। বাকীদের দিয়ে কোন কাজ হয় না। নিচ তলার বুয়া যেই
শুনছে আমরা চিলেকোঠায় উঠছি, ওমনি চোখ বড় বড় করে বলে ছাদের ঘরে ভুত আছে
কাম করবে না। আমরা তো হেসেই খুন। ঢাকা শহরে ভুত! হারুনের একটু ভুতের ভয়
আছে। সে দেখি বিকালের মধ্যে সব খবর নিয়ে হাজির। এবং ঘোষনা দিল, এ বাসায়
আর না। ২ বছর আগে এ বাসায় এক স্বামী, স্ত্রী ভাড়া আসে। বৌটা অনেক জেদী
ছিল। একদিন ঝগড়া করে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। তারপর এক পরিবার আসে। তারা
কান্নার শব্দ শুনত এবং একদিন তাদের ছোট ছেলে ছাদ থেকে পরে মারা গেল। তার
পরের ফ্যামেলির কাজের মেয়েও একিভাবে ভাবে মারা গেল। ১বছর বাসাটি খালিই
ছিল। এলাকার সবাই জানে। আমি একটু ঘাবরে গেলাম। গত রাতের কান্নার কথা
কাউকে বলাম না। পরদিন রাতই ছিল সেই ভয়াল রাত। হঠাত্ আমার ঘুমটা ভেঙ্গে
গেল। দেখি দরজাটা খোলা। হেমকে দেখি ছাদের রেলিং এ বসে আছে। ভাবলাম এক
সাথে একটা সিগারেট খাই। বিছানা থেকে নামতেই সেই কান্নার শব্দ। হেমের দিকে
তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার পেছনে শূণে একজন মহিলা ভাসছে।
নাক মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। চোখ আগুন লাল। ভংকর চাহনি। চিত্কার করার
আগেই হেমের গলা ধরে তাকে নিচে ফেলে দিল। আমি কিছুই করতে পারলাম না ।"