somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নস্টালজিয়া

২২ শে অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লিখতে কেন যেন বরাবরই অনীহা তারপর ও লেখা হয়, হয়ে যায় । লেখক হবার মানসে নয় , সময়গুলোকে মনে রাখার মানসে।তাই মাঝে মধ্যে সাহস করে পোস্ট দিয়ে ফেলি। আজ এলাম কাম্পাস এর কিছু স্মৃতি নিয়ে । :)


ঢাকা শহরে থেকে আসলে বর্ষা আর শীত ছাড়া অন্য কোন ঋতু বোঝা আসলে খুব একটা সহজ না । খুব একটা পরিবর্তন আসলে ধরা যায় ও না। ইট-কাঠের এই ঢাকা শহরে এতো কিছু বোঝার জায়গাটাই বা কোথায় ??ছোট বেলায় “ছয় ঋতু্র দেশ বাংলাদেশ” লিখতাম গ্রীষ্ম,বর্ষা, আর শীত অংশ লিখতাম মনের মাধুরী মিশিয়ে …আর শরৎ, হেমন্ত আর বসন্ত কোনমতে শেষ করতাম মুখস্তবিদ্যা দিয়ে । অনেক বড় হয়েও আমি হেমন্ত শরৎ খুব একটা আলাদা করতে পারতাম না ।
ঋতু, ছয়ঋতু নিয়ে অনেক প্যাচাচ্ছি। :|

যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিকে ক্লাস করতে গিয়েছিলাম …সেই সময়টা অনেক বৃষ্টি । দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে ক্রমশঃ । সেই সময় একদিন ক্লাস করতে গিয়েছি সকাল সকাল ফ্যাকাল্টির সামনে রিক্সা থেকে নেমে দুই কদম এগুতেই ঝপাং করে আছাড় খেলাম ।পড়েই ঝটপট দাড়িয়ে গেলাম ভাব এমন যে কিছু না একটু নিচু হইলাম আরকি …কিন্তু পোলাপান কি আর কম পাজি…??? সুন্দর করে জিজ্ঞেস করে বসলো “ আরে আরে কি মাছ ধরলেন ?? মেজাজ গরম হবার কথা …কিন্তু কেন জানি হল তো না-ই , উল্টা মনে হল, নাহ পোলাপাইন গুলান তো মজার। :) :) আর বৃষ্টিতে ভেজার গল্প নয় আর নাই বললাম নিজের বাড়ীর ছাদেও মনে হয় আমি এত ভিজি নাই যতটা আমার ক্যাম্পাসে ভিজেছি।

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চা খাওয়া আমার খুব ভালোলাগার একটা কাজ ছিল। কাম্পাস এ চা এত বেশি খেতাম যে চায়ের দোকান এর মামারা চিনে ফেলেছিল আরও মজার ব্যাপার ছিল কে চায়ে চিনি কম খাবে কে রঙ চা খাবে সেটা চেহারা দেখেই পাঠিয়ে দিত।মাঝে মাঝে নিজেদের বড্ড ভাগ্যবান মনে হয় ।অনেক মানুষ জীবনচলার পথে এসেছে কোন কারন ছাড়াই অনেক ভালোবাসা অনেক মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে গেছে এখনো উত্তর খুঁজতে গেলে খুঁজে পাইনা আমি আসলেই মানুষগুলোর ভালবাসা পাবার যোগ্য ছিলাম কিনা।

মূল প্রসংগ থেকে সরে যাচ্ছি …আসলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা এমন সবকিছুর সাথে জড়ানো ছিল যে হাযার চাইলেও আলাদা করে কোন একটা প্রসংগ নিয়ে কথা বলতে পারি না ।চায়ের প্রসংগে ফিরি … বৃষ্টি্তে কাক ভেজা হতে হতে চা খেতাম খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে … গরম ধোঁয়া ওঠা চা বৃষ্টির ফোটা পড়ে জুড়িয়ে যাচ্ছে তার সাথে আমরা ঝটপট চা শেষ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছি …এমন কত দিন ,সপ্তা্হ মাস, বছর গিয়েছে…শেষ ও হয়ে গিয়েছে আমার জন্য বরাদ্দ সেই সোনালি সময়। রয়ে গেছে অনেক অনেক মায়া, অনেক অনেক ভালোবাসা , সেই প্রিয় জায়গা গুলোর জন্য, প্রিয় মানুষগুলোর জন্য।এখনো মনে পরে বৃষ্টি হলে কিরনকে হলে জোর করে খিচুড়ী রান্না করতে পাঠিয়ে দিতাম …খুব বলতে ইচ্ছা করে এখন দোস্ত কতদিন তোর রান্না করা ডিম-খিচুড়ী খাই না !

শরৎ ছিল আমার খুব প্রিয় ঋতু। পহেলা ভাদ্রের দিনে বন্ধুদের নীল শাড়ি আর সাদা পাঞ্জাবি … নীল আকাশের সাদা মেঘের সামঞ্জস্যের কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছে কত …তারপর সেই তুরাগ পাড়ে বসে নদীতে সূর্যাস্ত দেখা অথবা নৌকায় করে বেড়ানো …শাপলা তুলে দিন শেষে মাঝি কে দিয়ে আসা, শিউলি তলায় বসে চা খেতে খেতে খেতে দেশ জাতির সমস্যা আলোচনা করা । ভাবলেই মনে হয়, নাহ জীবন আমাকে কম কী দিয়েছে ??

হেমন্তের আসলে প্রকৃতির রুপের চেয়ে নারীর রমনীয় রূপেই চোখে পড়ত বেশ হেমন্তের প্রথম দিনে চারুকলায় নবান্ন উৎসব… সকালে ঘুম থেকে উঠে হুড়োহুড়ি করে রেডি হওয়া … বাস ধরা …আর পরে দেরি করে পৌছে বন্ধুদের বকা খাওয়া …সব কিছুই বড্ড সুন্দর ।

হেমন্তের একদিনের কথা খুব বেশি মনে পড়ে…সেদিন ও নবান্ন উৎসব কাম্পাসে ।দুপুর এর আগে থেকেই আকাশ কালো হতে থাকে …সারাদিন বৃষ্টি অবিরাম …আর সাথে প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস … সাগরে নিম্নচাপ দেখা দিয়েছে …১০ নং সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে উপকূলীয় এলাকা গুলোতে। সেইবার সিডর আঘাত করেছিল।পহেলা হেমন্তের আনন্দ আর আমাদের ছুঁয়ে যেতে পারে নি … সবকিছু হা্রানো মানুষগুলোর অশ্রুতে ভেসে কোন দূরে চলে গি্যেছিল সেই উৎসব ।।এর পর আর কখনো হেমন্তের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব পালন করা হয়নি আমার ।

শীতকাল আর কেমন … ঢাকায় আর শীত কই …শুধু একটু শৈত্যপ্রবাহ হলে ভারী কাপড় মুড়ী দিয়ে ক্লাস করতে চলে আসতাম। মাঝেমাঝে বন্ধুদের সাথে নিয়ে শীতার্তদের জন্য গরম কাপড় সংগ্রহে নামতাম। এখন মনে হয় কেন করতাম বিবেকের তাড়নে নাকি সময়ের প্রয়োজনে?এখন ব্যস্ততায় বুঝি সেই বিবেক আমাকে স্পর্শ করেনা নাকি সেই সময় আমি ফেলে এসেছি পেছনে!

শীতের কথা মনে পড়লে …প্রথম দিকের একটা দিনের কথা খুব মনে পড়ে যায়।একদিন সকাল ৮টায় ক্লাস। বাস নামিয়ে দিয়ে যাবার পর শুনি ছাত্রলীগ ধর্মঘট ডেকেছে তাই ক্লাস হবেনা। আমাদের খুশী আর দেখে কে । বাহ কাম্পাস খোলা কিন্তু ক্লাস হবে না ।বন্ধুরা সবাই মিলে ঠিক করলাম …কোথাও ঘুরতে যাই …কোথায় আর যাই ।।হাতের কাছে আহসান মঞ্জিল অনেকে তখনো দেখেনি তাই ঠিক হল সেখানেই যাব। রিক্সা নিয়ে রওনা হলাম আমরা…মোটামোটি ১৫-২০ জন …পৌছানোর পর আমরা অনেকেই বাচ্চা হয়ে গিয়েছিলাম … এক দৌড়ে সিড়ি বেয়ে ওঠা …আরো অবাক সব কীর্তি মনে পড়লেই হাসি পায়। সবচেয়ে ভালো ছিল ফেরার সময়টা …গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে তখন …এতোগুলো মানুষ রাস্তা চিনি না ।।রিক্সাও পাচ্ছি না ।।শেষমেশ ভ্যান পেলাম দুইটা ।।তাতে করে বিরাট কায়দা করে ভ্রমন।মাঝে মাঝে ভ্যান জ্যাম এ পড়লে নেমে গিয়ে গরম গরম বাকরখানি খাওয়া, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হি হি …করে দাঁত কাঁপিয়ে কোরাস গান গাওয়া …!

আহারে…আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম …!!
নাহ আজ থাক কোন একদিন আবার নয় লেখা হবে ।আজ ভাবনার মেঘ অতীত ছুঁতে চাইছে … আর কম্পিউটারে মন বসে না ।:):)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিলিস্তিনিদের আত্মদান ধর্মযুদ্ধ নয়; এটি স্বাধীকারের যুদ্ধ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৬ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৬

বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা যেকোন বিষয়কে ধর্মীয় ফ্লেভার দিয়ে উপস্থাপন করে৷ ইসলামের সাথে কতটুকু সম্পৃক্ততা তার ভিত্তিতে কনভারজেন্স নির্ধারিত হয়৷ বাঙালি মুসলমানরা এক্ষেত্রে এক কাঠি ওপরে৷ পক্ষ বিপক্ষ বেছে নেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

--যে পাখি ফুল দিয়ে বাসা সাজায়, যে মাছ সমুদ্রের নীচে বালিতে ডিজাইন করে--

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৬ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৮

মানুষ ছাড়া প্রকৃতিতে এক ধরনের পাখি আছে- যারা ফুল দিয়ে ঘর সাজায়। এদের বাওয়ার বার্ড নামে ডাকা হয়। এদের মধ্যে ২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। নিউ গিনির জঙ্গলের ধারে একই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×