somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহত গাদ্দাফিকে উন্মত্ত বিদ্রোহীদের হাতে তুলে দেয় ন্যাটো!

২৪ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিষ্ঠুর ও বর্বর উল্লাসে ঘটেছিল গাদ্দাফি হত্যাকাণ্ড। সাবেক মহাক্রমশালী আরব-আফ্রিকান বাদশাহর সকরুণ মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলে দিল ইসরাইলি গোয়েন্দারা। তাদের দাবি, গাদ্দাফি হত্যার নাটের গুরু ন্যাটো। তারা আহত গাদ্দাফিকে খুনের জন্য তুলে দেয় এনটিসির (ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল) সেনাদের হাতে। সেনারা গাদ্দাফিকে পেয়ে মাতে হত্যার উল্লাসে। তারপর খুনকাণ্ডের বাকি খবর সবারই জানা।
যুদ্ধবন্দি গাদ্দাফিকে হত্যা মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধ-কানুনের বরখেলাপ এবং অমার্জনীয় যুদ্ধাপরাধ—এ নিয়ে সোচ্চার সারা দুনিয়া। ঠিক এ মুহূর্তে ইসরাইল গোয়েন্দাদের এ তথ্য উন্মোচন করল অত্যাধুনিক সুশিক্ষিত ন্যাটো বাহিনীর বর্বর চেহারা। গাদ্দাফি জমানার অবসানের পর লিবীয় বালু-মরুতে এখন বেজে উঠছে শোকের করুণ বিউগল। এই আরব সিংহ কখন বধ হচ্ছেন ন্যাটোর দুর্ধর্ষ শিকারিদের হাতে—কয়েক মাস ধরে সে উদ্বেগ-আশঙ্কায় ছিলেন যে মরুচারী বেদুইন গোষ্ঠী এখন তারা হতাশায় নিমজ্জিত। কী হবে লিবিয়ার ভবিষ্যত্! এরই মধ্যে লিবিয়ার তেল সম্পদ ও নির্মাণকাজের হিস্যা নিয়ে দখলবাজির লড়াইয়ে প্রস্তুত ইউরো-মার্কিন বহুজাতিক ব্যবসায়ী। তাদের হাতে কি গড়ে উঠবে নতুন আরব-উদ্যান, নাকি লুট হবে লিবিয়া—এ প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলছে ওয়াকিবহাল মহলকে।
রাজার হালে ছিলেন গাদ্দাফির প্রজারা!
আরব বসন্তের নবজাগরণে তিউনিসিয়া, মিসরের স্বৈরশাসকদের পর ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন লৌহমানব মুয়াম্মার গাদ্দাফিও। দীর্ঘ ৪২ বছর তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া শাসন শেষে বিদ্রোহী জনতার হাতে নির্মমভাবে প্রাণও দিয়েছেন তিনি। নিজ দেশের অধিবাসীদের নির্বিচারে হত্যা, নিপীড়নের জন্য অনেকেরই নিন্দার মুখে পড়েছিলেন গাদ্দাফি। দীর্ঘদিনের শাসনামলে কখনই পশ্চিমা বিশ্বের আনুগত্য স্বীকার না করায় তার শাসনের অবসানকে অভিনন্দনই জানিয়েছে জাতিসংঘসহ গোটা পুঁজিবাদী বিশ্ব। কিন্তু এতকিছুর পরও গাদ্দাফি একজন শাসক হিসেবে তার দেশের অধিবাসীদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত করেছিলেন, তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না।
নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে জনগণকে অনেক সহায়তা দেয়া হতো গাদ্দাফি সরকারের আমলে। বলা যায়, প্রায় রাজার হালেই ছিলেন গাদ্দাফির প্রজারা। আধুনিক সময়ের নগরজীবনের অন্যতম প্রধান চাহিদা বিদ্যুত্ আর লিবিয়ার জনগণ সে বিদ্যুত্ ব্যবহার করত পুরোপুরি বিনামূল্যে। সরকারনিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলো থেকে বিনাসুদে ঋণ দেয়া হতো নাগরিককে। তেলসমৃদ্ধ দেশটির তেল বিক্রি করে যে টাকা আয় হতো, তা সরাসরি পাঠিয়ে দেয়া হতো লিবিয়ার সব জনগণের ব্যাংক হিসাবে। গাড়ি কেনার সময় লিবিয়ার নাগরিককে গাড়ির মূল্যের অর্ধেক সরকার থেকে ভর্তুকি দেয়া হতো। তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় প্রতি লিটার পেট্রলের মূল্য ছিল মাত্র ০.১৪ ডলার। মাত্র ০.১৫ ডলারে পাওয়া যেত ৪০ স্লাইসের বড় রুটি।
গাদ্দাফি সরকারের ৫০ হাজার ডলার সহায়তা পৌঁছে যেত প্রতিটি নববিবাহিত দম্পতির কাছে, যেন তারা বাড়ি কিনে স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের নতুন জীবন শুরু করতে পারেন। সন্তান জন্ম দেয়ার পরও লিবীয় মায়েরা সরকারের কাছ থেকে পেতেন পাঁচ হাজার ডলার করে। পড়াশোনা বা চিকিত্সাসেবার জন্য কেউ বিদেশে গেলে তাকে মাসে ২ হাজার ৩০০ ডলার দেয়া হতো সরকারের তরফ থেকে।
গাদ্দাফি ক্ষমতায় আসার আগে লিবিয়ায় সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ। শিক্ষা খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে সে সংখ্যাটা ৮৩ শতাংশে নিয়ে গিয়েছিলেন গাদ্দাফি। পুরোপুরি বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিত্সাসেবা পেত লিবিয়ার জনগণ। সেখানকার ২৫ শতাংশ মানুষের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে। পড়াশোনা শেষ করে কেউ যদি চাকরি না পেত, তাহলে বেকার থাকা অবস্থায় সরকারের কাছ থেকে ভাতাও পেত তারা।
কৃষিখাত উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বিশাল অবদান ছিল মুয়াম্মার গাদ্দাফির। কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে নিতে ইচ্ছুক লিবিয়ার জনগণকে জমি, খামারবাড়ি, বীজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম দেয়া হতো সরকারের পক্ষ থেকে—সবই বিনামূল্যে।
গাদ্দাফির লিবিয়ার কোনো বৈদেশিক ঋণ তো ছিলই না, বরং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছিল ১৫০ বিলিয়ন ডলার।
ইসরাইলের দাবি : ন্যাটো গাদ্দাফিকে আহত করে বিদ্রোহীদের হাতে খুনের জন্য তুলে দেয়
ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা ম্যাগাজিন দেবকা এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ন্যাটোর স্পেশাল ফোর্স সিরতে গাদ্দাফির অবস্থান নির্ণয় করে তাকে আটক করে। তারপর তার দু’পায়ে গুলি করে মিসরাতার একটি মিলিশিয়া দলকে গাদ্দাফির অবস্থান জানিয়ে সেখানে আসতে বলে। ন্যাটো অনুমান করেছিল মিসরাতার যোদ্ধাদের গাদ্দাফিকে হত্যা করার সম্ভবনা প্রবল। তাই তারা অন্য কোনো দলকে না জানিয়ে তাদেরকেই খবর দেয়। ন্যাটো চেয়েছিল স্বজাতির হাতেই মৃত্যু হোক গাদ্দাফির—এ দাবি করেছে দেবকা। গাদ্দাফির অনুগত বড় গোত্রগুলো যেমন গাদ্দাফা, ওয়ারফালা, আল ওয়াকির, মাগারিয়া এগুলো তার মৃত্যুর প্রতিশোধ না নিয়ে থামবে না। ফলে এ মৃত্যুতে লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ লড়াই থামার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই বলে ম্যাগাজিনটি মন্তব্য করেছে।
এ ঘটনায় স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছে যুদ্ধে অংশ নেয়া ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রধানরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘লিবিয়ার জনগণের এক দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল আজ’। তিনি আরও বলেন, ‘সামনে কঠিন দিন অপেক্ষা করছে’। লিবিয়ার যুদ্ধে ন্যাটো ও আরব দেশগুলোর সহযোগিতার সম্পর্ককে তিনি ‘একুশ শতকের একটি উদাহরণ’ বলে মন্তব্য করেন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘লিবিয়ায় ব্রিটেন যে ভূমিকা পালন করেছে তাতে আমি গর্বিত। লিবিয়ার জনগণের সামনে এখন আরও বেশি সুযোগ এসেছে একটি শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের।’
বিদ্রোহীদের সংস্থা ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি) প্রথমে গাদ্দাফিকে গ্রেফতার ও হত্যা করার বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়েছিল, যা ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি। পরে ন্যাটো জানিয়েছে, গাদ্দাফিকে বহনকারী গাড়িবহরে পরিচালিত তাদের আকাশ হামলায় গাদ্দাফি আহত হন এবং বিদ্রোহী যোদ্ধারা তখন তাকে জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করে। প্রকাশিত ভিডিওচিত্রে গাদ্দাফিকে জীবিত অবস্থায় কথা বলতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় বিদ্রোহীরা রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে সড়কের ওপর টানাহেঁচড়া করছে। স্পষ্টত তখন তার বুকের বাঁদিক থেকে রক্ত ঝরছিল। এ সময় তার শরীর থেকে কাপড় খুলে ফেলা হয়।
শুরুতে কোনো মন্তব্য না করলেও ওয়াশিংটন জানিয়েছে, গাদ্দাফির গাড়িবহরে হামলায় অংশ নিয়েছে মার্কিন পাইলটবিহীন প্রিডেটর ড্রোন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উচ্চপদস্থ এক মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, মার্কিন ড্রোনের পাশাপাশি ফরাসি যুদ্ধবিমানও সিরতে থেকে বের হওয়া ওই গাড়িবহরে গাইডেড মিসাইল ছুড়েছিল।
ইন্টারনেটে প্রকাশিত একটি ভিডিওর বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, ২২ বছর বয়সী এক বিদ্রোহী গাদ্দাফির বুকে ও মাথায় গুলি করার দাবি করেছে। সানাদ আল-সাদেক আল-উরেইবি নামের এ বিদ্রোহীর ভাষ্য : ‘আমি তাকে (গাদ্দাফি) লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছুড়েছিলাম। একটি তার বগলে আরেকটি লাগে মাথায়।’ তার বক্তব্য মতে, গুলিতে আহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাদ্দাফি মারা যাননি। তার মৃত্যু হতে প্রায় আধঘণ্টা সময় লেগেছে।
‘লিবিয়ার জনগণের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো আজ—ঐক্যে পুনরেকত্রীকরণের ও স্বাধীনতার’, মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি।
উল্লেখ্য, লিবিয়ায় যুদ্ধে যেতে ক্যামেরন ও সারকোজিই ন্যাটো ও জাতিসংঘকে প্রভাবিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
লিবিয়া যুদ্ধে ন্যাটোর অন্যতম আরব সহযোগী কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।
গাদ্দাফি নিহত হওয়ার ঘটনা পরম্পরায় প্রশ্ন উঠেছে বন্দিকে বিনা বিচারে হত্যার বৈধতা ও ন্যায্যতা নিয়ে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান গাদ্দাফির মৃত্যুর পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ দাবি করেছেন, ‘গাদ্দাফিকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধবন্দিকে হত্যা করা বৈধ নয়’।
ভেনিজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট হুগো শেভেজ বেআইনিভাবে গাদ্দাফিকে হত্যা করায় ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছেন। তিনি গাদ্দাফিকে একজন মহান বিপ্লবী যোদ্ধা ও শহীদ বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ লিবিয়ার তেল দখলের উদ্দেশে দেশটিতে গেছে’।
গাদ্দাফির অন্তিম মুহূর্তের নতুন ভিডিও
দিন যতই গড়াচ্ছে গাদ্দাফির অন্তিম মুহূর্ত নিয়ে রহস্যের জট তত পাকাচ্ছে। গ্লোবাল পোস্ট নামে একটি আন্তর্জাতিক মার্কিন সংবাদ মাধ্যম গাদ্দাফিকে আটক করার দৃশ্য নিয়ে নতুন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, আটকের সময় লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি জীবিতই ছিলেন, তবে তিনি আহত ও রক্তাক্ত ছিলেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্রোহীরা গাদ্দাফিকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে এবং উল্লসিত হয়ে বারবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলে স্লোগান দিচ্ছে।
প্রথমে বিদ্রোহীরা দাবি করে, তারা সির্ত শহরের একটি পয়ঃনিষ্কাশন কালভার্টের ভেতর থেকে আহত গাদ্দাফিকে আটক করে। পরে তিনি রক্তক্ষরণে মারা যান।
তবে আলজাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্রোহীরা জীবিত অবস্থাতেই গাদ্দাফিকে আটক করেছে। পরে গুলির শব্দ শোনা যায় এবং গাদ্দাফির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
গাদ্দাফির মৃত্যু নিয়ে নানা বিবরণের পরিপ্রেক্ষিতে লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল দাবি করেন, গাদ্দাফি ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন।
গত শুক্রবার ইন্টারনেটে প্রকাশিত এক ভিডিওচিত্রে সানাদ আল-সাদেক আল-ইউরিবি নামের লিবিয়ার এক তরুণ যোদ্ধা দাবি করেছেন, তিনি লিবিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে আটক এবং তাকে পরপর দুবার গুলি করেন। প্রথমে বাহুর নিচে, এরপর মাথায়। এতে গাদ্দাফি গুরুতর আহত হন। তবে সঙ্গে সঙ্গে নয়, আধা ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়।
সানাদ আল-সাদেক বলেন, ‘গাদ্দাফিকে আমরা একটি রাস্তায় কয়েকজন নারী ও শিশুর সঙ্গে হাঁটতে দেখি। তার মাথায় ছিল টুপি। তবে চুল দেখে আমরা তাকে চিনতে পারি। মিসরাতার একজন যোদ্ধা বলেন, ‘ইনিই গাদ্দাফি। চলো, আমরা তাকে ধরি।’
সানাদ আল-সাদেক আরও বলেন, তিনি গাদ্দাফিকে বেনগাজিতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিসরাতার যোদ্ধারা গাদ্দাফিকে নিজেদের শহরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তিনি গাদ্দাফিকে পরপর দুবার গুলি করেন। তার এ দাবি গাদ্দাফি কীভাবে নিহত হয়েছেন, সে ব্যাপারে সন্দেহকে আরও উসকে দিয়েছে।
গাদ্দাফি-লাদেন যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যেরই স্মারক : ওবামা
লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যু, ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা এবং ইরাক থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণাকে যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যের স্মারক হিসেবে বর্ণনা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
সাপ্তাহিক রেডিও ও ইন্টারনেট ভাষণে শনিবার এসব ঘটনা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নিজেকে শক্তিশালী নেতা বলেও দাবি করেন ওবামা।
তিনি বলেন, গাদ্দাফির মৃত্যু এবং এ বছরের শেষ নাগাদ ইরাক থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা ‘বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব আমরা কিভাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেছি তার শক্তিশালী স্মারক।’
ওবামা বলেন, ‘লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যু দেখিয়েছে লিবিয়ার জনগণকে রক্ষায় এবং স্বৈরশাসনের কবল থেকে তাদের মুক্ত করতে আমাদের ভূমিকা সঠিক ছিল।’
‘ইরাকে যুদ্ধ শেষের জন্য আমরা যে কৌশল নিয়েছিলাম তা সফল হয়েছে।’ আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল কায়দার বিরুদ্ধে বিজয়ের পাশাপাশি ইরাক ও লিবিয়ার ক্ষেত্রে নেয়া নীতি ‘সাফল্যের একটি বৃহত্ অধ্যায়ের অংশ’।
গত ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের একটি বাড়িতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ‘ইউএস নেভি সিল’ টিমের সদস্যদের এক অভিযানে নিহত হন ওসামা।
ভাষণে তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি জাতীয় ঋণের বোঝা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলেও দাবি করেন ওবামা।
২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে এ বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসার ইঙ্গিত দিলেন তিনি।
অবশ্য প্রতিপক্ষ শিবির ইরাক থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে ওবামার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান নেতারা বলছেন, এতে ইরাকের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইরান আরও ‘দুঃসাহসী’ হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া ‘আরব বসন্ত’ গণবিক্ষোভে ‘পেছন থেকে নেতৃত্ব’ দিয়ে ওবামা আমেরিকার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন বলেও দাবি করছেন তারা।
গাদ্দাফির অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে আশঙ্কা : কি পরিণতি হবে কর্নেল গাদ্দাফির বিপুল অস্ত্রভাণ্ডারের। শান্তি আদৌ কি ফিরবে যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায়। কর্নেল গাদ্দাফি যুগের অবসানের পরও উঠে আসে নতুন প্রশ্ন। নতুন বিতর্ক। গাদ্দাফিকে প্রকাশ্য রাজপথে ‘শাস্তি’ দেয়ার পরও প্রশ্ন—শান্তি কি ফিরবে লিবিয়ায়। গাদ্দাফির বিপুল অস্ত্রভাণ্ডারের বিবরণ দিলেন জাতিসংঘের এক প্রতিনিধি। বললেন, পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর ছিল, ক্ষমতায় থাকার সময় ট্রাকভর্তি অস্ত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরদোফান বা নীল নদের অববাহিকার বিভিন্ন দেশে চালান করেছিলেন গাদ্দাফি। জাতিসংঘ প্রতিনিধি দাফা-আল্লা এলহাগ আলি ওসমানের সন্দেহ, লিবিয়া থেকে দারফারেও পাঠানো হয়েছিল বিপুল অস্ত্র। এমনকি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও লিবিয়া থেকে দফায় দফায় অস্ত্র পাঠিয়েছিলেন কর্নেল গাদ্দাফি। এখানেই শেষ নয়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, নিজে স্বৈরশাসক হলেও প্রজাতান্ত্রিক চাদ, প্রজাতান্ত্রিক মালির মতো দেশেও বিপুল অস্ত্র পাঠিয়েছিলেন গাদ্দাফি। আর এখানেই রক্ত, লাশ, ধ্বংসস্তূপের ফাঁক থেকে উঁকি দিল নতুন আতঙ্ক। বন্দুকের নলের ওপর ভর করেই গড়ে উঠেছিল গাদ্দাফির বিপুল স্বৈরসাম্রাজ্য। সেই অস্ত্রের ‘ভবিষ্যত্’ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে। কী রয়েছে ওই অস্ত্রভাণ্ডারে। বিমান-বিধ্বংসী কামান থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক অস্ত্র, গুলি বন্দুক, সবই মজুত সেখানে। শুধু তাই নয়, বিদ্রোহী এনটিসি সমর্থকদের হাতেও রয়েছে অসংখ্য অস্ত্র। গাদ্দাফিকে মারার পরও রীতিমতো বন্দুক তুলে বিজয় উত্সব পালন করেছিল বিদ্রোহীরা। আর আন্তর্জাতিক দুনিয়ার প্রশ্ন এখানেই। ন্যাটো বাহিনী এখন আংশিকভাবে লিবিয়ার দায়িত্বে। সঙ্গে রয়েছে এনটিসিও। কিন্তু এতো বিশাল অস্ত্রের ভবিষ্যত্ কী? অস্ত্র হাতে থাকলে শান্তি আদৌ ফিরবে কী।
মাথায় গুলি লেগে নিহত হন গাদ্দাফি
লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির জাতীয় অন্তর্বর্তী পরিষদ বা এনটিসি। তবে এ নিয়ে তাদের টালবাহানাও কম নয়। তারা বলছে তাকে কোথায় দাফন করা হবে এ বিষয়ে পরামর্শ করার পরই লাশ হস্তান্তর করা হবে। গাদ্দাফির ময়নাতদন্তের পর চিকিত্সক ওথম্যান এল জিনতানি রোববার জানিয়েছেন, লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির মাথায় বন্দুকের গুলি লেগেছিল। এরপর তিনি মারা যান। বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স।
এনটিসির প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিলের উপদেষ্টা আহমেদ জিবরিল জানান, ‘গাদ্দাফির আত্মীয়-স্বজনের কাছে লাশ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে তার পরিবারের কেউ দেশে নেই। এ বিষয়ে তার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এখন কোথায় তাকে দাফন করা হবে সে বিষয়ে এনটিসির সঙ্গে পরামর্শ করে তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ তবে কখন লাশ হস্তান্তর করা হবে তা তিনি জানাতে অস্বীকার করেছেন। গত বৃহস্পতিবার গাদ্দাফি নিহত হওয়ার পর মিসরাতা শহরের একটি হিমাগারে লাশ রাখা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে গাদ্দাফির লাশের বিষয়ে অনেকটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার পর এনটিসি শেষ পর্যন্ত লাশ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিল। এর আগে এনটিসি গাদ্দাফিকে গোপন স্থানে দাফন করার পরিকল্পনা করছিল বলেও খবর ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে গাদ্দাফির লাশের ময়নাতদন্তের সঙ্গে জড়িত এক ডাক্তার নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ‘বন্দুকের গুলির আঘাতেই গাদ্দাফি মারা গেছেন।’ তবে গাদ্দাফির মাথার বাম দিকে যে গুলি লেগেছে তাতে তার মৃত্যু হয়েছে কিনা তা ওই ডাক্তার স্পষ্ট করে বলেননি। তিনি বলেন, এখনও অনেক প্রক্রিয়া বাকি। তবে সবকিছু সরকারিভাবে জানানো হবে। কোনো কিছুই গোপন করা হবে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×